আমীর মুহাম্মদ
‘আগামী দশ দিনের ভেতর ব্যবস্থা না করলে দেখে নেবো কত ধানে কত চাল’ এ কথা বলেই এনামুল মিয়া চলেগলো। রেহেনা বিবির লাজুক মুখে হতাশার ছাপ। গাল বেয়ে নেমে আসে নীরব কান্নার অশ্রুজল।
আফতাব আলি বাড়িতে নেই আজ ছয় মাস। চারদিক অন্ধকার। মাথায় ঋণের চাপ। অমুকের বিশ হাজার, তমুকের পনেরো। এভাবে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ঋণের বোঝা। গত বছর বড় মেয়ে নিশিতার বিয়ের সময় পঞ্চাশ হাজার টাকা এনেছিলো গ্রামের মাতব্বর সুদখোর এনামুল মিয়ার কাছ থেকে।
গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষ আফতাব আলি। বাড়ির অদূরে আধা বিঘা সবজি ক্ষেতই তার মুষ্টিমেয় সম্বল। এর সামান্য আয় থেকে স্ত্রী-ছেলে নিয়ে কোনোরকম দিন কাটে তার। নির্ধারিত সময়ে এনামুল মিয়ার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এতোদিনে টাকার পরিমাণ দ্বিগুণে ঠেকেছে।
দুশ্চিন্তায় আফতাব আলির দিনরাত সমান প্রায়। চোখেমুখে তার হতাশার ছাপ। রাতে ঘুম হয় না। মাস কয়েক পূর্বে তাই কাজের সন্ধানে বের হয়। এনামুল মিয়ার কষাকষি আর রূঢ়তার ভয়ে আফতাব আলির বাড়িতে আসা বড় দায়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দু'সন্তান নিয়ে বড় দুর্দশায় দিন কাটে রেহেনা বিবির। প্রতিমাসে স্বামীর পাঠানো সামান্য অর্থকড়ি দিয়ে চুলায় দুবেলা আগুন জ্বালানো মুশকিল হয়ে পড়ে। ছোট্ট খোকা নাবিলের অবুঝ বায়নার কাছে হেরে যায় রেহেনা বিবি।
যিলহজ্বের চাঁদ ওঠেছে। ঈদের বাকি আরো ক'টি দিন। কুরবানীর পশু কেনার ধুম চারদিকে। খোকাখুকুদের নতুন জামার আয়োজন। মনে তাদের খুশির আলোড়ন।
রাতে ঘুমোতে গিয়ে রেহেনা বিবির চোখে নামে অশ্রুর বাণ। নাবিলের অবুঝ জিজ্ঞাসার কাছে নিজেকে নিতান্ত অসহায় মনে হয় তার। বাবা কখন আসছে মা? আমাদের গরু নিয়ে আসবে তো? তুমি না বলেছিলে, বাবা নতুন জামা নিয়ে আসবে। কই, এখনো যে আসছে না?
রেহেনা বিবির মুখ ভারি হয়ে আসে। কান্নার আড়ষ্টতায় মুখ চেপে ধরে। তার কাছে কোন উত্তর নেই। অস্ফুট স্বরে শুধু বলে, আসবে বাবু।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড