• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘ছায়াবৃত্ত’-এর দ্বিতীয় পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : ছায়াবৃত্ত

  তাসলিমা তাহরিন

১৪ জুলাই ২০১৯, ১৪:২৩
গল্প
ছবি : প্রতীকী

ক্ষণকালের জন্য প্রভাতের সূর্যটা কৃষ্ণচূড়ার লাল আভায় সজ্জিত করে পূর্বের দিগন্তকে। আজ সকালের ভেজা কৃষ্ণ বর্ণের জমাটবদ্ধ মেঘগুচ্ছ সূর্যকে আমন্ত্রণ জানাতে মুখিয়ে আছে সারা আকাশ জুড়ে। আজ আকাশটার হঠাৎই আমূল পরিবর্তন। রাতে আকাশ বৃষ্টির সাথে সন্ধি করেছে, মেতেছে মিলন, মহামিলনে। তার সাক্ষী হয়ে আছে ভেজা মাটি।

‘নৈকষ্য প্রেমে যেমন গদগদ হয় প্রেমিকার অমলিন দেহ তেমনি বৃষ্টির প্রেমে লুটোপুটি খায় তেজস্বী ভূমি’

অমন ফুরফুরে মিষ্টি সকালটায় জোনাবালি নিজের রুম ত্যাগ করে লতাবিতানে যায় উত্তরের হাওয়ায় মন দোলাতে। নিজেকে অবাধ্য বাতাসে খোয়াতে। এরপর প্রথমভাগে ইউক্যালিপটাস গাছে কোণে চোখ বুলিয়ে নেয়। এদিক সেদিক চাঞ্চল্য হয়ে খোঁজে। আজ সেই গাছের নিচে অচেনা ছেলেটি নেই। এদিক সেদিক খুঁজে পাওয়া গেল না তাকে। মনটা ভীষণ ভার হলো জোনাবালির। যেন আজ তার কোনো অমূল্য জিনিস খোয়া গেছে। বুকের বাম পাশের কিঞ্চিৎ অংশ হারিয়ে গেছে।

কিসের এতো দরদ তার, তাও আবার অচেনা, অস্পষ্ট আদলের জন্য। আচ্ছা ছেলেটা তার তো আপন কেউ নয়। তাহলে ভাবনার পাশ কাটাতে পারছে না কেন? ছেলেটা হয়তো তার জন্য ওখানে দাঁড়াত না। তার ভাবনায় হয়তো জোনাবালি নামক কোনো বিশেষ্য নেই। আজগুবি কেন সে আগন্তুকের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে? এসব ভাবতে ভাবতে খানিকবাদে উত্তরের বাতাসে খড়মড় করে দু’একটা চিরকুটের টুকরো উড়ে আসে তার কাছে। টুকরোগুলো এখনো তরতাজা নৌকার মুদ্রণে ভাঁজ করা। একটাকে হাতে তুললো জোনাবালি। বোধ হয় কিছু লেখা আঁচ করতে পারছে সে । তাই তো সম্পূর্ণ চিরকুট খুলে দেখতে লাগলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। বেশ কয়েকটা বিশেষ অক্ষরের মুদ্রণ আছে চিরকুটের অন্তদেশে অক্ষরগুলো স্পষ্ট উচ্চারণ করতে থাকে সে- এই যে, বাতায়নের আড়ালে থাকা মেয়েটি প্রণয়িনী, হরিণী। এসোনা ঐ দূর আকাশের মেঘ কালো কাজল পরাবো তোমায়। হারাবো অক্ষিপল্লবের মায়ায়। সাজাবো কৃষ্ণচূড়ার লাল আলতায়। রাঙাবো ভালোবাসার আলতো ছোঁয়ায়।

অক্ষরগুলোতে তার অদৃশ্য ছায়ার ছাপ আছে। প্রতিটা অক্ষরের প্রতিধ্বনি যেন উত্তরের এক ঝাঁক দমকা হাওয়ার ঝঙ্কারে বাম পাশটাকে খুব করে ছেদ করছে। যেন বাতাসটাও মৃদুমান্দিলের নৃত্যর মুদ্রণ দিচ্ছে। ক্ষণকালের জন্য তার মনটাও নাচতে ইচ্ছে করছে। তখনও অন্ধকার আর আলোর সন্ধিক্ষণ চলছিল, এ জন্যই মন খুলে দ্বিধাহীনভাবে গুন গুন করে গান করছে। সেই সাথে দু’হাত, কোমর, পা তালে তাল মিলিয়ে দুলছে। আর তার সিন্ধ সুরের স্পর্শে গানের রেওয়াজ পুলকিত করছে।

‘মেঘের পালক চাঁদের নলক কাগজের খেয়া ভাসছে। বুক ধুকপুক চাঁদপানা মুখ চিলেকোঠা থেকে হাসছে। মেঘের বাড়িতে ভেজা ভেজা পায় তা থৈ তা থৈ বর্ষা। কাক ভেজা মন জল থৈ থৈ রাত্রির হলো ফর্সা। আমি তুমি আজ একাকার হয়ে মিশেছি আলোর বৃত্তে। মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে..........’

ছেলেটি দাঁড়িয়ে ছিলো জোনাবালির দৃষ্টিসীমার অগোচরে। সে জোনাবালিকে লক্ষ্য করে চিরকুট রেখেছিলো। আর তার সৌভাগ্য সরূপ দেখতে পাচ্ছে জোনাবালি দেহঘরে লুকিয়ে থাকা চাঞ্চল্য মেয়েটির নিখুঁত নৃত্যের ছন্দ। মনে হচ্ছে ইন্দ্রসভায় কোনো এক সুনিপুণ নর্তকী নৃত্য পরিবেশন করছে দেবতাদের তুষ্ট করার জন্য। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য এ নৃত্যের আয়োজন।

নাচের মুদ্রণ শেষ হতেই জোনাবালির লাজুক চোখ পড়লো আবছায়ায়। সূর্যের আবির্ভাব হয়ে গেছে তৎক্ষণাৎ। সূর্যের সোনালি কিরণ ছেলেটির সম্মুখভাগকে আজ বেশ প্রজ্বলিত করছে। স্পষ্ট করছে তার আদল। জোনাবালির চোখে নিষ্পলক দৃষ্টি। ছেলেটিকে দেখেই মুখ হা হয়ে গেল তার।

- এ তো সেই চৈতন্যে। তার থেকে দু’ক্লাসের উপরে পড়তো সে।

রোজ জোনাবালির কলেজ যাবার পথে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতো। কলেজে ড্যাবড্যাব করে তাকাতো সবার সামনে। এজন্য বিব্রত হতো জোনাবালি । লজ্জায় সে নিজের চাহনি কখনো ফেলেনি তার দিকে। কিন্তু দু’বার সে মুখ লুকিয়ে দেখেছে তাকে। একবার দেখেই মনের অজান্তে কোনো এক তরঙ্গ খেলা করে গেছে। মায়ার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেছিলো। কিন্তু ছেলেটা কখনো কথা বলার পর্যন্ত চেষ্টা করেনি। তাই তো মান করে সে তাকাতো না অব্ধি। এজন্য জোনাবালির কতই না রাগ করতো। এক সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো একেবারে।

আজ সে তার এত সন্নিকটে। অভাবনীয় সবকিছু। মেঘের সংস্পর্শে শিরশির বাতাস চারদিক থেকে তরঙ্গ সৃষ্টি করছে। এ তরঙ্গ বিবশ করছে অন্তরদেশের পাথারকে।

এরপর দু’এক পা আগবাড়ায়ে সামনে যেতে লাগলো জোনাবালি। এমন সময় জোমসের ডাকতে ডাকতে উঠনে আসলো, ‘জোনাবালি, মা জোনাবালি...

জোনাবালির আচমকায় সব তরঙ্গ ভেঙে গেল। অনিচ্ছাকৃত ভাবে স্থান থেকে সরে এসে বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে বললো, ‘আসছি বাবা...’

(চলবে...)

আরো পড়ুন ‘ছায়াবৃত্ত’-এর প্রথম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : ছায়াবৃত্ত

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড