• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক গল্প : বসন্তের শেষে (শেষ পর্ব)

  রিয়ান ভাস্কো

২১ মার্চ ২০২০, ১৫:৫০
গল্প
সময় মনে হচ্ছে আলোর গতিতে দৌড়াচ্ছে (ছবি : সম্পাদিত)

রাত হয়েছে। ঘড়ির কাটা এক’টা ছুই ছুই করছে। ঋভূ আনমনে বসে আছে জানালা খুলে। যান্ত্রীক শহরের মানুষ গুলো সব গভীর ঘুম। মাঝে মাঝে অনুভূতিহীন মনে হয় তাদের। ঋভূর অনুভূতি সংক্রান্ত কোন সমস্যা নেই। সে যে কোন কিছুতেই অনুভূতির খোজ করে। এমন রাতে প্রায়ই তার মনে হয় সব বাদ দিয়ে হিমু হয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। জগত সংসার আর তার করণীয় গুলো এতো কঠিন কেন হয় জানা নেই।

বিধাতা কি আসলে বাস্তবতা এতোটা কঠিন করে দিয়েছিলেন নাকি আমরা সামাজিক মানুষগুলো বাস্তবতা কে এতো কঠিন বানিয়ে ফেলেছি। কিছু একটা আওয়াজ হল। ঋভূ হাসছে। সে জানে নেফারতিতি এখনো আছে। সে রহস্য সৃষ্টি করতে খুব ভালোবাসে। বাতাসের মত আসে আবার বাতাসের মত চলে যায়। বাচ্চাদের মত আচরণ। ঋভূর অবশ্য বেশ লাগে। নেফারতিতি ঋভূর সামনে এসে দাঁড়ালো। - কি ওরকম এক পলকে তাকিয়ে আছো কেন? - তোমাকে দেখছি। - আমাকে নতুন করে দেখার কি আছে? - তুমি সবসময় আমার কাছে নতুন। - কোন সিনেমার ডায়লগ এটা? - নাম মনে নেই। নেফারতিতি হাসছে। এই মেয়েটা কত সুন্দর করে হাসতে পারে। - তুমি আমাকে সুন্দর করে হাসতে শিখাবে? - মানে! - তোমার হাসিটা অসাধারণ। - আমি পুরোটাই অসাধারণ। - নাহ এটা ভুল ধারণা। - কেন এমনটা মনে হচ্ছে? - কারণ তুমি ভালোবাসো তাকে যে তোমার ভালোবাসার কদর করে না, তুমি যেভাবে চাও সে চাওয়ার কদর করে না। আর তাকে পাত্তা দাও না যে তোমাকে তোমার মত করে ভালোবাসবে, তোমার মন্দির বানাবে। - এসব ছাড়া আর কোন কথা নেই তোমার। সবসময় শুধু ভালোবাসার কথা। - তাহলে তুমি বল অন্য কি নিয়ে কথা বলবো। - আমি কি জানি, তুমি বল। তুমি তো আমাকে আমার মত করে ভালোবাসো তাই না। দেখি আমি কি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি এখন। - আমাকে কিছু জোছনা এনে দিতে পারবা। - কেন? - কাচের বোয়ামে রেখে দিতাম। - তারপর... - তারপর প্রতি রাতে তোমার মাথার কাছে বোয়াম টা রেখে দিবো। - তাতে কি হবে। - তোমাকে রোজ রাতে জোছনার আলোতে দেখতাম। - আমাকে এতো দেখে কি হবে। - আমাদের পেটের যেমন ক্ষুদা আছে তেমন চোখের ও আছে। তোমাকে দেখে চোখের ক্ষুদা মিটাতাম। - উফফ...এতো ঢং করে কথা বল কিভাবে। - তুমি আশেপাশে থাকলে কোত্থেকে যেন ঢং চলে আসে। নেফারতিতি হাসছে, আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হাসছে। - তোমাকে ছুঁয়ে দিলে কি জানি কি হয়। - মানে... - মানে খুব সহজ। - তুমি মাঝে মাঝে খুব কঠিন করে কথা বল। - দার্শনিক হবার ক্ষুদ্র চেষ্টা। - তুমি দার্শনিক নাকি। - শস্তা, জীবানু টাইপ। আকাশ কাঁপিয়ে মেঘ ডাকা শুরু হল কেমন যেন হুট করে। ঋভূর চোখ চকচক করছে। নেফারতিতি খুব অবাক হয়ে ঋভূর দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষ কে সে আগে কখনো প্রকৃতি এভাবে উপভোগ করতে দেখেনি। মানুষটা পৃথিবীতে এসেছে যেন শুধু প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য। - তুমি বৃষ্টি খুব পছন্দ করো তাই না। - হ্যা, আমার চিন্তা করার শক্তি, আমার কল্পনার জগত বেচে থাকার উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। - তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো আমাকে নাকি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য? - প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। - কেন? - কারণ আমি যদি চিন্তা করার ক্ষমতা হারাই, যদি আমার কল্পনার শক্তি মিশিয়ে যায় তাহলে তুমিও বিলিন হয়ে যাবে। আমি চিন্তা করতে পারছি বলে কল্পনার জগতটা বেচে আছে। আর তুমি তো সেই কল্পনার জগতের ই তাই না। বাস্তবে তোমার যে ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা তার সাথে আমি মানানসই না, অথবা তুমি ব্যক্তিগত ভাবে চাও না আমার মত কেউ তোমার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। তুমি অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক ভালো আশা করতেই পারো। আচ্ছা বলতো আমার চেয়ে ভালোর সংজ্ঞা কি? - আমি জানি না। - যেহেতু আমি জানি না সেহেতু তোমার ও জানার কথা না। - আমার খুব মন খারাপ লাগছে। - কেন, তোমাকে কম ভালোবাসি বলে। - তাও জানি না। - জানো তুমি আমাকে একবার বলেছিলে আমার জন্য কেউ আছে যে রাজ্যের ভালোবাসা নিয়ে আসবে। আমার কথা হচ্ছে সেরকম একজন আছে মানলাম কিন্তু আমারও তো তাকে ভালবাসতে হবে। নাকি শুধু ঔ মানুষটা ভালবাসলেই হবে। যদি তাই হয় তাহলে কেন আমি শুধু তোমাকে ভালবাসলে হবে। আমরা একসাথে থাকতে পারি। একটা মরীচিকার জন্য পরিকল্পনা করতে পারি। নাকি আবার আমার ক্ষেত্রে হচ্ছে যেই ভালোবাসুক না কেন সেটা নিয়েই মিথ্যা সুখী হতে হবে। - আমি জানি না ঋভূ। - এসব কথা যদি বাস্তবে তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতাম তাহলে ভালো হত। অবশ্য আমি জানি বাস্তবেও তুমি এক উত্তর দিতে, আমি জানি না। আর সাথে যোগ করতা আপনি আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন এসব। তারপর ব্লক। এটা খুব অসাধারণ, কাউকে পছন্দ না হলে বা কথা পছন্দ না হলে ব্লক। আচ্ছা বলতে পারো বাস্তব জীবনে মস্তিষ্ক থেকে মন থেকে কিভাবে একটা মানুষকে ব্লক করা যায়। - আমি জানি না। - আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন, আমি যাকে ভালোবাসি তাকে কেন পাবো না। আমাদের সবাইকে তো একজন সৃষ্টিকর্তা বানিয়েছেন। তাহলে কেন এরকম পার্থক্য। একটা বাহ্যিক সুন্দর মানুষ কখনো বাহ্যিক অসুন্দর মানুষকে ভালোবাসবে না। মুখে বলবে ওরকম কিছু না। কিন্তু করার সময় ওরকম কিছুই হয়। ঠিক ঠিক বাইরে থেকে মানুষটা যদি আকর্ষনীয় না হয় তাহলে পাত্তা পাওয়া যায় না। - আমি জানি না। - এসব বললে কি উত্তর আসে জানো আপনার প্রতি আমি কখনো ওভাবে চিন্তা করিনি। অথবা আপনার প্রতি আমার কোন অনুভূতি কাজ করে না। অথবা আমার ইচ্ছা নেই। - আমি জানি না। - তোমার সাথে এসব বলে কোন লাভ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন তুমি আমি জানি না বাক্যটা মুখস্থ করছো। - আমি কি করবো তাহলে। - চলে যাও। যখন আবার তোমাকে খুব কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করবে তখন এসো। ঋভূ একটা সিগেরেট ধরালো। ইদানিং খুব বেশি পরিমাণে সিগেরেট চলছে। মাঝে মাঝে বুক ব্যথা করে। কিন্তু কিছু করার নেই, কারণ তার প্রশ্নের উত্তর গুলো পাবার মত নয়। তাই নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। মুঠোফোনে নেফারতিতির ছবি দেখছে আর ভাবছে

কার জানালায় বসে কার রঙে কাদছো, কার ভালোবাসায় বিষাদ হয়েও সুখী তুমি ভাবছো, কাঁটার খোঁচা পাঁজরের ভেতর অনুভূত করেও কাকে ভালোবাসছো। জানি তুমি দুঃখী তবুও বারণ করো আমায়, আঙুল ছোঁয়ালে বুঝি ফাঁসি হবে রোজ সন্ধ্যায়, এলেবেলে শব্দহীন কথা গুলো স্বাধীন হতে চায়, স্বপ্ন ইচ্ছেদের লাশের গন্ধে বিভর ঘরের কোণায় কোণায়। তবু আজও রোজকার ভোরে অথবা বিষণ্ণ দুপুরে অথবা খামখেয়ালি বিকেলে অথবা নির্ঘুম রাতে তুই আছিস তুই বাঁচিস তুই আঁকিস তুই কাঁদিস তুই জোরে চিৎকার করিস ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

আরও পড়ুন : ধারাবাহিক গল্প : বসন্তের শেষে (দ্বিতীয় পর্ব)

ঋভূ হতে পারে আবেগী, হতে পারে বিরক্তিকর। সবসময় মন খারাপ আর ভালোবাসার খোঁজে ছুটতে থাকা বোকা প্রাণী। কিন্তু ঋভূ মিথ্যে নয়, মিথ্যে নয় তার আবেগ। মিথ্যে নয় তার প্রশ্ন। মিথ্যে নয় ভালোবাসা। এভাবেই কল্পনার জগতে ভালোবাসা খুঁজে পেয়ে কখনো কোনদিন কোনক্ষণে হারিয়ে গেছে বাস্তবতা থেকে। আর ফিরে আসে নি। আর ফিরে আসবেও না। যখন বাস্তবতা নির্মম, নির্দয়। ঋভূদের এ জগতে বাস করার অধিকার নেই। এ জগতে বাস করবে রঙিন পোশাক আর রঙিন সাজে সু সজ্জিত বাহ্যিক সৌন্দর্য। তাই আমিও ঋভূ কে হারিয়ে যেতে দিয়েছি। বেঁচে থাকতে দিয়েছি। কিন্তু এই জগতে না। সেই জগতে যেখানে ঋভূ আর নেফারতিতি দুজন দুজনকে ভালোবাসে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড