• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক গল্প : বসন্তের শেষে (দ্বিতীয় পর্ব)

  রিয়ান ভাস্কো

১৯ মার্চ ২০২০, ১০:০১
গল্প
সময় মনে হচ্ছে আলোর গতিতে দৌড়াচ্ছে (ছবি : সম্পাদিত)

হোসাইন দাঁড়িয়ে আছে একটা পেট্রোল পাম্পের সামনে। আজকে সে নওশীনের সাথে প্রথম দেখা করতে এসেছে। নার্ভাস হওয়ার চেয়ে সে বিরক্ত বেশি। কারণ এত জায়গা থাকতে সে এই পেট্রোল পাম্পের সামনে কেন অপেক্ষা করতে বলল বুঝতে পারছে না। নওশীনকে দেখা যাচ্ছে। - হায় - পৃথিবীতে এত জায়গা থাকতে তুমি আমাকে এখানে কেন অপেক্ষা করতে বললা। এটা একটা জায়গা হলো অপেক্ষা করার। - আমার ভার্সিটির কাছে তাই বলসি। - আচ্ছা বাদ দাও। চলো। - কোথায় যাব আমরা। - আর কোথায়, তোমাকে তো ছ’টার মধ্যে বাসায় যেতে হবে। এখন বাজে পাঁচটা। সো যেতে যেতে এক ঘণ্টা লেগে যাবে। - চলেন।

হোসাইন আর নওশীন গত এক সপ্তাহ ধরে ফোনে কথা বলছে প্রতি রাতে। কিন্তু আজকে প্রথমবারের মতো সামনা সামনি এসে হোসাইন কথা খুঁজে পাচ্ছে না কি বলবে। হোসাইন অনেক আগে থেকেই নওশীনকে পছন্দ করে। এই কথাটা বলার জন্য যত ঘটনার সূত্রপাত। - ক্লাস কেমন হলো তোমার। - ক্লাস ভালোই, নতুন কিছু না। - কেমন লাগছে এখানে পড়তে। - ধুর, খালি অ্যাসাইনমেন্ট আর ক্লাস টেস্ট। ভালো লাগে না। ভার্সিটিতে কেউ এত পড়ালেখা করতে আসে নাকি। আপনি এতগুলো সেমিস্টার কীভাবে পার করসেন? - করে ফেলসি আরকি টেনেটুনে। - আমি পেঁয়াজু খাবো। - এখানে পেঁয়াজু পাবো কোথায়। - আছে, এখানে কিছু ফেরিওয়ালা আছে এক টাকা দামের পেঁয়াজু বিক্রি করে। প্লিজ একটু এনে দেন। - আচ্ছা তুমি বসো আমি দেখছি। হোসাইন পেঁয়াজুর খোঁজে গেল। মেয়েটা ফোনে আর সামনা সামনি অনেক পার্থক্য। সামনা সামনি বেশি সুন্দর করে কথা বলে। হয়তো ফোনে তার এক্সপ্রেশন দেখা যায় না তাই। হোসাইন পেঁয়াজু নিয়ে আসার পর নওশীনের খুশি দেখার মতো ছিল যেন হোসাইন তার জন্য বিশ্ব জয় করে এনেছে। বাচ্চাদের মতো কুটকুট করে নওশীন খাচ্ছে আর হোসাইন ফেলফেল করে তাকিয়ে দেখছে।

ঋভু এবার সব কটা পাতা ছিড়ে ফেলে। এমন ন্যাকা ঘটনা লেখার মানে নেই। রুমের দরজা সজোরে খুলে দেরি না করে চলে গেল ছাদে। যদি একটু মাথা ঠান্ডা হয়। ছাদে উঠে কথা নেই শুয়ে পড়ল। এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওমনি দু’চোখ জুড়ে ঘুমের আনাগোনা শুরু হলো। আর শুরু হলো সাবকনসাস মাইন্ডের খেলা। বেশ অপরিচিত একটা গন্ধ আসছে কোথা থেকে যেন। আশেপাশের পরিবেশ অপরিচিত মনে হচ্ছে।

মনে হচ্ছে একটা সুন্দর কৃষ্ণচূড়া গাছ দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে। গাছে ফুলের যেন আগুন লেগেছে। খুব অসাধারণ বাতাস, মন ভালো হয়ে যায় মুহূর্তেই। ঋভুর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে। নেফারতিতিকে অন্যরকম লাগছে। নেফারতিতি তার সামনে বসে আছে। একটা সাদা শাড়ি পরেছে নেফারতিতি। প্রসাধনী নেই কোনো। একটা মানুষ কীভাবে এত সুন্দর আর স্নিগ্ধ হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা যেন পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ঋভু খুব অবাক হলো কারণ কৃষ্ণচূড়াগুলো হঠাৎ যেন সুবাস ছড়াতে লাগল। কিন্তু তারা তো গন্ধহীন। - আপনি এখানে। - জানি না, হয়তো তোমার সাথে দেখা হোক প্রকৃতি চাচ্ছিল। - কেমন আছেন। - ভালো না। - কেন। - তুমি খুব ভালো করেই জানো কেন। নেফারতিতি মুচকি হাসছে। মেয়েটা কে না হাসার জন্য বলা উচিত হবে কিনা বুঝতে পারছে না ঋভু। - তোমার হাসিটা খুব সুন্দর। - আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তাগুলো সবসময়ই সুন্দর। তাই মনে হচ্ছে। - তবুও তো তোমার বৃত্তের ভেতর ঢোকার অনুমতি নেই আমার। - আমার বৃত্তের ভেতর ঢুকতে আবার অনুমতি লাগে নাকি। যার ঢোকার সে অটোমেটিক ঢুকে যায়। - তাহলে আমি কীভাবে অটোমেটিক ঢুকতে পারি। কী করতে হবে। - বাস্তব জীবনে পাওয়া প্রতিনিয়ত মানুষ হতে হবে। - সেটার জন্য তো আপনাকে সুযোগ করে দিতে হবে। - আমার বৃত্তে আসতে চান কেন এত? এসে কী হবে? - আহা যদি পারতাম তাহলে রোজ সকালে পূজো করতাম। তোমার পদচিহ্নে দিতাম কলকে জবা ফুল। তোমার বৃত্তের আকাশটার সাথে বন্ধুত্ব করতাম। এক পরশ বৃষ্টি দিয়ে ভিজিয়ে দিতাম রোজ বিকেলে। আমি লোভী, প্রেমিক পুরুষ, কিন্তু স্বার্থপর নই। ভালোবাসার খোঁজে দাঁড়িয়ে থাকতাম। জেলখানার চিঠির মতো লিখে ফেলতাম হাজারখানেক চিঠি। আমি কিন্তু সুন্দর চিঠি লিখতে পারি। যদি সেই হাজারখানেক চিঠি থেকে একটা পড়ে মন ঘুরে দাঁড়াতে চায়। যদি হঠাৎ করে বেজে ওঠে মনের ঘণ্টাটা ঢং করে। যদি কোনো ভোরে ইতস্তত পদচারণর মতো বল, আমি তোমাকে চাই। - আপনি সবসময়ই আমাকে নিয়ে সুন্দর কল্পনা সাজান, অন্যরকম। কেন? - তুমি জানো না। - বুঝতে পারি। - কী বুঝতে পারো। - যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন। - কখনো বলেছি কি এই কথা। - অনেকভাবে অনেকবার। - দুঃখিত, ভুল হয়ে গেছে। বিরক্ত করে ফেলেছি তোমাকে। - উহু, বিরক্ত করেননি। - আমি জানি তুমি আমার নও। তবুও মন মানতে চায় না। সবসময়ই বলে চেষ্টা করে যেতে। আমার একটা কল্পনার জগৎ আছে। তুমি সারাদিন সেখানে বসে থাকো। এটা কিন্তু খুব কঠিন কাজ। - তাহলে সব ঝেড়ে ফেলে দিয়ে চলে যান না কেন। - আত্মহত্যা করতে বলছ? - এসব বলবেন না, এসব বাড়াবাড়ি। - ঠিক আছে তার মানে তুমি চাও আমি তোমার সাথে আর যোগাযোগ না করি। ঠিক আছে আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করছি না আর। - আপনার সফলতা কামনা করছি।

আরও পড়ুন : ধারাবাহিক গল্প : বসন্তের শেষে (প্রথম পর্ব)

ঋভুর খুব আশফাস লাগছে, গলাটা কেমন শুকিয়ে এসেছে। হাতরে সিগারেটের প্যাকেট খুঁজতে লাগল। সিগারেটের প্যাকেট আনা হয়নি। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টতে। শব্দ করে উচ্চারণ করতে লাগল- রোজকার বিকেলে যদি হঠাৎ তুমি কোন কৃষ্ণচূড়ার নিচে দাঁড়িয়ে, ওমনি বাতাসে তোমার এলোমেলো চুলে কৃষ্ণচূড়া ঝড়ে পড়ছে, কৃষ্ণচূড়ার কোনো গন্ধ নেই তবুও শুধুমাত্র ঔ মুহূর্তটার জন্য স্রষ্টা সে বিকেলে কৃষ্ণচূড়াকে গন্ধে ভরে দিবেন। দূর থেকে দেবদূত দাঁড়িয়ে হিংসে করবে অভিমান করবে। সে বিকেলে সূর্যটা আমার মতো অসহায় হয়ে ডুবে যাবে। মনোযোগ মনোবাসনা উড়ে যাবে স্বাধীনতার সংগ্রাম করে, রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে টগবগ করবে শিরায় শিরায়। কড়টির ভেতরের বিষাদ বিচ্ছিন্ন মেঘগুলো রঙিন হতে পারে আজ, ভালোবাসতে ভালোবাসার উষ্ণ নরম সুগন্ধি ঢেউয়ের জলোচ্ছ্বাস চারিদিকে। হঠাৎ রেনেসাঁ যুগের গানগুলো বেজে উঠলো ধুলোমাখা শহরে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড