• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : বিদায়; সাময়িক

  ধ্রুপদী রিপন

১২ মার্চ ২০২০, ১৪:৫৩
গল্প
ছবি : ই চিত্রকল্প, সে স্থান-কালের অতীত; বলে যায় তোমাদের ভবিষ্যৎ (ছবি : প্রতীকী)

কোন এক কালে।। তবে এটুকু নিশ্চয়তা দেয়া যায় যে এ চিত্রকল্প তোমাদের অতীতের নয়, হতে পারে বর্তমান অথবা যে স্থান-কালে দাঁড়িয়ে রচিত হলো এই চিত্রকল্প, সে স্থান-কালের অতীত; বলে যায় তোমাদের ভবিষ্যৎ।

অপরিচিত মোহনার পাশেই একটি পরিচিত সুউচ্চ পাহাড়, পাশে বিস্তীর্ণ ঘণ সবুজ বন। বনের মাঝে লিখিত নিয়মে অলিখিত সংখ্যক হিংস্র ও তৃণভোজি প্রাণীর সহাবস্থান। ভাবতে থাকো- থেকে থেকে বাতাসে ভেসে আসা আর্তনাদ জীবের জীবনযাত্রা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়ে যায়। তবে সে ধারণায় বনের বাহ্যিক চিত্র সম্পর্কিত ধারণায় কোন প্রভাব পড়ে না, হয় তো প্রকৃতি কর্মের দায়ভার বহণ করে না বলে। তবে তাই হোক- বনের ঠিক বিপরীত পাশে, শুধু বিপরীত পাশে নয়- পাশাপাশি অপর দু’পাশেও শুধু পানি আর পানি।। সাধারণের দৃষ্টিসীমানায় এ তিনে পানি ছাড়া আর কিছু নেই; এ সংসার যেন সম্পর্কহীন, পানি ছাড়া আর কিছু নেই। নিশ্চয়ই থেলিস এবার খুশিতে টইটুম্বুর! তবে বস্তবতা হলো এই যে এ সংসারস ম্পর্কহীন নয়। এখানে পানি এবং বনের মধ্যবর্তী অবস্থানে দাঁড়িয়ে সুউচ্চ পাহাড়টি যেন করে চলেছে সম্পর্কের সেতুবন্ধন- এ সমুদ্দুর সম্পর্কহীন নয়।

পাহাড়ের ঠিক উপরে, শান্ত স্থির দু’টি চোখ দূরের আকাশ দেখে মুগ্ধতা ছড়ায়। মুগ্ধতা ছড়ানো কিংবা দৃষ্টির প্রখরতা দেখে এটি বোঝা যায় যে এ দৃষ্টি সাধারণের নয়; দূরের আকাশ দেখে মুগ্ধতা ছড়ায় শান্ত স্থির দুটি চোখ।

দূরের আকাশ যুবকের কাছে বিছিয়ে দেয়া একটি সুদৃঢ় জাল বলে মনে হয়। যুবকের নিক্ষিপ্ত দৃষ্টি সীমানা কয়েক মুহূর্ত পরে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যুবকের ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি খেলা করে যেন শান্ত সমুদ্দুর বাতাসের প্রবাহে খেলে চলে ছোট ছোট ঢেউয়ের খেলা। তার মুখায়াব যেন করে চলে বলা সত্যের না বলা উপস্থাপন। তবে সে উপস্থাপন অবোধগম্য নয়, নিয়ে আসা সত্যের সাথে এ সত্য এক না হলেও যেন একই সূত্রে গাঁথা; বোঝা যায়, লক্ষ-কোটি মাইল অতিক্রম করে তার দৃষ্টিশক্তি খুঁজে পেয়েছে আপনার বৃহৎ প্রতিরূপ। মুখে প্রশান্তির হাসি নিয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে যুবক, Monsur, I also got that. whatever, atleast I know myself. Thanks to all of you.

প্রবাহিত বাতাসের সাথে ভ্যাপসা গরম, এরপরই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। যুবক খেলা করে বৃষ্টির সাথে। বৃষ্টির ফোটা স্পর্শ করে করে যুবক শূণ্যে উড়াল দেয়। এরপর বাতাসে ভর দিয়ে যুবক নেমে যায় পাহাড়ের পাদদেশে। আছড়ে পড়া ঢেউয়ের দিকে দৃষ্টি পড়ে যুবকের। পানির লাল রং দেখে যুবক বিচলিত হয়ে ওঠে। রঙের উৎস খুঁজতে থাকা যুবকের দুটি চোখ এক ঝলক সমুদ্দুর দেখে নেয়। নাহ, এ সত্যের মুখোমুখি সে হতে চায়নি। যুবক দেখতে থাকে অগণিত মৃতদেহ দিয়ে ঢেকে যাওয়া সমুদ্দুর।

যুবকের মুখমণ্ডল নিমিশেই মলিন হয়ে যায়। তার শান্ত স্থির মুখণ্ডলে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। চোখের কোণা দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে যুবকের বিষাদে পূর্ণতা দিয়ে যায়। বিষাদে পূর্ণ যুবক বাতাসে ভর দিয়ে উড়ে চলে পাহাড়ের চূড়ার দিকে। উড়তে থাকা যুবকের দৃষ্টি সীমানা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে, যুবক দেখে নেয় লাশের সমুদ্দুর। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যুবকের স্থির দৃষ্টি লাশের সমুদ্দুর দেখে।

পাহাড়ের চূড়ায় তখন যুবককে কেন্দ্র করে পশু-পাখিদের সরব সমাবেশ। যুবককে কেন্দ্র করে পশু-পাখির দল যেন প্রকাশ করে চলে শোকাবহ হৃদয়ের আকুতি। অধিকাংশই কেঁদে ওঠে যে যার ঢঙ্গে। হাতি দলের প্রতিনিধি হয়ে বড় হাতিটি শুর উঁচিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, উ-উ-উ-উ..। হাতিটির করুণ চিৎকারে যেন শুরু হয়ে যায় শোকের মাতম। হাতিটির চোখের কোণা দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ে অনরগল।

যুবকের খেয়াল কোন দিকে নেই। দু’হাত এক করে প্রার্থণার ঢঙ্গে তার খেয়াল যেন পরমের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের তাগিদ দেয়; ধ্যানমগ্ন যুবক। যুবকের ধ্যানের প্রভাবে হোক কিংবা পাহাড় সমান শোকের কারণেই হোক, উপস্থিত পশু-পাখির দল সমবেত ভাবে নিরব হয়ে যায়। যুবকের ডান পাশে বসে থাকা ছোট খরগোশটি শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে কিন্তু কোন কথা বলে না। কিছু সময় পরে যুবকের ধ্যান ভঙ্গ হলে, যুবক দু’হাত প্রসারিত করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। যুবকের এরূপ ভঙ্গিমা দেখে উপস্থিত পশু-পাখিরদল সমবেত ভাবে আর্তনাদ করে ওঠে। পশু-পাখিদের সে আর্তনাদে কেপে ওঠে দূরের আকাশ, পাহাড় কিংবা বন-সমুদ্দুর। এতকিছুর পরেও সে আর্তনাদ যুবকের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। যুবক উপস্থিত পশু-পাখিদের উদ্দেশ্য করে শান্ত স্বরে শুধু একটি কথাই বলে, ‘আমি আবার আসবো- সবুজে রাঙাবো পৃথিবী’। কথা শেষ করে যুবক দু’হাত প্রসারিত রেখে সজোরে ঘুরতে থাকে। যুবককে কেন্দ্র করে বৃত্তের আঙ্গিকে বাতাসের একটি বলয় তৈরি হয়। ঘূর্ণায়নের গতি বাড়তে থাকলে বাতাসের সেই বলয় ক্রমাগত উপরে উঠে যায়। পশু-পাখির দল বিমর্ষ চেহারায় অপলক তাকিয়ে থাকে বলয়ের দিকে। বাতাসের বলয়টি আরও একটু উপরে উঠলে তা শব্দহীন ভাবে বিস্ফোরিত হয়ে যায়। বিস্ফোরণের সাথে সাথে সেখানে শুরু হয়ে যায় বাহারি রঙের খেলা। খেলা চলতে চলতে সে রং আবার রুপান্তরিত হয়; হয়ে যায় রং বেরঙের অগণিত প্রজাপতি। উপস্থিত পশু-পাখির দল পুলকিত হয়ে যায়। পশু-পাখিদের চোখে বিষাদের পানি যেন মুহূর্তেই খুঁজে নেয় অনাবিল আনন্দ। পশু-পাখির দল পুলকিত চোখে অপলক তাকিয়ে দেখে নেয় রং বেরঙের অগণিত প্রজাপতি। প্রজাপতির দল সমবেত ভাবে উড়ে চলে আকাশে। পশু-পাখির দল অপলক তাকিয়ে প্রজাপতিগুলোর উড়ে চলা দেখে।

দূরত্ব বাড়তে থাকলে উড়ে চলা প্রজাপতিগুলোকে সমবেত ভাবে একটি রঙিন ড্রাগন বলেই মনে হয়, যেন আকাশ ছোয়ার খেয়ালে উড়ে চলেছে কোন এক রঙিন ড্রাগন। এরপর বিকট শব্দে আকাশ থেকে কথা ভেসে আসে, মনে হয় উড়তে থাকা ড্রাগন ভরাট কণ্ঠে বলে যায় নিজের অভিব্যক্তি, ‘আমি আদম সন্তান- আমিও আদম। তোমরা জানোই তো শক্তির কোন বিনাশ নেই। যে ভেদ তুমি বা তোমরা দেখো তা তো কেবলই সাময়িক, যা তোমাদের কাছে অনন্ত কালের সামিল; কেননা তোমরা জেনে গেছো সময়ের আপেক্ষিকতা’। কথা থেমে গেলে উড়তে থাকা ড্রাগন উড়তে উড়তে এক সময় আকাশের সাথে মিশে অদৃশ্য হয়ে যায়।

আরও পড়ুন : ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম (১৮তম পর্ব)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড