মো. তামজীদুল হক ফাহিম
এঁড়োশেলো গ্রামের হাজারি ঠাকুর কাজ করে রানাঘাটের বেচু চক্কত্তির হোটেলে। মাসিক সাত টাকা আর খোরাকির বিনিময়ে কাজ করলেও তাকে সহ্য করতে হয় পদ্মঝির অত্যাচার, অবহেলা। হোটেলে অবশিষ্ট কিছু থাকলে তা সে নিজের বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু হাজারি ঠাকুর আধপেটা হয়ে থাকল কিনা সেদিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। হোটেলের কার্যত কর্তী পদ্মঝিই।
পান থেকে চুন খসলেই হাজারিকে অপমানের সুযোগ হাতছাড়া করে না সে। অপমানের কোনো কিছু বাকি রাখে নি পদ্মঝি। শেষ পর্যন্ত তাকে চোর অপবাদ দিয়ে দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তা তাকে পুলিশে পর্যন্ত দেয়। কিন্তু হাজারি ঠাকুর কখনো কোনো প্রতিবাদ করে না। মাটির মানুষ বললেও কম বলা হয় তাকে। কয়েক মাস পরে সে আবার বেচু চক্কত্তির হোটেলে আসে। আবার এই হোটেলে কাজ নেয়। পুরনো সবকিছু যেন বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু পদ্ম সেই আগের মতোই তার উপর অত্যাচার করে।
হাজারির স্বপ্ন নিজে একটা হোটেল দেওয়ার। তার গ্রামের জমিদারকন্যা অতসী ও তার ভাতিজী কুসুম তাকে সেজন্য ২০০ টাকা করে দেয়। হোটেলের জমজমাট ব্যবসা শুরু করে সে। তার রান্নার গুন পুরো কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে। রেলের বড় বাবুর সহায়তায় ষ্টেশনে হোটেল দেয় সে। রাঁধুনি হিসেবে নাম ছড়িয়ে যায় দিল্লি পর্যন্ত। নামকরা এক পাঁচ তারকা হোটেলে মাসিক ১৫০ টাকা বেতনে চাকরীর অফার পায় সে।
যে হাজারি ঠাকুর মাত্র ৭ টাকা বেতনে নানা অত্যাচার, অপবাদ সহ্য করে, খেয়ে না খেয়ে এক হোটেলে চাকরী করতো সেই হাজারি ঠাকুরের আজ দুইটা হোটেল, দশ বারো জন কর্মচারী। সবচেয়ে মজার বিষয় তার পূর্ববর্তী মনিব বেচু চক্কতি ও পদ্মঝি আজ তারই হোটেলের কর্মচারী। তাদের হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারি তাদের তার হোটেলে নিয়ে এসেছে। হাজারি এই উন্নতির কারণ তার দায়িত্ববোধ, কর্তব্যনিষ্ঠা, উদার মন-মানুষিকতা, স্বপ্ন বাস্তবায়নের তীব্র ইচ্ছা, সততা, আত্মবিশ্বাসী মনোভাব ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা।
অতসী ও কুসুম এই দুই প্রচণ্ড উদারমনা নারী চরিত্রকে খুব ভালোভাবে এঁকেছেন ঔপন্যাসিক।হাজারির স্ত্রীও অনেক কষ্টসহিষ্ণু মহিলা। শুধু পদ্মঝি বাদে উপন্যাসের সব কয়টি নারী চরিত্রই অসাধারণ। তবে হাজারি চরিত্রটিকে বেশী উদার করতে যেয়ে অনেক ক্ষেত্রে তাকে মেরুদণ্ডহীন করে ফেলেছেন ঔপন্যাসিক। অনেক ক্ষেত্রে খোঁড়া যুক্তিও দিয়েছেন তাকে দিয়ে। তাকে এতটা লিবারেল না করলেই বোধহয় ভালো হতো।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড