• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ (২৯তম পর্ব)

  রিফাত হোসেন

০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:২০
গল্প
ছবি : প্রতীকী

সকাল হতেই সানি উদ্ভট একটা কাজ করে বসল সারার সাথে। সানি যে এটা করেছে, তা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সারা। কিন্তু আসলেই সানি কাজটা করেছে। সারার পাশে গম্ভীরমুখে বসে আছে মিথিলা আর অধরা। সানি সিগারেট খেতে গেছে। অধরা থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বলল, ‘বালডা সক্কাল সক্কাল কী একটা কাজ করে বসল বলতো।’

মিথিলা অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘বালডা আবার কে?’

অধরা ঠোঁট বাঁকা করে বলল, ‘কে আবার? ওই হারামজাদা সানি।’

হঠাৎ দরজার কাছ থেকে কেউ একজন বলে উঠল, ‘আমাকে হারামজাদা বলিস! এত্তো সাহস তোর। দাঁড়া, দেখাচ্ছি তোকে।’

অধরা দরজার দিকে তাকাতেই দেখল সানি ওর দিকে তেড়েমেরে আসছে। ভীত হওয়ার মতো ঘাপটি মেরে মিথিলার ঘা ঘেঁষে বসে রইল অধরা। সানি অধরার পাশে দাঁড়িয়ে, অধরার চুল ধরে টান দিলো। ব্যথায় "উফ্" করে শব্দ করল অধরা। সারা আর মিথিলা বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল। দু'জনেই ফুসতে ফুসতে সানির দিকে তাকিয়ে রইল। ওদের দেখাদেখি ব্যথ্যা-ট্যথ্যাকে অগ্রাহ্য করে অধরা-ও ওঠে দাঁড়াল। সানি এবার মহা বিপাকে পড়ে গেল। ও বসে আছে সোফায়। আর ওকে ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে তিনটা মেয়ে৷ কোনোদিকে যাওয়ার উপায় নেই। তাই ওখানেই বসে থেকে আমতাআমতা করতে লাগল। ওরা তিনজন সানির আমতাআমতাকে গুরুত্ব না দিয়ে, সানির চুলে হাত দিলো। সানি ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য চেঁচিয়ে উঠল। কিন্তু ওরা কেউই শুনল না সানির কথা। তিনজনই যাচ্ছেতাই ভাবে সানির চুল নিয়ে টানাটানি করতে লাগল। একসময় হাঁপিয়ে গিয়ে সবাই সানিকে ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে পড়ল। সানি কাঁদার মতো করে ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তোদের একটারও বিয়ে হবে না এই জন্মে। আমি একেবারে লিখে দিতে পারি এটা। তোরা একেকটা ডাইনী। তোরা পিশাচিনী। এভাবে একটা দুধের শিশুকে অত্যাচার করা একেবারেই ঠিক হয়নি তোদের। ওরে বাবা-রে, আমার এত স্বাদের চুলগুলো অবস্থা কেমন নড়বড়ে হয়ে গেছে।’

সানির কথা শুনে সারা আবারও এগিয়ে এলো সানির দিকে। সানির শার্টের কলার ধরে বলল, ‘তোকে তো খুন করে ফেলা উচিত। কী করেছিস সেটা কী ভুলে গেছিস তুই? এভাবে আমার ইজ্জতভ্রষ্ট করে দিতে পারলি তুই? এই তোর বন্ধুত্ব।’

সারার কথায় উৎকণ্ঠা আবেশ পেলো অধরা আর মিথিলা। কিন্তু সানির হাবভাব দেখে মনে হলো, ও এতে আরো মজা পেলো। এইসব নিয়ে ওর ভাবান্তরই নেই। সারা আবারও বলল, ‘কুত্তার লিডার, এখন চুপ করে আছিস কেন?’

সানির নিজের দিকে আঙুল তাক করে অবিশ্বাসের স্বরে বলল, ‘আমি কুত্তার লিডার?’

- অবশ্যই। শুধু কুত্তা কেন? এই পৃথিবীতে যত পাগলা প্রাণী আছে, তাদের সবারই লিডার তুই। তুই এদের রাজা। উদাহরণ লাগলে গুগল এ সার্চ দে।

সারার কথা শুনে খিলখিল করে হাসতে লাগল অধরা আর মিথিলা। সানি চোখ পাকিয়ে বলল, ‘আমি যদি কুত্তার রাজা হই, তাহলে তোরা কুত্তার রানী। বিকজ আমি তোদের তিনজনকেই বিয়ে করব। ওই যে আগের সময়ের রাজা'রা যেমন ১০-১২ টা করে বিয়ে করতো, ওইরকমই। শুধু তোরা তিনজন না। আরো একজন আছে। সে এখন কলেজে পড়ে। তোরা চারজন কুত্তার রানী হয়ে আমার রাজ্যে দাসীপনা করবি। কেউ আমার হাত-পা টিপে দিবি। কেউ আবার মাথার চুল টেনে দিবি৷ কেউ আবার আমাকে চুমু দিবি।’

সানির কথা শুনে অধরা কাঁদোকাঁদো ভাবে বল, ‘তুই প্রেম করবি আমার সাথে, অথচ বিয়ে করবি সবাইকে। আর কি যেন বললি কলেজের মেয়ে নিয়ে৷ কে সেটা?’

সানি কি যেন ভাবতে লাগল। মিথিলা তখন সানির পায়ের উপর লাত্থি মেরে বলল, ‘এত্তো শখ তোর। আজ তোকে মেরেই ফেলব।’

অধরা বাধা দিয়ে বলল, ‘আরে আরে কী করছিস? আর মারিস না। যাই করুক, সবশেষে জিনিসটা তো আমারই। তাই কলিজায় গিয়ে আঘাত লাগে। আর মারিস না ওকে।’

মিথিলা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, ‘তোর ওই বালের দূর্বল কলিজা বাংকে ঢুকিয়ে রাখ। নাহলে দু'দিন পর এ সানি হারামি তোকে বিয়ের প্রপোজাল দিবে, আর তুই রাজি হয়ে যাবি। আমি কিছুতেই ভেবে পাই না এই ছেলের মতো একটা আধা পাগলের সাথে কী প্রেম করিস তুই। এ তো সারাদিন ঘুরে বেড়ায় নতুন নতুন মেয়েকে প্রপোজ করায় ধান্দায়। রাজি হয়ে গেলে দু'দিন প্রেম করবে, এরপর বললে, সরি, আমার বিয়ে হয়েছে আরো পাঁচ বছর আগে। এক হালি বাচ্চাকাচ্চা ও আছে। তাছাড়া আজ ও যেটা করেছে, সেটার পর তো তোর সাথে আর ওকে মিশতেই দিবো না। না জানি আবার কবে রুমডেটের অফার দিয়ে বসে।’

মিথিলার কথার প্রতিবাদে সানি বলল, ‘ইহ্ বললেই হলো। নিজে তো ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়েছিস, তাই এখন আর অন্যকে সহ্য করতে পারছিস না। কী এমন করেছি আমি? যে আমার অর্ধশতাধিক নম্বরের গালফ্রেন্ড এর সামনে এভাবে বলছিস। শুনে রাখ মিস মিথিলা, এই সানি একদিনে চার-পাঁচটা করে গালফ্রেন্ডকে ম্যানেজ করে দেখিয়েছে। তবুও কারোর সাথে রুমডেট কেন, কাউকে চুমুও দেয়নি। কারণ কারোর শরীর নিয়ে খেলা করে, তার সাথে প্রতারণা করা আমি পছন্দ করি না। আজ একটা দুষ্টু ভূত মাথায় চেপেছিল, তাই সারার গালে একটা চুমু দিয়ে দিয়েছি৷ আসলে সকালে সারার খোঁজে এসে দেখি ও ঘুমোচ্ছে৷ ও মা'ই তো বলল সারা ঘরে আছে৷ তো এই ঘরে এসে দেখি বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে ও। কম্বল কিছুটা সারাতেই দেখলাম সারার মুখটা। আহা, কী যে মায়াবী লাগছিল। ঠিক সেই সময়ই দুষ্টু ভূতটা মাথায় চেপে বসল। আর ব্যাস, আমিও সারার মসৃণ গালে চুমু দিয়ে দিলাম। এবার বলুন মাননীয় স্পিকার, আমি কী সাংঘাতিক কোনো অপরাধ করে ফেলেছি? দোষটা তো সারার। ও নিজের গালটাকে এত সফট বানিয়েছে কেন?’

সারা রাগে গজগজ করতে করতে বলল, ‘শুধু কী এখানেই থেমে গেছিস? এরপর কী করেছিস সেটাও বল। আমাকে চুমু দেওয়ার সময় তুই ছবি তুলেছিস। সেই ছবি আবার ফেসবুকে আপলোড দিয়েছিস। তুই কী বুঝতে পারছিস, তুই আমার শোয়ার ঘরে এসে এই কূ-কর্মটা করেছিস। ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই তো ভাবতে আমি তোর বিয়ে করা বউ।’

সারার কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো সানি। সারা সানির গলা চেপে ধরে বলল, ‘একদম হাসবি না। তোর জন্য আমি আজকে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। ভয় হচ্ছে খুব। এতক্ষণে নিশ্চয়ই পরিচিত সবাই দেখে ফেলেছে।’

হাসিটা গলায় এসে আটকে গেল সানির। মিথিলা বলল, ‘ওকে এবার ছাড় তো সারা। ওকে এইসব বলে আর লাভ নেই।’

সারা ছেড়ে দেওয়ার পর সানি ওঠে দাঁড়াল। সারার পাশে বসে বলল, ‘আরে ইয়ার আমার কথাটা শোন আগে। আমি পাগল নই, আমি একজন সুস্থ মানুষ।’

অধরা নাক কুঁচকে বলল, ‘যা বলবি সরাসরি বল তো। কথা প্যাঁচাবি না।’

সানি হাসতে হাসতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুকে ঢুকল। এরপর সেই পোস্টটা ওদের তিনজনকে দেখিয়ে বলল, ‘ভালো করে লক্ষ্য করে দেখ পোস্টটা। আমি পাগল না মানুষ, নিজেরাই বুঝে যাবি।’

সানির কথায় কৌতূহলী হয়ে ফোনটার স্ক্রিনের দিকে তাকালো সবাই৷ কিছুক্ষণ পর সবাই নাক-মুখ কুঁচকে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল। এরপর সবাই একসাথে সানির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই পোস্টটার প্রাইভেসি তো ‘অনলি মি’ দেওয়া!’

- ইয়েস মাই ডেয়ার ফ্রেন্ডস। এটার প্রাইভেসি "অনলি মি" দিয়েই আমি পোস্ট করেছি। অথচ সবাই আমাকে শুধুশুধু অত্যাচার করলি।

অধরা মুখটা ‘হা’ করে বলল, ‘তাহলে আমরা কীভাবে দেখলাম? মিথিলা তো আমাদের দেখালো। পোস্টটা অনলি মি-তে থাকলে আমাদেরও তো দেখার কথা না।’

মিথিলা বলল, ‘আরে আমি কী আর "নিউজ ফিড" থেকে পোস্টটা দেখাইছি নাকি? আমি তো স্ক্রিনশট থেকে দেখাইছি। আসলে সকালে তো সারার এখানে আসার প্ল্যান ছিল। তাই তোকে সাথে নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু এই সানির বাচ্চার বাড়ি তো উল্টো দিকে। তাই ও একাই আমাদের আগে এসেছিল। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখি আমাদের এই চারজনের যে "চ্যাট গ্রুপ" আছে না, ওখানে সানি ম্যাসেজ দিছে। চেক করতেই দেখি ও সারাকে চুমু দিচ্ছে সেই ছবি। ওটা দেখেই তো আমার মাথা গরম হয়ে গেছে৷ আর তোকে দেখানোর পর তো তুই রাগারাগি শুরু করে দিলি। তাই আর ওর আইডি দেখার সুযোগ পাইনি। আর পোস্টটা পাবলিক বা আনপাবলিক, সেটাও খেয়াল করিনি। ঘরে এসে তো দেখলাম সানি আর সারা ঝগড়া করছে। আমাদের দেখেই সানি সিগারেট খাওয়ার নাম করে দৌড় দিলো।’

অধরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘সব দোষ তোর। তোর জন্যই আমার জান্টুস এত অত্যাচারিত হলো। আই এম সরি জান্টুস।’

অধরার ন্যাকামি দেখে নাক কুঁচকালো সারা। মিথিলা বলল, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমিও সরি।’

সবাই সরি বললেও সারা কিছুই বলল না। সানি বলল, ‘সরি বলার জন্য তোকে কী দাওয়াত দিতে হবে?’

- আমি কেন সরি বলব? ওরা তোকে বিনাদোষে মেরেছে, তাই সরি বলেছে। বাট আমি তোকে মেরেছি, এর পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে। তুই অবৈধভাবে আমাকে চুমু দিয়েছিস। হোক সেটা গালে, বা অন্য কোথায়।

- ওহ্। বয়ফ্রেন্ড চুমু দিলে বৈধ, আর জাস্ট ফ্রেন্ড চুমু দিলেই অবৈধ। এ কেমন বিচার-রে ভাই। মাননীয় স্পিকার, চারিদিকে তাকিয়ে দেখ, বর্তমান সময়ে জাস্ট ফ্রেন্ডের চুমুটা'ই বৈধতা পাচ্ছে।

সারা রাগান্বিত ভাবে বলল, ‘ধুর হালা। যা তো তুই এখান থেকে। আর শুধু তুই না, সবাই যা এখন। আমাকে অফিসে যেতে হবে। এতক্ষণে তো ভয়ে অফিসে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছিলাম। বাট এবার যেতেই হবে।’

মিথিলা দাঁড়াল৷ এরপর বলল, ‘ওকে। তুই অফিসে যা। আমরা সময় পেলে বিকেলে আসবো। আমার বিয়ের তারিখ সম্ভবত ঠিক হয়ে যাবে এবার।’

সানি পাশ থেকে বলল, ‘অভিনন্দন জানিয়ে মুডটা নষ্ট করতে চাই না সক্কাল-সক্কাল। প্রচুর দুঃখ হচ্ছে এটা ভেবে যে, কিছুদিনের মধ্যেই একজন কুত্তার রানীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবো।’

সানির কথা শুনে হাসতে লাগল অধরা। মিথিলা হেসে দিয়ে সানিকে পিছন থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

সারা অফিসে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে নিচের তলায় আসতেই দেখল সায়েম আর সারা ঘরের দরজা খুলছে। সারা ইতিকে বলল, ‘অবশেষে ফিরলে তাহলে? তোমাদের টেনশনে তো আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল।’

ইতি জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি জানতে আমি সমস্যায় পড়েছিলাম?’

- হ্যাঁ। সায়েম তো আমাকে বলেই অফিস থেকে বের হয়েছিল। এরপর ওখানে গিয়ে কী হয়েছে সবটাই আমাকে বলেছে। পরে যখন শুনলাম তোমাকে আর ফাহাদ ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন তো আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এরপর অনেকবার সায়েমকে ফোন করেছি, কিন্তু উনি ফোন ধরছিল না। তারপর ভোরবেলা সায়েম ম্যাসেজ করে বলল তোমরা এসে গেছ। তারপর একটু শান্তি পেয়েছিলাম। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি অফিসে যাচ্ছি, তোমরা রেস্ট নাও। বসকে আমি সবটা বলেছি। তিনি বলেছে সায়েমকে আজকের দিনটা বিশ্রাম নিতে।

সারা চলে গেল। যাওয়ার সময় সায়েমের সাথে একবার চোখাচোখি হলো। সারা লক্ষ্য করল সায়েম কেমন যেন মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ সারার দিকে একবারের জন্যও তাকায়নি। সারা বুঝতে পারল না সায়েমের কী হয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘কোনো সমস্যা হয়েছে সায়েম?’

সায়েম মাথা নাড়িয়ে না বলল। সারা আবার কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলল না। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবতে লাগল সায়েমের ব্যাপারটা। একবার ভাবল ইতির জন্য ওর মনটা খারাপ। আবার কেন জানি মনে হলো, সায়েমের মন খারাপ রাফার জন্য। দু'তলায় নামতেই একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সাথে দেখা হলো সারার। লোকটা সারার দিকে ভ্রু-কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ধমকের স্বরে বলল, ‘এই মেয়ে, কে তুমি?’

সারা ঘাবড়ে গেল। এভাবে একটা অপরিচিত লোকের কাছে ধমক খেতে হলো ওকে, এটা ভাবতেই সারা অপমানবোধ করছে। যদিও লোকটা বয়স্ক, তাই সেভাবে কিছু বলাও যাবে না। সারা ভদ্রতার সাথে বলল, ‘আমি সারা। কিন্তু আপনি কে? আর এভাবে আমার সাথে কথা বলছেন কেন?’

সারার কথা শুনে লোকটা ক্ষিপ্ত গলায় বলল, ‘আচ্ছা অসভ্য মেয়ে তো তুমি। আনিস উদ্দিনের সাথে এভাবে কথা বলছ। এত সাহস তোমার। তোমার বাবার বয়সী একটা লোক আমি। কোথায় সালাম দিয়ে বলবে, আঙ্কেল, আমাদের বাড়িতে এক কাপ চা খেয়ে যান। তা না করে আমাকে প্রশ্ন করছ, আপনি কে? ধুর হও আমার চোখের সামনে থেকে।’

সারাকে ধমকিয়ে কথাগুলো বললেন আনিস উদ্দিন। এরপর হনহনিয়ে উপরের দিকে চলে গেলেন। সারা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে ভাবতে লাগল কে এই লোক। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ও। এরপর হঠাৎ করেই চমকে উঠল। চোখ দু'টো কপালে তুলে মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘হায় আল্লাহ! এ কী করলাম আমি?’

আনিস উদ্দিন সায়েমের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দরজায় জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগল। সায়েম ভিতর থেকে একগাদা গালি দিতে লাগল দরজার বাইরের লোকটাকে। দরজা খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে আনিস উদ্দিনকে দেখে কেঁপে উঠল ও। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘তুমি?’

আনিস উদ্দিন কড়া গলায় বলল, ‘চেনা চেনা লাগছে?’

সায়েম নিজেকে সামলালো। ভয় পেলে একদম চলবে না। এই লোকটাকে ও খুব ভালো করেই জানে। সায়েমের ভয় পাওয়া দেখে সে আরো চেপে ধরবে। মানুষকে ধমকাতে সে খুবই মজা পায়৷ সায়েম বলল, ‘হ্যাঁ, একটু চেনা চেনা লাগছে। বলিউডের একটা মুভিতে তোমাকে ভিলেনের ক্যারেক্টার করতে দেখেছিলাম। ঠিক বলছি না?’

আনিস উদ্দিন ধমক দিয়ে বলল, ‘থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব ছেলে।’

- আচ্ছা, তোমার বাবা কী কোনো কালে জমিদার ছিল? আমি শুনেছি জমিদারের ছেলেরা এইরকম বদমেজাজী হয়। সারাক্ষণ খিটখিটে মেজাজে থাকে।

আনিস উদ্দিন সায়েমকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘বাপের সাথে ফাজলামি করছিস। এত সাহস কোত্থেকে হলো তোর? আর ওই মেয়েটা কোথায়? ইহ্, এইটুকু একটা মেয়ে, যে কি-না নিজেকেই সামলাতে পারে না, আবার গেছে চাকরি করতে। এখন আবার শুনছি প্রেম-ট্রেম ও করে।’

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বাবার বলা কথাটা শুনে আতঙ্কে উঠল ইতি। জিহ্বায় কামড় দিয়ে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।

(চলবে...)

আরো পড়ুন ২৮তম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড