রিফাত হোসেন
ফাহাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। রাফা এখন ফাহাদের বাড়িতেই আছে। রাফার শরীর অসুস্থ ছিল বলে সকালে সায়েম ওকে ফাহাদের বাড়িতে দিয়ে গিয়েছিল। ফাহাদ দরজায় কলিংবেল বাজিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
সবেমাত্র মিসেস সাহানা নামাজ শেষ করে ড্রয়িংরুমে এসেছেন। আর তখনই কলিংবেল বেজে উঠল। রাফা তখন নিজের ঘরে বিছানায় চুপচাপ শুয়ে ছিল। মাথার উপর ফুল পাওয়ার এ ফ্যান ঘুরছে। শরীরে কাঁথা নেই। পাতলা একটা জামা পরে শুয়ে আছে ও। জানালা দু'টোও খোলা রেখে দিয়েছে। ভোরবেলা প্রকৃতির শীতল বাতাস আর ঘরে ভিতরের যান্ত্রিক বাতাস ওকে কাবু করতে পারেনি। জেদ ধরে সেভাবেই শুয়ে আছে। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে ওর হুশ ফিরে এলো। আড়মোড়া হয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গেল। ড্রয়িংরুমে উঁকি দিতেই দেখল ওর মা দরজা খুলে দেওয়ার জন্য যাচ্ছে। রাফা সেদিকে নজর না দিয়ে ঘরের ভিতরে চলে এলো আবার। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল একবার। চারিদিকে এখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি ভাবে। রাফা আয়নায় নিজের শরীরটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। এদিক-ওদিক ঘুরে ভালো করে সবকিছু দেখার পর বলল, ‘সবাই বলে বিয়ের পর মেয়েরা অন্যরকম হয়ে যায়। সবদিক দিয়ে তাদের পরিবর্তন আসে। কই আমি তো আগের মতোই আছি। তাহলে নিশ্চয়ই ওরা সবাই ভুল বলতো।’
কথাটা বলে সন্তুষ্ট হতে পারল না রাফা। নিজেই আবার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘উঁহু। ওরা ঠিকই বলতো। আমার মধ্যে অনেক কিছুরই পরিবর্তন এসেছে। এই যে আমি এখন সবকিছু অন্যরকম ভাবে চিন্তা করি৷ অনেকটা মুরুব্বিদের মতো। শরীরেরও পরিবর্তন এসেছে। এই যে সায়েমের হাতের স্পর্শে আমার গালটা ফুলে আছে এখনো। অথচ আগে তো এইরকম একেবারেই হতো না। এটাও একটা পরিবর্তন।’
ড্রয়িংরুমের মাঝখানে এসে দাঁড়াল সায়েম, ফাহাদ, ইতি, জয় আর আবির। আর ওদেরকে হতভম্ব নয়নে তাকিয়ে দেখছে মিসেস সাহানা। ঠিকঠাক দেখতেও পারছেন না তিনি। ইদানীং তার চোখে সমস্যা হয়েছে। ফাহাদকে অবশ্য এই বিষয়ে কিছুই বলেনি। উনি জানেন এটা অন্যায়। আগে থেকেই ছেলেকে চোখের সমস্যার কথা জানানো উচিত। পরে বিরাট কোনো সমস্যা হতে পারে। তবে চোখের অবস্থা যা-ই থাক না কেন, তিনি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেককেই চিনতে পারছেন। জয় আর আবিরকে চিনতে একটু অসুবিধা হয়েছে বটে, তবে তিনি প্রথমেই বুঝতে পেরেছেন এই নতুন দু'জন কারা। সায়েম আর ইতিকে তো তিনি খুব ভালো করেই চিনেন।
মিসেস সাহানা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে গলা ছেড়ে বললেন, ‘তোরা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সোফায় বোস। আর বল কী হয়েছে? আর ফাহাদ, এত ভোরে ফিরলি যে! তোর না আজ দুপুরে ফেরার কথা ছিল।’
মায়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফাহাদ দু'তলার দিকে তাকিয়ে জোরে বলল, ‘রাফা।’
মিসেস সাহানা ছেলেকে চুপ থাকার নির্দেশ দিয়ে বললেন, ‘মেয়েটা গতকাল সকাল থেকে কিছুই খায়নি। সায়েম ওর ফোন রিসিভ করছিল না বলে ভাংচুর শুরু করে দিয়েছিল রাতে। আমি অনেক কষ্টে ওকে শান্ত করেছি।’
ফাহাদ কড়া গলায় বলল, ‘এইসব ওর নাটক। আমাদের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এইসব করেছে৷ নিজের কূ-কর্ম ধরে পরে যাবে বলে নতুন এক নাটক শুরু করেছে। যাতে ওর প্রতি আমাদের মায়া হয়।’
মিসেস সাহানা জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফাহাদের দিকে। ফাহাদ সেদিকে না তাকিয়ে আরো জোরে ‘রাফা’ বলে ডাক দিলো। আর কিছুক্ষণ পরেই সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রাফা বলল, ‘ভাইয়া এসে গেছ তুমি।’
রাফার চোখের দিকে তাকিয়ে আহত হওয়ার মতো ফাহাদের ভিতর থেকে নিঃশব্দে একটা আর্তচিৎকার বেরিয়ে এলো। বৃদ্ধদের মতো রাফার চোখ জোড়া একদম ভিতরে চলে গেছে। ফাহাদ নিজেকে সামলে নিলো। এবং মনে মনে বিশ্বাস করে নিলো, এগুলো সব রাফার অভিনয়। রাফা ড্রয়িংরুমে এসে অবাক চোখে বেশ কিছুক্ষণ ইতির দিকে তাকিয়ে থেকে কী যেন ভাবতে লাগল। ইতি হঠাৎ নিজের চোখেমুখে পরিবর্তন নিয়ে এলো। এমন একটা ভাব ধরল, যেন রাফার মনের ভিতরের সব ভাবনা ও জেনে গেছে। কিংবা নিখুঁত কোনো যন্ত্র দিয়ে মনের ভাবনা পড়ে ফেলেছে। কিছুক্ষণ নিজের মধ্যে কথাগুলো সাজিয়ে নিয়ে রাফার চোখ ছানাবড়া করে দেওয়ার জন্য ইতি বলল, ‘কি রাফা? নিশ্চয়ই এটাই ভাবছ যে, আমি রোদের সাথে না থেকে এইসময় এখানে কী করছি?’
ইতির কথাটা ম্যাজিকের মতো কাজ করল। সত্যি সত্যি রাফা চোখ পাকিয়ে "হা" করে তাকালো ইতির দিকে। ইতি মনে মনে হেসে দিয়ে রাফাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘সে কি! তোমার সেই "অদৃশ্য মানব" নামের বন্ধু, তোমাকে কিছু জানায়নি? নাকি সে ঘাপটি মেরেছে ইজ্জতভ্রষ্ট হওয়ার ভয়ে। অবশ্য ইজ্জৎ বলে কিছু আর বাকি নেই তার।’
রাফা ঘোরের মধ্যে চলে যাওয়ার মতো করে বলল, ‘আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তোমরা থেকে শুরু করে, তোমাদের কথাও ফেকাশে লাগছে।’
ফাহাদ হঠাৎ ধমক দিয়ে বলল, ‘একদম ফাজলামি করবি না।’
রাফা বিস্ফোরণের চোখে তাকালো ফাহাদের দিকে। ফাহাদ রেগেমেগে রাফার কাছে এলো। হঠাৎ রাফার একটা হাত জোরে চেপে ধরে বলল, ‘আর একটা কথা বললে তোকে খুন করে ফেলব আমি।’
হাতের ব্যথাটা রাফার মস্তিষ্কে গিয়ে আঘাত করল। ফাহাদের একপাশের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠল ও। সায়েম এগিয়ে এসে রাফার হাতটা ফাহাদের হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘কি করছিস ফাহাদ? ওর হাতে ব্যথ্যা আছে। যা বলার মুখে বল।’
ফাহাদ অবাক হয়ে বলল, ‘ওর হাতে আবার কী হয়েছে?’
সায়েম বিব্রত হলো। ইতিও মাথা নিচু করে ফেলল। রাফা হঠাৎ মাথা তুলে বলল, ‘বাথরুমে পরে গিয়ে হাতটা সামান্য একটু মচকে গেছিল সেদিন।’
সায়েম আর ইতি অবাক হয়ে তাকালো রাফার দিকে। রাফা আস্তে আস্তে এক হাতে চোখের জল মুছে ফাহাদের সামনে অপরাধীর মতো করে দাঁড়াল। ফাহাদ বলল, ‘এটা কী নাটকের কোনো অভিনয় করতে গিয়ে হয়েছে? নাকি হাতে কিছুই হয়নি। এটাও একটা অভিনয়।’
রাফা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলল আবার। সায়েম এগিয়ে এসে বলল, ‘ও মিথ্যে বলছে। আমি সেদিন রেগে গিতে ওর হাত ধরেছিলাম। একটু জোরেই ধরেছিলাম বলে ব্যথা পেয়েছে ও।’
ফাহাদের বুকের ভিতরে কচকচ শব্দ হতে লাগল। ওর মনে হলো বুকের ভিতরের টাটকা কলিজাটা কেউ কচকচ শব্দ করে খাচ্ছে। হঠাৎ রাফা বলে উঠল, ‘কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া?’
ফাহাদ অবাক হলো। কিন্তু তৎক্ষনাৎ আবার চোখেমুখে রাগী একটা ভাব এনে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, ‘বল কেন করলি এতকিছু? অন্যের জীবনটা অন্ধকার করে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোকে?’
রাফা হেসে দিয়ে বলল, ‘চাঁদ বা সূর্যের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোনো যোগাযোগ বা কোনো সম্পর্ক নেই ভাইয়া। সুতরাং কারোর জীবনে অন্ধকার চলে আসার পিছনে আমার কোনো হাত নেই। সবই চাঁদ-সূর্যের থেকে হয়েছে।’
ফাহাদ নিজের রাগটাকে সামলাতে পারল না। এইরকম সিরিয়াস মুহূর্তে ফাজলামি করতে শুধুমাত্র মেডেল প্রাপ্ত বেয়াদবরাই পারে। ফাহাদ কোনোকিছু না ভেবেই রাফার গালে ঠাসস করে থাপ্পড় মেরে দিলো। ফাহাদের এরূপ কাণ্ডে স্তম্ভিত সবাই। রাফা নিজের মা'কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
ফাহাদ ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল, ‘তোকে এই থাপ্পরটা মেরেছি আমি নিজেকে আঘাত করার জন্য। শুনতে চাস কীভাবে তোকে মেরে আমি নিজেকে আঘাত করলাম? ছোট থেকে তোকে আমি যে আদর, ভালোবাসা আর স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। তোকে যতটা সময় দিয়েছি, ততটা সময় আমি নিজেকেও দিইনি। আমি নিজেকেও ততটা ভালোবাসিনি যতটা তোকে ভালোবেসে ছিলাম। তোকে যখন টিউশনির স্যার পড়া না পারার অপরাধে মারতো, তখন আঘাতটা আমারই হয়তো বেশি লাগতো। সেজন্যই তো নিজেই পড়াতাম। যাতে পড়া না পারার অপরাধে আর মার খেতে না হয় তোকে। তোর কোনো ধারণা নেই যে, একটা ভাইয়ের কাছে তার বোন কী। বাবা’রা মেয়েদের রাজকন্যার মতো ভালোবাসে। আর একজন ভাই, তার বোনকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। হয়তো সবাই না, বাট অধিকাংশ ভাই'ই নিজের বোনকে জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। তারা সবসময় এটাই চিন্তা করে যে, বোনের কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো কীভাবে? আমি জানি না আমার মতো বোন পাগল ভাই এই পৃথিবীতে আছে কি-না। বাট মা জানে, আমি তোকে কতটা ভালোবাসি। তুই যখন স্কুলে পড়াশোনা করতি, তখন আমি অফিসে কাজ করতাম। অফিসে দুপুরের খাবারের কথা বলে বাইরে বের হতাম। কিন্তু কোনো রেস্টুরেন্টে, বা হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাবার না খেয়ে আমি তোর স্কুলে চলে যেতাম। কেন জানিস? ভয়ের জন্য। ভয় হতো প্রচণ্ড। সবসময় চিন্তা হতো এই ভেবে যে, আবার পড়াশোনা না পারার অপরাধে কোনো স্যার বা ম্যাডাম তোকে মারল। যখন তোর বন্ধুরা আমাকে বলতো, আজকেও তোকে মেরেছে স্যার। তখন আমার বুকে কতটা আঘাত লাগতো তুই ভাবতে পারবি না। ইচ্ছে করতো যে তোকে মেরেছে, তাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু সেটা তো আমার শিক্ষা ছিল না৷ তাই নীরবে সহ্য করে যেতাম। তোরা ভাবতি আমার চোখে জল নেই। আমি কাঁদতে পারি না। কিন্তু তোরা ভুল জানতি। সবাই কাঁদতে পারে। সবারই চোখে জল আছে। শুধু কেউ প্রকাশ্যে কাঁদে, আর কেউ একান্ত ভাবে, নীরবে কাঁদে। আমি সবসময় চাইতাম আমার বোন সবার সেরা হোক। যাতে এই পৃথিবীর কারোর সাথে আমার বোনের তুলনা করা না যায়। তোকে নিয়ে আমার হাজারো স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তুই সেসব কিছুই করলি না। উল্টো জঘন্য একটা পথে পা দিলি। শুধুমাত্র নিজের জেদ বজায় রাখার জন্য অপরাধ করে গেছিস একের পর এক। তোর জন্যই ইতি ভয়ঙ্কর এক বিপদে পড়তে যাচ্ছিল। রোদ কে কতটা জানিস তুই?’
সায়েম ফাহাদের কাধে হাত রেখে, ফাহাদকে শান্ত হতে বলল। রাফা মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘আজ তোমার গালফ্রেন্ড কষ্ট পেয়েছে বলে তুমি আমাকে কষ্ট দিচ্ছ৷ এই তোমার বোনের প্রতি ভালোবাসা।’
ফাহাদ সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে রাফাকে মারা জন্য আবার এগিয়ে গেল৷ কিন্তু রাফার সামনে গিয়ে থেমে গেল। হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো টেনে ধরে, রাগে ফুসতে ফুসতে বলল, ‘আরে ভাই তোকে কীভাবে বুঝাবো আমি? তুই আমাকে মেরে ফেললেও আমি যতটা কষ্ট পাবো, তার থেকেও হাজারগুন কষ্ট পাবো যখন নিজের চোখে দেখব তোর জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতি হচ্ছে। কেন বুঝতে চাইছিস না তোর অপরাধ জগতে আসাটা আমাকে কতটা যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি তোকে যে শিক্ষা দিয়েছি, তোর কাজকর্ম ঠিক তার উল্টো। এতে তোর বিবেকে বাধে না হয়তো, বাট আমার খুব কষ্ট হয়। কারণ তোর জন্যই আমি জীবনের অর্ধেকটা সময় দিয়ে দিয়েছি। তোকে যখন রাস্তাঘাটে কেউ বিরক্ত করতো, তখম মায়ের যতটা কষ্ট হতো, তার থেকেও বেশি কষ্ট আমার হতো। কারণ প্রতিটি ভাই মনে মনে বিশ্বাস করে, ভাই থাকতে বোনের কোনো ক্ষতি হতে পারে না। অন্যদের মতো আমিও এটাই বিশ্বাস করতাম। হয়তো একটু বেশিই। আর সেজন্যই তোকে সবসময় আগলে রাখার চেষ্টা করতাম।’
রাফার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল। ফাহাদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘কেন করলি এটা? কীসের অভাব ছিল তোর? কেন বুঝতে চাইছিস না, সবসময় নিজের স্বার্থ ভাবলে হয় না। অন্যেরটাও একটু ভাবতে হয়৷ সায়েমের প্রতি তোর যে ভালোবাসা, সেটা অপরাধ নয়৷ কিন্তু ওর সাথে তুই যেটা করেছিস, সেটা অপরাধ। তবুও আমি মেনে নিলাম তুই শুধুমাত্র সায়েমকে পাওয়ার জন্য এইসব করেছিস৷ কিন্তু এরপর? সায়েমের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তুই যা করছিস, সেটা কী ঠিক? কারোর ইচ্ছেতে জোর করে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তো তোর নেই। তাহলে কেন এতকিছু? সায়েম তোকে মেনে নিলে আমার কোনো কথা ছিল না৷ কিন্তু ও তো তোকে মেনে নিবে না। কারণ ও অন্য একজনকে ভালোবাসে। তুই যেমন সায়েমকে পাওয়ার জন্য এতসব করেছিস, সায়েমেরও তো ইচ্ছে করে ওর ভালোবাসার মানুষকে পেতে৷ বাট ও তোর মতো করে কাউকে পেতে চায় না৷ সেজন্যই অপেক্ষা করে আছে৷ আচ্ছা, সায়েমের ব্যপারটি গেল। এবার ইতির ব্যাপারে আসি। ইতি তোর কী ক্ষতি করেছিল? কেন ইতির সাথে এইরকম ষড়যন্ত্র করলি? যদি সময়মতো আমরা সব জানতে না পারতাম, তাহলে ইতির কী হতো একবার ভেবে দেখ৷ তুই চাইলে আগেই আমাদের সবটা বলে দিতে পারতি। কিন্তু সেটা না করে রোদকে সাহায্য করলি৷ আচ্ছা, তুই কী জানিস না আমি ইতিকে ভালোবাসি। ইতির ক্ষতি হলে যে আমি কষ্ট পাবো সেটা কী জানিস না তুই? অবশ্য এর থেকে বেশি কষ্ট তুই আমাকে দিয়েছিস। সে তুলনায় এটা কিছুটা হলেও কম। সত্যি বলছি রাফা, আমার প্রচণ্ড লজ্জা করছে তোকে বোন বলে পরিচয় দিতে। তুই যে আমার বোন, সেটা ভাবতেই আমার ঘৃণা করছে৷ তোর পায়ে পড়ি রাফা, আমাকে আর ভাই বলে ডাকিস না। তুই তোর মতো থাক, আমাকে আমার মতো থাকতে দে। তোর কিছু প্রয়োজন হলেও আমাকে কিছু বলবি না৷ যা বলার মা'কে বলবি। মা কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিবে।’
ফাহাদের হাত-পা সব অবশ হয়ে আসছিল আস্তে আস্তে৷ সায়েম ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, ‘একটু শান্ত'হ ফাহাদ। রাগের মাথায় উল্টো পাল্টা বলছিস তুই। তুই বরং বিশ্রাম নে। আমি রাফাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি এখন।’
সায়েমের কথা শুনে প্রতিবাদী কণ্ঠে রাফা বলল, ‘কোনো দরকার নেই। তোমাদের কাউকেই আমি চাই না। আমাকে নিজের মতো করে থাকতে দাও। এখন কী করুণা দেখাতে এসেছ? ওই বাড়িতে থাকতে কতকিছু করেছি শুধুমাত্র তোমাকে পাওয়ার জন্য। কিন্তু তুমি সবসময় আমাকে কষ্ট দিয়েছ। আর এখন আমার পরিবার আমাকে কষ্ট দিচ্ছে দেখে তুমি দরদ দেখাতে এসেছ। আমার কারোর করুণা চাই না। নিজের মতো করে বাঁচতে পারলে বাঁচবো, অন্যথায় মরে যাবো।’
সায়েম রাফাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘চুপ কর রাফা। আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না ঠিকই, বাট তোমার আর আমার বিয়ে হয়েছে শরিয়ত মোতাবেক। ধর্মীয় ভাবেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। আর সেটা চাইলেই এত সহজে ভুলে যেতে পারব না আমি। তাই বলছি, যতদিন আমাদের ডিভোর্স না হয়, ততদিনে তোমার সব দায়িত্ব আমার।’
সায়েমের কথাকে অগ্রাহ্য করে রাফা মা'কে সরিয়ে দিয়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগল। কিছুটা উপরে ওঠে আবারও নিচের দিকে তাকিয়ে সায়েমকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। তোমার আর তোমার বোনের জন্য এইসব হয়েছে। তোমরা আমার কাছে এই পৃথিবীর সবচেয়ে অপ্রিয় মানুষ আজ থেকে।’
সায়েম আর ইতি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রাফার চলে যাওয়ার দিকে। ফাহাদ সায়েমের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড়া করে বলল, ‘রাফার ব্যবহারের জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’
সায়েম মৃদু হাসি দিয়ে ফাহাদকে বলল, ‘রাফাকে একটু নজরে রাখিস।’
সায়েমের ইঙ্গিতটা বুঝতে পারল ফাহাদ। তাই জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করল।
সকাল হতেই সানি উদ্ভট একটা কাজ করে বসল সারার সাথে। সানি যে এটা করেছে, তা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সারা। কিন্তু আসলেই সানি কাজটা করেছে। সারার পাশে গম্ভীরমুখে বসে আছে মিথিলা আর অধরা। সানি সিগারেট খেতে গেছে। অধরা থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বলল, ‘বালডা সক্কাল সক্কাল কী একটা কাজ করে বসল বলতো।’
মিথিলা অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘বালডা আবার কে?’
অধরা ঠোঁট বাঁকা করে বলল, ‘কে আবার? ওই হারামজাদা সানি।’
(চলবে...)
আরো পড়ুন ২৭তম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড