• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম (১৬তম পর্ব)

  রোকেয়া আশা

৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৪৩
গল্প
ছবি : প্রতীকী

ওরা নিচে নেমে ভ্যানে উঠে বসে সরাসরি। ফিউদরও স্বস্তি পায়, এদের সাথে আর বেশিক্ষণ থাকতে হবে না ভেবে। ভ্যালেন্তিনাকে এর মধ্যেই ফোন দিয়ে জানিয়েও দিয়েছে রেডি হয়ে থাকতে। ছেলেমেয়ে গুলোকে লিলিয়ায় পৌঁছে দিয়ে ভ্যালেন্তিনাকে পিক করতে যাবে, তারপর ডিনার ডেট।

পুরো রাস্তায় খুব বেশি কথাবার্তা আর হয় না ওদের। চোখের পলকেই রাস্তাটা ফুরিয়ে গেলো। লিলিয়ার সামনে ওদের নামিয়ে দিয়ে ফিউদর চলে যায় ভ্যান নিয়ে।

এপার্টমেন্টের সামনে পৌঁছে ভ্যালেন্তিনার নাম্বারে ফোন দেয়, নিচে নামতে বলে। ভ্যালেন্তিনা রেডিই ছিলো৷ লিফটে করে চারতলা থেকে নিচে নামতে সময় লাগে না তার। ফিউদরের গাড়ির সামনে এসে কাচে টোকা দেয়। জানালা দিয়ে মাথা বের করেই চমৎকৃত হয়ে যায় ফিউদর। ভ্যালেন্তিনার ফ্যাশন সেন্স বরাবরই মুগ্ধ করে ওকে। চমৎকার একটা ইভিনিং ড্রেস পরে এসেছে মেয়েটি। গাঢ় বেগুনি রঙের স্কার্ট, তাতে হলুদ আর সবুজের মিশেলে প্রিন্ট; আর আপার ড্রেসে হালকা হলুদ রঙের টার্টল নেক সোয়েটার। সোনালি চুলগুলো স্ট্রেইট করেছে আজ, বা দিকে সিঁথি কাটা। কানে বেগুনি পাথরের ছোট্ট টপ আর ঠোঁটে ন্যুড লিপস্টিক। মার্জিত, ছিমছাম সাজের এই মেয়েটাকে ফিউদর ভালোবাসে। - গাড়ি এটাই নেবে? ভ্যানে বসে থাকা ফিউদরের সাথে হাল্কা গলায় ঠাট্টা করে সে। ফিউদর বোকার মতো হাসে। তারপর ভ্যান থেকে নেমে পুরনো ফোর্ডসটা বের করে। তারপর গেটের দিকে মুখ করে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে নেমে গিয়ে সামনের দরজাটা খুলে দেয়। নাটকীয় ভঙ্গিতে কুর্নিশ করে বলে, ‘গেট ইন, ইওর হাইনেস!’ ভ্যালেন্তিকা মুচকি হেসে ফিউদরের গালে একটা চুমু খেয়ে গাড়িতে উঠে বসে। সন্ধ্যেটা ভালোই কাটলো ফিউদরের। রাতের প্রথম অংশটুকুও। ডিনার শেষে এপার্টমেন্টে ফিরে আসার পর বিছানায় ভ্যালেন্তিনার সাথে বহুক্ষণ কাটানোর পর ক্লান্তিতে যখন দুজনেরই চোখ বুজে এসেছে, তখন হঠাৎ সচকিত হয় ফিউদর। এলার্ম সেট করে রেখেছিলো আগেই৷ আইজ্যাকের সাথে কথা বলতে হবে।

উঠতে যাবে, ভ্যালেন্তিনা বিড়ালছানার মতো ওর বুকের কাছে গুটিশুটি হয়ে যায়। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে সাবধানে ওকে সরিয়ে কম্বল দিয়ে নগ্ন শরীরটা ঢেকে দেয় ফিউদর। এভাবে মাঝরাতে ওর উঠে ব্যক্তিগত ল্যাবে চলে যাওয়াটা নতুন না। ভ্যালেন্তিনা অভ্যস্ত এতে।

যতটুক সম্ভব নিঃশব্দে সাউন্ডপ্রুফ ল্যাবটায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে পিসির সামনে গিয়ে বসে হেডফোনটা কানে দেয়। আইজ্যাকের কল আসতে সময় লাগে না। - ফিউদর স্মিরনোভ, কোরিয়া নিয়ে তোমার পরবর্তী প্ল্যান কি? ফিউদর কিছুটা বিরক্তই হয়। একবার মনে হয়, সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিলেই হয়। এরা কি করবে ফিউদরের? ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো নিয়ে নেবে? নিক৷ অন্তত এই অশান্তি থেকে তো বাঁচবে। অবশ্য, পরমুহূর্তেই রেডরুমের সেই দৃশ্যটা ; জোশেফের বিভৎস মৃত্যুর কথা মনে পড়তেই ধাতস্থ হয় ফিউদর। না। এদের অবাধ্য হওয়া চলবে না। ফিউদর নিজের পক্ষে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করে, ‘কিন্তু ইয়ুন দুয়ো না থাকায় কোরিয়া এমনিতেই অনেকটা ভালনারেবল অবস্থায় আছে।’ - বাজে কথা বলো না। একজন অনুপস্থিত, এবং হা জুনের নেটওয়ার্কে তুমি বাগ ঢুকিয়ে দেওয়ার পরেও ওরা ঠিকই র‍্যাংকিংয়ের টপ ফাইভে আছে। ফিউদর চুপ হয়ে যায়। তর্ক করে লাভ নেই৷ এমনকি ফিউদর যে হা জুনের নেটওয়ার্কে বাগ দিয়েছিলো সেটাও এরা জানে৷ কিন্তু কিভাবে? ফিউদর আপ্রাণ চেষ্টা করে কিছুটা সাহস যোগায়, তারপর প্রশ্নটা করেই ফেলে। যেই প্রশ্নটা গত ছত্রিশ ঘন্টা ধরেই ওকে খোচাচ্ছে। - কিন্তু, ইয়ুন দুয়োকে এটাক কে করেছিলো? ওপাশ থেকে নিষ্ঠুর একটা হাসির শব্দ আসে। তারপর একটা নাম। - শিল্পা খুরানা। না - চমকানোর কিছু নেই৷ ওকে নিয়ে ভাবারও কিছু নেই৷ শিল্পা খুরানা এরমধ্যেই নরকের পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। সেই গা অবশ করা তীব্র আতঙ্কটা আবারও টের পায় ফিউদর। আইজ্যাক - হামাজিয়ান রামের ভৃত্য। হামাজিয়ান রাম - ঈশ্বরের কাছাকাছি পর্যায়ের কেউ। যে সব জানে। যার ক্ষমতা অসীম। শিল্পা খুরানা যদি মারা গিয়ে থাকে এবং ইয়ুন দুয়োকে মারার চেষ্টাও যদি শিল্পা করে থাকে; তারমানে বিশাল বড় এই জালটা তৈরি করেছে ঈশ্বরের মতন এই ব্যক্তি। এদের জালের একটা অংশ ফিউদর নিজেও এখন৷ অসহায় বোধ করতে থাকে সে। ভীষণ অসহায় ।

ফিউদরের হেডফোনের মধ্য দিয়ে একদম মগজ পর্যন্ত ঢুকে যায় একটি কণ্ঠ; - শিল্পার মতো হতে পারে ভ্যালেন্তিনার সাথেও। ওকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আপাতত কোরিয়াকে স্যাবোটেজ করো ভালোমতো। আর, এই গানটা তোমার জন্য। শুভরাত্রি। আইজ্যাকের কণ্ঠ মিলিয়ে যেতেই জান্তব একটা সুর ভেসে আসতে থাকে বহুদূর থেকে। একইভাবে হেডফোন দিয়ে একদম মগজের খুব গভীরে চলে যেতে থাকে। অস্পষ্ট কোন বিলাপ কিংবা সাইরেনের সাথে অন্ধকার মেশানো এই সুরটা আগেও শুনেছে ফিউদর। ব্লু হোয়েল গেমের সাথে ভাইরাল হয়ে যাওয়া সুরটি৷ এমনিতে এসব পাত্তা দিতো না সে। কিন্তু এখন, অন্ধকার এবং নিঃশব্দ এই রাতে স্নায়ুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় সে। আর নিতে পারে না। হেডফোনটা ছুড়ে ফেলে চিৎকার করে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। লিভিংরুমে গিয়ে হাটু ভেঙে পড়ে যায়। ভ্যালেন্তিনা ছুটে আসে ওর চিৎকার শুনে। পোশাক পরার সময় পায় নি। কম্বলে প্যাঁচানো গা মেয়েটির। এসে কোন কথা না বলে দু'হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রেমিককে। আলতো করে চুলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

লিলিয়া ইনের সামনে পুলিশ ভ্যান৷ ইভান সকোলভ নিজেও সেখানে ছিলেন অনেকক্ষণ; শিল্পা খুরানার ডেডবডিটা মর্গে নিয়ে যাওয়ার পর ইভান ফিরে গেছে। পুরো হোটেলেই থমথমে অবস্থা। বিদেশি একটা মেয়ে ফট করে মরে গেছে, ব্যাপারটা দুঃখজনক কিনা; সেই বিচারের চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাপারটা মাদার রাশার ইমেজের জন্য সমস্যাজনক৷ এবং, মেয়েটা বিদেশি হওয়ায় ওকে সরাসরি ফরেনসিকেও নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনার সূত্রপাত সন্ধ্যের দিকে। বাংলাদেশের টিমের দুই সদস্য, আয়েশা সিদ্দীকা আর দীপ্ত রায়ের সাথে নাকি দেখা করার কথা ছিলো শিল্পা খুরানার। সেইমতন শিল্পার রুমে গিয়ে নক করে ওরা দুজন। কোন সাড়া না পেয়ে ডোরনবে মোচড় দিয়ে বুঝতে পারে দরজাটা লক করা। বহুক্ষণ ডাকাডাকির পরেও যখন দরজা খোলা হয় না, তখন রিসিপশন ডেস্কে গিয়ে জানায় ওরা। বাড়তি চাবি রিসিপশনে ছিলো যদিও, কিন্তু তাতেও দরজা না খোলায় বোঝা যায়, ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো।

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর ১৫তম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড