• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : রাখালিয়া

  রাজু অনার্য

২৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৩১
গল্প
ছবি : প্রতীকী

দরজায় করাঘাতের শব্দ শুনেই তড়াক করে বিছানায় উঠে বসে মায়মুনা। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ওর। আর হবেই না কেন? দুপুর থেকে সংসারের সব কাজ একা হাতে সামলিয়েছে সে। রাতে ভাত নিয়ে বসেও খাওয়া হয়নি তার। কাঁসার গ্লাসের পানিতে হাতটা ধুতেই উত্তরের চক থেকে হু হু করে কারো কান্নার মত বাঁশির করুণ সুর ভেসে আসে। শেখ বাড়ির মেঝো তরফের রাখাল হাকিমদ্দি বাঁশিতে সুর তোলে অবসর পেলেই। আর সারাদিনের ঘরকন্না সামলে যখন খেতে বসে মায়মুনা, প্রায়শই ঠিক তখনি যেন অবসর মেলে ওর। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নিজের খাওয়া শেষে হাত ধুতে ধুতে ওর শাশুড়ি আজও মনে করিয়ে দিয়েছে, ‘আর বাঁশির বাজনা হুনলে এক মার পুতের খাইতে নাই, পুতের অনিষ্ট অয়।’

তারপর শুরু করে বহু শ্রবণে কানে ব্যথা জাগানিয়া পুরানো দিনের কেচ্ছা কাহিনি। সেই কবে কোন দূর দেশে এক রাখাল তার বাঁশি বাজাতো রাত নিশিথে। সেই দেশের রাজা ছিল বাদশা একাব্বর। তার সাত বিবির মধ্যে ছোট বিবির ঘরে ছিল একমাত্র পুত্র জামাল। বাদশা’র সমস্ত মায়া-মহব্বত, টান ছিল ছোট বিবি ও তার পুত্রের উপর। অন্যসব বিবিরা যুক্তি করে কি করে ছোট বিবি ও তার পুত্রের ক্ষতি করা যায়। তারপর এক অমাবস্যার ঘোর নিশিথে বাঁশির সুর বাজতেই সব সতীনেরা নানা ছলে ভুলিয়ে ভাত খাওয়ায় ছোট বিবিকে। সে রাতেই রক্তবমি করতে করতে মারা যায় জামাল। তার শোকে পাগল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে দুই চোখ লাল কানাক্কুয়া পাখি হয়ে যায় বাদশা একাব্বর। এখনো সেই পাখিরূপী বাদশা ভোলেনি তার পুত্র হারানোর ব্যথা। তাই সময় অসময়ে ঝোপঝাড়ে ডেকে ওঠে পুৎ কো, পুৎ কো বলে। সেই থেকে এক ছেলের মায়েদের বাঁশি বাজলে ভাত খাওয়া মানা। বাঁশির শব্দ কানে আসতেই ভাত রেখে বাঁশি থামার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আর খাওয়া হয়নি মায়মুনার। মেয়েকে দাদির কাছে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। প্রাণান্ত পরিশ্রম ও অনাহারের অশান্তি তার উপর স্বামী সবজালের দুশ্চিন্তা; ঠিক শান্তি নয় ক্লান্তিতেই যেন চোখ বন্ধ হয়েছিল ওর।

বাইরে কারো হাঁকডাকে ঘুম ভাঙতেই ওর হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এতদিন পর আবার সেই চেনা স্বরে আজমল তাকে ডাকছে, ‘মায়মুনা অ মায়মুনা, উঠো। মারে ডাক দেও, আমি আইছি। মা কো, মা, অ মা।’ পাশের ঘর থেকে শাশুড়ি তাঁরস্বরে চেঁচায়, ‘অ বউ, কেডা আইছে, সবজাল আইলো নি? ও বউ।’

আজমল ফিরে এসেছে। অথচ কতদিন ওর ফেরার প্রতিক্ষায় দিন গুনেছে মায়মুনা আর কেঁদেছে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায়। ওর ফেরার পথপানে চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে চিরস্থায়ী হাঁপানি বাধিয়েছে মায়মুনার শ্বাশুড়ি। আজ যার আগমনে সবচে খুশি হত যে মায়মুনা, মেয়ে শিউলিকে দেখিয়ে বলত, ‘এই যে নেও, তোমার মেয়া।’ সেই মায়মুনা আজ আজমলের আগমনে হতবিহ্বল। দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনায় হাত-পা পাথর হয়ে আসছে তার।

নোয়াই নদীর তীর ঘেঁষা রাধাকান্তপুর গ্রামের এ বাড়িতে আজ থেকে দশ বছর আগে আজমলের বউ হয়ে পা রেখেছিল মায়মুনা। তার বাপ-দাদার বাড়ি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যদিয়ে বয়ে চলা নদীপাড়ের এ গ্রাম থেকে আরো দুই মাইল ভিতরে। তার দরিদ্র পিতা ও রিক্সা চালক ভাই অনেক তত্ত্ব তালাশ করে বিয়ে দেয় এ গ্রামে। হাটে হাটে লবণ-কেরোসিন বিক্রি করে সংসার ও কলেজ ফেল ছোটভাই সবজালের খরচ চালাতো আজমল। ফিরে রাত জেগে রাজ্যের গল্প করা ছিল তার অভ্যাস। ওর কাছেই মায়মুনা জেনেছে গাঁয়ের কোন বড় গেরস্ত মাছের বাজারে কেবল হাঁটাহাটি করে, দরদাম করে কিন্তু কিনে না কখনো। কার দশ বারো জনের সংসারে সপ্তাহ চলে একপোয়া তেলে। কেরোসিনের খরচ বাঁচাতে কাদের বাড়িতে সন্ধ্যা না নামতেই রাতের খাওয়া শেষ হয়। আবার কোন কোন মাতব্বরের চরিত্র ও মেজাজ কেমন সবই ছিল তার জানা। গাঁ ঘেঁষে বয়ে চলা নদীকে সবাই নদী বললেও এটা আসলে নদী নয়; নদ।

গাঁয়ের লোকেরা মুখে মুখে একে নয়াগাঙ বললেও এ নদের নাম যে নোয়াই এসব তথ্য সে আজমলের কাছেই প্রথম জেনেছে। যেমন জেনেছে নোয়াই’র দুঃখভরা গল্প। ওপাড়ের, মানে ইন্ডিয়ার লোকেরা নোয়াইকে ডাকে নবগঙ্গা। কারণ এ নদের উৎপত্তিস্থল গঙ্গা। গঙ্গার মোট ছয় সন্তান: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কালিগঙ্গা ও বুড়িগঙ্গা, পাঁচ মেয়ে। নোয়াই পাঁচবোনের হারিয়ে যাওয়া একমাত্র ভাই। হারানো ভাইয়ের শোকে ঝরা বোনদের চোখের পানিতে বয়ে চলে এ নদ। মাঝে মাঝে ওরও মনে পড়ে বোনদের কথা, তখন তার অশান্ত বুকে উথাল-পাতাল ঢেউ তুলে ওদের খুঁজে ফেরে আঁতিপাঁতি। তাছাড়া এমনিতে ভারি শান্ত স্বভাবের দস্তুরমত ভদ্র ছেলে নোয়াই। এইসব আরো কত কিছুই না তাকে শুনিয়েছে আজমল।

নরেন মোদি যেবার ইন্ডিয়ার রাজা হয় তার আগের বছর তিন মাসের অসুখে মারা যায় মায়মুনার বুড়ো শ্বশুর। বাপের চিকিৎসার খরচ, ডাক্তার, হাসপাতাল, নানা দৌড়াদৌড়িতে নুন-কেরোসিনের ব্যবসার চালান লাটে ওঠে আজমলের। তার উপর দেনাও হয় দেদার। কিন্তু সব চেষ্টা ও আকুতি উপেক্ষা করে মারা যায় বুড়ো। ঋণে জর্জরিত আজমল ব্যবসার চালান হারিয়ে দু’চোখে আঁধার দেখে। মানুষের জমিতে বদলা খেটে, কখনো মাটি কাটার কাজ করে ঋণ শোধ তো দূরের কথা, ঠিকমত সংসারই চালাতে পারে না সে। উপরন্তু পাওনাদারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয় তাকে।

ইন্ডিয়ায় মোদি সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর শুরু হয় গো রক্ষা আন্দোলন। যে গো মাতার ক্ষুর হতে পশমের ডগা পর্যন্ত প্রতিটা অঙ্গ দেব-দেবতার স্থান তাকে বিধর্মী যবনদের আহার হওয়া থেকে বিরত রাখাই প্রধান কর্ম বলে বিবেচিত হয় সরকারের। গাঁয়ের স্কুলের মৌলভি মাস্টার বলেছিল, ‘বুঝলা মিয়ারা, এক ঢিলে দুই পাখি মারছে মোদি মালাউন।’

তারপর ব্যাখ্যা করে বলেছে, ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচার ও প্রসারে একে তো নিজের ভোটের পাল্লা ভারি করার ধান্দা করছে, আবার অন্যদিকে মুসলমানরা যাতে ধর্মকর্ম ঠিকমত করতে না পারে! সেই ব্যবস্থা পাকা করছে ইন্ডিয়া।’ তবে মোদি সরকারের গো রক্ষা নীতিতে ইন্ডিয়ায় ধেনুরূপী গোস্পদ রক্ষা পেলেও কর্মক্ষমতা হারিয়ে ও গো খাদ্যের অভাবে প্রচুর গো দেবতা তার সন্তানের বোঝায় পরিণত হয়। তাই তারা অকর্মা বয়ষ্ক গরুগুলো দেদারছে বিক্রি শুরু করে। কিন্তু বিপত্তি কেবল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসায়। অবশ্য করিৎকর্মা বাঙালিদের কোন বিধি নিষেধ দিয়ে কখনোই থামিয়ে রাখা যায়নি। তারা সীমান্ত করিডোরের বদলে বিকল্প পথে গরু ঢোকায় বাংলাদেশে।

এর একটি আদর্শ পথ হয়ে ওঠো খরস্রোতে নোয়াই। নদের ওপাড়ে ইন্ডিয়ার ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসে রাতের বেলা। তারপর সেখান থেকে নামমাত্র মূল্যে গরু কিনে এদেশীয় ব্যাপারির জোয়ান জোয়ান রাখালেরা, ‘আল্লা আলি’ বলে গরু ভাসায় নোয়াই’ খরস্রোতা ধারায়। খরস্রোতে টান সয়ে দীর্ঘ পথ ভাসতে ভাসতে এসব গরু এসে ফজরে পৌঁছায় বাংলাদেশে। ব্যাপারিদের গরু পারাপারের এ রাখালিয়ারা কখনো ভেসে যায় খরস্রোতে টানে গরু সমেত, কখনো ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে তলিয়ে যায় নোয়াই'র অতলে। কিংবা বন্দী হয়ে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে বিহার বা অন্যকোন কারাগারে পার করে জীবনের বাকি শীত-বসন্ত। তারপরও ব্যাপারিদের রাখালের অভাব হয় না। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ রাখালিয়া পেশার পারিশ্রমিক আকাশচুম্বি। গাঁয়ের তাগড়া জোয়ান ছেলেরা দলে দলে নাম লেখায় এ পেশায়। অল্পদিনেই অনেকের স্বচ্ছলতার পাশাপাশি পঙ্গু, নিখোঁজ ও মৃতের সংখ্যাও বাড়ে গাঁয়ে।

সাত মাসের পোয়াতি মায়মুনাকে রেখে আজমলও একদিন নিরুদ্দেশ হয়। তারপর রাজ্যের জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে সাতদিন পর। সবাই বুঝতে সক্ষম হয় আজমলের অর্থপ্রাপ্তির উৎস সম্পর্কে। দীর্ঘদিন পর আজমলের দেওয়া শাড়ি-কাপড় ছুড়ে ফেলে অঝোরে কেঁদেছে মায়মুনা। কিন্তু কারো মিনতি, উপদেশ, কোন কিছুই দমাতে পারেনি আজমলকে নগদ টাকা কামানোর এ ভয়ংকর নেশা থেকে। কামিয়েছিলও সে প্রচুর। অল্পদিনেই সব দেনা শোধ করে নতুন ঘর গেরস্থালির কথাও বলত সে।

একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে আবার নিরুদ্দেশ হয় আজমল। মনের ভেতর অজানা খচখচানি থাকলেও ব্যাপারটা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে মায়মুনার। তিনদিন পর যখন পাশের গ্রামের রতন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হয় নয়া গাঙের কিনার থেকে তখন টনক নড়ে সবার। রতন জানায় সে, আজমল ও আরো তিনজন মিলে ওপার থেকে গরু নিয়ে ভাসান দিয়েছিল নয়া গাঙে। গাঙের মাঝ বরাবর আসতেই স্পিডবোর্ড নিয়ে তাড়া করে বিএসএফ। টর্চ লাইটের তীব্র আলোয় ফকফকা জ্যোস্নার মত আলেকিত করে সারা গাঙ। তারপর ওদের লক্ষ্য করে ছুড়ে গুলি। বা পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সে একাই সাঁতরে পৌঁছেছে তীরে। গরু ও বাকিদের খবর কিছুই জানে না সে। পরিবার পরিজনদের কান্নায় আবার ভারি হয়ে ওঠে রাধাকান্তপুর গ্রামের পরিবেশ। এর দুই দিন পর নোয়াই'র দশ মাইল ভাটিতে বাকি তিনজনের লাশ ভেসে উঠলেও কোন হদিশ মেলে না আজমলের। ভাইয়ের খোঁজে নয়া গাঙের আরো ভাটিতে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে আসে সবজাল। অভিজ্ঞদের পরামর্শ মত ইন্ডিয়ার বিভিন্ন জেলেও খোঁজ করেছে সে। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি কিছুই। আজমল নিরুদ্দেশই থেকে যায়।

টুনির জন্মের এক বছর পার হলেও আজমল না ফেরায় সবাই ধরে নেয় ও আর কোনদিন ফিরবে না। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে প্রায়ই এসে আফসোস করে মায়মুনার বাপ। নানা দেন দরবার করে, গ্রাম্য মাতব্বরদের গোপনে পান-তামাকের খায়-খরচা বকশিস দিয়ে ওর শ্বশুড়িকে রাজি করানোর ব্যবস্থা করে সে। তারপর একদিন বাপ ও শ্বশুড়ি মিলে অনেক শলা-পরামর্শ'র নাটক মঞ্চস্থ করে, টুনির ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তার অজুহাত ও ভাইয়ের সন্তানের প্রতি সবজালের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন বিবেচনা; তারপর ইহকাল-পরকালের ভাবনা ও ভয় দেখিয়ে সবজালের সাথে মায়মুনার বিয়ের ব্যবস্থা করে।

ভাইয়ের মৃত্যু-শোক ও নাজেহাল সংসারের সব বোঝা কাঁধে ন্যুব্জ নিমরাজি সবজাল ওর মা’র কান্না ও বিলাপের কাছে হার মেনে মত দেয় এ বিয়েতে। বয়সে ও অভিজ্ঞতায় খাঁটো লাজুক সবজাল প্রথম প্রথম দূরত্ব বজায় রাখলেও সময়ের ব্যবধানেই সে উপস্থিত হয় স্বামীত্বের সগৌরবে। মায়মুনাও ওকে অবলম্বন করে বাঁচতে চেয়েছে বাকিটা জীবন। ভালবাসার পূর্ণতায় ভুলিয়ে রেখে রাখতে চেয়েছে ওকে নিজের কাছে কাছে। পরের জমিতে বদলা খেঁটে খুঁড়িয়ে হাঁটা বলদে টানা হালের মত কোন রকমে চলছিল সংসার। সময়ের নিয়ম মেনে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় মায়মুনা-সবজাল দম্পতি। রোদের প্রাচুর্যের মধ্যে পথহারা এক খন্ড মেঘের ছায়ার মত হঠাৎ আসা ক্ষীণকায় সুখ মায়মুনাকে ভুলিয়ে দেয় অতীত জীবন। সবজালও দিনে দিনে পরিণত হয় সুখী পিতা ও স্বামীতে। তার সবটুকু ভালবাসা ও হৃদয়ের টান আবর্তিত হয় স্ত্রী-পুত্র, পরিজনকে কেন্দ্র করে। কাজ-কর্ম শেষে বাড়ি ফেরার সময় ইউনিয়ন বোর্ডের সড়ক থেকে মেঠো পথে নেমেই যখন সবজাল জোর গলায় গান ধরে, ‘তুই যদি হইতি গলার মালা রে রঙ্গিলা, তুই যদি হইতি গলার মালা।’

তখন কারো পক্ষেই আর অনুমান করা সম্ভব নয়: এই দম্পতির পূর্বোক্ত সম্পর্ক; এদের অতীত গল্প। এরই মধ্যে একদিন সকালে কাজে গিয়ে রাতে বাড়ি ফেরে না সবজাল। ঘরপোড়া গরুর জীবননাশী অভিজ্ঞতা থেকে কপাল চাপড়ে কাঁদে মায়মুনা। সবজাল বাড়ি ফিরলে পা ধরে কেঁদেছে তার। এমনকি পুত্রের মাথায় হাত রেখে শপথ করার কথা বলে বেদম মার খেয়েছে সে। তবুও বিপথ করা যায়নি তাকে রাখালিয়া পথের সাঁতার থেকে। তারপর অর্থবিত্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যের মোহে এপাড়-ওপাড় করে দিন-রাত্রি কাটে সবজালের। আর তার ফিরে আসার স্বপ্নে বিভোর মায়মুনার ঘুমহীন চোখ বিনিদ্র রজনী জাগে অজানা শঙ্কায়। যদিবা কোনদিন ও আব্দার করেছে সবজালের কাছে রাখালিয়া পেশা ছাড়ার, হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছে সে, ‘এ ব্যবসা ক্যামনে ছাড়মু? নয়া গাঙে মহাজনের গরু সামলান আর বাড়িতে তোরে সামলানই তো আমার কাম। আল্লা তো আমারে দুই জাগার রাহাল বানাইছে।’

মায়মুনা, ও মায়মুনা; ডাকের সাথে এবার দরজায় সশব্দে ধাক্কা দেয় আজমল। পাশের ঘর থেকে বুড়ি একটানা বকেই চলে, ‘বউ, অ বউ; ঘর ঘুচাও না ক্যা, এ্যা? সবজাল আইচে। এত ডাক পারে হুনো না?’ আর ঝিম ধরে বসে থাকা সম্ভব হয় না মায়মুনার। আজমলের ফিরে আসার খুশিকে লজ্জা, ভয় ও অপরাধবোধের তীব্রতায় চাপা দিয়ে নির্মম বাস্তবতা ও অজানা ভবিষ্যৎ আশঙ্কায় সজল নয়নে বিছানা ছাড়ে ও। চৌকির নিচ থেকে নিভু নিভু রাখা হারিকেনটা টেনে সলতে উসকে দিয়ে আলো বাড়ায় ঘরের। কী ভেবে আবার আলো নিভিয়ে দেয় মায়মুনা। তারপর হেঁটে হাতরে খুঁজে নেয় কাঠের দরজা। বাঁশের আড়া দেওয়া ডাসাটা নামিয়ে খিলে হাত রাখতেই মায়মুনা শুনতে পায় বাড়ির দক্ষিণ দিকের ইউনিয়ন বোর্ডের সড়ক থেকে ভেসে আসছে সবজালের গলা; সেই চেনা সুর, ‘তুই যদি হইতি গলার মালা, রে রঙ্গিলা.....।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড