• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম (১৩তম পর্ব)

  রোকেয়া আশা

১১ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৩০
উপন্যাস
ছবি : প্রতীকী

স্টিফান এসে বসে মাহিরার পাশেই বলল, ‘পাঁচটাই করেছো?’ মাথা নাড়ে মাহিরাবলল, ‘না। সাড়ে চারটা।’ স্টিফান বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে থাকে। মাহিরা ব্যাখ্যা করে, ‘পাঁচ নম্বরটা শেষ করতে পারিনি আমরা।’ - আমরা পাঁচটাই করেছি। মাহিরা উশখুশ করতে থাকে। ওর টিমমেটরা কেউ আসেনি এখনো। স্টিফান মাহিরার অস্বস্তি দেখে হাসে। পরিস্থিতি সহজ করার জন্য কথার বিষয় বদলায়। - তোমাদের দেশে ভালো টুরিস্ট স্পট কি কি আছে? - এটা নিশ্চয় তোমার মূল প্রশ্ন না। স্টিফান হেসে বলে, ‘ঠিক। তোমার টুইটার একাউন্টটা পেলে ভালো হতো।’ মাহিরাও উত্তরে হাসে বলে, ‘বাংলাদেশীরা টুইটারের চেয়ে ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামে বেশি স্বচ্ছন্দ।’ স্টিফান ফোন বের করে তার। মাহিরার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে, ‘ফেসবুক একাউন্ট আছে আমার। আইডি নেমটা অন্তত টাইপ করে দাও।’ মাহিরা মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুত ইংরেজি অক্ষরে টাইপ করে, মাহিরা জামান। স্টিফান ওতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘টিমের কাছে যাচ্ছি। পরে কথা হবে।’

দীপ্তরা লাঞ্চের প্যাকেট আর মিনারেল ওয়াটারের বোতলগুলো নিয়ে মাহিরার টেবিলটায় বসে। আসার সময়ই স্টিফানকে দেখেছে এখানে। শাহেদ হাল্কা খোচা মারতে ছাড়ে না তাকে। - এই মাহি, আমেরিকা যাওয়ার পর আমাদেরকেও একটু দেখিস। মাহিরা ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘কে আমেরিকায় যাচ্ছে?’ আয়েশা আর মিশুও ফিরে এসেছে, আয়েশার মাথায় হাল্কা ঘিয়া রঙের হিজাবটা পরিপাটি করে বাঁধা এখন। শাহেদ আর তারিকুল হাসতে হাসতে বলে, ‘মাহিরা যাচ্ছে আমেরিকায়।’ মাহিরা ভ্রু দুটো আরও কুঁচকে চিৎকার করে বলে, ‘মানে কি?’ - স্টিফান যেভাবে তোর পেছনে ঘুরঘুর করছে তাতে করে তোর আমেরিকার গ্রিনকার্ড পেতে সময় লাগবে না। মাহিরা বাদে বাংলাদেশের আর সবাই সশব্দে হেসে ফেলে। মাহিরার মুখ থমথমে করে বলল, ‘দেখো, আমি ফরেভার সিংগেল।’ মাহিরার সরল স্বীকারোক্তিতে আরেক দমক হাসির রোল পড়ে টেবিলটায়। দীপ্ত তাড়া দিয়ে, ‘সবাই আমরা খেতে খেতেও তো কথা বলতে পারি।’ সুমন লাঞ্চের প্যাকেট খুলতে খুলতে বলে, ‘অথচ আমরা কেউই কিন্তু একবারও বলি নি যে মাহিরা মিংগেল।’ মাহিরা প্লাস্টিকের চামচটা দিয়ে মাংসের একটা টুকরো মুখে পুরে বলল, ‘আমিও বলিনি যে মাশা অনেক সুন্দর, না সুমন ভাইয়া?’ সুমন একটু লাল হয়ে যায় এবার। দীপ্তকে হাসতে দেখে মাহিরা আবারও পিঞ্চ করে, ‘মৈত্র আর রায় মনে হয় একসাথে ভালোই যাবে, না?’ দীপ্ত কাশতে শুরু করে সাথে সাথেই। পাশ থেকে শাহেদ দ্রুত পানির বোতলটা খুলে দীপ্তকে দেয়। দীপ্ত পানি খেয়ে কোনমতে সুস্থির হয়ে শাহেদের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আজ শাহেদ ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে বলে চিমটি খেতে হচ্ছে না।’

হাসি আর গল্পের মধ্যে দিয়ে ওরা খাওয়া দাওয়া শেষ করার পরপরই রাশিয়ান আইটির ওপর একটা ডকুমেন্টারি ফুটে ওঠে হলরুমের সামনের বিশাল পর্দাটায়। ‘আমি বোর হয়ে মারা যাবো।’ মাহিরার উদ্ভট মন্তব্যের সাথে গত একমাস ধরেই ওর টিমমেটরা সবাই পরিচিত হয়ে আছে। কেউ কিছু বললো না। শুধু আয়েশা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় একবার। পাশের টেবিলে ইন্ডিয়ার টিমটা সতর্ক ভঙ্গিতে চেয়ে আছে সামনের দিকে। ডকুমেন্টারিটা শেষ হলো একসময়। মঞ্চে দেখা দিলেন এক সৌম্যদর্শন পুরুষ। ইভান সকোলভ। - রুশ খাবার আশা করি আপনাদের খারাপ লাগেনি। বক্তৃতা শুরু করার জন্য ইভানের এই নিজস্ব ঢংটি চমৎকার। ধন্যবাদ কিংবা শুভেচ্ছা জ্ঞাপন নয়। অনানুষ্ঠানিক, কিন্তু আন্তরিক কোন বাক্য দিয়ে কথা শুরু করে ইভান। - এবং ভালো খাবারের পরে বিরক্তিকর ডকুমেন্টারি। তবে আর অপেক্ষা করতে হবে না। বন্ধুরা, প্রবলেম সলভিংয়ের এই প্রথম রাউন্ডের ফলাফল আমাদের হাতে চলে এসেছে। হলরুম জুড়ে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়। এখান থেকেই র‍্যাংকিংয়ের টেবিল শুরু। - একটিমাত্র দল পাঁচটি প্রবলেমের সলিউশনই সঠিকভাবে করতে পেরেছে। তারা থাকবে টেবিলের প্রথম অবস্থানে। প্রথম দলটি নিয়ে জল্পনা কল্পনার মধ্যেই ইভান দলের নাম ঘোষণা করলো। - টিম ইন্ডিয়া। পাঞ্চালীদের চিৎকার আর হর্ষধ্বনি শোনা গেলো পাশ থেকে। নিশ্চয়ই, গতবারের রানার আপ ওরা। - র‍্যাংক দুই, পাঁচটি সলভ করলেও, পঞ্চম সলিউশনে একটি এরর এবং একটি ওয়ার্নিং থাকায় দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে তারা। একটু বিরতি দেয় ইভান, তারপর বলে, ‘টিম ইউএসএ।’ আবারও মুহুর্মুহু করতালি পড়ে। সেসব ছাপিয়ে ইভানের গলা শোনা যায়, ‘চারটা প্রবলেম সলভ করতে পেরেছে তিনটা দল। তবে তার মধ্যে একটা দল পঞ্চম সমস্যার অর্ধেক পর্যন্ত করায় তৃতীয় অবস্থানে থাকবে - টিম বাংলাদেশ!’ এবারে উচ্ছ্বসিত চিৎকার শুরু হয় দীপ্তদের টেবিল থেকে। - চারটি সলিউশন করে চতুর্থ অবস্থানে টিম কোরিয়া, একটি ওয়ার্নিং সহ চারটি সলিউশন করে পঞ্চম টিম কানাডা......

ইভানের বাকি ঘোষণা যেন কানেই ঢুকছে না ফিউদর স্মিরনভের। কোরিয়া চতুর্থ অবস্থানে আছে টেবিলের। ফাইনালে যাবে ছয়টি দল৷ এই অবস্থা চললে কোরিয়ার ফাইনালে যাওয়া ঠেকানো যাবে না। আজ রাতেই হামাজিয়ান রামের সাথে কথা হবে ওর, হামাজিয়ান রাম কি মেনে নেবে ফিউদরের এই ব্যর্থতা? ফিউদরের এইসব দুশ্চিন্তার সময় আরও একজন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে টিম কোরিয়ার দিকে। শিল্পা খুরানা। শিল্পা সবার অলক্ষ্যে একটা টেক্সট ম্যাসেজ লিখে পাঠায়, ‘কোরিয়া কোয়ালিফাই করবে মনে হচ্ছে।’ শিল্পার আশেপাশে কেউ থাকলে দেখতে পেতো, যেই আইডিতে ও ম্যাসেজ করছে, তার নাম - এআই আইজ্যাক।

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর ১২তম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড