নাসিম আহমেদ লস্কর
বাংলা সাহিত্য দিন দিন ক্রমশ উন্নতির পথে ধাবিত হচ্ছে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি প্রতিভায় কবিতার লালন চলছে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষাভাষীরা কবিতাকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে সুশীল সমাজ পর্যন্ত কমবেশি সকলেই কবিতার আবাদ করেন কিংবা কবিতার সুগন্ধি মনের গোলায় ভরে রাখেন।
কবি ফাহমিদা ইয়াসমিনও বেশ কয়েকদিন থেকে নতুন নতুন কবিতার আবাদ করে চলছেন। নিত্য তিনি খোঁজে বেড়ান কবিতার নুড়ি। জীবনের উপকরণ থেকে বেঁচে নেন কবিতার উপকরণ। তার কবিতায় পাওয়া যায় দেশপ্রেম, বিরহ-মিলনের হাসি-কান্না, শাশ্বত জীবনের সাদা-কালো কিংবা রংধনুর সাত রং কিংবা প্রেম, ভালোবাসা ও দ্রোহ।
মৃত্তিকা প্রকাশন থেকে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নচারী মন’ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। চার ফর্মার এ বইটিতে মোট ৫৪টি কবিতা স্থান পেয়েছে। কবিতগুলোতে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে সার্বিক জীবনের কথা, প্রেম-ভালোবাসা ও দেশের কথা। এ পর্যন্ত তার মোট ৫টি কাব্যগ্রন্থ ও ১টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
এ গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে অনেক মনকাড়া কবিতা যেগুলো খুব সহজেই একজন পাঠককে আকৃষ্ট করে। এ নিবন্ধে কিছু কবিতার অংশবিশেষ বিশ্লেষণসহ উপস্থাপন করা হলো।
ভালোবাসা কখনো মরেনা। যুগ থেকে যুগান্তর কখনো সুপ্ত, ঘুমন্ত কিংবা কখনো জাগ্রত অবস্থায় থাকে। মোহময় পৃথিবীর সব মোহ নিহিত থাকে এই শাশ্বত ভালোবাসার মধ্যেই। কবি তার কলমি শক্তি দিয়ে তাই ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘তোমার সঙ্গে দেখা হলে অনেক দিনের পর হৃদয় আমার উথালপাতাল, আবেগে থরথর!
হাত বাড়ালে মিষ্টি হেসে কাঁপলো চোখের পাতা হাতের মুঠোয় হাতের কাঁপন, হৃদয়ে হালখাতা!’ (তারারা চমকালো)
প্রতিটি মানুষের নাড়ির সাথে রয়েছে তার জন্মভূমির এক গভীর বন্ধন। মানুষ যেখানেই অবস্থান করুক না কেন জন্মভূমির প্রতি সে এক গভীর টান অনুভব করে। ভুলতে পারেনা তার স্বদেশকে। কবিও সুদূর টেমস নদীর তীরে অবস্থান করেও ভুলতে পারেননি আপন বাংলাকে। স্বদেশের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো সেখানেও তাকে তাড়ায়। শব্দের মিতালিতে ফুটিয়ে তুলেছেন তার আক্ষেপের কথা। ‘বেশতো ছিলাম আমার রূপসী বাংলায় মাঠে ঘাটে আকাশে বাতাসে মিশে মেটোপথে সবুজাভ ছায়া বেষ্টিত কত মায়াবী মমতার বন্ধনে ভুলতে পারিনা স্বজনদের।’ (রূপসী বাংলা)
বিশ্বে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লাঞ্ছিত হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী বেনিয়ারা প্রতিনিয়ত শান্তিপ্রিয় মানুষের স্বর্গীয় শান্তি হরণ করেই চলছে। পৃথিবীর এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা তাকে ভাবিয়ে তুলে। মানবপ্রেমিক কবি কবিতার ভাষায় এসব নির্মমতা ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘বিশ্বের বুকে আয়লান কুর্দি শিশুটা আজ নিদ্রাশায়ী! ...সিরিয়ার মানবতা বিলীন আজ বিশ্বজুড়ে!
...পৃথিবীর বেলা ঘনিয়ে আসছে তাই তো আজ মানুষকে মানুষ বলে করছেনা গণ্য!’ (মানবাধিকার চুপ কেন)
প্রতিটি মানুষের জীবনে একান্ত সঙ্গীর প্রয়োজন যার সাথে সারাটি জীবন নির্বিঘ্নে কাটানো যায়। একাকীত্ব মানুষকে নিঃস্ব আর নিঃশেষ করে দেয়। শত পাওয়ার মধ্যেও একাকী জীবনে একটি না পাওয়া থেকে যায়। কবির কবিতায় মানবজীবনে সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ‘ক্লান্ত শরীর হেলান দিয়ে বিছানায় একা একা মনে হলো এই জীবন বড় দুঃসহ বড় নিষ্ঠুর এই একাকীত্ব মনে হলো তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন আর ঠিকই তোমার মুখখানা যেন ভেসে উঠলো মনের পর্দায়।’ (তোমাকে)
গ্রন্থটিতে আরো অনেক কবিতা রয়েছে যেগুলো জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার বিশ্বাস সময়ের সাথে কবি তাঁর লেখনিশক্তি ব্যবহার করে আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবেন। পরিশেষে, কবি ও কবিতার সফলতা কামনা করছি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড