শোয়েব শাওন
‘মেঘ বলেছে পাহাড় ছুঁবো’ একটি কাব্যগ্রন্থ। শুধু যে একটি কাব্যগ্রন্থ তা বললে অনেক বিশেষ্য বাদ পড়ে যাবে। আবার এই বইটিকে একটি বিশেষ্য যোগ করলেও তার যথাযথ মূল্যায়ন হবে না। এই বইটির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন কবি ফারুকী ওমর এবং শাহজাদী আফরোজ ডেইজী। প্রতিটি কবিতায় রয়েছে দু’জন মানব-মানবীর নিগূঢ় প্রেমালাপ যেমন ‘পরম্পরা’ কবিতায় ফুঁটে উঠেছে- ‘- চল, সংসার পাতবি? - কোথায়? বাঁদিপোতা বুকটা আলগা করে দেখালাম ছোট্ট একটি ঘর, সখি, এই আমাদের হৃদয় পরম্পরা।’
প্রতিটি কবিতায় পাওয়া যায় প্রকৃতির সাথে মানবিক প্রেম যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ‘গায়ত্রী’ কবিতার চরণে- ‘জানালার ওপাশে তোমার মুখ, ঝুঁকে আছে সুস্মিত নক্ষত্রের মতো; একটা আকাশ তোমার আমার। একটা আকাশ ভাববো, একটা আকাশ দিন-রাত্রির আরেকটা তোমার কাব্য।’
কবিতায় প্রতিটি লাইনে রয়েছে গভীর জীবন দর্শন। যা ফুটে উঠেছে উক্ত চরণ গুলোর মাঝে। তার ‘প্রতীক্ষা’ কবিতায় নজর কাড়ে, বৃষ্টি-পাহাড়ের যুগল বিরহ, শূন্যতা সবিশেষ প্রতীক্ষা- ‘জানো, প্রতীক্ষার পায়ে শিকড় গজালে ফুল ফোটে প্রেমিক হৃদয়, ইসস! তবে ভিজিয়ে দাও। আজ আমি উন্মাতাল সিন্ধু হব, সিন্ধু হব, সিন্ধু হব।’
‘বিষদাঁত’ কবিতায় আমরা দেখি একটু ব্যতিক্রম স্বপ্নময়ী বালিকা পুরুষদের প্রতি তিক্ততার অভিমান- ‘মেয়েটি দু’ফোটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বলল; গাছদের পাশে কেবল অবলা রমনীদের মানায়, পুরুষ লোভনীয় বজ্রপাত কেবল ভাঙতে পারে, সুযোগ বুঝে বসাতে জানে বিষদাঁত।’
অথবা ‘প্রথম প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজে’ পড়লে ঘর থেকে কে যেন- টেনে নিয়ে যায় প্রকৃতির কাছে, প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার অমল শুভ্রতায় বুকটা ভিজে যায়, তাই শেষ চরণে কবির আত্মনিবেদন। - এসো বুকে, আলিঙ্গনে তোমাকে স্নান করিয়ে তবে বৃষ্টি নামাবো, তারপর অঞ্জলি দেবো তোমার পায়ে’
‘চারুলতা’ কবিতায় দেখি অপেক্ষা-প্রতীক্ষা, মান-অভিমান সবিশেষ প্রেমিক হবার তীব্র অভিপ্রায়, তাই তো কবি বলে উঠলেন নাটকীয় ভঙ্গিতে- ‘প্রেমিক হতে হলে ছয়টি ঋতু কাঁধে চেপে প্রতীক্ষার মরুতে চারুলতা ফোটাতে হয়!’
‘রাধা-বিনোদ’ পড়লে মনে হয় এই যেন আমার নিজের কথা পুরুষজন্মের অভিমানের কথা, যা উৎকর্ষ থেকে অনন্ত সুন্দরের দিকে নিরন্তর যাত্রা- ‘সংসার তো সবাই পাতে, কিন্তু পুরুষ মানুষের হাহাকারের নদী কজন নারী আর ছুঁতে পারে?’
‘পুনজন্ম’ কবিতাটি পড়ে আমার দৃষ্টি মোড় নিল অন্যদিকে- ‘এতো প্রেম, এতো আধাঁর এতো গোপন বেদনা সব কিছুই যেন মিথ্যার ঘনঘটা মনে হলো।’
‘পাহাড় বলল- গতজন্মে আমি নারী ছিলাম, তুমি ছিলে নদী; এইজন্মে চাইলেও আমরা আর এক হতে পারবো নাগো।’
বইটির পেছনের কাভার পেইজে কবি কি ভেবে লিখেছেন আমার জানা নেই। তবে এদুটো লাইন আমার সমস্ত অহংকারকে ভেঙে দিয়ে নতুন করে মানুষ হতে শিখিয়েছে। ‘প্রত্যেকটি নারীর আলাদা একটা জগত থাকে, নিজস্ব একটা নদী থাকে, যে ছুঁতে পারে সেই প্রেমিক হয়ে উঠে।’
সত্যিকার অর্থে পূর্ণেন্দুশেখর পত্রী পরে এমন শক্তিধর কথোপকথন এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বাংলা সাহিত্যে।
কব্যিগ্রন্থ : মেঘ বলেছে পাহাড় ছুঁবো লেখক : ফারুকী ওমর/ শাহজাদী আফরোজ ডেইজী প্রকাশন : হরিৎপত্র প্রকাশন প্রচ্ছদ : জহিরুল হক অপি মূল্য : ১৮০ টাকা মাত্র বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ভিজিট করুন : www.rokomari.com অথবা যোগাযোগ : ০১৭৮৪৬০৭৬৬১
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড