খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন
বাংলা সাহিত্যে কবি রহমান মাজিদের আগমন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দেশের প্রতি ভালবাসা প্রকাশকে তিনি একটি অভিনব ভঙ্গি আর ভিন্নতার স্বাক্ষর রেখেছেন। আধিপত্যবাদীদের দ্বারা প্রকৃত দেশ প্রেমিকদেরও লাঞ্ছনার স্বীকার হতে দেখা যায় বর্তমান সময়ে, সমাজে। মতের অমিলকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের সমালোচনায় দাঁড় করিয়ে অপমান অপদস্থও করতে দেখা যায়। কখনো সখনো মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধাকেও অপমানিত হতে হয়েছে রাজনৈতিক মতের অমিল সংঘটিত হবার কারণে। তাই কবি দৃপ্ততার সাথে, আত্মপ্রত্যয়ের সাথে মাতৃভূমির প্রতি দরদমাখা কণ্ঠে স্বার্থান্বেষী মহলকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন। লিখেছেন- ‘মায়ের সমান ভালবাসি আমার জন্মভূমিকে, আমার দেশে আমার প্রতি চোখ রাঙানোর তুমিকে?’
কবি রহমান মাজিদ পেশাগতভাবে একজন ব্যাংকার। অংকের দাপট আর হিশেব-নিকেশের টালি খাতায় নিমগ্ন থেকেও সময় আর সুযোগ বের করেই লিখেছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। অবহেলিত,নিপীড়িত জনগোষ্ঠির মনের কথা ধারণ করতে পেরেছেন,আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে কাব্যিক শিল্পে তা রূপায়ন করেছেন নির্মোহ ও নির্লিপ্ততার সাথে। সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালোবাসা না থাকলে এমনটা হয়ে ওঠে খুবই কম সংখ্যক মানুষের ভাগ্যে।
কবির জন্ম সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়ার কনিষ্ঠ ও গড়াই বিধৌত উপজেলা খোকসায়। ফলে উঠে এসেছে গড়াই নদীর প্রতিও অগাধ প্রেম। বর্তমান সময়ে নদীটির সঠিকভাবে ড্রেজিংয়ের অভাবে নাব্যতার হ্রাস আর পলিমাটি জমে নদীটি হারাতে বসেছে তার যৌবনদীপ্ত সোনালী দিন। কবির শাণিত কলমের নিব লিখে দিয়েছে- ‘এই নদী এই ঢেউ এই ঝাউয়ের বন আমাকে আর আকর্ষণ করেনা। ............. এক সময় ছিল তার পুরুষ পাগল উচ্ছলে পড়া যৌবন, আর কামোদ্দীপক গর্জন। তার যৌবনের মার মার ধাক্কায় দু'ধারের জনবসতিকে করেছে বস্ত্রশূন্য উলঙ্গ পথিক।’
‘নারী স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সব শেয়ালই চায় মুরগীর স্বাধীনতা কারণ,মুরগী স্বাধীন হলেই শেয়ালের স্বার্থ হয় নির্বিঘ্ন।’
একজন সময় সচেতন কবি কখনোই এড়িয়ে যেতে পারেনা তার সময়ে সমাজ, রাষ্ট্র বা ধর্মীয় জীবনের কোন সংগতি-অসংগতিকে। চুম্বকের মতো ধরে ফেলে কবির অতীন্দ্রিয় শক্তি। কবি রহমান মাজিদও তার ব্যতিক্রম নয়। লিখেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, জঙ্গিপণাসহ বানভাসি মানুষের কথা।মানুষের অধিকারের কথা লিখেছেন নিপুণ ভাবে।
পানির অধিকার কবিতায় লিখেছেন এভাবে, ‘ফোরাত নদীর জল না দিয়ে এজিদ হলো পাপী তিস্তার পানি দেয়না যারা তাদের কেমনে মাফি?’
বাঁচার অধিকার কবিতায় কবি লিখেছেন, ‘পানি বিনে বিরাণভূমি বাংলা হলো মরু মরলো মানুষ মরলো প্রাণী মরলো দেশের তরু।’
কাপুরুষ সিংহ কবিতায় কবি জুলুমবাজদের দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করেছেন, ‘দুর্বলের রক্তের ফিনকি তোমার কাছে বীরোচিত মনে হয় তাইনা?’
একই কবিতায় কবি নিজেই জবাব দিয়ে বলেন, ‘অথচ আমার কাছে কাপুরুষোচিত লাগে। কারণ,কাপুরুষ সিংহ তো শুধু মারতেই জানে আমরা তো ভাই মরেও সুখ পাই।’
অবশেষে কবি সমাজের জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আহবান করেছেন, ‘আগুনের ফুলকিরা এসো জড়ো হই নরক অনলের স্ফুলিঙ্গে ছারখার করি মিথ্যার বেড়াজাল।’
কাব্যগ্রন্থ : কাপুরুষ সিংহ লেখক : রহমান মাজিদ প্রকাশক : দি পাথ ফাইন্ডার পাবলিকেশন্স প্রকাশ কাল : জাতীয় গ্রন্থমেলা ২০১৭
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড