• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বই আলোচনা

পোলাও রান্না শিখতে নয় বরং গল্পের স্বাদ নিতে পড়ুন ‘পোলাওপাতা ও অন্যান্য’

  তানজিদ শুভ্র

২৫ মে ২০১৯, ১১:৫২
গল্প
প্রচ্ছদ : গল্পগ্রন্থ ‘পোলাওপাতা ও অন্যান্য’

গল্পকার জাকির হোসেনের ‘পোলাওপাতা ও অন্যান্য’ বইটি রকমারি ডট কম থেকে কিনেছিলাম ১৫০ টাকায়। মুদ্রিত মূল্য ১৭০ হলেও ১২% ছাড় পেয়েছিলাম। নতুন হলেও সমতট প্রকাশনীর বইয়ের বাঁধাই এবং কাগজের গুণগত মান ভালো। ৭২ পৃষ্ঠার বইয়ের হিসেবে মূল্যও ঠিক আছে। নিজের বাবা-মা’কে উৎসর্গকৃত এই বইয়ের মুখবন্ধ লিখেছেন ২০১৯ এ একুশে পদক প্রাপ্ত সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস। বইটিতে স্থান পেয়েছে লেখকের চমৎকার আটটি গল্প। নাম দেখে যদি ভাবেন বইটি পড়ে পোলাও রান্না করে প্রিয়জনকে খাওয়াবেন তবে ভুল করেই ফেলবেন; কিন্তু জাকিরের গল্পের স্বাদ আস্বাদন করতে চান তবে গল্পগুলো টুকরো কথা জেনে নিয়ে বই পড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

জাকির হোসেনের অধিকাংশ গল্পের শেষাংশে বুঝা যায় পুরো গল্পের মূলভাব। সম্পূর্ণ গল্প যদিও এক আঙ্গিকে চলে তবুও শেষাংশ পড়ার পর মূল ভাব ফুটে উঠে পাঠক মনে। আমাদের সামাজিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি যে কত সহজেই অন্যের জীবনকে বিষণ্ণতায় ভরিয়ে তুলে তা সহজেই বুঝতে পারি না। মলাটবন্দি গল্পগুলোর প্রথম গল্প ‘বমি’ এমনই এক বর্ণনা তুলে ধরে। যেখানে নায়িকা চরিত্রের অস্বাভাবিক আচরণে শারীরিক অসুস্থতার কথা না রটিয়ে আত্মীয়দের অনেকেই মিথ্যা রটনা ছড়িয়ে পুরো পরিবারের সম্মানহানির চেষ্টা করে।

আমাদের কাজের লোকের প্রতি সবসময় কি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাই? কিন্তু কেন? সন্দেহের এই দৃষ্টি ভঙ্গি একজন খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে কতখানি বিরূপ প্রভাব ফেলে তা আপনিও জানতে পারবেন যখন দ্বিতীয় ও নাম গল্প- “পোলাওপাতা” পড়বেন।

নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নিজেকে সমর্পণ করতেও অনেকে দ্বিধা বোধ করে না। এমন মানুষও আমাদের সমাজে রয়েছে সেটা যদিও লোক চক্ষুর অন্তরালে। হয়তো সমাজপতির ছোঁয়ায় তাদের দিনান্তর। তাই, বিরুদ্ধ উচ্চারণেরও কেউ থাকে না। তারই প্রেক্ষিতে লেখা- “লাং” গল্পটি সমাজের ব্যস্তবতাকে ইঙ্গিত করে।

চাঁদেরও নাকি কলঙ্ক আছে তবুও চাঁদের সৌন্দর্য নিয়েই সকলের চিন্তা চেতনা। কিন্তু নারীর জীবনে কলঙ্কের ছোঁয়া লাগলে কি কাটতে চায় তা সহজে? খালাতো ভাইয়ের সাথে প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের পর মারুফা কি তার নতুন বরের পছন্দের রঙের শাড়ি পরেও মন রক্ষা করতে পেরেছিল নতুন মেহমানদের নাকি লেগেছিল তাতেও কোনো প্যাঁচ? সে সবই জানা যাবে “প্যাঁচ” গল্প পাঠ শেষে।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের ধর্মান্ধ নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু রচনা করেছেন। জাকিরই কেন বাদ দিবে। চট্টগ্রামে বেড়ে উঠলেও গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ছোঁয়া তো ঠাঁই পাবেই সাহিত্য কলমের কালিতে। এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে পীর বিশ্বাসও গভীর। তার দারুণ এক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ‘জালালি কইতর’ গল্পে। টানাপোড়া যে সংসারের নিত্য সঙ্গী সেখানে ধর্মের বিশ্বাস ভেঙে গেলে কি পরিণতি হয় তা জানা যাবে এই গল্পে।

লেখকের সম্মাননাপ্রাপ্ত গল্প “ভালোবাসার ইরেজার”ও স্থান পেয়েছে এই বইটিতে। প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের পারিবারিক সম্পর্কগুলো কেমন যেন ভাঙতে বসেছে। হয়ত নতুন সম্পর্কের হালকা ভিতও গড়ে উঠে সোস্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ইশতিয়াক আর রূপার জীবনের ভাঙা গড়ার গল্প ফুটে উঠেছে ভালোবাসার ইরেজার গল্পে।

আমাদের সমাজে নতুনদের সুযোগ দিতে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু, তারা যদি সফলতার স্বাক্ষর রাখে তবে ঠিকই আমরা তাদের প্রশংসায় তুঙ্গে তুলি। সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়া ইমরানের কাজের শুরুতে যার থেকে যে আচরণ পেয়েছিল তার ঠিক উলটো আচরণ পায় কিছুদিন পরেই। সম্পূর্ণ এক প্রতীকী চরিত্রে সমাজের বাস্তবতা ঠাঁই পেয়েছে ‘একজন কাকতাড়ুয়ার সাক্ষাৎকার’ গল্পে।

বইটির সমাপ্তিও চমৎকারভাবে সাজিয়েছে জাকির। পরিবার থেকে সমাজ; এরপর কর্মজীবন তারপর আসে অবসরগ্রহণ। বইয়ের গল্পের ধারাও ঠিক এমনই। ইমরানের কর্মজীবনের শেষে যে গল্প স্থান পেয়েছে তার নাম- ‘অবসরপ্রাপ্ত’। অবসর সময়ে একজন মানুষের কর্মজীবনের যত স্মৃতি তা আগলেই বাঁচতে হয়। কত নিয়ম-অনিয়মের বেড়া জালে আটকে থাকতে হয় তা একজন কর্মজীবীই জানে। অবসরে মান্নান মোসাদ্দেকের কাছে প্রতিটা স্মৃতি ছায়ামূর্তি হয়ে ভেসে উঠে।

আঞ্চলিক ভাষার সহজ সাবলীল ভাষায় দু হালি গল্প নিয়ে যে চমৎকার বইটি নিয়ে এসেছে জাকির হোসেন তা আপনিও পড়ে দেখতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড