• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বই আলোচনা

মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত

  রফিকুল ইসলাম জসিম

০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৪১
প্রচ্ছদ
প্রচ্ছদ : গ্রন্থ ‘মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত’

লেখক ও গবেষক হাজী মো. আব্দুস সামাদের লিখিত ইতিহাস গ্রন্থ মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত বইটি ২০১৮ সালেরর প্রথম দিকে সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে গত এক/দুই বছরে বইটা আর পড়া হয়ে ওঠেনি। তাই গত কয়েক সপ্তাহে একরকম পণ করে প্রতিদিন কয়েক পৃষ্ঠা করে পড়েছি, অবশেষে পড়া শেষ হয়েছে। এত তথ্যবহুল এবং সুখপাঠ্য একটা বই হাতের কাছে থাকার পরও কত বিলম্ব করে পড়লাম তাই ভাবলাম একটা রিভিউ লিখে ফেলি!

‘মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থটি ইতিহাস ভিত্তিক এবং মণিপুরি মুসলমান (পাঙাল) সম্প্রদায়ের ইতিহাসের একটি পর্যায়ক্রমিক সারসংক্ষেপ। প্রায় দুইশত বছর যাবত এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে বসবাস করে আসলেও বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর কাছে, এমন কি আজকের মণিপুরি প্রজন্মের কাছেও মণিপুরি মুসলমানদের উজ্জ্বল অতীত ও পর্যায়ক্রমিক ইতিহাস অপরিচিতই থেকে গেছে। তাই বইটিতে সাধারণ পাঠক মণিপুরি মুসলমান জাতির উদ্ভবের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে, মণিপুরি মুসলিম (পাঙাল) সম্প্রদায় সম্পর্কে ধারণা পেতে এই গ্রন্থটি পাঠ করা যেতে পারে। লেখক হাজী মো. আব্দুস সামাদ, মণিপুরি মুসলমান বা পাঙাল জাতির সৃষ্টি বা আদিভূমি বর্তমান ভারতের সেভেন স্টার নামে পরিচিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ‘মণিপুর’ রাজ্যের প্রায় চারশত বছরের ইতিহাসকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করেছেন, যেখানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এড়িয়ে যান নি। ফলে গ্রন্থটি মোটাতাজা হয় নি, যা দেখে সাধারণদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের বাইরে মণিপুরে ও আসামে মণিপুরি মুসলমানদের নিয়ে বেশ কয়েকটি ইতিহাস গ্রন্থ ইংরেজিতে ও মণিপুরি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে যা এদেশের মানুষের নিকট দুর্লভ ও দুর্বোধ্য। তাই এদেশে মণিপুরি মুসলমানদের ব্যাপক ও বহুল তথ্যসমৃদ্ধ একটি গ্রন্থের প্রয়োজন অনেকদিনের। এদিক দিয়ে এ গ্রন্থটি একটি ব্যাতিক্রর্মী ও সময়োপযোগী।

মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত গ্রন্থটিতে বৃহত্তর সিলেট তথা বাংলার পাঠানশক্তির উত্থান ও পতনের ইতিহাসের সাথে মণিপুরি মুসলমান জাতির উৎপত্তির ইতিহাস, বাঙাল থেকে পাঙাল জাতিসত্তা জন্ম নিবিড়ভাবে সুন্দর আলোচনাসহ মণিপুরি জাতির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং মণিপুরি মুসলমানদের সামাজিক কাঠামো ও আচার অনুষ্ঠানের সুচিত্র ফুটে উঠে। মণিপুরে ছোট ছোট কাফেলা আরবি, মোগলদের আগমন সহ ১৬০৬ সালে হবিগঞ্জের তরফ অঞ্চলের পাঠান শাসক খাজা উসমানের সেনাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সানীর নেতৃত্বে মণিপুর আক্রমণের অভিযান চালায়৷ তখনকার মনিপুরের রাজা খাগেম্বার সাথে এক সন্ধির ফলে মণিপুরি মুসলিম পাঙাল জনগোষ্ঠীর মনিপুরে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন সেই চিত্র এ গ্রন্থটিতে এই বিষয়ের সুন্দর আলোকপাত করেছেন। মণিপুরি মুসলিম পাঙালরা মণিপুরের অভ্যন্তর ছাড়াও বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট এবং ভারতের কাছাড় ত্রিপুরা ও আসামে ব্যাপকভাবে বসবাস করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসের স্থান উল্লেখ রয়েছে এ গ্রন্থটিতে। ১৮১৯ সালে মনিপুরের মার্জিং সিংহের শাসনামলে বার্মা সৈন্য সাত বছরব্যাপী মণিপুর আগ্রাসনের সময় আত্মরক্ষায় তাগিদে মণিপুর ত্যাগ করে আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও বাংলাদেশের আগমন কাহিনী বইটিতে তথ্যসমৃদ্ধ উল্লেখ রয়েছে।

বাংলাদেশে সিলেটে, ভারতের মণিপুর, আসাম, ত্রিপুরার বসবাসরত এ গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে, মণিপুর মুসলমানদের স্মরণীয়, বরণীয় কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের জীবনালেখ্য। তা ছাড়াও আন্দোলন, সংগ্রামে মণিপুরি মুসলমানদের ভূমিকা যথা, মণিপুরে বার্মিজ দখলমুক্ত করণ, মণিপুরে ব্রিটিশ আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন, মণিপুরে নারী বিদ্রোহ, বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে আবদান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বইটার প্রতি আগ্রহী হওয়ার মূল কারণ ছিল মণিপুরি মুসলমানদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা। লেখক হাজী মোঃ আব্দুস সামাদ আমার সেই আশা পূরণ করেছেন। তা ছাড়া আমি এই গ্রন্থের তথ্যের উপর ভিত্তি করে মণিপুরি মুসলমানদের অনেক লেখালেখি করেছি সেই জন্য লেখক হাজী মো. আব্দুস সামাদকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন উত্তম প্রতিদান দান করুক।

সব মিলিয়ে গ্রন্থটি আমার কাছে খুবই চমৎকার লেগেছে কারণ এই বইটি লেখক মণিপুরি মুসলমানদের আত্মপরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি মণিপুর ও মণিপুরের অন্যান্য জাতিসত্তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছে। গ্রন্থটি সাতটি অধ্যায়ের সন্নিবেশিত উল্লেখ করেছে যা, মনিপুরি মুসলমানদের ইতিহাসের সম্পদ এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই যারা এখনো বইটি পড়েননি, তারা অবশ্যই লেখক হাজী মো. আব্দুস সামাদ এর ‘মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত ’ বইটি সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন।

বইয়ের নাম : মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত লেখক : হাজী মো. আব্দুস সামাদ প্রকাশের তারিখ : ডিসেম্বর ২০১৭

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড