আদিল মাহমুদ
‘হে রাসূল/ফেলে দিও না/ছেড়ে যেও না/সম্বলহীন পাথেয় বিহীন/আমি দেওয়ানা। তোমার তো ওগো আছে বহু জন/আমার তো কেউ নাই কেউ নাই/পাগল আমি তোমারি দেওয়ানা। হে রাসূল/ওগো প্রিয়/ফেলে দিও না/ছেড়ে যেও না।’ —আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা মানুষ আমাদের পেয়ারে নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। সমগ্র বিশ্বের মুসলিম অমুসলিম বড় বড় লেখকগণ শ্রদ্ধার সাথে তাঁর জীবনে লেখেছেন। সীরাতগ্রন্থ লেখে যেমন বিখ্যাত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা। আর আমি পবিত্র কুরআন শরীফের পর সীরাত সম্পর্কিত যে কোন বই, প্রবন্ধ, ফিচার পড়েই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই। সীরাত সম্পর্কিত যে কোন লেখা পড়তে একটা ঘোর, মোহ ও অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা কাজ করে আমার ভেতর।
পাথেয় পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ-এর সীরাত সংকলন ‘সতত আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক’ বইটি পড়ার সময় ও আমার একটা ঘোর, মোহ ও অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা কাজ করছিল। শ্রুতি মধুর শব্দ, অনিন্দ্য সুন্দর বাক্য, প্রবন্ধের ঢঙে, একটা মায়া ও আবেগ আপ্লুত সুরে পড়ে শেষ করে ফেললাম বইটি।
নবীজী হলেন আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। বিশ্ববাসীর জন্য সুন্দরতম নমুনা হিসেবে নবীজীকে প্রেরণ করেছেন তিনি। শারীরিক গঠন কাঠামোর দিক দিয়েও ছিলেন নবীজী নজিরবিহীন। তাঁর মতো অঙ্গ সৌষ্ঠবের অধিকারী এত সুন্দর আর কেউ ছিল না, কিয়ামত পর্যন্ত হবেও না। নবীজীর ক্ষেত্রে সমস্ত উপমা হারিয়ে ফেলে তার উপমায়তা। স্বয়ং সাহাবায়ে কেরাম নবীজীর লাবণ্যময় চেহারার বর্ণনা দিতে ব্যর্থ হয়ে বলেছেন— ‘তাঁর মত এত সুদর্শন মানুষ পৃথিবীতে আগেও কেউ দেখেনি, পরেও দেখেনি, দেখবেও না।’
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ও নবীজীর দৈহিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই বইয়ের ‘অপরূপ রূপময় সেই কান্তি’ প্রবন্ধে লিখেছেন— ‘কেমন করে আঁকা যায় সেই রূপময় কান্তি, যা অনুভবময় হয়েও অনুভবের উর্ধ্বে। ... বল, কেমন করে আঁকা যাবে সেই কান্তিময় নাসিকাগ্রের নূর, দর্শকের যেখানে ঘটত দৃষ্টি বিভ্রম, যাতে তাঁর নূরময় নাসিকা আরো, আরো একটু উঁচু মনে হত! বাণী নির্ঝরনীয় সময় সেই শিশির-পিছল স্ফটিক দন্তরাজির ফাঁকা ফাঁকা অঙ্গহীন গড়িয়ে পড়ত পবিত্র মুখগহ্বরের স্ফুলিঙ্গ, আভাময় দীপ্তি, কেমন করে আঁকবে তাঁকে। ... আঁকা গেল কি? তিনি ছিলেন খালকান ও খিলকাতান শারীরিক গঠন ও স্বভাব চরিত্র উভয় সৌন্দর্যরই পরিপূর্ণতায় পূর্ণময়, সৃষ্ট সৌন্দর্যের সব দিক চূড়ান্ত হয়েছে এখানে, শেষ এখানেই। তাই যে যেখানেই এবং যখনই তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়েছে, সব কথায় শেষ কথা বলে শেষ করেছে এখানেই- লা ইউমকিনুম সানাও কামা কানা হাক্কাহু/বাদ আয় খোদা বুর্যগ তুঈ কিসসা মুখতাসার।’
‘সতত আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক’ বইয়ের লেখক অসম্ভব সুন্দর ভাবে ফুঠিয়ে তুলেছেন আমাদের নবীজীর তারুণ্য, শারিরীক গঠন কাঠামো, অনুপম চরিত্র, চারিত্রিক সৌন্দর্য, মেরাজ, নবুয়ত, হিজরত, বীরত্ব ও বাহাদুরীর ক্ষেত্রে তাঁর স্থান, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বৈশ্বিক, নীতি নৈতিকতা, লাজুকতা, লজ্জাশীলতা, সম্মানবোধ, শিশু এবং বড়দের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার, পারিবারিক জীবন, সারকথা নবী-জীবনের সকল বিষয়াদি। বইটিতে মোট ১২টি প্রবন্ধ, ৫টি কবিতা এবং সংক্ষেপে নবীজীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির বর্ণনা করা হয়েছে।
বইটিতে উল্লেখিত পাঁচটি কবিতা পড়লে যে কেউ বলতে বাধ্য হবে যে, ছন্দ ও ভাববোধের চরম শিখরে থেকেই অনুপম সব পঙক্তি নিয়ে হাজির হয়েছেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তার এই পাঁচটি কবিতার কল্পিতরূপ এতই দৃঢ় ও ব্যঞ্জনাময় যা আমাকে একটা মধুর সুরে মোহাচ্ছন্ন করে রাখেছে। তার কবিতার কিছু লাইন এমন—
১। মুহাম্মদ/সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম/এক অগ্নি শিখা/সাহারার উত্তপ্ত লু হাওয়া। ২। হে রাসূল/ফেলে দিও না/ছেড়ে যেও না/সম্বলহীন পাথেয় বিহীন/আমি দেওয়ানা। ৩। সে নামেরই রোশনীতে আজ/উজল হৃদয় নতুন সাজে/জীবন পায় গো সৃষ্টি জগত/সজীব হয় গো দুনিয়া তামাম/তোমারই নাম জ্বি ওগো/তোমারই নাম। ৪। নূর এল, আরো এল প্রেমময় মহিময় দিন/নবী এল, এল আজ রাহমাতুল্লিল আলামীন। ৫। কর্মময় জীবন চাই/চাই হাশরের নাজাত। পূণ্যময় আয়ু চাই/চাই জান্নাতের রাহাত।
সারাবিশ্বের হেদায়ত ও কল্যাণের আহ্বান নিয়ে রবিউল আউয়াল মাসে ধরণী আগমন করেছিলেন নবীজী। তাঁর দাওয়াত, তালীম, শিক্ষা, আচার-আচারণ, আদব-আখলাক ও ইবাদত-বন্দেগী সব কিছুতেই আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত ও করুণাধারা ছড়িয়ে রেখেছেন। তাঁর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, এমনি তাঁর হাসি, কান্না, রাগ, অনুরাগ সর্বত্রেই অবিমিশ্র কল্যাণের আমিয়ধারা বহমান। এটা কেবল আবেগাপ্লুত একজন আশিকের, একজন ভক্তের উচ্ছ্বাস নয়। এটা পরীক্ষিত এক বাস্তবতা। বিগত পনর শো বছরের পৃথিবী বারবার প্রত্যক্ষ করেছে এ প্রাসঙ্গিকতা। তাই নবীজীর পৃথিবীতে আগমন ও পরগমনের মাসে তাঁর সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি। ‘সততা আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক’ ও অন্যান্য সীরাতের গ্রন্থে তাঁর জীবনী পড়ি। নববী আদর্শে নিজেকে গড়তে চেষ্টা করি।
লেখক পরিচিতি— আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। জন্ম ১৯৫০ সালে। তিনি শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, সাইয়্যিদ মাওলানা আসআদ মাদানী রহ.-এর খলিফা, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, জামিআ ইকরা বাংলাদেশের শাইখুল জামিআ ও শাইখুল হাদীস, বাংলা সাহিত্যর কর্ণধার, শতাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। বাংলাদেশের সীমানা ছাপিয়ে বিশ্ব দরবারে নিজস্ব কর্মদক্ষতার গুণে স্বীকৃত ও পরিচিত মুখ তিনি।
বই পরিচিতি— বই : সতত আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক ধরণ : প্রবন্ধ সংকলন লেখক : আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ প্রকাশক : পাথেয় পাবলিকেশন্স প্রথম প্রকাশ : জুন ২০১৯ প্রচ্ছদ : হোসাইন আহমাদ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড