• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মজিদ মাহমুদের দ্রোহের কবিতা

খুন ও বিস্মরণ

  মজিদ মাহমুদ

১০ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:১৮
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

নদীর কান্না

আজ কোনো কবির জন্মদিনে লাইক দিইনি প্রিয় নারীর ছবিগুলো উপেক্ষিত থেকেছে এমনকি আজ ছবির কবিরাও ছবির বদলে প্রথম কবিতা দিয়েছে তাদের রমণীয় মুখগুলো কান্নায় ঢেকেছে নিজের লাশের পাশে মানুষ কতটা অবনত থাকে একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আর কতকাল কবিতা লিখব কবিতা লিখতে গেলে ভাবি- এ তো আগেও লিখেছি তবু শিশুটি কিভাবে জেনেছে- নদীর পানিই তো নদীর রক্ত নদীর শরীর থেকে পানি চলে গেলে মায়ের মৃত্যু হয় মায়ের মৃত্যু হলে সন্তান বাঁচে না শিশুটিও বাঁচেনি আর আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের শরীরে রক্ত নেই আমাদের মা আগেই মরেছে তাই শুনতে পাইনি পদ্মাপাড়ের মায়ের কান্না!

তনুজা

তনুজাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখতে চেষ্টা করছি পারছি না, যেন এর আগে আমি কখনো কবিতা লিখিনি কবিতা লিখতে যে ধরনের রূপকল্প ও শব্দালঙ্কার লাগে তার একটিও আমার স্মরণে আসছে না কখনো মা, কখনো কন্যা বলে শুরু করছি এ সব কবিতার পদবাচ্য নয়, ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছি ভাবছি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে কি লিখতেন! তবে তিনি অন্তত এটুকু বলতেন- ‘কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে বাঁশি সঙ্গীত হারা’ আর নজরুল কিংবা শামসুর রাহমান- তাদের প্রেম ও প্রতিবাদ আমি ভুলতে বসেছি নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিতে চাইলাম, ‘তনুজাকে নিয়ে একটি কবিতা সংকলন হবে, বন্ধুরা কবিতা পাঠান’ আমিও বুঝি জীবিত অগ্রজের মতো ভুয়া কবি এই প্রথম পেলাম টের এতকাল যে সব প্রেমের কবিতা লিখেছিলাম মেয়ে বন্ধুদের ভালোবাসার সম্মানে আজ মনে হচ্ছে এ সব ছিল ধর্ষণের গোপন ইচ্ছে যে সব কবি তনুজাকে নিয়ে কবিতা লিখতে পারে না তাদের কবিতার প্রতিটি শব্দের আরেকটি মানে বিকৃত কাম, ধর্ষণ ও নারী হত্যা।

রাজন

প্রতিবাদ ও কান্নায় ফুঁশে উঠছে নগর জানজট তীব্রতর হচ্ছে, কেউ কোথাও পারবে না যেতে ঈদের শপিং নিয়ে যে যেখানে আছ দাঁড়িয়ে থাক ইফতারের আগেই আমার বাছাকে একটু পানি দাও যদিও জানি এসব নিত্য-দিনের কান্না এখন লাশ ঘরের দুয়ারে, তাই তোমরা সরাতে চাও তোমরা কি জানো মেঘ কোথায় মা ও বাবার টুকরো টুকরো লাশ সযত্নে রেখেছে ঢেকে সে তার চোখের পল্লবে শবে-বরাতের জোছনায় যে সব কিশোর খেলতে গিয়েছিল বালুর মাঠে কে তাদের বাবা-মাকে দিয়েছিল লাশের উপহার তোমরা কি ভুলে গেছ ত্বকির নিষ্পাপ মুখ তার বাবার কোটি টাকার মামলা শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠা মানুষের নির্মমতার সাক্ষী এই সব মানুষ, নাম না জানা মানুষ প্রতিদিন স্মৃতি থেকে চলে যাচ্ছে স্মৃতির গভীরে

হয়তো রানাপ্ল¬প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উত্থিত নারী বলবে মানুষের জীবিত থাকা তো ঈশ্বরের মহিমা যদিও ঈশ্বরের বান্দারা জানেন- প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে থাকে একটি জীবিতের গল্প।

বিহারি ফারজানা খবর

ফারজানা ক্লাশ ফাইভের ছাত্রী-জন্মেছিল পল্লবী বিহারি ক্যাম্পে গতকাল বাসের ধাক্কায় তার বাবা মারা গেছে ফারজানার জন্য ওষুধ কিনে ফিরছিল সে মাস তিনের আগে তাদের ঘরে আগুন দিয়েছিল চেলাচামুণ্ডারা চিতায় জীবন্ত ভস্মীভূত হয়েছিল তার মা, আদরের ভাই ও বোন একুনে আটজন-ফারজানা বেঁচেছিল দগ্ধ শরীরের ক্ষত নিয়ে করেছিল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই বাবার দুশ্চিন্তা ছিল কিভাবে জানাবে তাকে এত মৃত্যুর খবর আজ বাবা নেই-ফারজানা নিজেই জেনেছে সে খবর আরও জেনেছে সে ছিল বিহারি-তবে জানে না বিহার কোথায় বিহারিদের দেশ থাকতে নেই, বাবা-মাও থাকতে নেই এমনকি তাদের মৃত্যুর সাক্ষী হয়েও থাকতে পারবে না আপনজন

অথচ একদিন দেশ ও স্বজনের খোঁজেই তো তারা পথে নেমেছিল তবু ফারজানা পাবে না খুঁজে কোনোদিন নিজের কাক্সিক্ষত দেশ।

অ্যানাটমি

চারিদিকে এত এত ধর্ষণ ও শিশুহত্যা আমার প্রেমকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে এক একটি ঘটনার পর আমি তার থেকে এক এক মাইল দূরে চলে যাচ্ছি কোন মুখে দাঁড়াব তার কাছে গিয়ে জীবন-মোহন করে এতদিন যে সব আলো আমরা জ্বালিয়ে রেখেছিলাম আমার হাতের বিস্তার, চম্বুনের গভীরতা তার ভালোবাসার চিহ্ন হয়ে ছিল কেউ কি ভেবেছিলাম- এই হাত কামুকের, ধর্ষকের, মৈথুনকামীর আজ আমাদের পবিত্র ইচ্ছেগুলো কামনার পঙ্কিলে নিমজ্জিত- কেবল ক্ষরণের পাত্র হয়ে আছে অথচ এই শরীর ছিল একদিন দেহের ভেতরে দেহাতীতের গান যে সব কন্যা শুয়ে আছে পিতাদের বুকের ভেতর যে সব বোন জেগে উঠছে ভ্রাতার আদরে ভোরের দৈনিকগুলো তারা আজ কোথায় লুকাবে যে শরীর ছিল মানুষের মায়া ও সম্পর্কের পরিচয় সেই শরীর আজ কেবল অ্যানাটমির বিষয়!

হত্যাকাণ্ড

হত্যাকাণ্ড দেখলেই আমি তার প্রতিবাদে কবিতা লিখি না জানি এই হত্যাকাণ্ডের বিনিময়ে ঘটবে আরেকটি হত্যাকাণ্ড এমনকি বর্তমানের হত্যাকাণ্ডটিও পূর্বের হত্যাকাণ্ডের ফল হত্যার প্রতিবাদ মানে আরেকটি হত্যাকাণ্ড প্ররোচিত করা হত্যার প্রতিবাদ মানে তাজা শোকের উদ্যাপন একটি হত্যাকাণ্ডই পারে আরেকটি হত্যাকাণ্ডের শোক ভোলাতে কবির কাজ শুধু মানুষের নিরন্তর শোক ও বিপর্যয় তুলে ধরা স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে জাগিয়ে রাখা; কবির কাব্য হলো বিধিলিপি প্রতিটি মহাকাব্য যদিও যুদ্ধের গল্প; প্রতিটি নাটক বিয়োগান্ত তবু তার অন্তরালে জেগে থাকে স্বজন বিয়োগের হাহাকার মানুষ হত্যাকরীদের ভোলে না, নিহতদের ভুলে যায় দ্রুত তাই হত্যাকারীদের পিছে নিহতদের আত্মা ঘুরে বেড়ায় ইতিহাসের পাতা থেকে বেরিয়ে আসে, তারা মরে না তারা হাজার বছরের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ চায় মেলে ধরে অমীমাংসিত বিচারের অবলোপিত পাতা এরা অদৃশ্য ভূতের মতো অন্ধকারে ওঁৎ পেতে থাকে এদেরে বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান তাই রাজ্যের বাতুলতা চাই আলো-জ্ঞান ও শিক্ষা, বণ্টন ও সহমর্মিতা ন্যায় বিচারের অধিকার ও ক্ষমা অস্ত্রের চেয়ে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ অধিক কার্যকরি কারণ ভূত আলোতে দূরীভূত সকল হত্যাকরীই অদৃশ্য ভূত মানুষ তো আর মানুষকে হত্যা করতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড