মলয় দত্ত
১ হেমন্তে এ কেমন বন্ধ রাস্তা –উজ্জ্বল পরিহাসে রুদ্ধ ঘরের রোগশয্যার মতন যা আমাদের আলাদা করে দেয় অবিরাম – ফুর্তির ফেনায় পৃথিবী গায়ে দিয়েছে কালো জামা না জানা শোকে তাও রয়ে গেছে মেয়েলি রঙের ছটা– পৃথিবীর গুহায় আমিও দক্ষ প্রাচীন লাটিম যে ঘুরতে থাকি– আর ঘুরতেই থাকি কেবল– রেইনট্রির ছায়ায় এসে দাঁড়ায় অপরিচিত যুবতী।
আমার বন্ধুরা হেসে হেসে চলে যায় শেষ ট্রেনের মতন নাইট শো’তে– হেমন্তের রাত গাঢ় হয় ধীরে আহত নগরীর বুকে- বেখাপটা হুল্লোর তোলে আদিম দেবতা প্রেতিনীর মতন– ঢের দূরে, নরম গানের সুর ক্রমশ পরিচ্ছন্ন হয়ে ভেসে আসে থেমে থেমে হেমন্তের অপেরায়– খুব কাছে, চোখের মধ্যে আসে মায়ের হাঁসগুলি উজ্জ্বল- স্বচ্ছল হেমন্ত রাত যেন বুকের উপর রক্তমাংসহীন নারী– হেমন্তে এ কেমন জীবন – কবেকার মৃত সব রুপসীদের মনে পড়ে স্বমেহনে ভীষন!
হেমন্তে এ কেমন বন্ধ রাস্তা– প্রিয় জ্বরের মতন থেমে থেমে উড়ে আসে মরন – বুকে নিয়ে মাসকলই ঘ্রান– হেমন্তে এ কেমন মরন আমার– সন্ধ্যার পক্ষীরাজ কন্ঠে নিয়ে প্রবল বিষ উড়ে গেলে গীতাঞ্জলির পাতায়- আলো জ্বেলে দেয় মোহনা– কে মানুষ, কে পাখি চিনতে পারিনা!
২ আলেকের আখি হতে যেভাবে পৃথিবীর বুকে ঝরে পরে নুরের মিছিল সেভাবে সমস্ত আড়াল জুড়ে রোদের সুর ঝরে গেলে, দমে দমে টের পাই আমাদের ভালবাসা আর যৌনবাসনার মাঝে উড়তে থাকে করুনা অঞ্চলের পতাকা। তখন বিনিদ্র রাতেজুড়ে একদিকে তোমার চুলের মৃদু ঘ্রান আর ঘুম আমার চোখে তুলে দিতে থাকে ডানাওলা ঘোড়ার উড়ান আর অন্যদিকে তোমার অভাবে মরে মরে যেতে থাকা মলয় আজ আর মনে করতে পারেনা ডিসেম্বরের গান। জানি, ডিসেম্বর শব্দটা শুনেই তোমার মনের ডালে এসে বসেছে অপার কৌতুহলের মতন সুন্দর অতিথি পাখির দল। তুমি তুমুল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছো পাখিদলের দিকে, যেনো ওদের আসার কথা ছিলোনা, তবু এসে পরেছে অপ্রত্যাশিত অতিথির মতই। তুমি বিস্মিত হতে থাকো, হতে থাকো বিরক্ত, ভুলে যেতে চাও ডিসেম্বর শব্দটি, যে শব্দটি শুনলেই এতসব অনাসৃষ্টি ঘটে যায় তোমার দুনিয়ায়। আমি এতকিছু ভাবতে পারছিনা, চাইছিনা এখন আর, কেবল, রুহুর ভেতরে যেভাবে শুয়ে থাকে ভুলভ্রান্তি ঠিক সেভাবে চুপচাপ তোমার বিস্ময়ের পাশে শুয়ে আছি আমি, বুকের ভিতর ধীরে ধীরে হিম ধরে আসে। সেই হীম আর নৈশব্দের ভীতর ফুরসত পেলেই থিতু হয়ে যাবার চেষ্টা চালাই আমি, অভিমানী জলের মতন করে হামেশাই মাংসের বেদনা উথলে ওঠে, অনুরোধ শোনার মতন স্টেজ পেরিয়ে গেছে তারা। তুমি কি ভুলতে পেরেছো ডিসেম্বর শব্দটি....তাহলে এসো যোগ দাও আমার দলে। এসো আমার কলিজার ছায়ায় এসো মোহনা, পৃথিবীর অনেকরকম নিদ্রিত জাদু নিয়ে নতুন কোনো বাহাস নয়, এসো মোহোনা এসো, মাবুদের নাম নিয়ে সারাদিনের অজস্র দৃশ্য পেরিয়ে আমরা দুজন এক পশলা হঠাৎ বৃষ্টির মতন ঝরে পরি নতুন কোনো দৃশ্যের ভিতরে....ঝুম ঝুম বা টিপ টিপ...ঝুমঝুম বা টিপ টিপ টিপ.....
৩ মোহনার ভার্জিনিটি জুড়ে একটা প্রজাপতি উড়ছিলো অথবা স্পিচলেস এক বক্তৃতা ডানা মেলার প্রাকটিস করছিলো সারা দিন সারা রাত। আমি কখনো ফুরিয়ে যাইনা অথচ সেক্সুয়ালি যথেষ্ট বিপর্যস্ত মানুষ একজন, মাংসে নেই বাতাসের ছোয়া যার, সেই আমি বাস্তবেতো পারিনা, কল্পনায় বেবাক প্রজাপতির ডানা ছিড়েছুড়ে দেখেছি অস্তিত্বের কোনো ডকুমেন্টস অনন্ত চরাচরে নাই, কেবল মোহনার যোনি হতে অভিজ্ঞ পশম কেটে কেটে ভেসে আসছে কবরখানার গান....
পিন ড্রপ সাইলেন্স উফফফ মোহনা, শরীর তোমার যেন ফরাসি রুটির স্বাদ। আমার হোমগার্ড কুত্তা - হারায়ে গেছে... আমার ভাবার সময় নাই, আছে কেবল তিল তিল অপেক্ষা। তুমি আমাকে নিজহাতে তুলে দেবে বিষ। অপেক্ষা জুড়ে জোয়ারের শব্দ আর অসংখ্য কাচের টুকরো। জান্তব তাড়না। আমাদের একাকীত্ব বাচিয়ে রাখার জন্য নিদ্রাহীন রাতকে ধন্যবাদ। পিন ড্রপ সাইলেন্স। সকল নিরুদ্দেশ সংবাদের মাঝ হতে উঠে আসছে ফ্লিমের ক্লাইম্যাক্স। তিল তিল অপেক্ষা শেষ হয়নি! আমি কল্পনা করি অনেককিছু। যেমন, তুমি আমাকে নিজহাতে তুলে দেবে বিষ, একদিন। যে বিষ অচেনা মেয়েগুলির মতন সুন্দর, আমাদের বাংলা ভাষার মতন সুন্দর। তবুও, সরকার বলেছে, ঘুরে গেছে হাওয়া।
বাতাসের শ্বাস প্রশ্বাস জানান দিচ্ছে বক্তব্যধর্মী কবিতা নাকি কেবলই স্তরীভুত আর্তনাদ, আমি তবু শুতে বসতে ঘুমাতে খেতে খেতে লিখছি বর্ণনার পর বর্ণনা বা এমন কিছু শব্দ, এই ধরো, গনগনে আগুনে নাচে আমার পুর্বপুরুষের ডার্লিং, জীবনে অনেক পাপ করেছি আর রাক্ষসকুল জন্মে নিয়ে মরে যাচ্ছি স্লোলি বা ধরো এই আমার নিয়তি, সেক্সই একমাত্র সত্য, আর সরকার যা বলছে বলুক নিজেকে পরম ভেবে হাটুমুড়ে সারারাত বসে আমি বলতে চাচ্ছি, বলছি তোমাকে, মোহনা মাই ডার্লিং, তোমার ভালোবাসা আর চাই না, শরীরের স্বাদ পেতে মগজ লাফিয়ে ওঠে...টগবগ টগবগ!
৪ মোহনার যোনিদেশের ত্রিভুজ আঁকতে গিয়ে স্তুপাকারে রাখা দেখেছি ভুল চাওয়া,গাছের খসে যাওয়া হলুদ পাতা হিরোসিমার ছাই, সদ্য বিধবার ফেলে দেওয়া হবিষ্যি প্রেমের সুর, ভোরের পাঁশুটে মেঘ, আরও কত...
এ তো কম দিনের কথা নয়, আজন্ম, কয়েক প্রজন্ম শুকনো পাতার মত দিনগুলো গুটিপোকার জাল বুনে বেঁচে আছে প্রস্তর যুগ সুযোগ পেলেই উঁকি দেয় চালধোয়া চাঁদের আলোয় দাবানল নাকি বনস্পতির অহংকার, বৃষ্টির প্রতি প্রেমে দগ্ধ আমার বসার ঘরে চাঁদের আলো আর দাবানল জ্যোৎস্নার উৎস বৃষ্টি নামে এখানে হবিষ্যির আগুনে,বিধবার স্বামী আমাদের নয় একথা বলে ঝাপিয়ে পড়েছিল বর্গির দল,সিস্টেম নিখুঁত,ওরা বলে
মোহনার যোনিদেশে চুমু খেয়ে খেয়ে একটা ত্রিকোনমিতি সমাধান করতে গিয়ে দেখি স্তুপাকারে পরিপাটি করে রাখা শেষ ওঠা রোদ্দুরের আলো তারপর থেকে ঘড়ির কাঁটা থেমে আছে যেন মেরু বরফ আমিও আগলে আছি সংক্রান্তির রাতগুলো জেগে আছি, কয়েক প্রজন্ম, ফাতনায় চোখ রেখে,সাদায়
বসবার ঘরে ডেকেছি কতবার যাদের শরীরে এখনও গাছের সবুজ রক্ত ডেকেছি তাদের যারা চাঁদের আলোয় চশমা পড়ে না এখন ড্রয়িং রুমের দেয়ালে চোখ তুলে নেওয়া নিজের করোটি রাখা টেবিলে অনর্থের কাদা অনুযোগহীন জন্মের গালে...
তবুও বারবার মোহনার দুই নরম উষ্ণ স্তনের ব্যক্তিগত বুননের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি ছেঁড়াফাটা এলোমেলো হাওয়ার প্রলেপ এড়িয়ে
সঙ্গম শেষের নোনা বীর্য মাখা আমাদের উলঙ্গ শরীর নিরালা দুপুরের স্লেটে শব্দের নিরুচ্চার ভঙ্গীতে গাঢ় জঙ্গলের আঁকিবুঁকি তুমি কি টের পাও অনুভব করো কি সেই কায়াহীন বুননের গায়ে লেগে থাকা সকালের শিশিরের অভিমান
আমি তো জানি বুদ্ধিহত বেশ্যার রৌপ্য বিকেল ফুরিয়ে যায় অনিচ্ছার বেড়ি পায়ে চলাফেরায় মোহনার আর পতিতার গায়ের রঙে আছে জানি আলাদা ঘ্রান অন্ধকার ঘরেও টের পাই স্নান সেরে আসা তোমাকে দেখো কি অদ্ভুত আমার ইচ্ছের ওড়না আজ ফনিমনসায় আটকে আছে আসেপাশে তোমায় কোথাও দেখলাম না যে ছাড়িয়ে নেব যত কাঁটায় বেঁধা দূরত্ব তবু তোমার হলুদ বিকেলে আজও ফুটিয়ে রেখেছি গন্ধবাহারী কিছু বন্য ভালবাসা তুমি কোথায় কোন্ আলোময় মেধার জগতে ছায়া খুঁজে বেড়াও মায়া হরিণের আদলে
মোহনার নিতম্বের ভাজের ব্যক্তিগত বুননের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি ছেঁড়াফাটা এলোমেলো হাওয়ার প্রলেপ এড়িয়ে পথ হারিয়ে তোমাকে নিয়ে পথ চেনার কথা ছিল বাউল রাতের বাঁশির শব্দ কারুকাজে
আসেপাশে তোমায় কোথাও দেখলাম না তুমি কোথায় কোন্ আলোময় মেধার জগতে ছায়া খুঁজে বেড়াও মরিচা আলোর অভিমুখে
আমি টের পাই তোমার নিঃশব্দ হেঁটে যাওয়া আমি অনুভব করি তোমার ইচ্ছে গাছের বাতাস।
৫ মোহনারে লই পাতিহাঁস পুকুরে নাইতে যাইয়া দেখতি পাইলাম এক জামরঙা আদিম শ্লোক ন্যাংটো হই ঝুলি আছে হাসেঁর গলায় কবজ হই নিজেরে আন্ধা মনে হইলো মোহনার ভিজা শইল চোখে ঠেকলোনা কতক্ষন এরপরে ভিজা শইলে বাড়ি ফিরতি পথে শুনতি পাইলাম হাসেঁদের কানাকানি কইতে ছিল, গায়েঁর মইধ্যে খোলা পুকুরে ডুবাইয়া বেড়ায় মাইয়া লোক শরম শরম মোহনারে বুঝাইতে না পারলাম হাসেঁরাও ডুবাইয়া বেড়ায় ভরদুপুরে কালীসন্ধ্যায় ও! মোহনার কান্দন থামাইতে গিয়া হাইট্টা গেলাম মোহনার ভিতরে অথচ মোহনার ভিতরে মোহনার খুঁজি না পাইলাম বুঝতি পারলাম মাইনষের সব দ্রোহ ও কাঠামোগত ক্ষতি লিখি রাখে যেই দেবী হাতের তালুর নীলনখ জীবনে, সেই নীলনখ জীবনে না পাই কোন কৃষক যদি কাম চাষ নাহয় জীবনের সম্পাদ্যে আর মাইনষেরা ভাবতে বসে মাইনষের মধ্যে মন্ত্র জাগে না মাইনষেরা ভাবতে থাকে মাইনষের বুড়া মথিত হৃদয় নিছক ক্ষয়ে যাওয়া আলো মাইনষে ভাবে মাইনষের সকল হলুদ বিষাদ শুষে নেবে কৃষ্ণগহ্বর, মাইনষের ভাবুক মহাকাশ শুধু উইপোকা কুঁড়ি কুঁড়ি খাইতে থাকে সেকথা জানি গেছে বেবাকে, তবুও, বেহুদা লাফালাফি আর উঁচা উঁচা নাক লই বলিহারি অন্ধকার প্রীতি মাইনষের শইল চুইয়া নামে
ওহ! মোহনা তুমি অমাইনষের মইধ্যে মানুষ হইলা কেন?
তাকাইয়া দ্যাখো তুমি ঝিলের ধারে কলমীলতায় ঝুইলা আছে আমাগোর যেই জীবন তার অনেক ভিতরে শুইয়া আছে দেয়াশলাই খাটে এক বিজ্ঞানী শিয়াল মোহনারে বুঝাই সেই জীবন মোহনারে লই যাই জীবনের ধারে পাও ঝুলাই ঝিলে! অথচ মোহনা বুইঝা লয় একলা একলা মরন মোহনা যায় মরনের ক্ষত্রিয় চিত্রে পাও উঠায় লয় ঝিল হইতে আমারে ডাইকা লয় দৃশ্যপটে মুকুটহীন দেবীর প্রতি এইসব ভাবনায় আর আমিও আকাশের গায়ে লেগে থাকা মুগ্ধতা টাইনা নামাই জন্ম থেকে জন্মের ভিতর হাত ঢুকায় মোহনারে দেখাই বলি, খোদার কসম কইতাছি মরনের গভীরে আমার হাত পৌঁছায় না!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড