মাহবুব মিত্র
ইটালি থেকে যশোর
জেগে আছি তোমারই প্রতীক্ষায় অস্ফুট আলোর মোহনায় এই ঘনঘোর রাত্রির সৈকতে; নদীটি নড়ে ওঠে গাছের ডালে
সনেটের বরনীল ছন্দ নাচে মেঘফুল হয়ে ইটালি থেকে যশোর; দাঁড়কাক কাদা-রাস্তা হেঁটে চলে
আকাশ খুঁড়ে বের করি নক্ষত্র---সোনামুখী রোদে বালিকার পত্র সবুজ ছাতাটি পড়ে আছে বিল-পাড়ে; মাছি ওড়ে ধানের ডগায়
তোমার আকাশজুড়ে ছড়িয়ে রেখেছি সর্বনাম ক্রিয়াপদ আমি যে-পথ ধরে হাঁটছি; শুধু উঁচু-নিচু আর শ্বাপদ
অনন্তকাল নীরব চেয়ে আছি একটি মাছির চোখে লোকালয় শূন্য হলে; তারপর ঘুমায় একটি বানর
আমি জেগে চেয়ে আছি তোমার হেঁটে যাওয়া পথ, ভোর নামে রাত্রির শরীর বেয়ে; পাখিটি বসে আছে গোধূলির নিবিড় পাটাতনে।
ভালো থেকো নীল আকাশ
বৃষ্টির মতো নেচে-নেচে অবশেষে সকল আলো-আনন্দযজ্ঞ বন্ধ করে সে এসে দাঁড়ায় সাগরতীরে হাতে নিয়ে অমরতার বিবর্ণ রিবন, মেঘকন্যা জানে না এখানেই ঘাপটি মেরে বসে আছে মৃত্যুদূত; মুহূর্তেই খসে পড়ে-- চাঁদের রেণু, আকাশের নীলিমা, পাহাড়ের রুপালি পাথর আর রক্তিম বিকেলে হারিয়ে যায় জন্মদাত্রীর কাঙ্ক্ষিত সুখ-চিৎকার...
পুকুরের শান্ত জলে বেড়ে উঠছে কুমিরের পাল ভালো থেকো পুকুরের জল, ভালো থেকো নীল কমল আকাশের নিবিড় নীলিমায় বসেছে ধূমকেতুর মেলা পুকুরের গহীন জলে বালিকাটি নেমেছে শুধুই একেলা চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে নরকের আগুন, পুড়ছে আকাশের ফাগুন চারপাশে স্তব্ধ বাতাস, ভালো থেকো নীল আকাশ;
চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারলো না পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা হরিণশাবক অজান্তেই মুহূর্তে চোখ থেকে গড়িয়ে নামতে লাগলো রক্তের স্রোত, কারা যেনো ছুটে এলো---কারা যেনো দৌড়ে পালালো---দৌড়ে; কেউ-কেউ আবার বসে রইলো নির্জন-আঁধার-গুহার পাড়ে, তারপর থেকে জন্মদাত্রী আকাশ হয়ে চেয়ে থাকে পাহাড়ে-পাহাড়ে গুহাতে-গুহাতে, পুকুরে-পুকুরে, সাগর-জলের ঢেউয়ে, অনন্ত নীলিমায়-নীলিমায়...
আঁধারের শব্দে শুনি ভোরের সঙ্গিত
(ফিলিস্তিনের রক্তাক্ত শিশুদের জন্য মানবিক ভালোবাসা)
প্রতিনিয়ত আমি বিচূর্ণ আঁধারের শব্দ শুনি: বিবর্ণ ফুল, আহত পাখি, শুকনো নদীর ক্রন্দন আষাঢ় শ্রাবণের বৃষ্টির ধারা যেনো মৃত মাছের চোখ--- প্রাচীন গুহায় জীবনের আদিম নৃত্য, প্রাণের উল্লাস;
আঁধারের ভিতর যে-জীবনের বসবাস--- ঈশ্বর বোঝে না তার কোনো মানে, জীবনের সঙ্গে জীবনের প্রাণের সাথে প্রাণের যে-সংঘর্ষ, বালুচরে পাখির যে-খেলা সমুদ্রের জলে হারিয়ে যায় যে-ভেলা--- তা আর ফিরে আসে না তবুও নতুন পাখির কণ্ঠে বাজে নতুন গানের সুর;
মাঝখানে যে-স্রোতস্বিনী তার ঘোলা জলে নিঃসঙ্গ মাছের অবিরাম সাঁতার, অন্ধ ডুবুরীর দীর্ঘশ্বাস---ক্লান্ত নাবিকের হাহাকার বছর-বছর জন্ম নেয় শুয়োরের পাল হরিণশাবকের দল অন্ধ কুয়োর ভিতর মৃত প্রায় বৃক্ষের ভঙ্গুর শাখায়-শাখায় ভিমরুলের আস্তানা নিজস্ব যে-আঙ্গিনায় খেলা করে শিশুর দল, তাদের জন্য আকাশ থেকে ঝরে পড়ে আগুনের বৃষ্টি;
চারদিকে রক্তহীন প্রাণের উচ্ছ্বাস, ফ্যাকাসে রোদ্দুর, বিবর্ণ বিকেল রক্তাক্ত সন্ধ্যায় টিকটিকি আরশোলা বানর সাপের ব্যর্থ সঙ্গম, ক্লান্তিহীন সারারাত্রি কুকুর বিড়ালের একটানা বিষণ্ন আর্তনাদ; হলুদাভ মেঘের পুঞ্জ ভেদ করে যতোটুকু আলো এসে স্পর্শ করে বৃক্ষের সবুজ পাতা--- তা গলে-গলে শুদ্ধ করে পৃথিবীর মাটি, একটু প্রশান্তির জন্য পবিত্রতার জন্য বন্ধ হয়ে আসে আমাদের চোখের পাতা; আর আঁধারের শব্দে শুনি ভোরের সঙ্গিত।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড