• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গুলজার হোসেন গরিবের পাঁচটি কবিতা

এখানে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন

  গুলজার হোসেন

২১ মার্চ ২০২০, ১৪:৩৯
কবিতা
বলেছিলাম চাঁদ আলো দিতে অপারগ (ছবি : প্রতীকী)

মৃতের সংখ্যা বাড়ছে

এখানে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন এখানে অন্ধের সংখ্যা বাড়ছে কল্পনাতীত এখানে সন্ত্রাসের সংখ্যা বাড়ছে আগের চেয়ে বেশি এখানে নুইয়ে পড়ছে নজরুলের ‘উন্নতশির’।

কৃত্রিম অন্ধকারের প্রকোপে সূর্য আলো দিতে ব্যর্থ চাঁদও এখন আমাদের উপগ্রহ নয় জোনাকিরা মরছে ‘বুলবুল’ ঝড়ে শর্টসার্কিটে প্রাণ হারাচ্ছে ইলেক্ট্রনিক বাল্ব।

ভয়ংকর ভূমিকম্পে তছনছ করছে শহর বন্দর সমুদ্রের জল বিপদ সীমানার উপরে উত্তপ্ত লাভায় গলিয়ে দিচ্ছে মানবিক জীবন টুকরোটুকরো হচ্ছে আলোময় সব স্বপ্ন।

এখানে বিবেক পোড়া গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ এখানে জীবিত লাশ ছিঁড়ে খায় হায়েনারা এখানে চোখ উপড়ে নেয় শকুনি ঠোঁট এখানে হোলি খেলে মানুষের লাল রক্তে।

ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতা হয় মু-ুকেটে রাখালের মতন পিটিয়ে নামায় বিষাক্ত জলে বাতাস থেকে অক্সিজেন উঠিয়ে নিচ্ছেন প্রভুরা জাগতিক ব্ল্যাকহোলে ঝাঁপ দিয়ে মরছে জনপদ।

লড়াই

এখানে লড়াই আর্য থেকে এখানে লড়াই সাতশো বিশ এখানে লড়াই সাতান্ন থেকে এখানে লড়াই সাতচল্লিশ এখানে লড়াই বায়ান্ন থেকে এখানে লড়াই একাত্তর এখানে লড়াই বাঙালি হওয়ার এখানে পরাজয় পঁচাত্তর।

আমরা নাগরিক নই

জগার ছেলে ভগা অধিকার বঞ্চিত শিশুর মতন, ভীষণ অস্থির সময় পার করে অভুক্ত থেকে একদিন বাবাকে নিরাপদ ভেবে বলল বাবা আমরা কি এ দেশের নাগরিক?

ভারী কণ্ঠে উত্তর দিলো জগা। না খোকা আমরা এদেশের নাগরিক নই আমরা এ দেশে শুধু বাস করি।

ভগা বাবার ভারী কণ্ঠের সাথে ভারী হয়ে বলে বাবা তাহলে আমরা কী?

জগা ছেলের মুখ মুখো অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। বুকের চাপা দুঃখ জগার চোখ দুটোকে সমুদ্র করলো। ভাবছে কী উত্তর দেবে ছেলেকে ভাবছে বাস্তবতা বলবে না অবাস্তবতা অবশেষে কান্না ভাঙা সুরে বলল জগা।

আমরা গিরস্থ বাড়িতে পোষা প্রাণী, উদ্বাস্ত কৃতদাস-দাসী, আবাদি জমির মতন ভোগ্যপণ্য, খাদ্য, পোশাক, বিলাসিতা, আমোদী রঙের মতন আমাদের যখন যেভাবে খুশি ব্যবহার করে নাগরিকরা।

ভগা তার বাবার বুকের কষ্ট নির্গত ক্লেদাক্ত কথা শুনে টানা শ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করে। বাবা তাহলে এদেশে নাগরিক কারা?

জগা ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে বলল বাবা ও কথা শুনতে নেই, জানতে নেই নাগরিক কারা। ছেলের জানার বায়না বিষণ্ন করে তুললো জগাকে।

জগা ক্ষমতাহত নাবিকের মতন বলল এদেশে সরকার ক্ষমতায় থাকা এমপি-মন্ত্রী নেতাকর্মী সরকারি আমলা, পুঁজিপতি, অর্থ ব্যবসায়ী,জন সেবকের নাম করে যারা নিজেদের সেবায় ব্যস্ত থাকে তারা এ দেশের নাগরিক। জগা আরো বলল আমাদের মতন কুলি-মজুর, চাষাভুসো, কায়শ্রমিক, দিন আনা দিন খাওয়া, হতদারিদ্র, নিম্নবিত্তরা কখনোই নাগরিক হয় না।

আমার নাগরিক নই, এ কথা বলে চোখের বাঁধ ছেড়ে দিলো জগা, ভগাও।

মনে পড়ে

তোমাকে ছোঁয়ার সেই আলো আঁধারি সন্ধ্যা চোখে চোখ, না বলা ভাষা ঠোঁটে ঠোঁটে রেশম চুলের পুষ্প পরাগ মাখা হাওয়া স্পর্শে শিউরে ওঠার আনন্দে সুগন্ধি ঘাম সংশয় নেই তবুও কৃত্রিম ভয়, সমাজের এই প্রথমবার বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা উল্টালাম দখিনা বাতাস এলো তোমার সাগর থেকে মনে পড়ে।

বোশেখি চাঁদের আলো, রাত বেশ গভীর তখন চাঁদ আর ফুলের পাপড়ি মিলে সাজিয়েছে নির্জনে কথোপকথনের কড়ই তলা তুমি লোকসমুদ্র ফাঁকি দিয়ে এলে কাছে একটু হাসলে, দাঁত মুক্তো হলো জোছনায় উলঙ্গ আকাশ মেঘের কাপড় নেই একটুও দেখছে আমাদের সুখ ধরা আবেগ উল্লাস মনে পড়ে।

বলেছিলাম চাঁদ আলো দিতে অপারগ হলে তারারা লুটিয়ে পড়লে ঐ সীমান্তরেখায় পাখিরা শেষরাতের গান করলে, কিচিরমিচির ক্লান্তি ঘুম আনলে আমাদের চোখে তখন আমরা ফিরবো বাড়ির পথে হাত ধরে না হয়, জড়িয়ে থাকবো সম্পূরক আঁঠায় ছাড়বো না এক পলকের জন্যেও দুজনাকে মনে পড়ে।

রূপোলী আলো নিঃসৃত হচ্ছে তোমার থেকে লজ্জায় মুখ ঢাকছে চাঁদ মেঘের ওড়নায় রক্তকণায় উত্তেজিত দাবানল দাউদাউ মানবিক হুঁশ বিলুপ্ত, পৌছে গেছি ভিন্নতায় কোষে কোষে আনন্দ মেলা কল্পনাতীত দুজনে একাকার বিভেদ নেই আমাদের পথভোলা পথিকের মতো সুখের সন্ধানে ব্যস্ত মনে পড়ে।

তোমার চোখে বিলিয়ে দেয়ার দারুণ বসন্ত মৌ মৌ করছে তোমার অপূর্ব মোহিত রূপ আলিঙ্গনে দোল খাচ্ছে বসন্তকাল পাপড়ি ছড়ানো, মধু খেতে বাঁধা নেই কোনো জোয়ার নদীতে উন্মাদনার ঢেউ দৃষ্টিনন্দন বৈঠার তালে তালে বেরোয় মুগ্ধ সুখের গান নির্জন কড়ই তলা আমাদের সুখের পৃথিবী মনে পড়ে।

দৃষ্টি বিছিয়ে রাখবো

আমি তোমার যাওয়ার পথে আমার দৃষ্টি বিছিয়ে রাখবো তুমি ফিরে যদি আসো কখনো সেই ফিরে আসা দেখবো চেয়ে দেখবো আমার দৃষ্টি বিছিয়ে রাখবো।

যাকনা হাজার বছর কেটে চেয়ে সব বেদনা ভুলবো তোমায় পেয়ে। তোমার চোখে এ চোখ রেখে আবার ফাগুন বিকেল খুঁজবো আমার দৃষ্টি বিছিয়ে রাখবো।

আজ এখানে কাল কাটে নির্ভয়ে কেউ পাশে নেই চারপাশ নির্দয়ে। তোমার আশায় দীপ্ত জীবন থুয়ে আমি দুখ সাগরে ভাসবো। আমার দৃষ্টি বিছিয়ে রাখবো।

আরও পড়ুন : আয়না হাসতে জানে, কাঁদতে জানে, কাঁদাতে জানে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড