• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ (২১তম পর্ব)

  রিফাত হোসেন

১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:২৬
গল্প
ছবি : প্রতীকী

সায়েম ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। সিঁড়ি দিয়ে উপরের তলায় ওঠে সারাদের ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়াল। কলিংবেল বাজাতেই সারার মা দরজা খুলে দিলো। সারার মা এতরাতে সায়েমকে এখানে দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘একি সায়েম, তুমি এতরাতে এখানে? কোনো সমস্যা হয়েছে?’

সায়েম অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে সারার মায়ের দিকে তাকালো। ও ভেবেছিল সারা নিজেই দরজা খুলবে৷ কারণ সারার বাবা-মা এই সময় ঘুমিয়ে থাকে। তারা বয়স্ক মানুষ, এছাড়াও অসুস্থ, আর রাত ১০.৩০ এর অধিক বাজে। সুতরাং এই সময় তাদের জেগে থাকার কথা না। সায়েম কিছু না ভেবেই চলে এসেছে। তাই ঠিক বুঝতে পারছে না কি বলবে এখন? একবার ভাবছে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যাবে। আবার ভাবছে বানিয়ে কিছু একটা বলে দিবে৷ কিন্তু কি বলবে, সেটাও বুঝতে পারছে না। তাই এপ্রকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ও। সারার মা সায়েমের বিব্রতবোধ করা দেখে কি যেন অনুমান করতে পেরে বলল, ‘তুমি নিশ্চয়ই সারার কাছে এসেছ, তাই না? সারার কাছে কি কিছু রেখেছিলে, যা এখন ফেরত নিতে এসেছ।’

- জি আন্টি। আসলে অফিস থেকে ফেরার সময় তো খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন আমার ফোনটা সারার ব্যাগে রেখেছিলাম। সেটাই নিতে এসেছি।

সায়েম একদমে কথাটা বলে শ্বাস নিলো। এতক্ষণ মনে হচ্ছিল, কথাটা গলা পর্যন্ত এসেও থেমে গিয়েছ। কিন্তু এখন কথাটা বলতে পেরে কিছুটা শান্তি অনুভব করছে। সারার মা দরজার কাছ থেকে সরে গিয়ে বলল, ‘ভিতরে এসো সায়েম। সারা ওর ঘরেই আছে।’

সায়েম একটা ক্লোজআপ মুখের হাসি দিয়ে ড্রয়িংরুমের ভিতরে প্রবেশ করল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সারার বাবা নেই। নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে গেছেন তিনি। সারার মা দরজাটা আটকে দিয়ে খাবার টেবিলে অগোছালো ভাবে থাকা প্লেটগুলো গোছাতে লাগল। সায়েম মৃদু হাসি দিয়ে সারার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এলোমেলো চুলগুলোতে একবার হাত বুলিয়ে দরজাটা হালকা করে ধাক্কা দিলো। - আশ্চর্য, দরজাটা খুলে গেল! সারা কি দরজা না লাগিয়েই শুয়ে পড়েছে?

বিড়বিড় করে কথাটা বলল সায়েম। ঘরের ভিতরে উঁকি দিতেই দেখল ঘর অন্ধকার হয়ে আছে। শুধু বারান্দার দিক থেকে আবছায়া একটা আলো আসছে ঘরের ভিতর। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সায়েমের চোখটা আবছায়া আলোয় সয়ে গেল। পুরোপুরি ঘরের ভিতরে ঢুকে বিছানার দিকে তাকালো। কিন্তু না, সারাকে দেখতে পেলো না। ঘরের চারিদিকে তাকিয়েও সারার দেখা মিলল না সায়েমের। বাথরুমের দরজাটাও বাইরে থেকেই লাগানো। সুতরাং সায়েম নিশ্চিত হলো যে, সারা বারান্দায় আছে। নিঃশব্দে পায়ের উপর হালকা করে ভর দিয়ে বারান্দার দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। সামনে তাকাতেই দেখল সারা বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শীতল বাতাস এসে সায়েমের শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়ে গেল হঠাৎ। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এত শীতল বাতাসের মধ্যে সারা পাতলা একটা জামা পরে দাঁড়িয়ে আছে। ওড়নাটার একপাশ কোনোরকম ভাবে গলায় জড়িয়ে আছে শুধু। অন্যপাশটা বাতাসের সাথে খেলা করছে। এদিক-ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। ওকে দেখে বুঝা যাচ্ছে ওর হাত-পা কাঁপছে। অথচ ওর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। অপলক নয়নে তাকিয়েই আছে দৃষ্টির দূর সীমানার দিকে। সায়েম আবারও নিঃশব্দে সারার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। পিছনে থেকে সারাকে জড়িয়ে ধরে, সারার ঘাড়ের কাছে নিজের মুখটা গুজে দিলো। আলতো করে নিজের ঠোঁট দু'টো দিয়ে সারার ঘাড়ে চুমু দিয়ে, সারার হাত দু'টো চেপে ধরল। প্রচণ্ড শীতলতা আহরণের পর আচমকা উষ্ণ স্পর্শে কেঁপে উঠল সারা। চোখ বন্ধ করে সায়েমের হাতটা জাপটে ধরে সায়েমের বুকের সাথে ওর পিঠ মিশিয়ে দিলো। সায়েমের শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভব করতে পারছে সারা। কিছুক্ষণ নীরবতা দু'জনের মাঝে। হঠাৎ সারা চোখটা মেলে তাকালো। ঘটনাটা বুঝতে কিছু মুহূর্তটা সময় লাগল ওর। এরপর হঠাৎ ধাক্কা দিয়েই সায়েমকে সরিয়ে দিলো। সায়েম ভ্রু-কুঁচকে তাকালো সারার দিকে। অন্ধকারে সারা ওর ভ্রু-কুঁচকানো চোখ জোড়া না দেখলেও সায়েমের মুখটা দেখতে পাচ্ছে ও। প্রবল তীক্ষ্ণতার চাহনিতে তাকিয়ে রইলো সায়েমের দিকে। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল, ‘আপনি এখানে?’

সায়েম মৃদু হাসি দিয়ে সারার দিকে এগিয়ে গেল। সারাকে কিছু বুঝার সুযোগ না দিয়েই সায়েম ওর কোমরে হাত দিয়ে, ওকে উঁচু করে রেলিঙের উপর বসিয়ে দিলো। সারা সায়েমের হাতটা শক্ত করে ধরে ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘আরে কি করছেন? এখান থেকে পরে গেলে নিশ্চিত মৃত্যু।’

সায়েম হেসে দিয়ে সারার কোমর জড়িয়ে ধরল। এরপর বলল, ‘আমার জন্য কি মরতে পারবেন না?’

সারা এবার আরো শক্ত করে সায়েমের হাত ধরল। এমনভাবে চেপে ধরেছে, যেন ও একা নয়, পরে গেলে সাথে সায়েমকে নিয়ে পড়বে। সারার বুকটা কাঁপছে। তবে শীতে নয়, ভয়ে। তবুও যথাসম্ভব কড়া গলায় সায়েমকে বলল, ‘আমি কি আপনার জন্য সৃষ্টি হয়েছি? যে আপনার জন্য মরবো। আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তার জন্য সৃষ্টি হয়েছি আমি। মরতে হলে তার জন্যই মরবো।’

- এই পৃথিবীতে ভালোবাসার মানুষের জন্য তো অনেকেই মরেছে, আপনি কেন পারবেন না তাহলে? আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না?

- অবশ্যই বাসি। তবে সেটা নিজের জীবনের থেকে বেশি না। যারা নিজের জীবনকে ভালো না বেসে অন্যের জন্য নিজের মৃত্যু কামনা করে, তারা তো প্রকৃত বলদ। আমি কিন্তু মোটেও প্রকৃত বলদ নই। তাছাড়া ছাঁকা খাওয়ার বিপরীত শব্দ যেমন মৃত্যু হতে পারে না, তেমনি ভালোবাসার বিপরীত শব্দও মৃত্যু হতে পারে না।

- তার মানে যারা ভালোবাসার মানুষের জন্য নিজের মৃত্যু কামনা করে , তারা সবাই প্রকৃত বলদ।

- অবশ্যই তারা প্রকৃত বলদ। নাহলে এইরকম বোকামি তারা কোনোভাবেই করত না। আরে বাবা, তোর ভালোবাসা যখন এতই গভীর, তাহলে সম্রাট শাহজাহান কিংবা রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম কাহিনীর মতো এমন কিছু কর, যার দ্বারা আগামী প্রজন্মে তোর প্রেমের কথা ইতিহাস হিসেবে থাকবে। তা না করে বলদের মতো সারাক্ষণ বলে বেড়ায়, এই যন্ত্রণা আমি আর বয়ে বেড়াতে পারছি না। এর থেকে মরে যাওয়া-ও উত্তম।

সায়েম বলল, ‘মরে তো আপনিও গেছেন। শারীরিক ভাবে না হলে মনের দিক দিয়ে। এই যে আগে আমাকে ফোন দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝগড়া করতেন। এখন একদম চুপচাপ। আমি যে সেই আগের আপনিটাকে ভয়ঙ্কর মিস করি, সে খবর কি আপনি রাখেন? আর এই যে এখন যেভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন আপনি, এটাকে কি মনের দিক দিয়ে মরে যাওয়া বলে না? এত শীতের মধ্যে আপনি পাতলা একটা জামা পরে দাঁড়িয়ে আছেন। শরীরের এপার-ওপার দেখা যাচ্ছে। যদিও অন্ধকারে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। কিন্তু বাতাস তো আর অন্ধকার মেনে চলে না। সে তো নিজ দায়িত্বে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছে। আপনি কি বুঝতে পারছেন না বাতাস কীভাবে আপনার শরীরের ভিতর ঢুকে আপনাকে অসুস্থ করে তুলছে? কালকে সকালে দেখবেন ঠাণ্ডা, মাথাব্যথা আর জ্বরে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি আপনি প্রকৃত বলদের পরিচয় দিচ্ছেন না?’

- না দিচ্ছি না। আমার বন্ধুরা বলেছে, যখন মনের দিক দিয়ে খুব কষ্ট অনুভব করবি, তখন চুপ করে একদিকে তাকিয়ে থাকবি। সবরকম ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে শুধু সামনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে। আমি পারতাম ঘরের ভিতরে চুপ করে বসে থাকতে। কিন্তু আমি ওভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমার মনে হয়, ওভাবে ঘরে বসে থেকে আমি মাইন্ড ফ্রেশ করতে পারব না৷ মাইন্ড ফ্রেশ করার মূলমন্ত্র হলো চুপ করে থাকা। তবে সেটা নিজের ইচ্ছেমতো স্থানে। তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। এবার প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিন। খুব ভয় করছে আমার।

সায়েম সারাকে নামিয়ে দিলো। সারা যেন বেঁচে গেল। সায়েমকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘এতক্ষণ মনে হচ্ছিল আমার প্রাণপাখিটা কোথাও উড়ে চলে যাচ্ছে। অবশেষে প্রাণপাখিটা ফিরে এলো।’

সায়েম বলল, ‘এবার গিয়ে অন্যকোনো জামা পরে আসুন তাড়াতাড়ি।’

সারা ওড়না ঠিক করতে করতে বলল, ‘সে তো অবশ্যই যাবো। আমি তো এতটা বোকা নই, যে পরপুরুষকে নিজের শরীর দেখার সুযোগ করে দিবো।’

- দেখতে দিলে দিবেন, না দিলে নাই। আমার আবার এত লোভ নাই।

সায়েমের কথা শুনে সারা শব্দ করে হেসে দিয়ে ঘরের ভিতরে চলে যাচ্ছিল। সায়েম ওর হাতটা ধরে কৌতূহলী কণ্ঠে বলল, ‘এতকিছু হওয়ার পরও আপনি এত হাসিখুশি। আমি জাস্ট অবাক হয়ে যাচ্ছি আপনাকে দেখে। সত্যি করে বলেন তো, আপনি আসলেই হাসিখুশি আছেন? নাকি আমার সামনে এলেই হাসিখুশি থাকার অভিনয় করেন?’

- উঁহু। আমি কোনোরকম অভিনয় করছি না। বিকেলে রাফার সাথে একটু কথা কাটাকাটি হওয়ার পর মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পরই আমার বন্ধুরা এলো। আপনি তো জানেনই সানি কেমন ছেলে। আমাকে না হাসিয়ে ও শান্ত হয়নি। এছাড়া অধরা আর মিথিলা আমাকে সাপোর্ট করল। আমাকে বাস্তবতা সম্পর্কে বুঝালো। অদ্ভুত ভাবে এর পর থেকেই আমার খারাপ লাগাটা কেটে গেল।

সায়েম সারার হাতটা ছেড়ি দিলো। সারা বলল, ‘আপনি চুপ করে এখানে দাঁড়ান। আমি জামাটা চেঞ্জ করে আসি। আসলে নাইটি-ফাইটি আমার পোষায় না। তাই এই পাতলা জামাটা পড়েই ঘুমাই আমি। তবে শীতের দিন চলে এসেছে। অভ্যেসটা পরিবর্তন করা আবশ্যক।’

সায়েম কিছু বলল না। সারা ভিতরে গিয়ে আবার দুই মিনিট পর ফিরে এলো। সায়েমের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘সো মিস্টার, এবার বলুন তো এত রাতে আপনি একটা যুবতী মেয়ের ঘরে কী করছেন? আমার তো যৌবন হারিয়ে যায়নি, যে আপনি বারবার আমার এত কাছে আসবেন, অথচ আমার কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। আপনি কাছে এলে আমি যে আউট অফ কন্ট্রোলে চলে যাই, সে খবর কী আপনি রাখেন মিস্টার সায়েম?’

সায়েম মুচকি হেসে বলল, ‘তাহলে তো দেখছি আউট অফ কন্ট্রোল করতেই হচ্ছে।’

- পাগল নাকি। এইরকম ভুল তো আমি করব না মিস্টার। আপনি এখানে আমার সবকিছু দেখবেন, অথচ দিনরাত আরেকজনকে বউ এর পরিচয় দিবেন। এই সুযোগ আপনি কখনোই পাবেন না।

সায়েমের মুখটা হঠাৎ মলিন হয়ে গেল। অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা না গেলেও ভালো করেই অনুভব করতে পারল সারা। কিন্তু কিছু না বলে নিজেকে শক্ত করল ও। কোনোভাবেই দূর্বল হলে চলবে না।

সায়েম বলল, ‘আপনিও আমাকে ভুল বুঝছেন, তাই না সারা? অবশ্য এটা অস্বাভাবিক কিছু না। যেখানে আমার নিজের বোন আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, সেখানে আপনার এই অভিযোগ গুলো স্বাভাবিক।’

- আমি কোনো অভিযোগ করছি না সায়েম। রাফা আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে যে, ও আপনাকে নিজের করে নিবে। আমিও চ্যালেঞ্জ করেছি যে, আমি আপনাকে নিজের করে নিবো। তবে সেটা সৎ পথে। আপনি মন থেকে যাকে ভালোবাসেন, তাকে নিয়েই আপনি সারাজীবন থাকবেন। আমি জোর করে কারোর সুখ কেড়ে নিতে চাই না। বিকজ সেরকম মেয়ে আমি নই। কিন্তু ভালোবাসা তো আর একতরফা হয় না। রাফা আপনাকে ভালোবাসে, অথচ আপনি রাফাকে ভালোবাসেন না। তারপরও দু'জন স্বামী-স্ত্রীর মতো আছেন। কিন্তু এটা তো হতে পারে না৷ একজনের সুখের জন্য দু'জন কষ্ট পাবে, এটা অন্যায়। রাফাকে এই সাধারণ জিনিসটা বুঝতে হবে। এটা আপনার দায়িত্ব। সুতরাং এখন সবটাই আপনার উপর ডিপেন্ড করছে।

সায়েম সম্মতি জানালো সারার কথায়। সারা বলল, ‘এবার আপনি যান প্লিজ। এখানে কী অজুহাতে এসেছেন আমি জানি না। তবে এতক্ষণ এখানে থাকা ঠিক হবে না।’

সায়েম মুচকি হেসে দিয়ে বলল, ‘আপনাকে একটা চুমু দিতে ইচ্ছে করছে খুব।’

সারা কড়া গলায় বলল, ‘মাইর না খেতে চাইলে যান এখান থেকে।’

সারার কথাকে অগ্রাহ্য করে সায়েম দুই হাত দিয়ে সারার মাথাটা ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো। সারাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌড়ে ড্রয়িংরুমে এলো। ড্রয়িংরুমে এসে দেখে সারার মা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। সায়েমের পায়ের শব্দ পেয়ে তিনি হকচকিয়ে ওঠে বলল, ‘ওহ সায়েম তুমি। তা ফোন নিয়েছ।’

সায়েম তোতলানোর মতো করে বলল, ‘জ্বি আন্টি ফোন নিয়েছি। আমি তাহলে এখন আসি।’

হাসিটা চেপে রেখে সিড়ির কাছে চলে এলো সায়েম। সারার মা দরজা আটকে দেওয়ার পর সায়েম শব্দ করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে নিচ তলায় এসে আবার নিজের ঘরের দরজায় টোকা দিলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই ইতি দরজা খুলে দিলো। সায়েম ভিতরে ঢুকে সোফায় বসল। ইতি বলল, ‘কোথায় গিয়েছিলে ভাইয়া?’

- সারাদের বাড়িতে।

ইতি চোখ বড় বড় করে বলল, ‘বল কী! এত রাতে তুমি ওখানে গিয়েছিলে? হায় আল্লাহ, সারা আপুর মা কী দেখে ফেলেছে তোমাকে?’

সায়েম হাসতে হাসতে বলল, ‘সারার মা নিজেই দরজা খুলে দিয়ে বলেছে, সারা ঘরেই আছে, যাও তুমি।’

- এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এতরাতে একটা মেয়ের ঘরে চলে গেলে তুমি, অথচ তিনি কিছু মনে করলেন না?

- বাড়িওয়ালা ব্যতীত এই বিল্ডিংয়ের সবাই জানে আমি খুবই ভদ্র একটা ছেলে। সারার মা ও তাই জানে। তাছাড়াও একটা টেকনিকও এপ্লাই করেছি। সেজন্য কিছু বলেনি আর।

ইতি হেসে দিয়ে বলল, ‘তুমিও না ভাইয়া। তা কী বলল সারা আপু? মানে খুব কী অভিমান করে আছে?’

- কিছুটা। তবে ঠিকই আছে ও। আচ্ছা তোকে অনেকক্ষণ জেগে থাকতে হলো। তুই ঘুমিয়ে পর এবার। আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।

ইতি নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য কিছুটা এগিয়ে গিয়েও আবার থেমে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখল সায়েম সেখানেই চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল। ইতি এগিয়ে এসে বলল, ‘কী হলো ভাইয়া? ঘরে যাও।’

সায়েম নড়েচড়ে আবার ভালো করে হেলান দিলো। ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ঘরে যেতে ভালো লাগছে না রে৷ রাফা এসে সব এলোমেলো করে দিলো। মাঝে মাঝে মনে হয় ওকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। যাতে করে রাফাও আর থাকবে না। আর ওকে যে আমিই মেরেছি, সেরকম কোনো প্রমাণও থাকবে না। বিকজ লাশটাই তো হাওয়া হয়ে যাবে।’

- এত রাতে মজা করো না তো ভাইয়া। রাফা একা আছে, যাও ঘরে যাও।

- আমি মজা করছি না ইতি। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর। আমি এখানেই ঠিক আছি।

- তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছ ভাইয়া।

সায়েম হঠাৎ ওঠে দাঁড়াল। অগ্নি দৃষ্টিতে ইতির দিকে তাকালো। ইতি ভীত হয়ে কয়েপ পা পিছিয়ে গেল। সায়েম চেঁচিয়ে বলল, ‘একটা থাপ্পড় মেরে তোর সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো। ফাজলামি করছিস আমার সাথে। তুই নিজে বাড়াবাড়ি করে আবার আমাকে বলছিস। এত সাহস কোত্থেকে এলো তোর?’

ইতি সায়েমের কাছে এলো। অসহায়ের মতো করে বলল, ‘প্লিজ ভাইয়া আস্তে কথা বল। কেউ শুনলে খারাপ মন্তব্য করবে।’

- মানুষের খারাপ মন্তব্য করার আর বাকি আছে কী বল তো আমাকে? তুই প্লিজ যা তো আমার সামনে থেকে। আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না তোর। তুই বরং ওই বাইরের মেয়েটার উপর দরদ দেখা গিয়ে। যত্তসব ফাউল কোথাকার। এইজন্যই স্টুডেন্ট লাইফটা এইসব বালের সংসার-টংসার থেকে দূরে ছিলাম। নিজের ইচ্ছেমতো চলতাম। তোর দায়িত্ব নিয়েও আমি সেভাবেই নিজের ইচ্ছেমতো চলেছি এতদিন। কিন্তু রাফার আসার পর থেকে তুইও এখন সেই আমার উপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছিস। আরে ইয়ার, আমাকে একটু বুঝার চেষ্টা কর।

ইতি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। সায়েম ইতির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হেসে দিলো। ইতির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল, ‘আরে পাগলি কাঁদছিস কেন? আসলে মাথাটা আচমকা গরম হয়ে যাওয়ায় রাগারাগি করে ফেলেছি। প্লিজ কাঁদিস না।’

ইতি কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল, ‘তোমার বলা কথাগুলো আমাকে যতটা না আঘাত করেছে, তার থেকেও হাজারগুণ বেশি আঘাত করেছে, যখন বুঝতে পারলাম তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।’

- কি করব বল? তুই আমার বোন হয়ে রাফাকে সাপোর্ট করছিস। আমার বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলছিস। আমার উপর রাফাকে চাপিয়ে দিচ্ছিস তুই। এইসব তো আমার সহ্য হয় না বোন।

ইতি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বলল, ‘আই এক্সপ্লেইন টু ইউ ব্রাদার। ধর, আমি নিজের স্বামীকে রেখে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করছি। দিনের পর দিন তার সাথে সম্পর্ক রেখেই যাচ্ছি৷ আমার স্বামী কী করবে, সেটা নাহয় নাই বললাম। কিন্তু ভাই হিসেবে তুমি কী আমার এই কাজটাকে সমর্থন করবে ভাইয়া?’

সায়েম মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘একেবারেই না।’

ইতি আবার বলতে শুরু করল, ‘কারণ আমি অন্যায় করছি। আর সেজন্যই তুমি আমাকে সমর্থন করবে না। অথচ দেখ ভাইয়া, তুমি প্রতি নিয়ত সারার আপুর সাথে সম্পর্ক রেখেই যাচ্ছ৷ এমনকি এত রাতেও তুমি তার ঘরে গিয়েছিল। বোন হিসেবে এটা কী আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ভাইয়া? না, একেবারেই সম্ভব না৷ কিন্তু দেখ, আমি কিন্তু তোমাকে বাধা দিইনি কখনো। একবারের জন্যও বলিনি তুমি সারার আপুর সাথে যোগাযোগ রাখবে না। কেন বলিনি জানো ভাইয়া? কারণ আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি তুমি ঠিক কাজই করছ। রাফা অন্যায় করেছে তোমার সাথে, তাই বলে এমনটা নয় তুমি নিজের সুখ বিসর্জন দিবে। আমিও খুব চাই সারা আপু তোমার স্ত্রী হোক৷ বাট পরিস্থিতির কারণে সবটা এলোমেলো হয়ে গেছে। আর সেজন্যই তোমার আর সারা আপুর মেলামেশাটা সমর্থন করছি আমি। কারণ আমি চাই না, আকস্মিক একটা ঘটনাটার জন্য আমার ভাইয়া কষ্ট পাক। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আমার জীবনে এই পৃথিবীর সব থেকে উর্ধ্বে তুমি। আমার কলিজা তুমি ভাইয়া। কিন্তু তাই বলে আমি রাফাকে কষ্ট দিতে পারি না ভাইয়া। রাফার উপর আমারও একটা ক্ষোভ আছে। কিন্তু সেই ক্ষোভ প্রকাশ করার সময় এখন না। তুমি, আমি, আমরা সবাই যদি রাফাকে অত্যাচার করি, তাহলে ও বাঁচবে কীভাবে? তুমি জানো না।’

ফাহাদ ভাইয়ার অবস্থাটা। উনি প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে ফোন দিয়ে শুধু রাফার খোঁজ নেয়। ভিডিও কলে রাফার মুখটা দেখতে চায়। রাফার কণ্ঠ শুনতে চায়। তুমি হয়তো ভাবছ ফাহাদ ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য রাফাকে সাপোর্ট করছি আমি। বাট এটা ভুল ভাইয়া। রাফাকে আমি সাপোর্ট করি না। আবার অত্যাচার ও করি না। কালকে রাফার গালে তোমার দেওয়া থাপ্পড়ের লাল দাগ দেখে ফেলেছিল ফাহাদ ভাইয়া। আমি জানি ফাহাদ ভাইয়া সব বুঝেছিল। কিন্তু কিছুই বলেনি। নীরবে ফোন কেটে দিয়েছিল। সে কথা বলতে পারছিল না তখন। তার চোখে আমি জল দেখেছিলাম। আমি কষ্ট পেলে তোমার যেমন কষ্ট হয়, ফাহাদ ভাইয়ারও তেমন কষ্ট হয় রাফার কষ্ট দেখে। বরং আরো বেশিই হয়। কারণ সে রাফাকে নিজেই খাইয়ে, পড়িয়ে আদর যত্ন দিয়ে বড় করেছে। ঘরে গিয়ে দেখ রাফা ব্যাথায় কাঁদছে। মেয়েটা যতই সহ্য করুক না কেন, আমি বুঝতে পারি ও কতটা যন্ত্রণায় আছে। নীরবে কেঁদে যাচ্ছে ও। আমাকে দেখলেই চোখের জল আড়াল করার চেষ্টা করে। হাতটা ফুলে গিয়েছে ওর। এদিকে ফাহাদ ভাইয়া অনবরত ভিডিও কলে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি রিসিভ করতে পারছি না। কারণ রিসিভ করলেই সে রাফাকে দেখতে চাইবে।

কিন্তু রাফা তো কাঁদছে খুব। আমি কীভাবে এই অবস্থায় রাফাকে দেখাবো? তুমি যেমন আমার সামান্য একটু চোখের জল দেখে নিজের সব রাগ দমিয়ে রেখে আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করলে। তেমনি রাফার চোখের জল দেখেও ফাহাদ ভাইয়া সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু আফসোস, সে ইচ্ছে করলেও পারবে না বোনের চোখের জল মুছিয়ে দিতে। সত্যি বলছি ভাইয়া, আমি কোনোভাবেই চাই না তুমি, রাফা, সারা আপু, কিংবা ফাহাদ ভাইয়া, কেউ কষ্ট পাক। সেজন্য আমি সবকিছু মেনে নিচ্ছি। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না ভাইয়া। আমাকে প্লিজ ভুল বুঝ না। আমিও একজনের বোন। সুতরাং আমি জানি একটা বোনের কষ্ট দেখে, তার ভাইয়ের কতটা কষ্ট হয়। তুমি নিজেই এর উদাহরণ। তোমার অনুপস্থিতিতে আমি প্রতিনিয়ত রাফাকে বুঝানোর চেষ্টা করি যে, জোর করে কারোর ভালোবাসা পাওয়া যায় না। কিন্তু ভাইয়া প্লিজ, ওকে মেরো না। আজকে তোমার সাথে তখন রাগারাগি করেছি আমি। রাফাকে তোমার ঘরে থাকবে বলেছি এর পিছনেও একটা কারণ আছে। তোমার সাথে থাকলে রাফা কাঁদবে না আর। আর ফাহাদ ভাইয়া ফোন দিলে আমি বলতে পারব, রাফা তোমার ঘরেই আছে।

সায়েম কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে বসে পড়ল চেয়ারে। ইতি আবার বলল, ‘তুমি বরং আজকে আমার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আমি তোমার ঘরে গিয়ে রাফাকে সামলাচ্ছি।’

ইতি চলে গেল। সায়েম আর বসা থেকে উঠল না। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

সকালে রাফার ডাকে ঘুম ভেঙে গেল সায়েমের। চোখ কচলাতে কচলাতে ওঠে বসল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে ও নিজের ঘরেই আছে। আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাফা। সায়েম ইতিকে ডাক দিলো। ইতি এসে বলল, ‘জানি কেন ডাকছ। কিন্তু এত ভাবার কিছুই নেই। আমি তোমাকে কোলে করে এখানে নিয়ে আসিনি। আর সেটা সম্ভব ও নয়।’

- তাহলে কীভাবে এখানে এলাম?

- তুমি নিজেই হেঁটে এসেছ। আমি জাস্ট তোমাকে একটু সাহায্য করেছি।

সায়েম কিছু বুঝতে পারল না। অযথা প্রশ্ন করে সময় নষ্টও করল না আর। বিছানা থেকে নামতে যাবে, তখনই রাফা ওর পাশে বসে হাতে চুড়ি ঢুকানোর চেষ্টা করে বলল, ‘কী এক অবস্থা? কালকে দিনেও এই চুড়ি পড়েছিলাম আমি। অথচ এখন ঢুকতেই চাইছে না।’

সায়েম আধঘুমন্ত চোখে দেখল রাফার হাত দু'টো ফুলে আছে। তাই বিরক্ত নিয়ে বলল, ‘দেখছই তো হাত টা ফুলে গেছে। এই ফোলা হাতে ছোট্ট চুড়িগুলো ঢুকবে না এটাই স্বাভাবিক রাফা।’

রাফা অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘এরজন্য তো তুমিই দ্বায়ী। হাত দু'টো কালকে ওভাবে না ধরলে এইসব কিছুই হতো না।’

- কালকের টা কালকের বিষয় রাফা। বর্তমান নিয়ে ভাবো। তাছাড়া দুই একদিন চুড়ি না পড়তে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।

- মহাভারত অশুদ্ধ না হলেও আমার ক্ষতি হয়ে যাবে। তুমি কী জানো না বাঙালি নারীর সৌন্দর্য শাড়ি আর চুড়িতেই লুকিয়ে থাকে? এই সৌন্দর্য ঠিকঠাক প্রকাশ না করলে তোমাকে নিজের প্রেমে ফেলব কীভাবে?

সায়েম রাফার বকবকানি সহ্য করতে পারছিল না৷ তাই রাগ দেখিয়ে ওকে পাশ কাটিয়ে বিছানা থেকে মেনে দাঁড়ালো। রাফাও লাফ দিয়ে নেমে সায়েমের সামনে এসে ওর পথ রোধ করে দাঁড়ালো। এরপর বলল, ‘আজকে কিন্তু অফিস থেকে আসার সময় আমার জন্য চুড়ি কিনে আনবে। বড় সাইজের।’

সায়েম কড়া গলায় বলল, ‘তোমার এইসব আবদার আমার ভালো লাগতো, যদি তুমি সত্যি সত্যিই আমার বউ হতে। আমার মনের মতো একজন। যেমনটা সারা। তোমাকে দেখলেই আমার বিরক্তি চলে আসে। সবাই এটা বুঝে, অথচ তুমি বুঝ না। প্লিজ রাফা আমাকে ডিভোর্স দাও প্লিজ। আমি যেমন তিনবার কবুল বলে তোমাকে বিয়ে করেছি, তেমনি তুমি তিনবার তালাক বলে আমাকে মুক্তি দাও।’

রাফার হেসে দিয়ে বলল, ‘শোন মিস্টার সায়েম, এই রাফাকে চিনতে হলে তোমাকে আরো কয়েকবার জন্ম নিতে হবে। আমি ওইরকম মেয়ে নই, যে তোমাকে নাটকীয় ভাবে বলব, ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও, আমি এক সিন্দু হৃদয় দেবো।’ আমি এমন একটা মেয়ে, যে কি-না তোমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলব, আমায় এক চামচ চুমু দাও, আমি এক গোডাউন চুমু ফিরিয়ে দেবো। অর্থাৎ, তুমি যেমন আমাকে তিনবার কবুল বলে বিয়ে করেছ, আমি তেমনি আরো একশো বার কবুল বলে বিয়েটা মজবুত করব।’

রাফার কথা শুনে ইতি আর সায়েম একে অপরের মধ্যে চোখাচোখি হলো কয়েকবার।

(চলবে...)

আরো পড়ুন ২০তম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড