রুদ্রাক্ষ রায়হান
দোকান
শীতার্ত রাত্রিরা পিদিমের পিঠ ছুঁয়ে- ওম নিতে যায়, অস্থির সময়েরা ফিরে গেলে- পুরনো শহরে মানুষেরা রাত জাগে, রাত্তিরে শহর ঘুমায়।
কখনো মানুষ চিন্তাকে ভুল জেনেছিলাম পুরনো ক্লান্তির ঘেরাটোপে আটকানো জীবন অহেতুক সূর্যকে তাড়া দিতো ‘অস্তাচলে যাও’ আমিও কাতর স্বরে প্রার্থনায় জপি সেই শ্লোক ওহে রাত! প্রাণপণে আঁধার নামাও
তারপর আড্ডারা জমে ওঠে ব্রুকলেন স্ট্রিটের পাশে অভিজাত আতরের ঘ্রাণ বুকে কেউ- ভেসে আসে নিশাচর রাতের আকাশে কে গায় অবিরাম, চিয়ার্স, অদ্ভুত নেশাক্রান্ত গান?
শহরে ব্রথেল মানে ইলিশের খুচরো দোকান।
ডিমেনসিয়া
পুরনো স্কুল মনে নেই সেই লোকটির নাম যিনি স্কুল গেটে- পুরাতন জুতা সেলাই করতেন! শহরে আগুন লাগার রাতে ভুলে গেছি সব তারপর অন্য কোন স্মৃতি ভাসছে না মাসকাটা তীরে।
এইসব আলো বাতি, গান টান, মিউজিকের শহরে দুধ ও ধুলোর গল্প আমি শুনেছিলাম বহুদিন আগেই সন্ধ্যায় যে যার ঘরে ফেরার কাহিনীটা পুরাতন বই হয়ে গেছে
শহুরে বিলবোর্ড কিনে নেয় শ্যাম্পু, স্নো আর রুবি ক্রাউন ব্রেসিয়ার ফুটপাতে মানুষ, রাজপথ চিনে নিলো মৃতপ্রায় লোকাল বাসেরা এমন শহরে আমি গ্রাম থেকে ছুটে আসা আততায়ী মুখ।
যে গাছটি শেকড়ের মায়া ছেড়ে পরগাছা আমি তারে খুঁজেছিলাম আগে বুঝিনি কখনো, গাছ পরগাছার আত্মীয় লাগে কতগুলো বনসাই নিজ গুনে মহীরুহ হলো মনে নেই।
তারপর জলে ভেসে যাই, ঘাট-অঘাটে কখনো হয়নি শোয়া পুরাতন পালঙ্কে, খাটে তারপর উড়ে চলা দূষিত নতুন বাতাসে কখনো প্রেমিক ছিলাম, ওইসব কথা মনে নেই!
অ্যান্টি ফাইলাসফিক-১
স্ত্রীর মৃত্যুর দিনে তুমি এক আর্টিস্টের কাছে গেলে, তোমাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে যদি দ্যাখো তোমার মুখে স্তন চেপে ধরে বলে কাঁদো, তুমি তোমার স্ত্রীর নাম জপে কেঁদে কেঁদে হাল্কা হও।
স্বামীর মৃত্যু শোক ভুলতে কেউ তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, তুমুল আবেগে তুমি তার ঠোঁট কামড়ে দিলে।
তোমাকে দিন রাত শুয়োর বলে গালি দিতো যে নারী তার কোলের ফুটফুটে বাচ্চাটি তোমার, কেউ জানেনা।
শুধুমাত্র শরীরের দোষে তুমি আর তোমার গৃহকর্মী তোমার স্ত্রীকে হত্যা করেছো! কিন্তু কথা ছিলো তোমরা সহমরণে যাবে।
একজন প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত জীবনের সাধ তোমাকে ব্লোজব দেয়ার! তুমি তার দলের একজন মাঝারি মানের কর্মী মাত্র।
তুমি একজন কবিকে চেনো, যে কিনা মদের দাওয়াত দিয়ে পুরুষের শরীর নিয়ে খেলে, তোমাকেও সে ডেকেছে আজ রাতে।
একজন ধর্ম মানা নারী যার ১১ বার এ্যাবোরশন হয়েছে, তুমি এখন তার প্রথম বিয়ের ঘটক।
সবকিছু জেনে বুঝে তুমি আত্মহত্যা করতে যাও! তোমাকে তখন ফুটফুটে একটি শিশু বাবা বলে ডাক দিলো!
ঘুম ভাঙতেই তুমি তারে বুকে জড়িয়ে ধরো!
এন্টি ফাইলাসোফিক-২
কাঁদতে চাও? পোড়া লবণের শরীরে মৃত্যুর ঘ্রাণ জমে থাকে মরণের সুখ তুমি তুলে নাও কোমল চিবুকে।
নিভৃত মাঠ, ফ্যাকাসে ঘাসের শরীরে চাঁদ- অদ্ভুত অভিমানে নেমে আসার রাতে তুমি আমার ঠোঁটে চুমু দিলে, এমন এক স্বপ্নের শেষে ঘুম ভেঙে যেতেই পুলিশের হাতকড়া! শুনলাম ৭০০ বছর আগেই আমার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।
তোমার প্রেমিকের চোখ উঠিয়ে ফেলার অপরাধে যে মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছিলো, তারও ২৫৬ বছর আগে আমার মৃত্যু হয়েছে! আমার শরীরের মাংস খাওয়ার পরে একটি হায়ে না, স্ত্রী সঙ্গমে গিয়েছিল।
তোমার নামে কবিতা লেখার অপরাধে আমাকে শুলে চড়িয়ে হত্যা করেছে যিশুখ্রিস্টের ভাই। মৃত্যুর আগে আমাকে একবার পুতুল ছুঁতে দিয়েছিলেন, হাতে নিতেই পুনর্জন্মের মন্ত্র শিখে গেলাম!
এবং আমি জানি, প্রতিটি মৃত্যুর কিছুদিন আগে তুমি আমার ঠোঁট ছুঁয়ে মধু ঢেলে দিতে! আমিও আনমনে বেছে নিতাম প্রাণহীন তুমুল বৈরাগ্য!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড