রাসেল আহম্মেদ
খড়িমাটি
প্রাথমিক জীবনে ইসলাম শিক্ষা বইয়ের ভেতর সযত্নে রাখতাম ময়ূরের পালক, তখন জানতাম ওরা খড়িমাটি খেয়ে বেঁচে থাকে, তাই খড়িমাটি গুড়ো কোরে খেতে দিতাম। এখনও সেসব স্মৃতি ভাবনায় এসে হামাগুড়ি খায়। তোমার বুকের খাঁচায় আমি যেন ময়ূরের পালক। আর খড়িমাটি হচ্ছে তোমার চুমু, যা আমার আত্মাকে প্রফুল্ল রেখেছে।
কষ্ট
একজন চিত্রশিল্পীর রঙতুলিতে আঁকা ছবি থেকে উন্মেষিত আবেগ সংগ্রহ করা হলো, তারপর রচনাশিল্পী,কণ্ঠশিল্পী, সুরকারের। এভাবে পর্যায়ক্রমে সৃজনকর্মের সাথে যুক্ত প্রতিটি শিল্পীর আবেগ-অনুভূতির সমন্বয়সাধন করা হলো। সকলের রহস্য একত্রিতকরন কোরে যে বস্তুটি সৃষ্টি হলো তার নাম কষ্ট!
একদিন চলে যাবো
অনুক্ত কথার ভাঁজে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণা সঙ্গে করে মানুষের পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যাবো। যে গান কখনও গাওয়া হবে না সেই গানে সুর মেলাতে না পারার ব্যর্থতা মেনে নিয়ে একদিন চলে যাবো। যে ঠোঁট কখনও অত্যাচারীর সাথে আপোষ করেনি, সাদা শাড়ির কালো নকশার মাঝে রেখে যাবো সে ঠোঁটের শিল্প। হৃৎপিণ্ডের এসব শিরোনামহীন আর্তনাদ সহ্য কোরতে কোরতে একদিন ভীষণ ক্লান্ত হবো, আর তখন নোনাজলের প্রাচীর টপকে ঠিকই চলে যাবো।
আজকাল সবকিছু ভুলে যাই আজকাল কোনোকিছু তেমন মনে থাকে না, সবকিছু কেমন ভুলে-ভুলে যাই। লোমের বিছানা থেকে দেহটা তুলে উরুতে কনুই ভর দিয়ে থুতনিতে হাত রেখে বসেছিলো আমার বর্ষা। ঠিক কব্জি বরাবর একটা কালো জোনাকি দেখেছিলাম, কোন হাতের কব্জিতে-- তা মনে নেই। সব কিছু কেমন ভুলে যাই। ভুলে গেছি প্রথম প্রেমিকার জন্মতারিখ, এবার জন্মদিনে রক্ত দান করতে হলে বাঁধন, কোয়ান্টাম, পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, গ্রিন ভিউ মেডিকেল সবখানে খোঁজ নিতে হবে। দু’বছর ধরে শারীরিক দুর্বলতার কারণে রক্ত দিতে পেরেছি মাত্র একবার! মনে ছিলো না তাই মসজিদের বকেয়া টাকাটা দিয়ে আসা হয়নি দিতে পারিনি দানের টাকাটাও। সবকিছু কেমন ভুলে যাচ্ছি। সময়মত গোসল করা হয় না, খাওয়া দাওয়া হয় না, সেদিন তো চায়ের বিলটাও দিতে ভুলে গেছি। গতকাল বাজারে যাওয়ার পথে একটা মাছের ঝাঁক উড়ে আসছিলো, মায়ের ঔষধ না এনে দু’টো পোনা মাছ নিয়ে ঘরে ফিরেছি। কত কী মনে রাখা যায়? খবরের পাতা খুললে খুন-ধর্ষণ, ছিনতাই-রাহাজানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আর ভালো লাগে না। কালীগঞ্জের বাঁকের ওখানে একটা ডিভাইডার করে দিতে কী এমন খরচ হয়? গত তিন বছরে কয়েকটা এ্যাক্সিডেন্ট ঘটলো, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো অপরিকল্পিত ভবন ধ্বসে পড়লো ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হলো আরও কত কী। অত কিছু আর মনে রাখতে পারি না, আজকাল সবকিছু ভুলে যাই।
নিয়ম রক্ষার গান
থাকুক না কলহবিবাদ, তবুও কুমারত্বের বদনাম ঘুচাতে আমি একটি দাম্পত্যজীবন চাই। প্রকৃতির জানালা খুলে বাম হাতের অনামিকায় বেঁধে দেবো নিন্দুকের নজর, অতঃপর ঝড় উঠলেই যেন খুঁজে নিতে পারি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। যেহেতু জগতের নিয়মকে উপেক্ষা করার মতো অত সাহসী আমি নই, তাই সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই মিলনের সংগীত পরিবেশন করতে চাই। সুরের সুমধুর কম্পনে পাংশুটে মেঘ ঘনীভূত হবে, চিরচেনা কারও মনের ময়ূরী নেচে উঠবে, তারপর তুমুল বৃষ্টিতে প্লাবিত হবে তৃষ্ণার্ত জমিন। সময়ের দাবী রক্ষার্থে, নিয়ম রক্ষার তাগিদে, অন্তত নির্ভয়ে পাহাড় ভ্রমণে যাবার জন্য হলেও যোগ বিয়োগের এ নাট্যশালায় আমি একটি দাম্পত্যজীবন চাই। শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থে সংগৃহীত সাড়ে বারো হাত শাড়িতে আবেগমিশ্রিত হাসির নকশা আঁকতে দাম্পত্যজীবন চাই, সুদিনে, দুর্দিনে মুঠি শক্ত করে হৃদয়ের কথা পড়ার জন্য দাম্পত্য জীবন চাই, অনাগত দিনকে স্বাগত জানিয়ে মনের গহীনে অবগাহনের তরে দাম্পত্যজীবন চাই, মান-অভিমান, বিরহ সংকটের বেলা কেমনে অতিবাহিত হবে তা জানার জন্য দাম্পত্যজীবন চাই, শ্যামলা অঙ্গের আকর্ষণীয় কালো তিল দখল করার নিমিত্তে দাম্পত্যজীবন চাই, নিত্যনৈমিত্তিকের পাতায় কিছু অভ্যেস যোগ করার জন্য হলেও আমি একটি দাম্পত্যজীবন চাই।
আরও পড়ুন : আমার যত্নে গড়া রূপকথার সাক্ষী হয়ে বাঁচো
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড