গিরীশ গৈরিক
জন্মপদ্ম
একদিন প্রকাশ্যে নগ্ন হবো ঠিক একদিন নগ্ন হয়ে ঘুম দিবো-নিরবধিকাল। যে ঘুম শিখেছিলাম মাতৃগর্ভ থেকে- সেই ঘুম দিবো মাটির গর্ভে। মা ও মাটির গর্ভ এত মমতাময়ী কেন! কেন এত নির্জন স্তব্ধ! যেন আঁধারের মতো শীতল...
জননীর জন্মপদ্মে প্রণতি রেখে বলছি- মানুষ জন্মগত অজ্ঞাতবাসী, ভুলত কবি মূলত কখনো জানে না নদীর স্বরলিপি। তবুও জীবনের মহাতীর্থে আমি ও তুমি- জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি ভুলের মধ্যে বসবাস করি আর বড় হতে হতে একটি ভুলকে আরেকটি ভুল দিয়ে প্রমাণ করি সত্য।
বাবা। তুমি ট্রেনে তুলে দিয়ে নেমে গেছো গন্তব্যহীন ট্রেন চলছে-চলেই যাচ্ছে জলে জলের মাঝে জননী, তার মাঝে জন্মপদ্ম।
অদৃশ্য
কিছু কথা আছে-পাখির মতো উড়ে যায় কেউ শুনতে পায় না, শুধু তারে দেখা যায়।
কিছু কথা-শুধু বধির মানুষ শুনতে পায়।
কিছু গন্ধ দেখা যায় হৃদয় দিয়ে- অনুভূতির দুয়ারে দাঁড়িয়ে তারা নাচে।
এক জন্মান্ধ মেয়ের কাছে শুনেছি-বাতাস দেখতে কেমন? সে বলেছিল-আমার চোখের জলের মতো! অন্ধকারের মতো গন্ধহীন আর আলোর মতো বধির!
তাই আমার কথাগুলো ব্যথা হয়ে বেজে ওঠে বাতাসের আড়ালে।
জন্মান্ধ কলম
একটি অন্ধকারের কবিতা লিখবো বলে জন্মের পূর্বে ও মৃত্যুর পর থেকে বসে আছি। যখনই সাদা খাতায় কালো কালিতে অন্ধকারের কবিতা লিখতে যাই- তখনই সাদা খাতাজুড়ে আঁধার নেমে আসে পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়।
আমি কেমন করে-অন্ধকার খাতায় কালো কালিতে রোপণ করব কবিতা!
আলো জন্মের বহু আগে থেকেই আমি অন্ধ তবুও তোমরা কেউ কি আমায় একটি জন্মান্ধ আয়না দিবে? আমি একটি অন্ধকারের কবিতা লিখবো।
প্রশ্ন ও উত্তরের বাহিরে
কিছু কথার প্রশ্ন আছে উত্তর নেই কিছু কথার উত্তর আছে প্রশ্ন নেই তোমার এই চুপ থাকা প্রশ্ন ও উত্তরের ঊর্ধ্বে।
পৃথিবীতে কে কে চুপ থাকতে ভালোবাসে- মানুষ, পাখি, মাছ কিংবা পশু কেউ নয়, শুধু বৃক্ষই চুপ থাকে নিভৃতে। নীরব তার ভাষা-প্রেম-জীবনের ঘা। তবুও হেমন্ত এলে সবুজ পাতা হলুদ হয়ে যায় পাতার সাথে ঝরে পড়ে বেদনা।
বাবা, তোমার ছবি আজ নীরব বৃক্ষ আমরা তার ঝরে যাওয়া হলুদ পাতা!
সাউন্ড অব সাইল্যান্স
জীবন, শব্দ থেকে নীরবতায় সসীম থেকে অসীমে লীন হয়ে যায়।
পাখিদের সব কলতান-গান নয় কিছু গান ক্রন্দন, বুকভরা বেদনা! তবুও সব কলতান গান হিসেবে জানি।
সাধমাঝারের উঠান ও ঘরের পার্থক্য কে বুঝিতে পারে পাখির ভাষায়?
জীবনের সব হাসি-আনন্দ নয় কিছু হাসি গোপন কান্না, ভেতরের বালুচর- ক্ষয়ে যাওয়া নদী।
কিছু নদী অশ্রু দিয়ে গড়া কিছু ফুল রক্তাক্ত-রক্তজবা। তবুও সূর্য ওঠে- স্নিগ্ধ আলোয় ভরে ওঠে পৃথিবী নদীর কোমল বাতাস ধুয়ে দেয় সকল গ্লানি।
জীবন যেন আনন্দের আশ্রম-বেদনার পুকুর যে পুকুর পাড়ে ওই আশ্রমটি বিশ্রাম নেয়- জন্ম থেকে মৃত্যুর দর্শনে
দ্বন্দ্ব
দূর বনের ছায়া হেঁটে এসেছে আমাদের বাড়িতে ছায়াঘন এই জীবন মায়াময়। নীরব প্রেমের সঘন ছায়া এভাবে আসে! নিঝুম অন্ধকারে ছায়ারা কোথায় থাকে? কিংবা আলোর সাথে অন্ধকারের কেন এত দ্বন্দ্ব? তবে কি জোছনা আলো ও অন্ধকারের মাঝামাঝি কোনো সমাধান- সঘন প্রেম।
জীবনের আলো ও অন্ধকারের মাঝে ছায়াই নীরব প্রেম যে প্রেম মায়ের আঁচলের মতো পবিত্র।
‘মেডিটেশনগুচ্ছ’ পাণ্ডুলিপির মূল ভাবনা : মানবজীবনের উৎস কোথায়? জন্মের চেয়ে মৃত্যু এতবড় সত্য কেন? কেন জীবনের ভেতর-বাহির জুড়ে গভীর স্তব্ধতা? মৃত্যুর পরে জীবনশক্তি কীভাবে বিলীন হয়ে যায়? জন্মের পূর্বে ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবন আছে কি আদৌ? এইসব শাশ্বত (কি, কেন, কোথায়, কীভাবে) জীবনজিজ্ঞাসার অনুসন্ধানে ব্রত-এই কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে লুকিয়ে আছে জন্মান্ধের মতো শ্রবণশক্তি, কুকুরের মতো ঘ্রাণশক্তি, ইগলের মতো দৃষ্টিশক্তি এবং ধ্যানীবুদ্ধের মতো বোধশক্তি।
কবি গিরীশ গৈরিক
কবি পরিচিতি : জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯৮৭, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। শিক্ষা: হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর। পেশা: সাংবাদিকতা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘ক্ষুধার্ত ধানের নামতা-২০১৬’, ‘মা আদিপর্ব-২০১৭’ ও ‘ডোম-২০১৮’। সম্পাদনা: ‘বৈঠকখানায় নির্মলেন্দু গুণ-২০২০’। প্রধান সম্পাদক: www.poemvein.com । সংগঠন: ‘গীতাঞ্জলি সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি’ ও ‘বাংলাদেশ কবিতা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক’।
আরও পড়ুন : কখনো কখনো মিথ্যারা শিল্প হয়ে ওঠে
ওডি/এসএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড