• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাণ্ডুলিপির কবিতা

যেখানে বয়সের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে আছে সফেদ বর্ণমালা

  ইবরার আমিন

২৮ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০৭
সংসারপত্র
প্রচ্ছদ : কাব্যগ্রন্থ ‘সংসারপত্র’

প্রথম সাক্ষাৎ

কোনো এক কদমের ঋতুর শেষ বয়সে; শুক্রবার বিকেলের সূর্যের মৃত্যুর বেলায়, হলুদ শাড়ির ছোঁয়া গায়ে মেখে তার আগমন! চশমার ফাঁকে চোখেদের বিশাল আকারে চলতে থাকল একপাক্ষিক আলাপন, ঠোঁটের উচ্চারণে দাঁতের জমিনে প্রথম সাক্ষাৎ, যেখানে বয়সের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে আছে সফেদ বর্ণমালা, কপালের গায়ে জমে আছে কিছু ভীতু ঘাম, গালেদের পথে হারাতে পারে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্য! মাথায় চোখ পড়তেই মন বলবে; চুলের শরীরে ছোঁয়ার অধিকার হবে দীর্ঘ আকারে। প্রথম মুখোমুখিতে থুতনি সাক্ষী দিবে তার উচ্চতা, চোখের আলাপনে থেমে থাকবে অভিমানিক হিসেবপত্র, ঠোঁট পার হয়ে একটু উঁচুতে তিলের বাস, হাতের শরীরে চুড়ির উঠানামায় শব্দ বাজবে নীলের! শরীরে ভয় রেখে আঙ্গুলে আঙ্গুল রাখার প্রথম সাক্ষী হবে কম্পন, হাঁটার আবেদনে হাসি হবে দ্বিতীয় সাক্ষী, সম্পর্কের প্রথম মুখোমুখিতে অশ্রুচোখ মুছে; বেঁচে থাকার বাকিটা বয়স অঙ্গীকার হবে, চোখে চোখ রেখে অশ্রু প্রবেশে পথ লুকাবার।

একটি সম্পর্কের পরিচয়

আঁধারে আলো খুঁজতে আমি হাত বাড়াই তোমার দিকে, ছুঁয়ে দাও; মৃত্যুর এপিটাফে দাফন হোক সমগ্র একাকীত্বের, তারপর তোমার নিঃশ্বাসের দেয়ালজুড়ে বাঁধানো হোক আমার নাম, চব্বিশের আপাদমস্তকে সংসারের অংকে স্পর্শের নামতা গভীরে নামুক। সম্পর্কের পাহাড়ে সন্দেহ ভর করে ধ্বসে না পড়ুক, একটু অভিমান হোক পরিমাপে; অভিযোগ দীর্ঘ মেয়াদের লাইনে না হাঁটুক। চোখের অশ্রু মুছতে তোমার দিকে তাকাই, তোমার বাদামি চোখে চোখ মেলে ধরি; ক্লান্ত চোখের পাতার অসুখ সেরে উঠে, তোমার খোঁপার সংসারে আমার স্পর্শ বৈধ জেনেও- আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার ইচ্ছে অনুমতির! এভাবে একটি সংসার লিপিবদ্ধ আমাদের নামে; আমরা ভালো থাকি দূরত্ব এড়িয়ে, পথ চলার মাইলে অভাবকে রোগ হিসেবে প্রেসক্রিপশনে রাখি না, আঙ্গুলের ভেতর আঙ্গুল রেখে সম্পর্কের আরেকটা দিন গণনা করি; এভাবে আমরা বেঁচে থাকি, ক্যালেন্ডারের আরেকটা বছর মরে যায়, আমাদের মুষ্টিবদ্ধ হাতে আরেকটা হাত ভাগ বসায়, আমাদের পরিচয় আসে তার অস্পষ্ট ডাকে; তারপর বিশুদ্ধ উচ্চারণে আমাদের নাম হয়; 'পিতা-মাতা।'

গাছের আত্মজীবনী

অবনী, তাকিয়ে দেখো- আকাশকে সাক্ষী রেখে গাছেদের জীবন্ত সংসার; আকাশের চোখ জুড়ানো পাহাড়কে মনে ঠাঁই না দিয়ে- তারা ব্যস্ত আছে তাদের সাংসারিক আলাপে, দিগন্তের শেষ পাতায় তাদের দৃষ্টি মুগ্ধ হয়ে আটকে নেই; তাদের কাছে শ্রেষ্ঠ সুন্দর হলো পাশাপাশি বেঁচে থাকার প্রতিটা সময়, তাদের খেয়ালে অন্য কোনও দৃশ্য প্রবেশের অধিকার নেই! সময়ের পাতা উল্টিয়ে একদিন তারা নির্দিষ্ট বয়সে চোখ মেলে; মানুষের লোভাতুর চোখ পড়ে তাদের শরীরে, কেউ নিলামে তোলে তাদের আপাদমস্তক, কেউ ছিনিয়ে নেয় তাদের শাখা-প্রশাখা, আবার কেউ কেউ উলঙ্গ করে কেড়ে নেয় তাদের বস্ত্রগুলো, এভাবে অভাবের দরজায় তারা কারো কারো আশীর্বাদ হয়; কারো উনুনের ঘরে তাদের রাজত্বে মানুষের প্লেটে অন্ন শুতে পারে। আমরা ভুলে যাই; গাছ বেঁচে থাকলে বেঁচে থাকে মানুষের নিঃশ্বাস, গাছেদের বিদায়ে আমরা গিলে খাই অক্সিজেন; চোখের ওজনে নেমে আসে হালকা দূরত্ব, রোগের সাথে আমাদের উঠাবসা হয় রুটিনাকারে, বয়সের চুক্তিতে বিয়োগান্ত নেমে আসার বসবাস শুরু হয়।

তানিয়া তাহসিন

তানিয়া তাহসিন; আমাদের সহপাঠী, শ্যামল বর্ণের মেয়েটার চোখ দু’টো ছিলো বাদামী, লম্বা নাকের ছায়ায় দেখা মিলতো মায়ার পাহাড়, হাসির চেহারায় মন খারাপ ছিলো একটি মৃত যুক্তি, কণ্ঠের উচ্চারণে লুকিয়ে যেতো তাবৎ দুশ্চিন্তা! একবার মেয়েটি কাজল বর্ণে তার চোখ এঁকেছিলো, প্রিয় রঙে আমি লিখে দিলাম কাজল; মেয়েটির প্রিয় শখ ছিলো আকাশ দেখা, প্রিয় শখে আমি লিখে দিলাম তার কপাল! তখন কদমের ঋতু; এই শহরে বৃষ্টির তখন খুব ভিড়, বৃষ্টিকে গায়ে মেখে মেয়েটা সাতাশি মিনিট ভিজেছিলো; সেদিন ছিলো মেয়েটার একুশতম জন্মদিন, একুশটা কদম এনে আমি গুঁজে দিয়েছিলাম তার চুলে, মেয়েটা- বেগুনি রঙের শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিয়েছিলো আমার কপালের ভয়, তারপর আমাদের দশ আঙ্গুলের আলাপনে আমরা উচ্চারণহীন হেঁটেছিলাম আরও একুশ মিনিট! তানিয়া তাহসিন; আমার সহধর্মিণী, যার চোখে আমাকে তুলে রাখে প্রিয় আকারে, সন্ধ্যার ঘরে যে আমার অপেক্ষায় থাকে সারাদিনের ক্লান্তি মুছে দিতে; কপালে ঠোঁট সেজদায়! কাজল চোখে অধীর অপেক্ষায় থাকে আমার মুখে হাসি টাঙিয়ে রাখার, একুশ বছর বয়সের জায়গায় সংসারেও আমরা একুশে; আমাদের কিছুতেই প্রবেশ করেনি পরিবর্তন, শুধু পালটে গেছে আমাদের চুলের রঙ, আর বয়সের ওজন, আমাদের পরিচয়ে যোগ হয়েছে একটি পবিত্র নাম; আফিয়া তাহমি, যে শৈশবে বাবার নামে লিখতো : তানিয়া তাহসিন, আর মায়ের নামে লিখে দিতো আমার নাম!

পেশা

বন্ধুদের কেউ কেউ এখন বিখ্যাত, আবার কারও কারও জীবন উপন্যাসের মূল বিষয়টা মুমূর্ষুতে ঝুলে আছে, নেশাগ্রস্থের তকমা পেয়ে যে ছেলেটা পরিবারের বোঝা ছিল; এখন তার নেশাতেই মত্ত থাকে যুবতীরা; তার কণ্ঠের যাদু তে! নিমাই ভট্ট; যার কলেজের অধ্যায় ঢুকে গিয়েছিলো বাবার ঔষধের পাতায়, তারপর কেউ তাকে বই হাতে খুঁজে পায়নি,। মাঝে মাঝে তার দেখা মিলতো পত্রিকার পাতায়; টেলিভিশনের চেহারায় তাকে তুলে ধরতো শিরোনাম করে, তবুও হিসেব কষে প্রমাণ করতে পারেনি তাকে খুনি হিসেবে! নীলকান্ত; যে রোজ সকালে নিজেকে ব্যস্ত রাখতো জুতো চিকিত্‍সায়, পরীক্ষার খাতায় তাকে কেউ হারাতে পারেনি ফলাফলে, তবুও বেঁচে থাকার ফলাফলে হেরে বসে আছে; বৃদ্ধাশ্রমের আঙ্গিনায়! অনুপম ঘোষ; সুন্দর উপস্থাপনায় যার বেশ দক্ষ উচ্চারণ ছিলো, যোগ্যতার সার্টিফিকেট স্পর্শ বেলায় নিভে গেলো মায়ের নাম, তারপর; সম্পদ বণ্টনের বেলায় প্রেসক্রিপশনে তার নাম ঢুকে গেলো পাগলের খাতায়। যে ছেলেটি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো; তারপর তাকে দেখা যেতো স্কুল ঘরে শিশুদের তোরো'র নামতা বিশুদ্ধ করাতে, শিক্ষক; মানুষ তৈরির পৃথিবীর পবিত্র ভাষা, এমন পরিচয়ে আমি বিশুদ্ধ আছি।

আরও পড়ুন- দিনে দিনে সবকিছু হয়ে যায় বেদখল

ওডি/এসএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড