• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাণ্ডুলিপির কবিতা

পুরুষের নিকট সাহসের কথা জানতে নেই

  রহমাতুল্লাহ্ রাফি

২৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৫৬
কবিতা
প্রচ্ছদ : কাব্যগ্রন্থ ‘অরণ্যে অন্বেষণ’

দ্বিতীয় দেখা

এক কাপ চা- একটু দুধ, একটু চিনি, একটু হাসি আর অনেকখানি লাজুক চাহনির ফ্লেভার মিশ্রিত- এক কাপ অপূর্ব চা। রেলস্টেশনের সস্তা চায়ে এত যে স্বাদ, এত যে মুগ্ধতা- তা তো একজনমে অনুভব হয়নি! নাকি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের শঠতায় বেখেয়ালি আমি আজন্ম মোহাচ্ছন্ন ছিলাম। টি-স্টলের ভাঙা বেঞ্চিতে বসে চায়ের কাপে তোমার খোলামেলা চুম্বন; ছাউনি তলায় দাঁড়িয়ে আস্ত একটা পানিপুরী চোখ মুদে গলধঃকরণ- পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য নয় কী!

এই দাগপড়া প্রাচীন গ্লাসে কত প্রেমিকার কাঁচা ঠোঁট মিশেছে! কত ব্যর্থ প্রেমিক গেঁথে গেছে কবিতার ছন্দ। ধূম্র উত্থিত চুমুকে চুমুকে কত প্রণয়ের গল্প; কত বিরহের বেদনা- বাষ্প হয়ে মিলিয়ে গেছে ঐ নীলাকাশে। শুভ্র মেঘদলাগুলো ছেনে দেখো- দেখবে, সহস্র গল্পের ভার সইতে না পারা ওগুলো কান্না হয়ে নেমে আসে। পৌষ-মাঘ, তুমি-আমি; কুয়াশা ভেজা রোদ উদযাপনে এক কাপ উষ্ণ চা।

ট্রেনের হুইসেল তখনও বাজেনি; অথচ ঘরে ফেরার সে কী তাড়া তোমার! আসি বলে চলে গেলে- রেখে গেলে সদ্যস্পর্শিত একটি নগ্ন কাপ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনুসন্ধান করলাম তোমার মর্মস্পর্শী অধর-চিহ্ন। তোমার আবছা গোলাপি রং হৃদয়-ক্যানভাসে লেপে দিল স্মৃতির সাময়িক রংধনু।

কাল তোমার ওষ্ঠধর লাল ছিল, আজ গোলাপি- কবে না জানি নীল হয়! এত রং সামলানোর ক্ষমতা কি বিধাতা আমায় দিয়েছেন? তুমি কি বলতে পারো, পৃথিবীতে ঠিক কত রং? সব রং দিয়ে রাঙাবো তোমায়- একদিন, বহুদিন, বহুবার, বহুক্ষণ। এক কাপ চায়ের চুক্তিতে কবে হবে আবার- দু’জনার সম্মিলন।

রোমন্থন

সেদিন নির্জন নিস্তব্ধ দ্বিপ্রহরে, মুঠোহাতে বক্ষ বরাবর আঘাত করে জানতে চেয়েছিলে- - সাহস আছে? নিরুত্তর আমি লজ্জা পেয়েছিলাম। তারপর একদিন বায়োলজি পড়ে জানতে পারলাম, তুমি যেখানে আঘাত করেছিলে তার ঠিক বা’পাশটায় নাকি ভালোবাসা থাকে। অথচ তুমি একটিবারও জানতে চাওনি, - ভালোবাসা আছে?

তুমি মনে হয় জানো না- পুরুষের নিকট সাহসের কথা জানতে নেই; ঠিক যেমন জানতে নেই মেকআপের আস্তরে লুকিয়ে থাকা মেয়েদের বয়স।

পুরুষ সৃষ্টি থেকেই সাহসী, হিম্মতের ভেলায় চড়েই পুরুষকে জীবন-সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়। তাই তো পুরুষ-মন কখনো বার্ধক্যের মেঘ ছোঁয় না।

বলীরেখা, চামড়ার ভাঁজ- এগুলো তো বাহ্যিক অবয়ব মাত্র। অন্তরের চোখ দিয়ে অন্তর দেখে নিয়ো, দেখবে- প্রতিটি পুরুষ সেই আঠারো বছরের তরুণ।

বিশ্বজয়ী বীরপুরুষও কোমলমতি নারীর সমুখে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলে। তাই আর কখনো জানতে চেয়ো না- সাহস আছে কি না। ইচ্ছে হলে জেনে নিয়ো- ভালোবাসা নাকি ঘৃণা!

সংকীর্ণতা

যে অন্যের সে অন্যের হয়েই থাকুক। আংশিকতায় থাকুক, অর্ধেকে থাকুক, পুরোটা জুড়েই থাকুক- অন্যজনে মন রেখে আমায় দেহ দিতে এসো না। অতটা পচেনি বলে আজও মাথা উঁচু করে বাঁচি।

আমি খুনি হব, ডাকাত হব, জগতের যাবতীয় অপরাধে অপরাধী হব- তবে বিবেকের কাঠগড়ায় পিষ্ট হব না। এমন তুচ্ছতা সহস্র ক্রোশ পাড়ি দিয়েও আমার নাগাল পায়না বলে আমি অহংকারী।

যতটা কোমল ভাব ততটা নয়। ভাঙ্গা-চুরার খেলায়-এ যাবত হয়েছে শুধু জয়। তোমার সব কিছুতে প্রশ্ন-প্রতিক্রিয়ার আদিখ্যেতা না দেখালেও মস্তিষ্কের অন্দরমহলে বোধগম্যতার নিদারুণ সেচ হয়।

আমি যার হব; প্রথম এবং শেষ হব। আমার যে হবে; প্রথম এবং শেষ হবে। পৃথিবীর সীমানা পেড়িয়ে হলেও খুঁজে আনবো তারে। অপ্রাপ্তিতে না হয় ছোট্ট জীবনের উষর মরু আরো শুষ্ক হবে চিরকৌমার্যের বৃত্তে।

আমার ইচ্ছাগুলো সংকীর্ণ, বড্ড সেকেলে। প্রাচীনত্বের ভেলায় একদিন আমি অধুনা-নৌযানকে পদদলিত করব। সেদিন উত্তাল সমুদ্র জুড়ে আমার ঢেউ উঠবে। উগ্র মেঘে ভেসে বেড়াবে আমার বিজয় কেতন। শুভ্র ফেনিলে দোল খাবে নিখাদ ভালোবাসার গল্প। তুমি-আমি; আমি-তুমি- দু’টি শব্দের গল্প।

নীলকণ্ঠ

তুমি ছিলে আমার- লাজুক প্রকৃতির বিষধর সাপ। তোমার ছোবলে আমি নীল হয়েছি; নির্লজ্জ হয়েছি। বিষের যন্ত্রণায় এপাশ-ওপাশ করে কাতরিয়েছি কত রাত-কত প্রহর!

তোমার বিষ- আজও রাতের ঘুম কেঁড়ে নেয় অবলীলায়। ম্যাগনিফাইং গ্লাসে চোখ রেখে একটি আক্রান্ত মন গোটা জগত চষে বেড়ায়; নিরাশ্রয় যাযাবর হলে- দক্ষ ওঝাও জুটে না কপালে।

তোমার বিষের এন্টিভেনম- আজও আবিষ্কৃত হয়নি; বিজ্ঞান! সে তো লজ্জায় অজ্ঞান হয়ে যায়।

জানিনা- আর কত কাল! তোমার বিষ পোড়াবে এ মন। আর কত যুগ! তোমার স্মৃতি করব রোমন্থন।

অরণ্যে অন্বেষণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যদি তোমার আমার মিলন হতো- তাহলে তুমি কোন পক্ষে থাকতে, মিত্র’তে নাকি অক্ষ’তে? উইনস্টলের বক্তৃতায় প্রভাবান্বিত হয়ে- আমায়দ ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেনা তো নাৎসিদের বিরুদ্ধে! ফ্রাঙ্কলিনের জাতিসংঘ প্রস্তাব- তোমায় ছিনিয়ে নিতো না তো আমার থেকে! মারিনা’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইয়েলেনা’র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে- নিশ্চয়ই যোগ দিতে না আত্মবিধ্বংসী বোমারু পাইলটে! আচ্ছা, যোসেফের ‘স্তালিনবাদ’ কি আমার থেকেও বেশি আকর্ষণীয়! বড্ড জানতে ইচ্ছে হয়। জানো, হিরোশিমা-নাগাসিকার পঙ্গুত্ব এখনো আমাকে কাঁদায়। লিটলবয়-ফ্যাটম্যানের প্রতি একরাশ ঘৃণা আমার, তার চেয়েও বেশি সাম্রাজ্যবাদিতার আগ্রাসনে। আজ একাকী বসে আছি ‘ওয়ার সেমিট্রি’র বৃষ্টিস্নাত সবুজ গালিচায়- স্মিতহাস্য মুখাবয়বে মুঠোমুঠো প্রেমের স্ফুরণ ঘটেছে; অথচ তুমি নেই। কী জানি, হয়তো সাতশ পঞ্চান্নজনের মাঝে শিরোনামহীন তুমিও রক্ত মেখে শুয়ে আছ প্রাচীরঘেরা অন্দরমহলে; যেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই আমার। খাকি পরিহিত সশস্ত্র প্রহরীরা সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় আমার দিকে; যেন তোমায় লুটতে এসেছে দুর্ধর্ষ কোন ডাকু।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি- ধ্বজভঙ্গ নীলাভ ধ্বজের প্রান্ত খামচে ধরে, কত বিভেদ নিঃশেষ হলো, কত শত্রু মিত্র হলো, কত উত্থানের পতন হলো, কত পতিত আত্মার পুনর্জাত হলো; কিন্তু তোমার আমার মিলন হলো না! তোমার সাথে সন্ধি করতে হলে কি আমায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবতারণা করতে হবে! মনে আছে, তোমায় ‘শান্তি’ নামে ডাকতাম আমি; অথচ তুমি সুখী ছিলে না।

আরও পড়ুন : দেয়ালের মুখোশ দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমি

ওডি/এসএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড