ইমরান বিন বশির
নিয়তির বাঁধন
দিনকে বলো, আলো ছাড়া সে কেমন রাতকে বলো, আঁধারের কেন তার এত প্রয়োজন?
সূর্যকে বলো, রোদের সাথে তার সম্পর্ক কেমন? চাঁদকে বলো, জোছনার সাথে তার কেমন বাঁধন?
বৃক্ষকে বলো, পাতার সাথে তার কেমন রিলেশন। পাতাকে বলো, সবুজের সাথে তার মেশা কি বারণ?
জলকে বলো, তরল কী জিনিস চেনো? অনলকে বলো, কেন সে অমন উষ্ণ?
সাগরকে বলো, কেন বুক তার জলো-ছলোছলো। মেঘকে বলো, রঙ তার কেন এত কালো?
চিলকে বলো, কেন তার আকাশ এত প্রিয়? মক্ষীকে বলো, তার কাছে ফুল কেন অত মহনীয়?
শেকড়কে বলো, মাটির সাথে বন্ধন কেন এত দৃঢ়? পাহাড়ের কাছে গিয়ে ভাবো, সে কেন বিশাল, বড়?
আকাশকে দেখো, নীল ছাড়া সে কেমন! বিশ্বাস করো বধূ, তুমি ছাড়া আমিও এমন।
ভুলে যাব
ভুলে যাব প্রেম, ভুলে যাব কাম ভুলে যাব প্রিয়ার নাম।
ভুলে যাব ফুল, ছোট বড় ভুল প্রেমিকার শূল ভুলে যাব কূল, উড়ে চলা চুল ভুলে যাব সমস্ত প্রতিকূল।
ভুলে যাব ভোর, প্রেমিকার দোর ভুলে যাব প্রেমিকার নিঠুর শহর।
ভুলে যাব সাঁঝ, প্রেমিকার সাজ মিছেমিছি লাজ ভুলে যাব তার প্রেমিকার কোমরের খাঁজ।
ভুলে যাব রাত, প্রিয়ার আঘাত ভুলে যাব যত ছিল জীবনের প্রতিঘাত।
ভুলে যাব জল, চোখের কাজল ভুলে যাব সকল দহন-অনল।
ভুলে যাব টোল,হাতের নিটোল ভুলে যাব প্রেমিকার উষ্ণ করতল।
ভুলে যাব কিছু, সুখপিপাসু ভুলে যাব ছুটে চলা কারো পিছু পিছু।
ভুলে যাব গান, ফুলের বাগান ভুলে যাব ফুলের ঘ্রাণ, সকল পিছুটান।
ভুলে যাব বারণ, মিষ্টি শাসন ভুলে যাব যত আছে পার্থিব বাঁধন।
ভুলে যাব নোলক, চিবুকের তিলক ভুলে যাব মিলনের পথে যত ছিল কণ্টক।
ভুলে যাব মন্দ, কবিতার ছন্দ ভুলে যাব পৃথিবীর যত আছে দ্বন্দ্ব।
ভুলে যাব মায়া, সন্ধ্যার খেয়া প্রেমিকার ছায়া। ভুলে যাব পৃথিবীর যাবত লাবণীর কায়া।
ভুলে যাব কিছু পাওয়া, ভুলে যাব ভুলে যাওয়া ভুলে যাব যত আছে পঙ্কিল চাওয়া।
ভুলে যাব সব, বিচিত্র ভব, ভবের বৈভব, তবেই হবেন ভুলে যাওয়া আমায় সমাসীন রব।
ভুলে গিয়ে আমি, অতীত স্মৃতি, ভুলে গিয়ে জগত প্রকৃতি ভালবাসব তোমায় হে একক ভালবাসার অধিপতি!
প্রিয়জনে প্রয়োজন
তুমি থাকো একূলে আমি থাকি ওকূলে। মাঝখান বাধা থাকুক রাশি রাশি জলে।
জলের দেয়াল গুড়িয়ে দিলে একূল ওকূল এক হলে মিলে বলো, কার প্রয়োজন কোন কূলে?
প্রিয়জনে ‘প্রয়োজন’ থাকা বড় প্রয়োজন। প্রয়োজনেই মানুষ খুঁজে নেয় প্রিয়জন। প্রয়োজন ফুরোলেই প্রতারণা করে মন। পৃথিবীর গল্পে তাই এত এত বিভাজন।
খঞ্জর
বড় নিষ্ঠুর হাতে খঞ্জর মেরেছ। একদম বুকের মধ্যখানে। তারপর সজোর টানে তুলে এনেছ খঞ্জর । সাথে উঠে এসেছে আমার কোমল হৃদয়। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছি। শান্তির দীর্ঘশ্বাস।
চোখের সামনে হেঁটে বেড়াচ্ছো অন্যের হাত ধরে। হাসছ, খেলছ, ভালোবাসছো। আমি কি সুন্দর শুকনো চোখে উপভোগ করছি। আগের মতো দু চোখ ছাপিয়ে জল গড়ায় না। বুক ভেসে যায় না জলে। চিনচিন করে ওঠে না বুক। বুকের বাঁ-দিকটায় ভর করে না দশ বিশটা পাহাড়। কিন্তু এখন আমি বদলে গেছি। বড় বদলে গেছি। এতটুকু মান অভিমান হয় না আর।
রোজ করা বিরক্তিকর আবদারগুলো আর ছুঁয়ে দেখা হয় না। কখন কি করছ, থাকছ কার সাথে, রাখছ মাথা কার বুকে কিছুই আর জানতে চাওয়া হয় না। একদম স্বাধীন করে দিয়েছি।
জানতাম না তো সব সমস্যার মূল হেতু ছিল ওই হৃদয়। হৃদয়ে থাকা তোমার প্রতি উদ্দাম ভালোবাসা! এমন মুক্তি আগে মেলেনি কেন সখি? কেন আগে মারনি খঞ্জর বুকে? হৃদয় তুলে নিলে না বুক থেকে? তুলে কেন নাওনি হৃদয়জুড়ে থাকা এই ‘তুমি’কে?
একক উষ্ণতা
প্রিয় শীত, তোমার মধ্যে যত শক্তি, সমস্তই নিয়ে হাজির হও প্রেমিকার শহরে।
প্রিয় দুর্ভিক্ষ, তোমার মধ্যে যত অভাব, দুর্ভোগ সব নিয়ে দেখা দাও প্রেমনগরে।
শ্রদ্ধেয় যোগাযোগ মন্ত্রী, এবারের জন্য প্রেমিকার শহর হতে যোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিন।
প্রিয় শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীকুল, এবার প্রেমিকার শহর হতে বিদায় নিন।
প্রিয় সূর্য, প্রেমিকার শহরে রোদ দিয়ো না কিছুদিন।
প্রিয় বাতাস, গায়ে যত হিমশক্তি, যত আছে আর্দ্র সবটুকু নিয়ে প্রবাহিত হও প্রেমিকার শহরে।
প্রিয় মেঘ, সমস্ত দাপট নিয়ে শিলাবৃষ্টি বর্ষাও প্রেমিকার শহরে।
এমন কনকনে শীতের প্রহরে দুর্ভিক্ষ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন শহরে শীতবস্ত্র ও সূর্যের তাপহীন হিম বাতাসে অমন বরফ বর্ষণ বৃষ্টিতে প্রেমিকার কাছ ঘেঁষে
আজ ছুঁয়ে দেব তাকে একক উষ্ণতা হয়ে।
প্রিয় প্রেমিকা, হয় আশ্রয় নাও আমার উষ্ণ বুকে, নয়তো মৃত্যুর কোলে।
আরও পড়ুন- এই জনমেই বাঁধলো না আর কাঁটাতারের সুর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড