সঞ্জীব ধর
প্রায় ত্রিশ কোটির অধিক মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।যা মাতৃভাষার স্থান বিবেচনায় পৃথিবীর চতুর্থ। ১৯১৩ সালে এই ভাষার-ই কবি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল। আবার আমরাই পৃথিবীতে একমাত্র জাতি যারা ১৯৫২ সালের ভাষান্দোলনের সময় প্রাণ দিয়েছি, তবু মুখ থেকে মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে দিইনি।
হাজার মাইল দূরের দেশ সিয়েরা লিওন যখন তাদের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে স্বীকৃত দিল তখন গর্ব করে বলি,রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি পেতে উপনিবেশ স্থাপন করতে হয় না। এসব অবশ্য গর্বের বিষয়। বিশেষ করে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে যখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হয় তখন মনে হয় সত্যি আমরা গর্ব করতে পরি।
দেড় হাজার বছরের পুরনো এই ভাষা,আমার বাংলা ভাষা।বৈষ্ণব পদাবলী’র মত উৎকৃষ্ট ও আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্য রয়েছে এই ভাষায়।সেই যে লুই পা শুরু করেছিল (কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল /চঞ্চল চীএ পইঠো কাল), তারপর থেকে চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, ভারতচন্দ্র, মধুসূদন, রবি ঠাকুর,নজরুল, জীবনানন্দের মত বিখ্যাত সাহিত্যিকদের হাতে রসালো হয়েছে এই ভাষার সাহিত্যভাণ্ডার। কিন্তু এই ভাষার চর্চা কতটুকু করতেছি আমরা? অনেক চোখ বন্ধ করে বলে দিবে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
যদি তাই হয়, তাহলে বাংলা বানানের এত করুণ দশা কেন? একটা উদাহরণ বলি (যদিও এসব উদাহরণ এখন যত্রতত্র ), একবার আমার এক আত্মীয়ের অসুস্থতার কারণ বশত (সম্ভবত এক বছর আগে) চট্টগ্রামের বিএমএইচ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে বিভিন্ন জায়গায় একই ধরণের একটি নোটিশ লক্ষ্য করলাম।নোটিশ টি এরকম - ‘অত্র হাসপাতালে খুব কম খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।সুতরাং কোন প্রকার ডিসকাউন্ট প্রজোয্য নহে।’ আবার আরেকটি পাশের পরীক্ষাগারে লেখা আছে, ‘পরীক্ষা নীরিক্ষা’ আমি বলতেছি না এই ভুলগুলো কোন চিকিৎসকের ছিল। কিন্তু দেখুন,এটি দেশের উচ্চ শিক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। এখানেই যদি বাংলা বানানের এই অবস্থা, তাহলে শুদ্ধ বাংলা বানান কই পাবো আমরা? যাকগে, বাংলা বানানের কি করুণ অবস্থা তা কম বেশি সবাই জানেন। তাই উদাহরন বাড়িয়ে লাভ নেই।কিন্তু প্রশ্ন, কেন এই অবস্থা?
উত্তরে বলতে পারি, আমরা কি শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্যাকরণ সম্পর্কে আদো শিক্ষা দিই? একে তো আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা ( কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম,মাদরাসা,ইত্যাদি ইত্যাদি), তার উপর আবার বিভিন্ন স্কুলে বাংলা বিষয়ের প্রতি অবহেলা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে (যারা একমত হবেন না তাদের প্রমাণ দেখাতে রাজি আছি)। এখন আপনারা বলবেন দেশের সব স্কুলে তো পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়? কিন্তু এই পাঠ্যপুস্তক থেকে কি শিক্ষার্থীরা ব্যাকরণ শিক্ষা পাচ্ছে? বর্তমানে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে ৫০ নম্বরের বাংলা ২য় পরীক্ষা পদ্ধতি চালু আছে যার মধ্যে ব্যাকরণের ৩০ নম্বর নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে, ৮ম শ্রেণিতে বাংলা ২য় ৩০ নম্বরের যার মধ্যে ব্যাকরণ ১৪ নম্বর নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে, নবম-দশম শ্রেণিতে বাংলা ২য় ১০০ নম্বরের হলেও ব্যাকরণ আছে ৪০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে। কিন্তু প্রশ্ন হল আমাদের দেশে English Grammar -এর পরীক্ষা কি নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে হয়? শুধু মাত্র কয়েকটা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন দিয়ে কি বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষা হয়? একদিন শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলাম, ‘তোমরা কি ব্যাকরণ পড়?’
ওরা উত্তর দিল, ‘স্যার, পরীক্ষা আগের দিন গাইডের নৈর্ব্যক্তিক দেখে যায়।’ স্বাভাবিক, আমি হলেও তাই করতাম। যাহোক, গাইডের নৈর্ব্যক্তিক পড়ে ব্যাকরণ শেষ করা শিক্ষার্থীরা যে পরবর্তীতে বানানে শুদ্ধতা রক্ষা করবে এমন দুরাশা কি আমরা করতে পারি?
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড