• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ : একজন দ্রোহের শব্দ-শ্রমিক

  অধিকার ডেস্ক    ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৩৮

ছবি
ছবি : প্রতিবাদী রোমান্টিক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

বোহেমীয় স্রোতের পাদদেশে ভালোবাসা আর দ্রোহের এক আকণ্ঠ হিমালয়; এক চিরসবুজ গহীন তেপান্তরের অপর নামই রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। যাকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের দ্রোহ এবং প্রেমের কবি। তিনি তারুণ্যের কবি। কবিতায় অন্তর বাজিয়ে দরদের সুর সৃষ্টির কারিগর ছিলেন তিনি। স্বল্প সময়ের জীবনে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা ও গান। তিনি প্রস্থান করেছেন কিন্তু বেঁচে আছেন তার কর্মে। তারুণ্যের বুকে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর ধরে। আজ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এর জন্মদিন।

রুদ্র শুধু কবিতা লিখতেন নি, কবিতার ভেতরে যাপন করতেন। কবিতা যাপনের জন্য যতটা নিমগ্নতা দরকার তিনি তা কবিতায় ঢেলে দিয়েছিলেন। তার ভেতরের শিল্পীটার ছটফটানি, ডানা-ঝাপটানো তার কবিতায় পাওয়া যায়। একজন পুরাদস্তুর কবির মধ্যে যতটা সামাজিক, রাজনৈতিক দায়ভার থাকা দরকার তার মধ্যে সেই দায়ভার ছিল। আর ছিল শিল্পের অহংকারে পারিপার্শ্বিকের মাথা নত না করার দুঃসাহস। তিনি হলেন কবিতার জ্বলন্ত নক্ষত্র। যে নক্ষত্র বাংলা সাহিত্যে আলো ছড়িয়ে যাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

রুদ্রের কবিতার ভেতর যে রকম সমাজের নির্বিচার, চাটুকারিতার প্রতিবাদ, নারী স্বাধীনতা, ধর্ষিতার আর্তনাদের কথা। নব্বই দশকের পর আজ অব্দি কোনো কবির লেখায় এরকম প্রতিবাদ উঠে আসেনি। এদেশের অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদ ছিল তার কবিতার ভিতর। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুবার রক্তনৃত্য দেখেছে সাধারণ জনগণ। এখানে কবি চুপ না থেকে কলমকে করেছেন অস্ত্র। লিখেছেন-

‘আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই, আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি, ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে- এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়? বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে, মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।’ - বাতাসে লাশের গন্ধ

নজরুলের যুগের পরবর্তী কোনো বিদ্রোহী বা দ্রোহের কবিতা এদেশের মানুষের মুখে মুখে স্থান করে নিয়েছে তা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর। তিনি নিজেকে ‘শব্দ-শ্রমিক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছিলেন- ‘আমি কবি নই- শব্দ শ্রমিক। শব্দের লাল হাতুড়ি পেটাই ভুল বোধে ভুল চেতনায়, হৃদয়ের কালো বেদনায়। করি পাথরের মতো চূর্ণ, ছিঁড়ি পরান সে ভুলে পূর্ণ। রক্তের অথে রক্ত বিছিয়ে প্রতিরোধ করি পরাজয়, হাতুড়ি পেটাই চেতনায়।’ - শব্দ শ্রমিক

রুদ্রকে বলা হয় আগাগোড়া কবি। তার কবিতায় যেমন ছিলো গণমানুষের প্রতি, মানবতার পক্ষে, গণমুক্তির পথে তেমনি ছিলো প্রেম-বেদনা নির্ভর। এই কবি রোমান্টিকতার এক অহংকার। বেদনায় যেমন মুচড়ে গিয়েছেন, তেমনি ভালোবাসা অবগাহন করার জন্য আহ্বান করেছেন বার বার। বলেছেন- ‘কিছুটাতো চাই__হোক ভুল, হোক মিথ্যে প্রবোধ, অভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই, কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।’ - অভিমানের খেয়া

রুদ্র শুধু রোমান্টিক কবি ছিলেন না, ছিলেন গীতি কবিও। তিনি রচনা করেছেন অর্ধশতাধিক গান, শুধু তাই নয় সুরারোপও করেছেন তার প্রমাণ রেখে গেছেন পদে পদে- ‘আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে , আছো তুমি হৃদয় জুড়ে। ------------------------------ ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো। দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে। আমার ভিতরে বাহিরে...’

রুদ্র ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশালের আমানতগঞ্জের রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক।

অকাল প্রয়াত বাংলাসাহিত্যের কিংবদন্তির ভিতরে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ অন্যতম। এই কবি ১৯৯১ সালের ২১ জুন ভোরে চলে যান না-ফেরার দেশে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড