• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কলমের আঁচড়ে বীরাঙ্গনার শিরোনাম লিখেছেন যিনি

  সাহিত্য ডেস্ক

১৮ জুন ২০১৯, ১০:৩৭
ছবি
ছবি : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী নীলিমা ইব্রাহিম

‘জীবনটা তো সরল সমান্তরাল রেখায় সাজানো নয়। এর অধিকারী আমি সন্দেহ নেই, কিন্তু গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেন – কি বললেন আল্লাহ, পাগল হয়েছেন! বাঙালি মেয়ের জীবন পরিচালিত হবে আল্লাহর নির্দেশে! তাহলে এদেশের মৌলবী মওলানারা তো বেকার হয়ে থাকবেন, আর রাজনীতিবিদরাই বা চেঁচাবেন কি উপলক্ষ করে? না এসব আমার নিজস্ব মতামত, অভিযোগের বাঁধা আটি নয়।’

কথাগুলো বলা হয়েছে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নামক প্রামাণ্য গ্রন্থে। গ্রন্থটি রচিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি ও তাদের এই দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামধারী খুনিদের হাতে সাত বীরাঙ্গনার বর্বর নির্যাতনের চিত্রপট ধরে। এই চিত্রপটের কারুকাজ করেছেন নীলিমা ইব্রাহিম। যিনি ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী। তিনি আমৃত্যু মানুষের শুভ ও কল্যাণী চেতনায় আস্থাশীল ছিলেন। তার জীবনদর্শন ছিলো মুক্তবুদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিকতাবোধের। তার কাছে দেবত্বের চেয়ে বড় ছিল মানবত্ব। আজ এই মহান মানুষটির প্রয়াণ দিবস।

তিনি ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রফুল্লকুমার রায়চৌধুরী এবং মা কুসুমকুমারী দেবী। নীলিমা ইব্রাহিম ছোটকাল থেকেই ছিলেন মেধাবী ছাত্রী। তিনি খুলনা করোনেশন বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৫), কলকাতা ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন থেকে আইএ (১৯৩৭) এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএবিটি (১৯৩৯) পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা বিষয়ে এম.এ (১৯৪৩) পাস করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম ‘বিহারীলাল মিত্র গবেষণা’ বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর তিনি ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডাক্তার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। দীর্ঘকাল পরে ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’। একই বছর তিনি ঢাকার আলিয়াঁসে ফ্রাঁসেস থেকে ইন্টারমিডিয়েট ইন ফ্রেন্স-এ ডিপ্লোমা লাভ করেন।

নীলিমা ইব্রাহিম কর্মজীবনের শুরুতে ছিলেন কলকাতার লরেটো হাউজে লেকচারার। তারপর ছিলেন ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের লেকচারার। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৭২ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান। ছিলেন বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালকও।

নীলিমা ইব্রাহিম শুধু ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করেননি, করেছেন বেশকিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। সেখানে রয়েছে যেমন গবেষণামূলক গ্রন্থ, বাংলা নাটক, ছোটগল্প গ্রন্থ, কথানাট্য, অনুবাদ এমনকি উপন্যাসও। তার রচনাসমূহের মধ্যে বাংলার কবি মধুসূদন,’ ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজ ও বাংলা নাটক’, ‘বাঙ্গালীমানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ’, ‘রমনা পার্কে’, ‘বিশ শতকের মেয়ে’, ‘এক পথ দুই বাঁক’, ‘কেয়াবন সঞ্চারিণী ’, ‘বহ্নিবলয়’, ‘রোদ জ্বলা বিকেল’, ‘সূর্যাস্তের পর’, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নীলিমা ইব্রাহিম সমাজকর্ম ও সাহিত্যে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য হয়েছেন বিভিন্ন পদকে ভূষিত তেমনি পেয়েছেন নানা পুরস্কারও। তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার, জয়বাংলা পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্মৃতিপদক, অনন্য সাহিত্য পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, শেরে-বাংলা পুরস্কার, থিয়েটার সম্মাননা পদ এবং একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার। এই মানবিকতাবোধের মানুষটি ২০০২ সালের ১৮ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র- ইনন্টারনেট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড