• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় (পর্ব- ১১)

হিমালয় একটু অভিমানী, মানুষ হিসেবে একটু ঠোঁটকাটা

  অধিকার ডেস্ক    ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪৪

উপন্যাস প্রকাশন
ছবি : সম্পাদিত

একজন ব্যতিক্রমী মননের মানুষ মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়। ব্যতিক্রমী তার লেখার ধারা। কেউ কেউ মনে করে তিনি বিচিত্র রঙের গল্পকার। কারও কাছে সুচিন্তিত সমালোচক, আবার কারও কাছে সূক্ষ্ম বিশ্লেষক। অনেকের কাছে অবশ্য তিনি বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি তিনি পাঠক মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছেন ‘নামহীন দামহীন’ শীর্ষক বিশ্ব ব্যতিক্রমী এক আত্মজীবনীর মাধ্যমে। আসলে কেমন মানুষ হিমালয়? কাছের মানুষদের চোখে তার ব্যক্তিত্ব কেমন? ব্যতিক্রমী চিন্তার এই মানুষটিকে নিয়ে লিখেছেন তার সঙ্গে কিংবা আশেপাশে থাকা কিছু নিকটবর্তী মানুষ। তাদের বলা কথাগুলো নিয়েই ‘উপন্যাস প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘দৈনিক অধিকার’ এর ধারাবাহিক আয়োজন, ‘আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়'।

আজ প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক এ আয়জনের ১১তম পর্ব। এ পর্বে লেখক হিমালয়কে নিয়ে লিখেছেন- টেকশপ বাংলাদেশ লিঃ এর কর্মকর্তা আলিয়া রিফাত।

বর্তমান কর্মস্থলে হিমালয় ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। ওর সাথে পরিচয়ও হয়েছিল এইখানে চাকরির কথাবার্তা চলাকালীন সময়েই, তারপর বন্ধুত্ব।

ও থাকতে প্রায় প্রতিদিনই ওর সাথে গল্প করতাম। কয়েকটি বিষয়ে আমাদের মতে না না মিললেও মিলতো অনেক বিষয়েই। সমাজের অনেক নেতিবাচক দিক যেগুলো আমাকে প্রচণ্ড ব্যথিত করে সেগুলোর প্রতি ওরও খারাপ লাগা ছিল। আমার অনেক কষ্টই সেজন্য ভাগ করে নিতে পারতাম ওর সাথে কথা বলে। বেশ হালকা লাগতো।

নারীদের প্রতি কোনোরকম সহিংস বা বৈষম্যমূলক আচরণের পক্ষে সাফাই গাইতে বা বিষয়গুলোকে হাল্কা করে দেখতে কখনও দেখিনি ওকে। মানুষ হিসেবে ও একটু ঠোঁটকাটা আবার তেমন একটা হাসিমুখে কথাও বলে না যা অনেকসময় অনেকের জন্যই কষ্টদায়ক। তবে, কোনোরকম অসভ্যতা কোনোদিন ওর মধ্যে দেখিনি। নৈতিকতার গন্ডির মধ্যে থেকেই কীভাবে একটি আধুনিক জীবন গড়া যায় সেটাই ওর ভাবনায় দেখেছি বিভিন্ন সময়ে।

ছেলেটা একটু অভিমানী। একবার আমাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমি ঐদিনই ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে টেক্সট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ও ঐ একটা কারণেই প্রায় দুইমাস মতন আমার সাথে ভালোভাবে কথাই বলেনি। পরবর্তীতে আমি নিজের চেষ্টায় আবারও সরি-টরি বলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলি।

আমি আর হিমালয় দুইজনই দাবা ভালোবাসি। কিন্তু, কখনও আমাদের মধ্যে দাবার কোনো ম্যাচ হয়নি। অন্যরকম গ্রুপে চাকরির শেষের দিকে হিমালয়ের পোস্টিং ছিল আমাদের মিরপুর অফিসে। তাই ওর সাথে আর দেখাই হত না। একদিন ফোনে বলল রিজাইন করেছে। শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম। কাকতালীয়ভাবে একদিন দেখা হয়ে গেল ‘দীপনপুরে’। আমার ছেলেকে ও সেদিনই প্রথম সামনাসামনি দেখেছিল। উপহার হিসেবে কিছু বইও কিনে দিয়েছিল যেগুলো আমি প্রায়ই বাবুকে দেখাই, পড়ে শোনাই।

বাবুকে এখনও পর্যন্ত আমি ছাড়া একমাত্র হিমালয়ই বই উপহার দিয়েছে। পড়তে না পারা শিশুর জন্যও যে বই একটি ভালো উপহার হতে পারে তা হয়তবা সবাই জানে না। ওইদিন আমার মায়ের সাথেও ওর আলাপ হয়েছিল। ওহ! বলা হয়নি, আমার মা কিন্তু হিমালয়কে বেশ পছন্দ করেন। লেখক হিসেবে এবং আমার মুখে শুনে শুনে মানুষ হিসেবেও। ওর ‘বীক্ষণপ্রান্ত’ বইটা আমি আর আম্মু দুইজনই পড়েছিলাম, পছন্দ করেছিলাম। আম্মু উনার এক কলিগকেও পড়তে দিয়েছিলেন। সে-ও একবাক্যে স্বীকার করেছে লেখকের চিন্তাভাবনা খুবই ভিন্ন ডাইমেনশনের।

আগের পর্ব পড়তে : হিমালয় ভাই যে কোনো কিছুর ব্যাখ্যা করে সংখ্যা দিয়ে

আমি ভাবতাম ছেলেটা খুব একটা সংসারী না। কিন্তু খুবই আনন্দের সাথে বলতে হচ্ছে আমি ভুল ভাবতাম। আরিফার কাছে শুনে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ওর অ্যাক্টিভিটি দেখে যতদূর বুঝি ও একজন কেয়ারিং বাবা, যথাসাধ্য কো-অপারেটিভ একজন জীবনসঙ্গী হবারও চেষ্টা করে যাচ্ছে সবসময়। ও যেরকম মানুষ তাতে ওর কাছে এতটুকু সাপোর্টিভ আচরন প্রত্যাশিতই ছিল আমার কাছে।

আমার মতে প্যারেন্টহুড মানুষকে আগের চেয়ে কিছুটা হলেও আগের চেয়ে উন্নত মানুষ হতে সাহায্য করে। ওকেও করছে। অনেকেই বাইরে অনেক প্রগতিশীল আচরণ দেখায়, নারী অধিকারের বুলি আওড়ায় অথচ বাড়িতে সেসবের চর্চা করে না। আশা করি হিমালয় কখনই তাদের মতন হবে না।

হিমালয়ের মেয়েরা শুধুমাত্র মেয়ে নয়, সাহসী ও আত্নবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে তাদের বাবার ছায়ায় বেড়ে উঠবে, মেধায়-প্রজ্ঞায় বাবা-মাকেও ছাড়িয়ে যাবে এই কামনাই করি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড