• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় (পর্ব- ৭)

পুনর্জন্মে বিশ্বাস না রাখলে আপনার উপায় নেই জনাব হিমালয় পাই

  অধিকার ডেস্ক    ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৪

উপন্যাস প্রকাশন
ছবি : সম্পাদিত

একজন ব্যতিক্রমী মননের মানুষ মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়। ব্যতিক্রমী তার লেখার ধারা। কেউ কেউ মনে করে তিনি বিচিত্র রঙের গল্পকার। কারও কাছে সুচিন্তিত সমালোচক, আবার কারও কাছে সূক্ষ্ম বিশ্লেষক। অনেকের কাছে অবশ্য তিনি বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি তিনি পাঠক মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছেন ‘নামহীন দামহীন’ শীর্ষক বিশ্ব ব্যতিক্রমী এক আত্মজীবনীর মাধ্যমে। আসলে কেমন মানুষ হিমালয়? কাছের মানুষদের চোখে তার ব্যক্তিত্ব কেমন? ব্যতিক্রমী চিন্তার এই মানুষটিকে নিয়ে লিখেছেন তার সঙ্গে কিংবা আশেপাশে থাকা কিছু নিকটবর্তী মানুষ। তাদের বলা কথাগুলো নিয়েই ‘উপন্যাস প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘দৈনিক অধিকার’ এর ধারাবাহিক আয়োজন, ‘আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়’

আজ প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক এ আয়জনের ৭ম পর্ব। এ পর্বে লেখক হিমালয়কে নিয়ে লিখেছেন- কথা সাহিত্যিক হাসান মাহবুব

জনাব হিমালয় পাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ব্লগসূত্রে। “পরিচয় ব্লগসূত্রে” এই কথাটি লিখতে লিখতে আমি ক্লান্ত! এ পর্যন্ত অনেকজনকে নিয়েই অনেক কিছু লিখেছি, মূলত তাদের বই নিয়ে; বেশিরভাগের সাথেই পরিচয় হয়েছে ব্লগ থেকে। এ থেকে বোঝা যায় ব্লগে একসময় জ্ঞানী এবং গুণী মানুষজন থাকত এবং হিমালয় পাইয়ের মধ্যেও কিছু জ্ঞান এবং গুণ আছে।

তার জ্ঞান এবং গুণ সম্পর্কে অবশ্য আমার ধারণা দিনে দিনে পাল্টেছে। প্রথমদিকে তাকে আমি মনে করতাম একজন লেখক, এবং গণিতবিদ। তার সংখ্যার প্রতি আসক্তি বা অনুরাগ, পাইয়ের মান মুখস্থ করার ক্ষমতা, এসব দেখে তার প্রতি সম্ভ্রম জন্ম নিতো।

একবার আমার একটা গল্পে গণিতের কিছু সূত্রের ব্যবহার দেখেছিলাম। তাকে পড়তে দিয়েছিলাম। ঐ গল্পটিই তাকে পড়তে দেয়ার কারণ হলো, একজন গণিতবিদ গল্পটি পড়বেন, গল্পের নান্দনিক দিক দেখার পাশাপাশি গণিত সংক্রান্ত ত্রূটি বিচ্যূতি থাকলে ধরিয়ে দেবেন! তবে তার মতামতে তাকে গণিত নিয়ে তেমন উৎসাহী মনে হয়নি।

তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ২০১০ এর বইমেলায়। তেমন একটা কথাবার্তা হয়নি। এরপর ২০১৬ সালে ফেসবুকে তার দেয়া কন্টেন্ট রাইটারের চাকুরির বিজ্ঞপ্তি দেখে যোগাযোগ হয় আবার। চাকুরিটা হয়েও যায়। কাওরানবাজারে নিরুদ্বিগ্ন পাঁচটি মাস কেটে যায় কাজ আর গল্পে।

আগের পর্ব পড়তে : আমি অবাক হয়ে ভাবতাম ছোট্ট একটা মানুষ এত জানে কীভাবে?

বিশাল অফিসে যে দুজনের সাথে আড্ডা দেয়া হতো সে দুজন হলেন সে ও জায়েদ। কথা বলতে গিয়ে টের পেলাম, তার হিউমার খুব ভালো এবং শ্রোতা হিসেবেও চমৎকার। নিরুদ্বিগ্ন সেই সময়ে সে এক কাণ্ড করল। আমাকে সাহিত্যবাগীশ উপাধি দিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। তখন থেকে আমার ধারণা হলো, লোকটা একটু পাগলাটে ধরণের এবং পাগলামী প্রদর্শন করতে পছন্দ করেন। থাকে না কিছু মানুষ, হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে যারা জোৎস্না রাতে বন দেখতে বেরোয়, ওরকম আর কী!

হিমালয়

বাঁ'য়ে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়, ডানে হাসান মাহবুব

অক্টোবর মাসে সে আমাকে মিরপুর অফিসে নিয়ে এলো। তখন থেকে তার সাথে আমার সম্পর্কের পালাবদল ঘটতে লাগলো। সে তখন আমাদের মার্কেটিং টিমের দলপতি। অফিস টাইমে কড়া নেতা, উদ্ভট হিউমার, অফিসের পর বন্ধু; এরকম এক তিতেমিঠে সম্পর্ক তৈরি হলো। মূলত তখন থেকেই তাকে আমার চেনা শুরু। একবার কথা হচ্ছিলো স্মার্টফোন নিয়ে। আমি তাকে বোঝাচ্ছিলাম, কেন তার স্মার্টফোন কেনা উচিত, কিন্তু সে মনমরা হয়ে বসে আছে। তার নাকি এইসব গেজেটের পেছনে টাকা খরচ করার চাইতে মানুষের পেছনে টাকা খরচ করে মেমরি ক্রিয়েট করতেই বেশি ভালো লাগে। সাফসুতরো কথা, জটিলতা নেই এতে। কিন্তু আমি বুঝতাম না। তাকে পুরোপুরি বুঝতে আরো সময় লেগেছে।

নামহীন দামহীন বইটি আমি যখন হাতে পাই, ততদিনে তাকে আমি বুঝতে পেরেছি। ততদিনে তার সাথে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় এবং যোগাযোগের দেড় বছর পার হয়ে গেছে। তার সম্পর্কে সবচেয়ে অস্বস্তিকর ব্যাপার হলো, তার কিছু কিছু চিন্তাভিত্তিক অনুমান খুব নগ্নভাবে মিলে যায়। চিন্তাকে সে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। অনেকেই তার কাছে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে, আমার সহকর্মীদের দেখেছি। সে কাজটা আমি কখনও করিনি। কারণ, এই অস্বস্তি।

তবে সুখের ব্যাপার হলো, সে যত দক্ষ চিন্তাশিল্পীই হোক না কেন, সবচেয়ে সরল মানুষটিরও অতল গহীনে ঢুকে সব জেনে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব না, আর আমি ঠিক অতটা সরলও না! সুতরাং মানুষ গবেষণার জন্যে পর্যাপ্ত রসদ তার থাকছেই সবসময়।

জনাব হিমালয় পাই, পুনর্জন্মে বিশ্বাস রাখুন। না হলে আপনার পক্ষে এক জীবনের এত রহস্য সামাল দেয়া সম্ভব হবে না!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড