• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় (পর্ব- ৬)

আমি অবাক হয়ে ভাবতাম ছোট্ট একটা মানুষ এত জানে কীভাবে?

  অধিকার ডেস্ক    ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৪১

উপন্যাস প্রকাশন
ছবি : সম্পাদিত

একজন ব্যতিক্রমী মননের মানুষ মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়। ব্যতিক্রমী তার লেখার ধারা। কেউ কেউ মনে করে তিনি বিচিত্র রঙের গল্পকার। কারও কাছে সুচিন্তিত সমালোচক, আবার কারও কাছে সূক্ষ্ম বিশ্লেষক। অনেকের কাছে অবশ্য তিনি বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি তিনি পাঠক মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছেন ‘নামহীন দামহীন’ শীর্ষক বিশ্ব ব্যতিক্রমী এক আত্মজীবনীর মাধ্যমে। আসলে কেমন মানুষ হিমালয়? কাছের মানুষদের চোখে তার ব্যক্তিত্ব কেমন? ব্যতিক্রমী চিন্তার এই মানুষটিকে নিয়ে লিখেছেন তার সঙ্গে কিংবা আশেপাশে থাকা কিছু নিকটবর্তী মানুষ। তাদের বলা কথাগুলো নিয়েই ‘উপন্যাস প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘দৈনিক অধিকার’ এর ধারাবাহিক আয়োজন, ‘আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়’

আজ প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক এ আয়জনের ৬ষ্ঠ পর্ব। এ পর্বে লেখক হিমালয়কে নিয়ে লিখেছেন- কানাডা প্রবাসী লেখক সুলতানা শিরীন সাজি

আমার চোখে হিমালয়, চোখে না দেখা হিমালয়ের চেয়েও অনেক বড়। হিমালয়ের সাথে আমার হাতে গুনে যতদিন দেখা, তারচেয়ে বেশি কথা ব্লগে লেখালেখির ঘরে কমেন্টে এবং জিমেইলের সুবাদে, চিঠিতে। প্রথম যেবার দেখা হয়েছিল, আমি কলকল করে কথা বলেছি, আর হিমু চুপচাপ হেসে মাথা নেড়েছে। মাঝে মাঝে টুকটাক উত্তর দিয়েছে। বইমেলা বা যেখানেই গেছি ও আমার পাশে পাশে থেকেছে।

সামহোয়ার ইন ব্লগে দুই কাপ চায়ে মুখ দেয়া ছবিটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ও যে শুধু চা খেয়েই জীবন কাটাতে পারে, এমন ভাবনার মধ্যে দিয়েও গিয়েছিল একসময় (ওর বুয়েটে পড়াকালীন সময়ে)। ওর সাথে প্রথম দেখা হবার সময়ে মনে হয় চায়ের মগ দিয়েছিলাম ওকে।

ব্লগে লেখালেখির সময় প্রায়ই ও আমার লেখায় কমেন্ট করত। আর এমন একটা সময় এসে দাঁড়িয়েছিল যে, হিমু কমেন্ট না করলে ভালো লাগতো না। আমার অপ্রকাশিত চিঠি নামের বই এর কভার ফ্ল্যাপের দারুণ একটা লিখেছিল হিমালয়। ২০০৯ এর এপ্রিল ১৯ এ উত্সর্গে বিসর্গ (প্রথম পর্ব) আমাকে উৎসর্গ করেছিল।

আমার নামের পাশে, প্রিয় সাদা বক আপু। আমাকে সাদা বক বলার কারণটা জানতে চেয়েছিলাম কি? মনে পড়ে না। তবে অদ্ভুত একটা অনুভূতি তো হয়। ব্লগে হিমুর সব লেখাই আমি পড়েছি। ওর অনেক লেখা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হিমশিমও খেয়েছি। হিমালয়ের প্রযত্নে হন্তা বইটা আমি পেয়েছিলাম বড়ভাই এর হাতে।

বই এর শুরুতে চার নং পাতায় হিমু আমার প্রসঙ্গ টেনে কিছু কথা লিখেছে, ওখানে ও লিখেছে, সুলতানা শিরীন সাজি এমনই একজন মানুষ ............সুদূর কানাডা থেকেও এই অসামান্য মানুষটি নিয়মিত আমাকে লেখার ব্যাপারে অপরিমেয় উৎসাহ দিয়ে যান,অনাত্মীয় মানুষ হয়েও তিনি পরমাত্মীয় স্থানীয় একজন।

আত্মীয়তা নিয়ে আমার ভাবনা হলো খুব সাদামাটা,আমার মায়ের থেকে পাওয়া অনুভবটা হলো, যারা আত্মার কাছে থাকে, তারাই আত্মীয়। এই বিদেশ জীবনে এই সত্যটুকু বুকে নিয়ে চলি।

বইটার অনেকগুলো লেখাই সামহোয়ার ইন ব্লগ এ পড়েছিলাম। এই বই এর পঁচিশে অক্টোবর গল্পটি উত্সর্গে বিসর্গ’র পরিবর্তিত নাম। আর গল্পটিরও অনেক পরিবর্তন হয়েছিল। কারণ হিসাবে, গল্পের শেষে, গল্পের গল্পতে হিমু এর সুন্দর ব্যাখা দিয়েছে যা ওর পক্ষেই সম্ভব। সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে অজস্র লেখা লিখেছে ও ব্লগে। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম ছোট্ট একটা মানুষ এত জানে কীভাবে?

হিমালয়

মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় এর সঙ্গে সুলতানা শিরীন সাজি

আমার লেখা একটা কবিতা ‘জীবনের সুরাসুর’ এ হিমু ওর গানের একটা লিঙ্ক দিয়েছিল, শুনে অবাক হয়েছিলাম গানটার সাথে আমার কবিতার অনেক মিল আছে। সুর ও কন্ঠ চমক হাসান, হিমুর লেখা এই গানের শিরোনাম ছিল , “শেষ বলে কিছু নেই”। হিমু কমেন্টে লিখেছিল শেষ বলে কিছু নেই, এটা আমার অনেক প্রিয় একটা বিশ্বাস। আমরা এই বিশ্বাস থেকে একটা গানও করেছিলাম। গানটা শোনার পর আমি ওকে লিখেছিলাম, হিমু খুব অদ্ভুত লাগছে। তোমার লেখা গানটার অনেক শব্দ আছে এই কবিতায়, আমি এই গানটা আগে শুনিনি,আমরা অভিন্ন অনেক ভাবনাতেই, এই বোধটুকু সুখের।

আগের পর্ব পড়তে : আমার মনে হয় ওই প্রচ্ছদটাই আমার চোখে হিমালয়

হিমুর লেখা গল্প ‘লিখি চলো’ আমার খুব প্রিয় গল্প। এটা পড়ে আমার মুগ্ধতার সীমা ছিল না। ওর লেখার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল। গল্প যে এত সুন্দর করে লেখা যায়। ব্লগে বসে সেইসময় এমন গল্প পড়ার সুযোগ হতো। হিমুর এই গল্পটা আমি সেইভ করে রেখেছিলাম, মাঝে মাঝেই পড়তাম।

কবিতা লেখার মুড না আসলে ভালো গল্প, কবিতা পড়লে বা ম্যুভি দেখলে লেখার ইচ্ছে অনেক সময় ফিরে আসে। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য বেড়াতে যাওয়াটা বিশাল ভূমিকা রাখে। আমার লেখা বেড়ানোর গল্পগুলোতেও হিমুর সমান আগ্রহ ছিল। শুধু লেখক হিসাবে না, পাঠক এবং অসাধারণ কমেন্টকারী হিসেবে হিমুকে অনেক মিস করি। হিমুকে দেখা নিয়ে আমার কয়েকটা স্মৃতি আছে।

এক- আমার বড় ভাইয়ের বাসায় অনেক ব্লগারদের আড্ডায় হিমু এসেছে। চুপচাপ বসে সবাইকে দেখছে আর হাসছে। আমি মাঝে মাঝেই ওর কাছে যেয়ে জানতে চাইছি ,ওর কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাকি! ও হেসে বলছে ও ঠিক আছে। ও চুপচাপ বসে সবাইকে দেখছিল। এই দেখাটুকু অনেক উপভোগ্য ছিলো আমাদের কাছে।

দুই- রবীন্দ্র সরোবরে শিমুল মুস্তফার আবৃত্তি শুনতে গেছি। হিমু আর আরিফা এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। আমার কী ভালো যে লাগছিল ওদের দেখতে! আমি ওদের দুজনকে দেখছিলাম না শুধু, দেখছিলাম ভালোবাসা কেমন করে বিস্তৃত হতে হতে আকাশ সমান হয়। ওরা হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে চলে গিয়েছিল। আমার চোখে সেই দৃশ্য গাঁথা হয়ে গিয়েছিল।

তিন- এ বছর দেশে গিয়েছিলাম। মা চলে যাবার পর দেশে যাবার তাগিদ পাচ্ছিলাম না। তবে মাঝে মাঝেই ফেসবুকে, হিমু আর আরিফার জমজ মেয়ে, উনিশ আর তেইশ এর ছবি দেখলে, ছুঁতে ইচ্ছে করতো। দেশে যাবার পর যা হয়,অজস্র ব্যস্ততা গেছে। কিন্তু এর মাঝেও একটা দিন শুধু ওদের কাছে থেকে এসেছি। ওরা কীভাবে ঘুমায়, কীভাবে খায় সব দেখেছি।

আর হিমু এখনো তেমনি। কম কথা। আরিফা আর আমি কথা বলেছি। হিমু বলেছে ও বই লিখছে। নামহীন বই এর কথাও বলেছিল। কত অজস্রপাতা ও লিখে চলে এত ব্যস্ততাতেও। আমি ওদের ঘর ঘুরে দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল, এমন যদি হতো, হিমুটাকে ভাবতে হতো না জীবন যাপনের জন্য। ও সারাদিনমান লিখতে পারতো, তাহলে খুব ভালো হতো! আমার প্রার্থনায় ওদের ভালো থাকা জুড়ে থাকে। ওরা ভালো থাকুক।

নামহীন বইটা হাতে পাবার ইচ্ছে থাকলো। আমার ছেলেদের গল্প করেছি এই বই এর। নামহীন বইটা যদি হিমুর বায়োগ্রাফি হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি একদিন এটার একটা নাম তো হবেই হবে। আর সেটা যে আমার প্রিয় এবং স্নেহভাজনীয় মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় এর নামেই হবে, সেই বিশ্বাস আমার সারাবেলার।

আর আশীষ সবসময়ের এই বিস্ময়কর লেখক এর জন্য। সারা পৃথিবীর সাহিত্য পিপাসু মানুষ এর প্রিয় হয়ে ওঠে যেনো হিমালয়, সেই প্রার্থনা আমার। আমি বিশ্বাস করি ভালোবাসাতে এবং প্রার্থনায় সব চাওয়া পূর্ণ হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড