শ্রাবণী প্রামানিক
আমার শৈশব যত পিছিয়ে পড়তে থাকে, আমি তত আলোড়িত হতে থাকি। এই আলোড়ন হয় আমার মননে। আমার মগজে। বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয় আমার চিন্তার গতি। থমকে দাঁড়াই।
এই আলোড়ন, এই আঘাত, এই বাধা আমাকে অন্যরকমভাবে ভাবতে শেখায়। আমি যা দেখছি বা কেউ আমাকে যা দেখাচ্ছে এর পেছনে থাকে অজস্র ঘটনা। অজস্র কথা। এই কথা আর ঘটনার খাঁজে খাঁজে জমা থাকে গল্প। একজন যুবকের হাতে একটি লাল গোলাপ, রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা বুঝিয়ে দেয়; এ শুধুই একজন যুবক নয়! এই যুবক এমন একজন প্রেমিক যে তার প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে লাল গোলাপ হাতে!
তবে কি গল্প এখানেই শেষ? অথবা এই গল্প কি শুধু এর পরবর্তী ভবিষ্যৎ ই ইঙ্গিত করে? না কি পেছন ফিরে দেখতে শেখায়?— এই যুবকের গোপন জীবন, তার প্রেমের উদ্দেশ্য বা প্রেমিকার প্রতি তার ভালোবাসার ভয়াবহতা বা গভীরতা!
যতটুকু খনন করলে শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতের লাল রঙ নির্ভেজাল দেখা যায়; ততটুকু খনন করলেই কেবল গল্প উঠে আসে!
যখন প্রতিদিন শুরু হয় বিপথে যাওয়া কোনো তরুণের মৃত্যু সংবাদ বা কোনো কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনা দিয়ে, তখন কেবল আমাদের— মন কেমন করে ওঠে অথবা একঘেয়ে ঘটনা বলে বোধে কোনো আঘাতই হানে না!
আমি দেখতে চেয়েছি এই সব তরুণ অথবা কিশোরীর নিজস্ব কিছু মুহূর্ত। যা কোনো পাতায় লেখা হয় না। কোনো সেলুলয়েডে ধরা হয় না।
দার্জিলিংয়ের আগে সেবক নামে একটা জায়গা আছে। ২০০১ সালে সেখানে পাহাড়ের ওপরে একটা মন্দিরে গিয়েছিলাম আমি। এতগুলো সিঁড়ি পেরিয়ে আমাকে সেই মন্দিরে যেতে হয়েছিল যে, মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে দম নিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল। সিঁড়িতে তো আমি একা ছিলাম না; ছিল কিছু রঙ আর স্বভাবের মানুষ। আমার সেদিন মনে হয়েছিল, জীবন কখনোবা এই সিঁড়ির ই মতো। ধাপে ধাপে পেরিয়ে আসতে হয়। একেক ধাপের একেক গল্প। কিছু মানুষ সহযাত্রী হয় আবার কেউ কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে যায়। জমা হয় গোপন অভিজ্ঞতা... একান্ত কান্না... দুর্লভ কিছু আনন্দ! আমি আমার চিন্তায়... লেখায় সেই সব গল্প, সেই সব কথাগুলোকেই ধরতে, লিখতে চেষ্টা করি। চেষ্টা করি মানুষের সেই সব অনুচ্চারিত শব্দকে ধরতে, যা আঁকড়ে ধরে একজন মানুষ বাঁচে। কিন্তু সেই মানুষের ঠোঁটে কখনো উচ্চারিত হয় না সেই শব্দ অথবা গন্ধ।
একজন মানুষকে জীবনে এতরকম ভূমিকায় অভিনয় করে করে তার জীবনটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় যে তার প্রতিটি মুখোশেই আলাদা আলাদা গল্প উঠে আসে। কাটা গাছের কাণ্ডের মতো কখনো পড়ে যায় সেই মানুষ অথবা শুকনো পাতার মতো খুলে যায় তার মুখোশ! মুখোশের আড়ালে কেমন হয় সেই মানুষের রূপ?
কখনোবা জীবন প্রবাহিত হয় নদীর মতো। ঢেউয়ের মতো ওঠা–নামা করতে করতে সাঙ্গ হয়। এই সব ভাবনা আমাকে মানুষ দেখতে শেখায়। আমি একজন মানুষ দেখি। দেখি তার পেছনের গল্প। তার আড়াল করে রাখা রূপ...গন্ধ...বর্ণ। যা শব্দে শব্দে সাজিয়ে তৈরি করেছি আমার জলজীবন।
আরও পড়ুন : মিষ্টান্নের ইতিকথা
ওডি/এসএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড