রবিউল করিম মৃদুল
আসছে আমার নতুন উপন্যাস ঘানি। নামটি দেখে অনেকেই মনে করছেন, গল্পটা তেল ভাঙানো ঘানি বা ঘানিকেন্দ্রিক কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। ঘটনা আসলে তা নয়। গল্পের মধ্যে কোনো তেল ভাঙানোর ঘানি নেই। যে ঘানি আছে, তা জীবন ভাঙানোর ঘানি। জীবনকে ভেঙেচূড়ে নিংড়ে রস বের করে নেওয়ার ঘানি। জীবনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে একদল মানুষের জীবনকে টেনে নেওয়ার গল্প ঘানি। ঘানি লড়াইয়ের, ভাতের লড়াই, পেটের লড়াই, সম্ভ্রমের লড়াই, লড়াই অন্তঃপুরে জন্ম লওয়া ভালোবাসাটা টিকিয়ে রাখার।
গল্পটি আমার মাথায় প্রথম আসে ২০১৪ কী ১৫ সালে। একদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর অফিসে বসে গল্প করছিলাম কলিগদের সাথে। গল্প করতে করতে শোনা একটা ঘটনা মনে গেঁথে গিয়েছিল তখন। তখনই মনে হয়েছিল, এই বিষয়টা আমি উপন্যাসে ধরব একদিন। আমার যেটা হয় যে, কোনো গল্প মাথায় এলে সাথে সাথেই তা লিখে ফেলতে পারি না। অনেক সময় লাগে। হয়তো এমন হয় যে গল্পটা ভুলেও যাই। তারপর কখন কীভাবে সেই গল্পটা পুরোপুরি একটা গল্প হয়ে ওঠে মাথার ভেতর, তা বলতে পারি না। একদিন হঠাৎ সেটা লিখতে বসে যাই। এই যে মনে হয়, এর আগে অনেক চেষ্টা করেও দুই পাতা লিখতে পারি না। ঘানির গল্পটাও মাথায় ছিল। একদিন লিখতে বসলাম। লিখতে বসলেই শুরু হয় আসল বিড়ম্বনা।
আমার একটা স্বভাব হলো, আমার গল্পের চরিত্ররা যে যেই পথে হাঁটে, আমিও সেই পথে হাঁটি। হাঁটি মানে লিটারেলি হাঁটি। অন্তত হাঁটার চেষ্টা করি। জলপাই রঙের কোট যখন বেরোয়, আমি দুইবার গিয়ে ঘুরে এসেছি চট্টগ্রামের পটিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যে অঞ্চলের পথে হাটে মাঠে ঘাটে আমার চরিত্ররা হেঁটেছে। কেন্দ্রিয় চরিত্র সুজিত, মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা এরা যেসব জায়গায় বিচরণ করেছে বাস্তবে, প্রায় প্রতিটা জায়গা আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি, হেঁটে এসেছি। ঘানির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ঘানির প্লট বিস্তৃত হয়েছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায়। লিখতে শুরু করার পরই মনে হয়েছে, আগে আমাকে পীরগাছা যেতে হবে।
তারপর চরিত্রগুলোকে মাথায় নিয়ে গেলাম রংপুরের পীরগাছায়। যেসব গ্রামে, যেসব রাস্তায় আমার চরিত্ররা জীবন্ত হয়ে উঠবে, সেইসব মাটি আমি ছুঁয়ে দেখে এলাম। মনের ভেতর গেঁথে নিয়ে এলাম বিভিন্ন লোকেশনের এক রাশ জীবন্ত ফটোগ্রাফ। এই ঘুরে আসা আমার কাজটাকে অনেকটা সহজ করে দেয়। এবার ঘানির উদ্দেশ্যে রংপুর যাত্রায় আমার সঙ্গী ছিলেন নাট্যকার ও নির্মাতা হাসানাত বিন মাতিন এবং তরুণ ঔপন্যাসিক মনোয়ারুল ইসলাম। তিনজন মিলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পীরগাছার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছি কয়েকটা দিন। ঢাকায় ফিরে হাত দিয়েছি লেখায়। অনবরত লিখে গেছি প্রায় ছিয়াশি হাজার শব্দ।
ঘানি মূলত বিস্তৃত প্লটের গল্প। প্রায় ২৬০ পৃষ্ঠার বইয়ে যে গল্পের অর্ধেকটা বা তার কিছু কমবেশি ধরতে পেরেছি। বাকি অংশ নিয়ে সামনে কাজ করার ইচ্ছে আছে। গল্পেও রয়েছে সে ইঙ্গিত। আমার গল্পের চরিত্ররা সাধারণত আমার চেনা। প্রথম উপন্যাস শুভ্র কুসুম কৃষ্ণ কুসুম থেকে শুরু করে এখানে আকাশ নীল, জলপাই রঙের কোট সবগুলো বইয়ের অধিকাংশ চরিত্রই আমার পরিচিত। এমনকি তিনটা বইয়ের অধিকাংশ চরিত্রই এখনো বেঁচে আছেন। ব্যতিক্রম নয় ঘানিও। এখানেও মূল গল্প আমার চেনা মানুষদের। চেনা মানুষ, তাদের গল্পকে আমি স্থাপন করেছি ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন জায়গায়। কল্পিত চরিত্ররাও এসেছে। কখনো কখনো চেনা চরিত্রকেও ছাপিয়ে গেছে অনেক কল্পিত চরিত্র।
এটা ঠিক যে, ঘানি যেভাবে লিখতে শুরু করেছিলাম শুরুতে, শেষে আর তেমন থাকেনি। আসলে যেটা হয়, গল্প কিছুদূর গিয়ে যেন হঠাৎ জীবন্ত হয়ে ওঠে। তারপর সে নিজেই এগোতে থাকে তার নিজের পথে। নিজের ইচ্ছেমত বাঁক বদল করে, ইচ্ছেমত ছেঁটে ফেলে চরিত্রদের কাউকে কাউকে, কাউকে আবার দূর থেকে টেনে এনে বসিয়ে দেয় কেন্দ্রে। এসময় গল্পকে আটকালে তা কক্ষচ্যুত হয়। আমি আটকাই নি। ঘানি নিজের মতো নিজেই রচিত হয়েছে। ফেলে আসা একটা সময়কে জীবন্ত করে হাজির করেছে চোখের সামনে। উন্মুক্ত একটা জায়গা থেকে শুরু হয়ে ৭১ এর কিনারা ছুঁয়ে ৭৪এর শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে গল্প।
ঘানির প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু। বইটি প্রকাশ করছে শুদ্ধ প্রকাশ।
আরও পড়ুন- বেঁচে থাকাদের নিয়ে ‘যখন মৃত্যু নামে’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড