সাহিত্য ডেস্ক
‘কিছুই সহজ নয়, কিছুই সহজ নয় আর। লেখা, পড়া, প্রুফ পড়া, চিঠি লেখা, কথোপকথন, যা-কিছু ভুলিয়ে রাখে, আপাতত, প্রত্যহের ভার – সব যেন, বৃহদরণ্যের মতো তর্কপরায়ণ হ’য়ে আছে বিকল্পকুটিল এক চতুর পাহাড়।’
বিংশ শতাব্দীর ত্রিশ দশকে বাংলা সাহিত্যে নতুন কাব্যরীতির সূচনা যে কজন সাহিত্যিক করেছেন তাদের ভেতর অন্যতম কবি বুদ্ধদেব বসু। তিনি শুধু কবি ছিলেন না। ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক। তিনি ১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন।
বুদ্ধদেব বসুর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথম ভাগ কেটেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর লাভ করেন। তিনি শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৩১ পরিবারসহ ঢাকা ত্যাগ করে কলকাতায় পাড়ি জমান।
‘জাগো, হে পবিত্র পদ্ম, জাগো তুমি প্রাণের মৃণালে, চিরন্তনে মুক্তি দাও ক্ষণিকার অম্লান ক্ষমায়, ক্ষণিকেরে কর চিরন্তন। দেহ হোক মন, মন হোক প্রাণ, প্রাণেহোক মৃত্যুর সঙ্গম, মৃত্যু হোক দেহ প্রাণ, মন’
বুদ্ধদেব বসু ছিলেন আধুনিক কবিদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তিনি বাংলা গদ্যরীতিতে ইংরেজি বাক্যগঠনের ভঙ্গী সুপ্রসিদ্ধ করেছেন। বাংলা কবিতায় আধুনিক চিন্তা-চেতনা এবং কাঠামো প্রবর্তনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাকে কল্লোল যুগের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি বলা হয়ে থাকে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পশ্চিমা সাহিত্যের সঙ্গে তার সম্যক পরিচয় ছিল। ফলে ইউরোপীয় এবং মার্কিন সাহিত্যের কলা-কৌশল বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৩০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটি দশক সাহিত্য পরিমণ্ডলে তার প্রভাব ছিল অবিসংবাদিত। তিনি সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় কাজ করেছেন।
জীবনের শেষের দিকে তিনি নাট্যকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তপস্বী ও তরঙ্গিণী, কলকাতার ইলেকট্রা ও সত্যসন্ধ, কালসন্ধ্যা, পুনর্মিলন, অনামী অঙ্গনা ও প্রথম পার্থ প্রভৃতি নাট্যকাব্য বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন শিল্পরূপে জন্ম দিয়েছে। তিনি শুধু নিজে অজস্র রূপ ও রীতির কবিতা লিখেই নয়, সহযাত্রী এবং উত্তরসূরি আধুনিক কবি সমাজকে কবি মর্যাদায় সমুন্নত করে কবিতা সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু একালের বাংলা কাব্যের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন।
‘কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম দুটো প্রজাপতি কতদূর থেকে উড়ে আসছে জলের উপর দিয়ে।- কী দুঃসাহস! তুমি হেসেছিলে আর আমার কী ভালো লেগেছিল।’
বুদ্ধদেব বসু বাংলাসাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৬৭ সালে তপস্বী ও তরঙ্গিণী কাব্যনাট্যের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ও ১৯৭৪ সালে স্বাগত বিদায় গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র-পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১৮ই মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড