• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মধ্যাহ্নের মহাকাল মাত্রা

  মনিরুল কবির বাধন

১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৩৫
ছবি
ছবি : প্রতীকী

সময়টা তখন ২০০৭ এর মাঝামাঝি। পড়ি তখন সপ্তম শ্রেণিতে। থাকি তখন থাকি গ্রামে। পাঠ্য বইয়ের বাইরে তখন অতটা আধুনিকের ছোঁয়া পায়নি আমাদের চারপাশটা। তাই গল্প বলতে বইতে থাকা পাঠ্য তালিকাই সীমাবদ্ধ বলা চলে। তবে ব্যতিক্রমের কিছুটা হলো মামার কল্যাণে। একবারের ছুটিতে নানা ভাইয়ের মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছল কিছু তিন গোয়েন্দা। অন্য রকম গল্প পড়ার লোভ জাগতে লাগলো মনে। কিন্তু হাহাকার, মরুভূমিতে পানি ছিলো না। তাই নিজের বইয়ের গল্পগুলো ঝুড়ি ভাজা করতাম এবং তিন ক্লাস উপরের পড়া চাচাতো বোনের পাঠ্য গল্পগুলো ও মুখস্থ থাকতো প্রায়।

ঘটনা তখন ২০০৭। আপু তখন ক্লাস টেনে পড়ে। সবেমাত্র পাঠ্য বই ছাড়া অন্য বই পড়তে শুরু করেছে। ওদের পাঠ্য পদ্মা নদীর মাঝি তখন আমার মুখস্থ, যদি ও আমি সবে তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। ওর টেবিল খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ পেলাম মোটা মত একটা বই। নাম হলো মধ্যাহ্ন। লিখেছেন হুমায়ুন আহমেদ। অত বড় বই বা অতশত লেখক পড়ার যাত্রা তখন ও হয়নি আমার। বেশ আগ্রহে নিয়ে নিলাম বইটি।

পড়তে বসলাম সন্ধ্যায়। কিছুটা বৃষ্টির আমেজ ও ছিলো। ছিলো গুড়িগুড়ি বৃষ্টিও। পড়াতে কিছুতেই মন বসছে না। বারবার মন ছুটছে মধ্যাহ্নে। মায়ের ভয়ে হাত ও দিচ্ছি না। নির্ঘাত পিটুনি জুটবে পড়লে ধরা। তখন ছিলো পড়া মানে পাঠ্য বই। কৌতূহল কাটিতে জয় হলো ভয়ের। সাহস করে শুরু করলাম।

পড়ে যাচ্ছি। সহজ সরল চলার পথ। গল্পের ছলে কল্পনায় ডুবছি। অদ্ভুত ভাবে ডুবে চলেছি। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। পড়া ও পাতা উল্টাচ্ছে। এশার পার হলো। সবাই ঘরে ফিরলো। রাতের খাবার ডাক পড়লো। কাজ শেষে সবাই তখন ঘুমিয়ে পড়লো। বিছানা আমার ভুলে গেলো। ঘুম আমার ঘর ভুললো। ছটপট করে উঠে পড়লাম। মায়ের ভয়ে লাইট অন করলাম না। তখন আমারা সৌরশক্তিতে আলোকিত। চুপিসারে টেবিলে গেলাম। আলতো ছোঁয়ায় বইটা নিলাম। গত রোজায় বাবার দেওয়া মিনি টর্চটা নিলাম। বিছানা শুয়ে আপাদমস্তক কাঁথা জড়ালাম। মিনি টর্চের মিটমিটে আলোয় ডুবে গেলাম হুমায়ূনে। রাতের মধ্য ভাগের আরো পরে পড়লাম মধ্যাহ্ন।

মন্ত্রমুগ্ধ বললেও মনের মতামতটা মন মতো হবে না। বলা যায় অনেকটা আলা-ভোলা ছিলাম। প্রচণ্ড খিধায় মানুষ ভাতের লোকমা গলাধঃকরণ করে যেমন সেই ভাবেই পড়ে শেষ করলাম মধ্যাহ্ন। সাবলীল ভাষা, শৈল্পিক শব্দের বুনট, গতিশীল গল্প আর আনন্দে ইতিহাস। পড়লাম, জানলাম আর ভালোবেসে ফেললাম। সেদিন থেকে যাত্রা করলাম কথার জাদুকর হুমায়ুনে। ভালোবাসার যাত্রা হলো হুমায়ূনের সৃষ্টিশীলতায়।

মহাকালের অসীমে আজ লেখক, কিন্তুর তার মহাসৃষ্টির নির্যাসে আজো মন্ত্রমুগ্ধ আমি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড