নিশীতা মিতু
জন্মদিনের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানবেন হে প্রিয়। না বলা অনেক কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আপনি চান্নি পসর রাইতের জোছনায় মিশে গেলেন।
স্কুল জীবনের শেষদিকে সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন আপনি। হ্যাঁ, স্বশরীরে না হলেও স্বঅক্ষরে ছিলেন। পড়ার বইয়ের মাঝে আপনার বই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়াতে কী যে আনন্দ ছিল! আপনি বোধহয় জাদু জানেন। তাইতো আপনাকে জাদুকর বলে অনেকে। চরিত্রের ভেতরে কীভাবে নিয়ে যেতেন অমন করে?
মিসির আলির গল্প পড়ে সবকিছুকে অন্যভাবে দেখতে শিখেছি। ব্যাখ্যার বাইরে ব্যাখ্যা খোঁজা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হিমুকে পড়ে কতবার ভেবেছি সব ছেড়েছুড়ে নেমে পড়বো পথে। ‘মাতাল হাওয়া’ বই পড়ে কত কেঁদেছি জানেন? জানার কথা। কারণ আপনি হাসাতে জানেন, কাঁদাতে জানেন, ভাবাতে জানেন।
একবার পরীক্ষার জন্য বইমেলায় যেতে পারলাম না। বাবাকে পাঠালাম আমার জন্য যেন আপনার বই নিয়ে আসেন। কী বই আনবে তা জানি না, আপনার বই হলেই চলবে। বাবা ফিরলেন ‘বাদশাহ নামদার’ বই নিয়ে। প্রথম পৃষ্ঠা পড়েই বই রেখে দিলাম। নাহ, আপনার বই তো এমন হয় না। কোনো টান নেই, আবেগ নেই, পরের পৃষ্ঠায় যাওয়ার তাড়া নেই।
সেই বই আমি পড়েছিলাম বছর দুয়েক পরে। সাহস করে পরের পৃষ্ঠায় গিয়েছিলাম। এরপর আর বই ছেড়ে ওঠার ক্ষমতা আমার হয়নি। গোসল, খাওয়া, ঘুম সব বাদ। বই শেষ করে তবেই উঠেছি। কী দারুণ লেখনী। চোখ বন্ধ করলেই আমি চলে যাচ্ছি বহু পুরোনো ভারতবর্ষে, হয়ে উঠছি গল্পের কোনো চরিত্র!
খুব শখ ছিল, যখন আমি বড় হব একদিন হুট করে ‘নূহাশ পল্লী’ বা ‘দখিন হাওয়া’তে পাড়ি জমাব। তারপর আপনার হাতে কয়েকটা কাগজের টুকরা দিয়ে বলবো, ‘স্যার দেখুন আমিও হিমুকে নিয়ে ২৪ পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছি। আপনার মতো আমিও হিমু, ওসি সাহেব, নূপুর, মাজেদা খালা, বাদল সবাইকে নিয়ে গল্পের রাজ্য সাজিয়েছি।’
আপনি হয়ত কাগজগুলো ফেলে দিয়ে বলতেন, ‘এটা কোনো লেখা? শোন মেয়ে লেখালিখি সবাই পারে না। তার চেয়ে বরং এসেছো যখন ভাত খেয়ে যাও। গ্রাম থেকে মাগুর মাছ আনা হয়েছে, কুমড়ার শাক আর আলু দিয়ে রান্না করা হবে। আমি নিজে ভাপে ইলিশ রান্না করবো। আর হ্যাঁ বিকেলে ঘি আর মরিচ দেওয়া খিচুড়িও হবে।’
আমি সব দুঃখ ভুলে যাবো আপনার হাতের রান্না খাওয়ার লোভে তারপর অনেক আড্ডা হবে, গল্প হবে।
আপনি কেন আমার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই হারিয়ে গেলেন স্যার? কেন গেলেন? জোছনা রাতে বনে আমার যাওয়া হয় না। ঘরের বাইরে বের হয়ে সাদা ক্যাপ পরে শহরটাকে দেখা হয় না। আমি কেবল একটু আধটু শাড়ি পরতে পারি। তাই এই দিনটাতে নীল শাড়ি পরতে পারি। মাঝেমধ্যে নাকে নথ ঝুলিয়ে হয়ত আপনার ‘সোনার কন্যা’ হওয়ার বৃথা চেষ্টা করি।
হয়ত রুপা নই, হয়ত ভাটি অঞ্চলে আমার বসত নয়, কিন্তু আপনি তো বুঝবেন ঠিকই আপনাকে ভালোবেসেই এই মেয়েটার সাজগোজ। তাই না বলুন? এতটুকু তো আপনি বোঝেনই!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড