• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিবন্ধ

শিক্ষক

  আলেয়া আক্তার আঁখি

০৫ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৩৫

‘তেল মারা’ পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য শব্দ মনে হয় আমার কাছে। কিন্তু এই শব্দটাই জায়গা করে নিচ্ছে সব সম্পর্কের মধ্য। রাজনৈতিক থেকে শুরু করে বর্তমানে ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের মধ্যেও চলে এসেছে। তবে একজন ছাত্র শিক্ষকের মধ্য যে সম্পর্ক হয় তাতে এই শব্দটা কোনোভাবেই যায় না।

একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে বাবার আদলে উপদেশ দিতেই পারে। দেখা হলে একজন ছাত্র কুশলাদি জানতে চাইতেই পারে। হিংসের কিছুই নেই। যদি আপনার মনে সত্যিকারের শ্রদ্ধাবোধ থাকে। আপনি শ্রদ্ধা করতে জানেন।তবে অবশ্যই জেনে রাখবেন তার স্নেহ, দোয়া আপনি পাবেনই পাবেন। হোক সাক্ষাতে এককাপ চা খেতে খেতে কিংবা পরোক্ষভাবে অঢেল দোয়া হিসেবে অথবা অন্য যেভাবেই হোক, হবেই নিশ্চিত।

আমি নিজেকে ভালো ছাত্র দাবী করি না। তবে এটা সত্য যে ছোট্ট এই জীবনে অনেক প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে হয়েছে, হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে যতটুকু সফলতা অর্জন করেছি। তার বৃহদাংশ দোয়া, সেটা মা বাবার, শিক্ষকের, গুরুজনের। সাথে রয়েছে সবার ভালোবাসা।

আমি তাকবীর, তাকবির দুটোতেই বিশ্বাসী। আর এই যে দোয়ার বিষয়, সেখানে আমি শুধু অতটুকুই খেয়াল রাখি আমার কথায়, কাজে যেন কেউ কষ্ট না পায়। বাকিটা অর্থাৎ ফলাফল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাবোই ইনশাহআল্লাহ।

ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস ছিলো দোয়া চাওয়া। পরীক্ষার দিন সকালে আরো বেশি। পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশী কেউ বাদ যেতো না। দেখতাম সবাই কত খুশি হয়। এরমধ্যে বৃদ্ধ যারা ছিলো তারা মাথায় হাত বুলিয়ে কিংবা থুতু দিয়েও দোয়া করতো। প্রথমে নোংরা লাগলেও। পরক্ষণেই মনে হত। থাক না, মানুষটা আর কতদিনই বা বাঁচবে, অন্তত দোয়া চাওয়াতে সে যে পরিমাণ খুশি হয়ছে তাতে ধুলো বা থুতু নিছক।

এরপর শিক্ষকদের কাছে দোয়া চাইতে গেলে একজন শিক্ষক বললেন, ‘দোয়া চাইতে নেই রে মা। তোর হাত যখন অন্য একজন লোকের হাত হয়ে কাজ করবে তখন মন থেকে একা একাই দোয়া চলে আসবে।’

আরেকদিন ক্লাসে, স্যার বোর্ডে লিখতে গিয়ে একটা বানান ভুল করলেন। তারপর সব ছাত্রের হৈচৈ। হঠাৎ স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কিরে তুই ফার্স্ট গার্ল আর ভুল ধরতে পারলি না?

আমি বললাম, স্যার আমি আমি আগেই ধরতে পেরেছি। কিন্তু বলিনি দুইটা কারণে। প্রথমত, আপনি বানানটা জানেন আমার বিশ্বাস দ্বিতীয়ত, আরো বিশ্বাস করি আপনি নিজ থেকে ভুল করেননি। ভুল করেই ভুল হয়েছে।

তারপর স্যার বললেন, বুড়ির মতন এত কথা কই শিখলি? বললাম মা বলেছিলো। স্যার বললেন বড় হবি। এরপর চলে গেলেন। অর্থাৎ যে শিক্ষকের কথা বললাম তিনি শিক্ষক আর শিক্ষককে সম্মান করার কথা যার কাছ থেকে জেনেছি তিনিও শিক্ষক।

স্কুলে যাওয়ার পথে সালাম দিলাম একজন লোককে। তিনি উত্তর নিয়ে বলতে লাগলেন নিশ্চয়ই তোমার বাবা-মা ভালো শিক্ষা দিয়েছে। ঠিক তখন থেকেই ভাবতে লাগলাম, এভাবেই সম্মান বাড়ে। তাই আমাকে আরো ভালো হতে হবে। তবেই না তারা আরো প্রশংসিত হবে।

যে কোনো অনুষ্ঠানের তিন চার ঘণ্টা বক্তব্য আমি মনোযোগ দিতে শুনে থাকি। কারণ হয়তো এর মধ্যে এমন কোনো কথা রয়েছে যা আমার জীবনে প্রভাব পরবে। ঠিক তেমনি আমি সবার উপদেশ শুনি। এরপর যা যৌক্তিক তা মানার চেষ্টা করি। এভাবেই শিক্ষা ছড়াচ্ছে, শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই নির্দিষ্ট শিক্ষকের নাম নিলাম না।আর এই শিক্ষাটাও একজন শিক্ষকের কাছ থেকেই পাওয়া। তিনি বলেছিলেন, ধরো দুইজন শিক্ষক পাশাপাশি বসে আছি। তুমি নাম নিলে একজনের। আমার সম্পর্কে কোথাও বলছো। তখন তোমার অন্য যে শিক্ষক আছেন তিনি নিজেকে ব্যর্থ ভাববেন। তাই তোমার বলা, বা লেখা নির্দিষ্ট না হোক, হোক বিস্তৃত।

জগতের সব মানুষ ভালো এ কথাটি যেমন সত্য নয় ঠিক তেমনি শিক্ষকের ক্ষেত্রেও বলা যায়। তার মানে এই নয় যে, গুটিকয়েক লোকের দোষ আমি সকলের উপর চাপিয়ে দিবো বরং শিক্ষক মহান, উদার ও শিক্ষকতা পেশা মহৎ। শিক্ষক একটা জাতির কারিগর। শিক্ষক বেঁচে থাকুক তার ছাত্রের আদর্শ হয় আর ছাত্র বাঁচুক শিক্ষকের স্নেহছায়ায়।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড