সাহিত্য ডেস্ক
ইরানের কাব্যজগতের একটি সুপরিচিত নাম মোহাম্মদ হোসাইন শাহরিয়ার। তার হাতেই ফারসি কবিতায় আধুনিক গজলের সূত্রপাত ঘটে। শাহরিয়ার ১৯০৬ সালে ইরানের তাবরিয শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজি মির ওগা খোসগোনাবি এবং মাতার নাম ছিল কাওকাব খানম। যিনি ‘খানম নানে’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
শাহরিয়ার ছিলেন স্বভাবকবি। কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিক কবিতা লিখে ফেলতেন। সেগুলোকে লিখেও রাখতেন না। এভাবে তার অলিখিত অনেক কবিতা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি ফারসি ভাষায় কবিতা লিখতে শুরু করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ মালেকুশ্ শোয়ারায়ে বাহার, সাঈদ নাফিসি ও পুজমান বাখতিয়ারের ভূমিকাসহ প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে।
শাহরিয়ারের পদ্য সাহিত্যকর্মই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সাহিত্যকর্মকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায় যেমন- ফারসি কবিতা ও তুর্কি কবিতা।
তিনি ফারসিতে প্রায় ২৮ হাজার বেইত ও তুর্কিতে প্রায় ৩ হাজার বেইত লিখে গেছেন। ফারসি ভাষায় ৫৪৭টি গযল, ১০০টি কাসিদা, ২৫টি দীর্ঘ মাসনাভি, ১৫০টি কেতআ কবিতা, অন্যান্য বিভিন্ন গঠনের ১২৩টি খণ্ড কবিতা এবং ইসলামি বিপ্লব নিয়ে ৩৯টি কবিতা লিখেছেন। আর তুর্কি কবিতার মধ্যে হায়দার বাবায়ে সালাম (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), সাহান্দিম ও তুর্কি মুক্ত কবিতাসমূহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তবে শাহরিয়ার সাহিত্যপ্রতিভার পুরোটাই ‘গযল’-এ ঢেলে দিয়েছেন। তাকে বুঝতে হলে তার গযলকে বুঝতে হবে। শাহরিয়ার পুরো জীবনের অভিজ্ঞতাকে তার গযলে নিয়ে এসেছেন। ‘কবিতা লেখার জন্য তিনি গযলকে নির্বাচন করেননি; বরং জীবন কাহিনীই তাকে গযল নির্বাচন করতে বাধ্য করেছে।’
বিষয় বৈচিত্র্যের মাঝে প্রেমই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। শাহরিয়ার প্রায় সব ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতাগুলো নিজের জীবনের খুব কাছাকাছি ছিল। ছোটবেলার বিভিন্ন স্মৃতি, না পাওয়ার বেদনা, জীবনের ব্যর্থতা, প্রেম, বিরহ, নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস প্রভৃতি দ্বারা শাহরিয়ারের কবিতাগুলো পরিপূর্ণ ছিল। শাহরিয়ার ছিলেন সাধারণ মানুষের কবি। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, দুঃখ-বেদনার চিত্র তার কবিতার মধ্যে ফুটে উঠেছে।
১ দেশ নিয়ে কবিতা লিখেছেন, দেশের মানুষের কথা বলেছেন।
অনেক আশা নিয়ে পাখা মেলেছিলাম তোমার মিলন প্রাসাদ দিকে,
তোমার বিচ্ছেদের পাথরের আঘাতে এখন ডানা ভাঙা (পাখির) মত হয়ে গেছি।
তীর আর ধনুক হাতে প্রেমের পেশায় নেমেছিলাম,
কিন্তু হায়! তোমার ব্যাঘ্র দৃষ্টির কাছে শিকারি হরিণে পরিণত হয়েছি।
২ মুহররম এল, হোসাইনের ব্যথাভরা ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তুলল,
শরৎ এর মেঘগুলোও যেন হোসাইনের বাগানে ও তাঁর উপত্যকায় কাঁদছে।
তেরশ’ বছরের চেয়ে আরো বেশি কিছু সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু এখনো,
অনুসারীদের রক্তাক্ত বুকে টিউলিপ ফুলের মত হোসাইনের ক্ষত রয়ে গেছে।
৩ আমি এমন নই যে, তেহরানকে ভুলে যাব,
তেহরানের সূর্যকিরণ ও সন্ধ্যায় লালিমার দৃশ্য উপভোগ করাকে।
৪ ওগো আমার চিরসবুজ বৃক্ষ! বসন্তের এই সকালে তৃণভূমিতে এস,
তোমার কোমল বাতাস ফুলের গায়ে আদর বুলিয়ে দেবে।
যদি তুমি এই আলো আমার অশ্রুর সাগরে ছড়িয়ে দাও,
তবে সেই বিস্ময়কর আলোয় আমার চোখ যেন সূর্য হয়ে যাবে।
৫ গ্রামের রাস্তার পাশে অবস্থিত ঐ বীদ বৃক্ষ!
আমার পরে কি আর কেউ তার পাশ দিয়ে চলে গেছে?
সেই বৃক্ষের প্রতিটি পাতায় হৃদয়ের ভাষা ছিল,
আমার কাছে কত গোপন কল্প-কাহিনী বর্ণনা করেছে।
সে দাঁড়িয়ে ছিল আর গ্রামের প্রেমিক যুবকেরা,
রাতের কাফেলার সাথে তার পাশ দিয়ে ভ্রমণ করেছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড