• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘প্রতিশোধ’ গল্পের ৬ষ্ঠ পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : ‘প্রতিশোধ’

  রিফাত হোসেন

২৩ জুন ২০১৯, ১৩:০৭
প্রচ্ছদ
ছবি : প্রতীকী

কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকার পর তারিন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল, ‘অয়ন তুমি, মানে এখানে?’

- তোমরা কি ভেবেছিলে আমি মারা গেছি?

- শুধু আমরা নয়, সবাই জানে তোমাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু তুমি বেঁচে আছো কীভাবে? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না তুমি বেঁচে আছো, এবং আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো এখন।

- হুম, সব বলবো। কিন্তু তার আগে এই দু’জনের ব্যবস্থা করে নেই। ওদের সাহস হলো কীভাবে আমার র্গালফ্রেন্ড এর দিকে নজর দেওয়ার। আজ ওদের দু’জনকে নিজের হাতে মেরে নদীতে ফেলে দিয়ে আসবো।

আবির বলল, ‘আমাদের মাফ করেদে অয়ন। আসলে একটু আগেই নেশা করেছি। এমনিতেই মাথা ঠিক ছিল না। আর তখনই তারিন এসেছে, তাই ওকে দেখে লোভটা সামলাতে পারিনি। প্লিজ আমামের মাফ করেদে।’

পাশ থেকে তারিন বলল, ‘অয়ন, ওদের নিয়ে ভাবা বাদ দাও এখন। তাছাড়া এতদিন ওরা তোমাকে অনেক সাহায্য করেছে। একটা ভুলের জন্য ওদের মেরে ফেলা ঠিক হবে না।’

- ঠিক আছে, তুমি যখন বলছ ওদের মাফ করে দিতে, আমি মাফ করে দিবো। তবে তোরা দু’জনে ভালো করা শুনে রাখ, পরবর্তীতে এইরকম কিছু করার চিন্তা মাথায় আসার আগেই তোদের আমি শেষ করে দিবো।

তারিন অস্থির কণ্ঠে বলল, ‘আচ্ছা এখন বাদ দাও ওদের কথা। আগে বল, এইসব কী হচ্ছে? তোমার লাশ থানায় পড়ে আছে। অথচ তুমি জ্যান্ত অবস্থান দাঁড়িয়ে আছো আমাদের সামনে। মানে কী এইসব এর?’

আবির নিলয়কে ধরে ফ্লোর থেকে তুলে সোফায় বসিয়ে দিলো। অয়ন ও সোফায় বসে বলতে শুরু করল, ‘আরও দু’দিন আগে আশিককে বলেছিলাম আমার সাথে দেখা করতে। গত কালকে আসার কথা ছিল ওর। সকাল থেকেই আমি ওর অপেক্ষায় ছিলাম। দুপুরে একটা ফোন আসে আমার কাছে। আমি ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে আশিক নাকি খুন হয়েছে। এরপরই ফোনটা কেটে যায়। বিষয়টা আমি তেমন গুরুত্ব না দিলেও মনের ভিতর একটা অজানা কৌতূহল রয়ে গিয়েছিল। তাই কৌতূহল দূর করতে আমি আশিকের নম্বরে ফোন দিই। কিন্তু আশিক বলে ও একদম ঠিক আছে। ইনফ্যাক্ট ও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো আমাকে যে ফোন করেছিল, ওই ব্যাক্তি আশিককেও ফোন করেছিল। আর আশিককে ফোন করে বলেছে আমি খুন হয়েছি। ঘটনাটা বেশ চিন্তায় ফেলে দেয় আমাকে আর আশিককে। কারণ একি ব্যাক্তি, একি নম্বর থেকে দু’জনকে ফোন করে, এবং দু’জনকেই দু’জনের খুন হওয়ার কথা বলে। মানে আমাকে খুন করা হয়েছে, সেটা ওকে জানায় এবং ওকে খুন করা হয়েছে সেটা আমাকে জানায়। কিন্তু কেন? আমি আবার এই নম্বরে ফোন করে দেখেছি তখন ওই নম্বর বন্ধ ছিল। সারাদিনে আর কোনো ফোন না আসলেও মাঝ রাতে আবার ফোন আসে ওই নম্বর থেকে। আমি ফোন রিসিভ করে চুপ করে থাকি। কিছুক্ষণ নীরবতা। হঠাৎ এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে হুবহু রিফাতের কণ্ঠে কেউ একজন বলল, ‘আর মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত আছে তোমার হাতে মি. অয়ন। তারপর তোমাকে এই পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য বিদায় দিয়ে দিবো।’

আমি কিছু না বলে শুধু শুনছিলাম, আর বুঝতে চেষ্টা করছিলাম ফোনের ওপাশের লোকটার কণ্ঠ রিফাতের, নাকি ওর কণ্ঠ নকল করে কেউ আমাকে বোকা বানাচ্ছে। কিন্তু অনেকবার নীরবে ওর কণ্ঠ শোনার পরও আমার মনে হয়নি কেউ রিফাতের কণ্ঠ নকল করে আমাকে বোকা বানাচ্ছে। আমি বুঝতে পারি ওটা রিফাতেরই কণ্ঠ, ‘কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব তা আমি জানি না?’

অয়নকে থামিয়ে দিয়ে তারিন বলল, ‘সে-জন্যই তুমি সেই রাতে আমাকে ফোন করে বলেছিলে তোমার সাথে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। আর এটাও বলেছিলে তোমার ও মনে হচ্ছে রিফাত বেঁচে আছে, তাই তো।’

- ‘ইয়েস।’

সোফা থেকে ওঠে দাঁড়াল আবির। রাগী কন্ঠে বলল, ‘ অসম্ভব। আমি নিজে রিফাতের মাথায় গুলি করেছি। ওর বাঁচার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তখনও আমি চেক করে দেখেছি ওর নিশ্বাস ছিল না। ও ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল।’

অয়ন বলল, ‘আরে ইয়ার, সে তো আমিও গুলি করেছিলাম। বাট আমিও বুঝতে পারছি না রিফাত কীভাবে বেঁচে গেল!’

তারিন বলল, ‘আমি বলেছিলাম না, সেদিন রাতে রিফাতই ছিল আমার ঘরে। রিফাত সেদিন মাঝ রাতে আমাকে মারার জন্যই এসেছিল। আমার সাথে কথাও হয়েছিল ওর, কিন্তু আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কেউ বিশ্বাস করেনি আমার কথা।’

- আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতাম না, যদি পরের ঘটনাটা নিজের চোখে না দেখতাম। ওই ঘটনাটা দেখে আমি পুরোপুরি ভাবে শিওর হয়েছি যে, রিফাত বেঁচে আছে।

সবাই অয়নের দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাল। অয়ন আবার বলতে শুরু করল, ‘এর পর লোকটা ফোন কেটে দেয়। তারপর আবার বন্ধ করে দেয় নম্বরটা। আমি বাড়ি থেকে আর বের হলাম না। আশিকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। গভীর রাতে আশিক এলো আমার বাড়িতে। আনুমানিক তখন রাত প্রায় একটা বাজে। তো আশিকের সাথে কথা বলতে বলতে দু’টো বেজে যায়। বেশ কিছু দরকারি জিনিসপত্র আনার জন্য আমি ওকে একটা জায়গায় পাঠাচ্ছিলাম। ওর নিজের কাজ শেষ করতে আর অনেকটা সময় বাস জার্নি করার কারণে ওর শার্টটা ময়লা হয়ে গিয়েছিল। তাই ও আমার একটা শার্ট পরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। সাথে আমার বাইকটা নিয়েও গিয়েছিল। ঘর থেকে হেলমেট পরে বের হয়ে গেটের কাছ থেকে বাইকটা নিয়ে আস্তে আস্তে রাস্তা দিয়ে যেতে শুরু করল। আমি তখন ঘরে বসে ছিলাম। হঠাৎ করে একটা গুলির শব্দ হলো, আর সাথে বাইকটা রাস্তায় আছড়ে পড়ার শব্দ। আমি জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা সামনে ল্যাম্পপোস্ট এর ওখানে ওপর হয়ে পড়ে আছে আশিক। ঠিক ওর পিছনেই দু’জন পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঘটনা দেখে আমার পুরো শরীরটা কেমন ঝাঁকি দিয়ে উঠল। পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন ব্যাক্তির মধ্যে একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। ল্যাম্পপোস্ট এর আলোতে আমি স্পষ্ট দেখলাম মেয়েটা কালো একটা বোরকা পরে আছে। চোখ-মুখ সব ঢাকা। ছেলেটাও কালো একটা কাপড় পরে আছে, মাথায় একটা কালো টুপি আর মুখে কালো মুখুশ। দু’জনের কারোর মুখই আমি দেখতে পারছিলাম না। আশিক তখনও ওভাবেই রাস্তায় পড়ে ছিল। হেলমেটটা কিছুটা দূরে পড়ে আছে। ছেলেটা ওর আরও কাছে চলে গেল। এক মুহূর্তও আর দেরি না করে পরপর চারটা গুলি করলো ওর মাথায়। তারপর কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে ওরা দু'জন চলে গেল সেখান থেকে। আশিক শুধু কয়েকবার নড়ে উঠল। তারপর একেবারেই চুপ হয়ে গেল। আমি আর দেরি না করে পিছনের দরজাটা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে থেকে চারিদিকে লক্ষ্য রাখলাম শুধু। বেশ অনেকটা সময় পাড় হয়ে যাওয়ার পরও ওরা আর আসেনি। তখন আমি ভালো করে চিন্তা করে দেখলাম ওরা আমাকে খুন করার জন্যই এসেছিল। আশিকের গায়ে আমার শার্ট আর আমার বাইক ছিল, তাই ভেবেছিল ওটা আমি। আর মুখটাও হেলমেট দিয়ে ঢাকা ছিল শুরু থেকেই। পরে অবশ্য হেলমেটটা খুলে গিয়েছিল। কিন্তু ওপর হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকার কারণে ওরা আশিকের মুখটা দেখতে পারেনি। তাই ওকে মেরে দিয়েছি।’

তখনই আমি একটা প্ল্যান করি। আশিকের পুরো শরীর এমনভাবে ক্ষত-বিক্ষত করি যেন ওকে কেউ চিনতে না পারে। আর আমার ফোন, মানিব্যাগ, বাইকসহ আরও কিছু ইনফরমেশন ওখানে রেখে আসি যেন সবাই ভাবে লাশটা আমার। আমি মারা গেছি। তারপর অন্য একটা জায়গায় চলে যাই আমি। কালকের সারাদিন সেখানে থেকে আজকে সকালে এখানে আসার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। ভাগ্যক্রমে সঠিক সময়ে এখানে এসে পৌঁছাতে পেরেছি আমি, না হলে আজ তোদের মতো বেঈমানদের হাতে তারিনের জীবনটা শেষ হয়ে যেতো। তোদের উপর অনেক বিশ্বাস ছিল আমার, আজ সেটা হারালি।’

আবির আর নিলয় দু'জন একসাথে বলল, ‘সরি দোস্ত। মাফ করে দে প্লিজ।’

- হুম মাফ তো করাই যায়। তবে আগের মতো আর তোদের উপর ভরসা করতে পারবো না আমি। একমাত্র আশিকই ছিল, যে আমার সাথে বেঈমানী করার চিন্তা নিজের মাথাতেও আনতো না। আর শুভর কথা কী বলবো? ও এখন কোথায় আছে? কী অবস্থায় আছে আমরা কেউ কিচ্ছু জানি না।’

তারিন চুপ থেকে কিছু একটা ভাবল। তারপর বলল, ‘আমার মনে হয় শুভকে রিফাত মেরে ফেলেছে। ও একে একে সবাইকেই মারবে। প্রথমে শুভকে মেরেছে, তারপর তোমার উপর এট্যাক করেছে। কিন্তু আশিকের ভাগ্য খারাপ ছিল বলে তোমার জায়গায় ওকে জীবন হারাতে হলো।’

- এখন থেকে আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে।

তারিন অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি কী এখন এখানেই থাকবে, নাকি ঢাকায় ফিরে যাবে।’

- এখানে একটা কাজে এসেছিলাম। কিন্তু এখন আর সেটার প্রয়োজন হবে না। তাই ভাবলাম ঢাকায় ফিরে যাবো। তুমি আমার সাথেই চলো।

- ওকে।

তারিন আর অয়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। অয়ন গাড়ি নিয়ে এসেছিল, সেটা দিয়েই ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।

(চলবে....)

‘প্রতিশোধ’ এর ৫ম পর্ব পড়ুন- ধারাবাহিক গল্প : ‘প্রতিশোধ’

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড