• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘প্রতিশোধ’ গল্পের ৫ম পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : ‘প্রতিশোধ’

  রিফাত হোসেন

২২ জুন ২০১৯, ১২:১৪
গল্প
ছবি : প্রতীকী

বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এলো নিঝুম। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এদিক ওদিক না তাকিয়ে ডিরেক্ট নিজের বাড়িতে চলে এলো। ড্রয়িংরুমে বসে ছিল মিসেস রোকসানা। নিঝুম মিসেস রোকসানার পাশে গম্ভীরমুখে বসল। মিসেস রোকসানা নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিরে কী হয়েছে? মুখটা গম্ভীর করে রেখেছিস কেন? আর কোথায় গিয়েছিল?’

- এক ফ্রেন্ড এর বাড়িতে গিয়েছিলাম। আচ্ছা মা, ভাবী কোথায়?

- সে তো কোন এক ফ্রেন্ড এর বাড়িতে দাওয়াতে যাবে বলল।

- বেরিয়েছে তো সকালে, এখনো বাড়িতে আসেনি?

- আজকে আসবে না বলল। রাতে নাকি ওই ফ্রেন্ড এর বাড়িতেই থাকবে।

বেশ অবাক হলো নিঝুম। হঠাৎ করে তারিন কোন ফ্রেন্ড এর বাড়িতে যাবে তা কিছুতেই ভেবে পায় না ও। চিন্তাটা যেন আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। একটা ভুলের জন্যই সব উল্টো পাল্টা হয়ে গেল।

নিঝুম আবার বলল, ‘যেই ফ্রেন্ড এর বাড়িতে গেছে, উনার কোন নম্বর আছে তোমার কাছে?’

- উনার নম্বর আমার কাছে থাকবে কীভাবে?

- একা একটা মেয়েকে তুমি এভাবে ছেড়ে দিলে?

- আরে এর আগেও তো তারিন ফ্রেন্ড এর বাড়িতে গিয়েছিল।

- মার্কেটে বা আশেপাশে কোথাও গেলে ভাবী একাই যেতো সবসময়। কিন্তু কোনো ফ্রেন্ড এর বাড়িতে গেলে সাথে আমিও যেতাম। কিন্তু এবার তো আমাকে কিছু বলল না। আর আগে কখনো কোনো ফ্রেন্ড এর বাড়িতে রাত থাকেনি ভাবী। আজ হঠাৎ কোন ফ্রেন্ড এর বাড়িতে দাওয়াতে গেল যে, সেখানে রাত থাকতে হবে।

- আমি বাবা এত কিছু জানি না। ও বলল একাই যেতে পারবে। তাই আমি আর না করিনি।

- ঠিক আছে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি কোন ফ্রেন্ড এর বাড়িতে গেছে।

নিঝুম আর কোনো কথা না বলে নিজের ঘরে চলে এলো। বিছানায় বসে ভাবতে লাগল তারিনের কথা। নিঝুম ভেবেছিল থানা থেকে বেরিয়ে তারিন বাড়িতে চলে আসবে। কিন্তু না, তারিন বাড়িতে না এসে অন্য কোথাও গেছে।

মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা নম্বরে ম্যাসেজ করল, ‘ভাবী তার কোনো এক ফ্রেন্ড এর বাড়িতে গেছে। আর মায়ের কাছে বলে গেছে আজ রাতে নাকি বাড়িতে ফিরবে না। হঠাৎ করে কোথায় গেল ঠিক বুঝতে পারছি না আমি।’

কোনো রিপ্লাই না আসলেও নিঝুম নিশ্চিত ম্যাসেজটা দেখেছে ওপাশের মানুষটা। তাই নিশ্চিন্তে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। চারিদিকে একটু আকটু অন্ধকার। শহর থেকে বেশ অনেকটা দূরে আছে এখন তারিন। দুপুর পেড়িয়ে বিকেলে, তারপর বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা এখন। অবশেষে তারিন গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে। বাস থেকে নেমে পশ্চিম দিকে হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ থেমে গেল তারিন। এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সামনের এক’তলা বাড়িটার দিকে। তারিনের বাবা-মা এখানে থাকে। একসময় তারিন ও থাকতো এখানেই। তবে আজ ওর গন্তব্য এখানে নয়। আজ নিজের বাড়িতে আসেনি তারিন। এখানে দাঁড়িয়ে আর সময় নষ্ট না করে আবার সামনের দিকে হাঁটতে লাগল। আরও দু’মিনিট হাঁটলে একটা বাজার পড়বে। তারপর ছোটখাটো একটা জঙ্গল। তারপরই অয়নের নিজস্ব বাড়ি। সেখানে এখন অয়নের বন্ধুরা থাকে। আর অয়ন ঢাকায় থাকতো।

বাজারের কাছে গিয়ে তারিন আবার থেমে গেল। তারিনের পাশের চায়ের দোকানে বসে আছে বৃদ্ধ বয়সী এক লোক, যে ওর বাবা। আজ এতদিন পর নিজের বাবার এত কাছে এসেও তার সাথে কথা বলতে পারছে না তারিন। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে শুধু দেখছে লোকটাকে। তারিনকে এখানে কেউ চিনতে পারবে না, কারণ ও কালো বোরকা পড়ে এসেছে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারিন আবার চলতে শুরু করল। এলাকার শেষ প্রান্তে অয়নের বাড়ি। বাড়ির সামনে গিয়ে দরজায় কলিংবেল বাজাল তারিন। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে দরজা খুলল। ছেলেটার নাম আবির, অয়নের বন্ধু। বোরকা পরিহিত এই তারিনকে আবির চিনতে পারেনি। তাই কড়া গলায় বলল, ‘কে আপনি? এখানে কী চাই?’

- আগে বল অয়নকে মেরেছে কে?

আবির অবাক দৃষ্টিতে তারিনের দিকে তাকিয়ে রইল। তারিন মুখ থেকে বোরকার কাপড় সরিয়ে বলল, ‘কী হলো উত্তর দাও আমার প্রশ্নের।’

আবির দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে বলল, ‘তুমি এখানে কীভাবে এলে? কেউ চিনে ফেলেনি তো?’

তারিন ভিতরে যেতে যেতে বলল, ‘আমাকে চিনতে পারা এত সোজা নয়। এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। ’

- আমি জানি না অয়নকে মেরেছেকে।

তারিন বলল, ‘সত্যি করে বল অয়নকে মেরেছেকে? আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টা করো না বলে দিলাম। আর আশিক কোথায়?

- আশিক কালকে অয়নের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল ঢাকায়। তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই ওর।

রেগে গিয়ে তারিন বলল, ‘হোয়াট? এইসব কী বলছ তুমি? অয়ন তো কিছু বলেনি আমাকে। আর তোমরাও তো কিছু বলোনি।’

- আসলে অয়ন নিজেই বলেছিল এটা তোমাকে যেন না বলি।

তারিন ঠাসসস করে আবিরের গালে একঠা থাপ্পড় মেরে দিলো। রাগী কন্ঠে আবির বলল, ‘তোমার সাহস হলো কীভাবে আমাকে গায়ে হাত তোলার?’

- আর একটা কথা বললে ডিরেক্ট গিয়ে পুলিশের কাছে বলে দিবো তোমরাই অয়নকে মেরেছো।

অয়নের আরেক বন্ধু নিলয়, তারিনের পিছনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পৈশাচিক এক হাসি দিয়ে বলল, ‘সেই সুযোগ আর তুমি পাবে না সুন্দরী। কারণ এই পৃথিবীতে আজই তোমার শেষ দিন।’

- তোমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমিকে? অয়নের সাথে বেঈমানী করছ তোমরা।

- তুমি নিজের স্বামীর সাথে বেঈমানী করে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে বিছানায় যেতে পারো। আর আমরা বন্ধুর গালফ্রেন্ড এর শরীর ভোগ করতে চাইলেই সেটা বেঈমানী হয়ে যায়। এতদিন অয়নের জন্যই তোমার মতো একটা সুন্দরীকে হাতের কাছে পেয়েও একবার ছুঁয়ে দেখিনি। কিন্তু অয়ন আর এখন বেঁচে নেই। তাই আজ আর তোমাকে ছাড়ছি না আমরা। আজ সারারাত তোমার শরীর ভোগ করব আমরা দু’জন। তুমি শুধু দেখবে আর কাঁদবে, কিচ্ছু বলতে পারবে না।

তারিনের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। এখন মনে হচ্ছে এখানে একা একা এসে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। তারিন বুঝতে পারেনি অয়নের বন্ধুরা ওর সাথে এইরকম কিছু করার চিন্তা মাথাতে আনতে পারে।

কান্না করতে করতে তারিন বলল, ‘প্লিজ আমাকে যেতে দাও। আমি কথা দিচ্ছি পুলিশের কাছে কিছু বলব না। প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে।’

আবির কিছু না বলে হাসতে লাগল। একটু একটু করে তারিনের কাছে আসতে লাগল আবির। একসময় খুব কাছে চলে আসলো। টান দিয়ে তারিনের বোরকাটা মাঝখান থেকে ছিড়ে ফেলল। জামাটা টান দিতে যাবে, তখনই হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল নিলয়। দরজার দিকে তাকাতেই সবার চোখে যেত কপালে ওঠে গেল। থরথর করে কাঁপতে লাগল আবির। মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে নিলয়। তারিন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আর পলকহীন চাহনিতে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

(চলবে....)

‘প্রতিশোধ’ এর ৪র্থ পর্ব পড়ুন- ধারাবাহিক গল্প : ‘প্রতিশোধ’

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড