• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘ডায়েরি’-এর ৬ষ্ঠ পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : ডায়েরি

  তাবাস্সুম মুন

১৯ জুন ২০১৯, ১৬:১২
উপন্যাস
উপন্যাসছবি : আপসারা ওরিন (নিশা)

এই প্রতিবেশীরাই তার জীবনটাকে পাল্টে দিবে তা কি সে জানতো? সামনে যে তার কি হতে যাচ্ছে হয়তো সেও জানে না। চাঁদ এর মনটা আজ খুব ভালো। বাসায় ঢুকার সাথে সাথে মা চাঁদের নতুন জামা দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে নতুন জামা কই পাইলি।’

চাঁদ বলে, ‘আমি যেখানে চাকরী করি সেখানের বসের আম্মু অনেক ভালো সে কিনে দিয়েছে।’

- যাক আমার মেয়েটা তাহলে একটা ভালো জায়গায় চাকরি পেয়েছে।

- জ্বি মা, অনেক ভালো জায়গায়। আন্টি কি বলেছে জানো আমার পড়ালেখা শুরু করতে বলেছে। আমি আজ অনেক খুশি মা। তিয়ান কোথাই ওদের ডাকো আজ আমার ছুটি আমি বাসায় থাকবো। আজ অনেক কিছু এনেছি।

সকালে চাঁদকে বাসায় নিয়ে আসার আগে যখন শুনেছে চাঁদের আরও দুটো ভাইবোন আছে তখনি আকাশ কিছু জিনিস শপিং করে আনে। আর বলে যাতে বাসায় বলে আজ ছুটি। রোকসানা বেগম আসার সময় চাঁদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন যাতে বাসায় খাবারের কোনো কমতি না হয়।

চাঁদ আজ অনেক খুশি। এতদিনের চিন্তা ভাবনা আজ কিছুটা হলেও কমেছে। আজ রাতে তার অনেক ভালো ঘুম হওয়ার কথা কিন্তু বারবার সকালের কথা মনে পড়ছে। ছেলে মানুষের ছোঁয়া যে এতটা মনে ধরার মতো তা আজ চাঁদ বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আগেও তো কাজিনদের টাচ করেছে আজ কেনো এতটা ভাবাচ্ছে আমাকে। লোকটার চেহারাটা কি সুন্দর। নারে বাবা বড়লোক মানুষদের নিয়ে ভাবতে নেই। আজ এত কিছু করেছে এটাই বড় কিছু।

আকাশের চোখে ঘুম নেই আজকে সারাটাদিন এলোকেশীকে না দেখে দিনটা কেমন কেটেছে শুধু সেই জানে। কিন্তু এইটা ভেবে আবার মনকে শান্ত রাখছে যে কাল থেকে তো আমার আশেপাশেই থাকবে তখন মন ভরে দেখা যাবে।

পরদিন সকাল চাঁদ রোকসানার দেওয়া আরেকটা নতুন কুর্তি পড়ে নেয়। আসলে চাঁদ তো জানে না জামাগুলো আকাশ দিয়েছে। চাঁদ আজ এত খুশি মনে হয় ঈদেও মানুষ এতটা খুশি হয়না। চাঁদ সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে হাটা শুরু করে। গলির মাথায় আসার সাথে সাথে একটা গাড়ি তার সামনে অনেক জোরে ব্রেক করে যার কারণে চাঁদ ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে থাকে। গাড়িটা আর কারো না আকাশের। জোড়ে বাতাসের কারণে চাঁদ এর চুলগুলো বাধাহীনভাবে উড়তে থাকে যা আকাশ দেখে পাগলপ্রায়। আকাশ লুকিং গ্লাস নামিয়ে চাঁদকে বলে, এইযে ম্যাডাম হেঁটে কই যাচ্ছেন।

চাঁদ আকাশের গলার আওয়াজ শুনে চোখ মেলে তাকায় আর খুব অবাক হয়। আর বলে, ‘আপনি এখানে!’

হুম, আমি নয় তো কে থাকবে। তোমার বয়ফ্রেন্ড। আর কখনো যদি তোমাকে রাস্তায় হাঁটতে দেখছি খবর আছে। আমি তো দূর থেকেই দেখছিলাম গলির ছেলেগুলো কিভাবে তাকিয়ে আছে। কখনো যদি দেখেছি একা রাস্তায় বের হতে খবর আছে। তোমাকে দেখার অধিকার কারো নেই শুধু....। একটু কি দাঁড়ানো যেতো না আমার জন্য, মা বলেনি আমি তোমাকে নিতে আসবো।

চাঁদ অবাক হয়ে আকাশের কথা শুনে যাচ্ছে। আর বলে, ‘শুধু কি? আর আমি তো একাই হাঁটি, মেয়ে মানুষ তো লোকে তাকাবেই তাই বলেকি আমি রাস্তায় হাঁটবোনা?’

আকাশ রেগে বলে, ‘এইটুকু মেয়ে আমার মুখের উপর কথা বলা হচ্ছে তাইনা। তাকাবেনা বললাম আমি, কেউ তাকাবেনা তোমার দিকে আর কখনো এইসব বললে খবর আছে গাড়িতে বসো। চাঁদদের গলির দারওয়ান সব শুনে এবং দেখে ‘

চাঁদ আকাশের রাগ দেখে ভয়ে গাড়িতে উঠে। সারা রাস্তা আকাশ কোনো কথা বলেনি রাগে। চাঁদ আড়চোখে আকাশকে দেখে যাচ্ছে।

বাসার কাছে এসে চাঁদ নেমে পড়ে, আকাশ অফিসে চলে যায়। বাসার ঢুকার সাথে সাথে রোকসানা বেগম চাঁদকে তার পাশে বসিয়ে গল্প করতে শুরু করেন।কাজের লোকগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। সবাই চাঁদ এর সাথে গল্পে মেতে উঠেছে। চাঁদ এতদিন পর অনেক খুশি সবাই মামনি বলে আদর করে কথা বলছে। রোকসানা বেগম চাঁদকে আকাশ সম্পর্কে সব বলছেন। আকাশ খিচুরি খেতে পছন্দ করে, কফিতে চিনি কম লাগবে, তার কথার সাথে কথা বললে সে রাগ করবে, মেয়েদের সাথে খুব কম কথা বলে। ওর ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

চাঁদ বলে, আচ্ছা আন্টি উনি কি অনেক জেদি?

রোকসানা বেগম বলেন, হুম অনেক। কেনরে তোর সাথে কি রাগ করেছে?

- না না আন্টি এমনি ওনাকে দেখে রাগি মনে হয়তো তাই।

আচ্ছা এই কথা, শুন ওর সাথে বুঝেশুনে কথা বলবি। আর যা চায় তা এনে দিবি। ও এমনিতে কাউকে কিছু করতে দেয় না তারপরও তুই দেখবি। কারণ, এখন থেকে এ বাসাটা তোর। আমার সাথে গল্প করবি আর সবার দেখাশুনাও করবি। সুতরাং সব তোর জানতে হবে।

ঠিক আছে আন্টি। এখন বলুন কি খাবেন আমি বানিয়ে দিবো। আমি তো বেশি কিছু পারিনা শুধু কফি আর রং চা বানাতে পারি। আপনি কোনটা খান।

আরে বাবা তুই তো একবারে আসল জিনিসটা পারিস। আমি রং চা খুব পছন্দ করি, কিন্তু আকাশ শুধু কফি বানাতে পারে। আমি নিজে বানাতেও সবসময় পারিনা অসুস্থও থাকি তাই বানাতে পারিনা। এখন মনে হয় আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা আমার মেয়েটাই বানিয়ে খাওয়াবে। যা এখনি দৌড়ে যাবি চটজলদি বানিয়ে আনবি বুঝলি আর লেবুটা একটু বেশি করে দিস।

আচ্ছা আন্টি আমি এখনি যাচ্ছি। চাঁদ রান্নাঘরে এসে চাপাতি খুঁজছে তখন কাজের লোক ঝর্না এসে বলে, মা তুই এখানে কি করিস।

- এই তো খালা চা বানাবো। বলো তো চাপাতি কোথায়।

- ওমা তুই চা বানাতে পারিস! আপায় তো আমার হাতের চা খাইতেই চায়না। কয় দুনিয়ার সব থেইকা খারাপ চা বলে আমি বানাই। চা বলে আমি বানাইতেই পারিনা। তয় তুই আজকা বানাইলে আমারেও দিস দেখি কেমনে চা বানায়।

- হা হা, কি বলো খালা, আচ্ছা এখন সব খুঁজে আমাকে দেও তোমাদের জন্য আমি চা বানাবো আর আমার জন্য কফি।

- চাঁদ চা আর কফি বানিয়ে রোকসানা বেগম এর রুমে এসে দেখেন তিনি বই পড়ছেন। চাঁদকে দেখে কাছে বসান। আর বলেন দে তোর চা।

- ধরেন আন্টি।

- এই মেয়ে আমাকে কি তোর পর মনে হয়?

- না তো আন্টি কেনো?

- তাহলে আপনি করে কেনো ডাকছিস। তুমি করে বলবি।

- আচ্ছা আচ্ছা এই কথা। আচ্ছা আমার লক্ষ্মী আন্টি ধরো চা খেয়ে বলো কেমন হয়েছে। আর ঝর্না খালা এখানে এসো একসাথে খাবো।

রোকসানা বেগম বলেন, তুই খাবি না।

- খাবো তো আমি চা খেতে পারিনা। তবে বানাতে পারি বাবা অনেক পছন্দ করতেন। চা তাই শিখা হয়েছে, আমি কফি বানিয়েছি দেখো। চাঁদ তার বাবার কথা মনে করে চোখ মুছে নেয়।

রোকসানা বেগম বলেন, ‘এই পাগলি বাবার কথা কি মনে পড়ছে? চিন্তা করিস না মা তোর বাবার চিকিৎসা আমি করাবো।আর কাদবি না। আমি চোখের পানি পছন্দ করি না।’

ঝর্না বলে, ‘আরে মারে কাঁদিস কেনো আমাগো আকাশ বাবায় অনেক ভালা দেখবি তোর বাবারে ঠিক সুস্থ করে তুলবে।’

রোকসানা বেগম চাঁদকে খুশি করার জন্য চা মুখে দিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলেন, ‘চাঁদ কি খাওয়াইলি এটা!’

চাঁদ ভয় পেয়ে বলে, ‘আন্টি ভালো হয়নি। দাওতো দেখি। বাবা তো এভাবেই পছন্দ করতো’

- আরে পাগলি, অনেক মজা হয়েছে তাই তো বললাম এই কথা। এমন করে প্রতিদিন একটা না দুটে চা দিবি আমায়।

ঝর্না বলে, ‘হ আফা মাইয়াডায় চাডা ভালা বানায়। এখন শিখতে হইবো ওর কাছ থেকে আমারে। তয় আমি উঠি এহন দুপুরের খাবার বানাতে হইবো। চাঁদ মামনি আমনে কি খাইবেন কন আমি আইজকা আমনের কি কি পছন্দ তার থেইকা কিছু বানামু’

- হুম চাঁদ সব বল। এখন থেকেতো এইখানেই থাকবি তোর সব পছন্দ অপছন্দ সব বলবি। আর নিজের প্রতি খেয়াল না রাখলে কিন্তু খবর আছে।

- আচ্ছা বলতেছি আমি বেশি কিছু না, আলু ভর্তা ডাল আর চিকেন পছন্দ করি এখন ঝর্না খালা তুমি এইখান থেকে যা বানাবে আমি তাই খাবো।

- আইচ্ছা আমি যাই।

চাঁদ পুরো ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। বাড়িটা বিশাল, অনেক জিনিস। একটা ঘরে ঢুকে চাঁদ এতটাই খুশি হয় লাফ দিয়ে উঠে তা হলো বুকশেল্ফ। চাঁদ সবসময় এমন একটা লাইব্রেরী চাই তো যেখানে তার পছন্দের লেখকদের বই থাকবে। সে বুকশেল্ফটাকে ছুঁয়ে দিয়ে কয়েকটা বই হাতে তুলে বইয়ের ঘ্রাণ নিতে থাকে। কতদিন পর সে বই ধরছে, সে অলরেডি বই পড়া শুরু করছে।

আকাশ অফিসে মন দিতে পারছেনা তার এলোকেশী কি করছে শুধু দেখতে মন চাচ্ছে। তাই সে ল্যাপটপে সিসিটিভি অন করে সব রুমে দেখে, কোথাও পায়না সব খুঁজে দেখে চাঁদ লাইব্রেরীতে বসে বইয়ে ডুবে আছে। চাঁদকে দেখে আকাশের মুখে হাসি ফুটে উঠে।

আকাশ অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি বাসায় এসে পড়ে। এসে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুম থেকে এসে দেখে বেডের কিনারে নীল কালারের টি-শার্ট আর ট্রাউজার রাখা। আকাশ খুব অবাক হয়, এইগুলো কে রাখলো। আকাশ ফ্রেশ হয়ে বের হতে যাবে তখনি চাঁদ কফি নিয়ে আকাশের রুমে ঢুকে। চাঁদ বলে, ধরুন আপনার কফি।

চাঁদ দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বই পড়তে শুরু করে। যখন দেখে আকাশের গাড়ি ঢুকছে তখনি রান্না ঘরে ঢুকে কফি নিয়ে আসে।

আকাশ বলে, ‘তুমি কিভাবে জানলা যে আমি কফি খাই এখন!’

- আসলে আন্টি বলেছিলো আপনি বাহির থেকে এসে নিজে কফি বানান। আর এখন তো আমি আপনাদের এখানে কাজ করবো সুতরাং সবার সব কিছু খেয়াল রাখাতে হবে।

- কি বললে আবার বলো, তোমাকে এখানে কাজে রেখেছেকে বলেছে। আমার বাসায় অনেক কাজের লোক আছে মায়ের নাকি মেয়ে লাগবে তাই সে তোমাকে তার সাথে রেখেছে। এটাকে যদি আর কখনো তুমি কাজের লোকের সাথে মিলাও খবর আছে। বুঝছো? ধমক দিয়ে আকাশ চাঁদ এর হাত থেকে কফি নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।

চাঁদ আকাশের ধমক শুনে ভয় পেয়ে কান্না করে দেয়। কারণ চাঁদকে তার বাবা মা কখনো এভাবে ধমক দেয়নি। সুন্দর করে বললে কি হতো। চাঁদ সোজা রোকসানা বেগম এর রুমে চলে যায়। রোকসানা বেগম বলেন, ‘কিরে কিছু হইছে তোর?’

- আন্টি তোমার ছেলেটা এমন কেন ধমক কেন দেয় এত?

- হা হা হা, এই জন্য তোর খারাপ লাগছে? আরে পাগলী ছেলেটা এমনি সবসময় একা বেশি থাকতো তো তাই সে একরকম জেদি। কয়েকদিন ওর সাথে সাথে দেখেশুনে চলবি ঠিক দেখবি ও আর তোর সাথে মন খারাপ করবেনা। এখন মন খারাপ করিসনা। নাহলে আমি রাগ করবো।

- আচ্ছা আচ্ছা সরি আমি মন খারাপ করবো না। এখন রাত হয়ে যাচ্ছে বাসায় যেতে হবে। মা চিন্তা করবে। আর ভাইবোনগুলোকে কাল স্কুলে নিয়ে যেতে হবে, ওদের কাল বেতন দিতে হবে।

- আচ্ছা, তুই ছিলি আর সারাদিনটা আমার কিভাবে যে গেছে বুঝতেই পারিনাই। এতদিন একা থাকতে থাকতে দিনই যেতো না। এখন যা কাল তাড়াতাড়ি আসবি। আর একা যাবিনা আকাশ দিয়ে আসবে।

- আচ্ছা আন্টি আমি যাই। আর ওনাকে আমি কিভাবে বলবো আমার ভয় লাগে।

- আরে পাগলি তুই রেডি হ, ও এমনি নিয়ে যাবে।

আকাশ বারান্দায় দাড়িয়ে মন খারাপ হয়ে যায় তখন তো মেয়েটাকে ভালোভাবেই বললে হতো। কেন যে এত রাগ উঠে বুঝে পাইনা। আকাশ দেখে চাঁদ নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তখনি আকাশের মনে পড়ে এখন তো আটটা বাজে চাঁদ এর যাওয়ার সময়। সে তো ভুলেই গেছিলো মেয়েটা মনে হয় তার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে হয়তো কাছে আসছে না। তখনি দারওয়ান ফোন দেয় আর বলে, ‘ভাইজান আপামনি তো খোঁড়াইয়া রইছে আপনের জন্য।’

- আচ্ছা ওকে দাঁড়াতে বল আমি আসছি। আকাশ চাঁদকে নিয়ে গাড়িতে করে বাসায় দিতে যায়। আকাশ গাড়ি চালিয়ে হঠাৎ বলে উঠে, স্যরি।

- চাঁদ আচমকা একথা শুনে বলে, জ্বি কিছু বলেছেন।

- জ্বি বলেছি। স্যরি বলেছি। আসলে আমার কেনো জানি হঠাৎ হঠাৎ রাগ উঠে।

- আচ্ছা আমি রাগ করিনি। আমি এত সহজে রাগ করিনা।

- আচ্ছা শুনো কাল সকালে আমি তিয়ানদের স্কুলে নিয়ে যাবো, না করতে পারবে না।

- আপনি যাবেন?

- কেনো যেতে পারিনা?

- আসলে আমি তো ওদের বেতন দিতে যাবো আপনি গিয়ে কি করবেন?

- ঘোড়ার ঘাস কাটবো। যাবো বলেছি যাবো। এতো প্রশ্ন আমার পছন্দ না বুঝলে। যাও এসে পড়েছি। কাল ঠিক নয়টা আমি আসবো যদি তোমাকে তোমার বাসার গেটের সামনে ছাড়া অন্য কোথাও দেখি খবর আছে।

চাঁদ চুপচাপ বেরিয়ে যায়। আকাশ মুচকি হেসে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। চাঁদদের দারওয়ান আজ একা আকাশকে দেখেনি বরং আরো কয়েকজনকে নিয়ে দেখেছে। আসলে একটা মেয়ের সাথে বিয়ের আগে ছেলের সাথে দেখলে তাকাবে-ই তো।

পরদিন সকালে তিয়ান আর অরুণিমা অনেক খুশি আজ আপু তাদের সাথে স্কুল যাবে। তারা সবসময় তার আপিকে ভালোবাসে সবসময় চাইতো আপি স্কুলে যাক।

বাড়ির গেটের সামনে আকাশের গাড়ি এসে থামে, আকাশ সবাইকে গাড়িতে উঠতে বললে, তিয়ান আর অরুণিমা তার আপির দিকে তাকায় চাঁদ ইশারা করলে তারা গাড়িতে উঠে পড়ে। আকাশ সারা রাস্তা দুজনের সাথে গল্প করেছে। খুব জমেও গিয়েছে তাদের। স্কুলে এসে আকাশ তিয়ান আর অরুণিমার পুরো বছরের টাকা দিয়ে দেয় চাঁদ কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে আকাশ চোখ রাঙিয়ে থামিয়ে রাখে। আকাশ তিয়ানদের আজ শপিং এ নিয়ে যাবে তাই ছুটি নিয়ে আসে। প্রিন্সিপাল আকাশকে দেখে অনেক খুশি হয় কারণ এতো বড় একজন বিজনেসম্যান তার স্কুলে। তাই কোনো কথা না বলেই ছুটি দিয়ে দেয়।

আকাশ সবাইকে যমুনা ফিউচার পার্কে নিয়ে আসে চাঁদ শুধু চুপচাপ দেখছে। লোকটার প্রতি কিছুটা হলোও মায়া জন্মেছে কারণ চিনা নেই জানা নেই একটা মেয়েকে তার পরিবারের সাথে পুরো মিশে যাচ্ছে।ভাইবোনগুলো কতো খুশি। করুকনা লোকটা কারণ আমি ভাইবোনগুলোকে কিছুই দিতে পারিনি। ওনার জন্য হলেও বাচ্চা গুলো একটু আনন্দ পাক।সারাদিন আকাশরা অনেক আনন্দ করেছে।ছেলেরা বাচ্চাদের সাথে এতো মিশতে পারে আকাশকে না দেখলে বুঝসই যেতো না। শপিং করে আকাশ চাঁদদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে।

বাসায় এসে তিয়ান আর অরুণিমা সব মাকে বলে। আকাশের কথা বলে তারা অনেক খুশি।আকাশ ভাইয়াকে তাদের অনেক ভালো লেগেছে।আকাশ সবার জন্য শপিং করেছে।চাঁদ সবার মুখে হাসি দেখে খুব খুশি।

এভাবে চলে যায় কিছুদিন এর মাঝে আকাশ চাঁদ এর নামে একাউন্ট করে, যা চাঁদ জানেনা। আকাশ চায় তার কেশবতীকে এই একাউন্টটা উপহার দিবে। যাতে মেয়েটা নিজেকে ছোট না মনে করে। তার জবের টাকা সেটাতে দিবে সাথে আকাশ আরও যোগ করে দিবে। এরই মধ্যে আকাশ চাঁদ এর জন্য বই কিনে আনে এডমিশন এর জন্য। চাঁদ আকশদের বাসায় বসেই পড়ে। রোকসানা খুব খেয়াল রাখছেন মেয়েটার। কিন্তু চাঁদ একটু একটু করে আকাশের মায়া পড়ছে।এখন তো আকাশকে দেখতে তার কেনো জানি এতো ভালো লাগে। আকাশ আসলেই খুব কম কথা বলে কিন্তু নীরবে আকাশের দেখাশুনাও করে। আকাশ তো নিজে এতদিনে বুঝে গেছে সে চাঁদকে পছন্দ করে কিন্তু বলবে কি করে। তাই ভেবে পাচ্ছেনা।

এদিকে চাঁদ এর বাবাকে আকাশ ডাক্তার এর কাছেও নিয়ে গেছেন। চাঁদ এর মাতো সেই খুশি। অফিসের বস এতো ভালো হয় তার জানার বাহিরে। তবে আকাশের চাঁদ এর প্রতি এতো খেয়াল রাখাটা চাঁদ এর মায়ের চোখে লেগেছে। মেয়েটা যতদিন বাবার সাথে হাসপাতালে ছিলো আকাশও সাথে ছিলো। খাওয়া দাওয়ার সব খেয়াল রাখছে।

ডায়েরি উপন্যাসটির ৫ম পর্ব পড়ুন- ধারাবাহিক উপন্যাস : ডায়েরি

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড