• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘প্রতিশোধ’ গল্পের প্রথম পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : ‘প্রতিশোধ’

  রিফাত হোসেন

১৭ জুন ২০১৯, ১০:১১
উপন্যাস
ছবি : প্রতীকী

তারিন কাঁচের জগটা হাতে নিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের স্বামীর মাথায় আঘাত করল। গলগল করে রক্ত পড়তে লাগল তারিনের স্বামীর মাথা দিয়ে। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তারিনের। চিৎকার করতে করতে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দৌঁড়ে শাশুড়ির ঘরের দিকে গেল। শাশুড়ির ঘরের বাইরের দাঁড়িয়ে দরজা জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগল।

তারিনের চিৎকারের শব্দে পুরো বাড়ি ততক্ষণে নিদ্রাহীন হয়ে গেছে। মিসের রোকসানা দরজা খুলে তারিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়। আরও অবাক হয় তারিনের চোখ দু’টো টকটকে লাল হয়ে আছে দেখে। তারিনের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে মিসেস রোকসানা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। মুখ দিয়ে কোনো কথা বলা কিংবা চিৎকার দেওয়ার মতো শক্তি বা সাহস তার নেই এখন।

মিস্টার জয়নাল বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন। তারপর উৎকন্ঠিত স্বরে বললেন, ‘একি বউমা, তুমি এত রাতে এখানে কী করছ? আর এভাবে চেঁচামেচি করছ কেন?’

কান্নাস্বরে তারিন বলল, ‘আপনার ছেলে আমাকে খুন করার জন্য এসেছিল বাবা। আমি কোনোরকমে নিজের জীবন বাঁচাতে ঘর থেকে পালিয়ে এসেছি।’

তারিনের কথা শুনে মিস্টার জয়নাল এবং মিসেস রোকসানা, দু’জনেই রিতীমত ‘হা’ হয়ে গেছেন। চোখে তীক্ষ্ণতা মিসেস রোকসানার। মিস্টার জয়নাল রাগী কন্ঠে বললেন, ‘বউমা, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? গত ৬মাস আগে আমার ছেলে মারা গেছে। আর তুমি বলছ, ও তোমাকে খুন করার জন্য এসেছিল। এই মাঝরাতে আমাদের সাথে কি মজা করছো তুমি?’

তারিন চুপ হয়ে গেল। কোনো প্রতিক্রিয়া না করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কারণ শ্বশুর মশাই যা বলছেন তার সবই যে সত্যি। ছয়মাস আগে রিফাত মারা গেছে। কিন্তু তারিন কীভাবে তাঁদের বুঝাবে কিছুক্ষণ আগে রিফাত ওর ঘরে এসেছিল।

হঠাৎ তারিনের মনে পড়ল রিফাতের মাথায় ও আঘাত করেছে। নিশ্চয়ই এখনো রিফাত ওর ঘরে পড়ে আছে। রিফাতের সাথে কথা ও বলেছে তারিন। সবাইকে সত্যিটা বিশ্বাস করানোর এই একটাই উপায়া আছে।

অস্থির কণ্ঠে তারিন বলল, ‘আপনারা আমার সাথে আসুন। যে আমাকে মারার জন্য এসেছিল, সে এখনো ঘরেই আছে কারণ আমি ওর মাথায় অনেক জোরে আঘাত করেছি। যার কারণে ও হয়তো অজ্ঞান পড়ে আছে ঘরে।’

- তাহলে বলছ কেন রিফাত তোমাকে খুন করতে এসেছে? সে তো অন্য কেউ ও হতে পারে।

- বাবা এখন এতকিছু বলার মতো সময় নেই। ওই আমাকে বলেছে ও রিফাত। তাছাড়া হুবহু রিফাতের কণ্ঠের সাথে মিল ছিল ওর কণ্ঠস্বর। আমি ভুল বলছি না ঠিক বলছি, সেটা আমার ঘরে গেলেই বুঝতে পারবেন।

বিরক্তিকর কণ্ঠে মিস্টার জয়নাল বললেন, ‘ঠিক আছে চলো দেখি কে আছে তোমার ঘরে।’

তারিন নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল। মিস্টার জয়নাল এবং মিসেস রোকসানা তারিনের পিছু পিছু যেতে লাগল। সাথে আছে রিফাতের বোন, এবং কাকা-কাকি।

তারিন ঘরে গিয়ে লাইটটা অন করল। কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। চোখ কপালে ওঠে গেল তারিনের। কিছুক্ষণ আগেই ও রিফাতের মাথায় আঘাত করেছে। আর রিফাত এখানে পড়ে ছিল।

মিসেস রোকসানা তারিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কোথায় রিফাত? কেউ তো নেই এই ঘরে?’

- বিশ্বাস করুন মা। আমি মিথ্যা বলছি না। এখানেই আমি শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ রিফাতের কণ্ঠ শুনে শোয়া থেকে ওঠে বসলাম। পুরো ঘর অন্ধকার ছিল তখন। আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল রিফাত। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আবছায়া আলোয় তার মুখটা অস্পষ্ট থাকলেও আমি দেখেছি কালো ছায়া আকৃতির কেউ একজন পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তাকে বললাম, কে আপনি?

আমার কথা শুনে তখন কালো ছায়া আকৃতির লোকটা বলছিল আমি তোমরা স্বামী রিফাত।

এইটুকু বলেই লোকটার কথা বলা থেমে যায়। তারপর পিস্তলটা আমার দিকে ঘুরালো। তখনই আমি পাশে থেকে কাঁচের জগটা হাতে ওর মাথায় মারলাম। ও একটা চিৎকার দিয়ে সাথে সাথে ফ্লোরে পড়ে গেল। আর আমি সেই সুযোগে ঘর থেকে বেরিয়ে আপনাদের ঘরে গেলাম।

- তাহলে কোথায় গেল ও? তাছাড়া তুমি বলছ ওর মাথায় আঘাত করেছ, তাহলে অবশ্যই রক্ত পড়বে ওর মাথা দিয়ে। কিন্তু আশেপাশে তো কোনো রক্তের দাগ দেখতে পাচ্ছি না।

চিন্তিত কণ্ঠে তারিন বলল, ‘আমিও সেটাই ভাবছি রিফাত এত তাড়াতাড়ি কোথায় গেল? আর আশেপাশে রক্তের কোনো চিহ্ন নেই কেন? কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনারা, আমি মিথ্যা বলছি না। সত্যিই আমি জগ দিয়ে ওর মাথায় মেরেছি। জগটা ভেঙে গিয়েছিল। এখানেই ফেলেছিলাম জগটা আমি।’

- কই সেই জগটা দেখি।

তারিন এদিক সেদিক খুঁজেও জগটা পেলো না। তাই বলল, ‘এই টেবিলেই ছিল জগটা। এখান থেকেই ওকে মেরেছিলাম আমি।’

মিসেস রোকসানা বললেন, ‘আমার তো এবার মনে হচ্ছে তুমি সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছ। দু’দিন আগে তোমার হাত থেকে পড়ে গিয়ে জগটা ভেঙে গিয়েছিল। তারপর আর নতুন কোনো জগ আনা হয়নি এই ঘরে।’

- আমি একটা নতুন জগ এনেছিলাম এবং এখানেই রেখেছিলাম।

বিরক্ত হয়ে মিসেস রোকসানা আবার বললেন, ‘দেখো বউমা, আমার মনে হয় তোমার মাথায় কোনো সমস্যা হয়েছে। আর না হয় কোনো স্বপ্ন দেখেছো তুমি। এইরকম করলে আমি কালকেই তোমাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো। তাই বলছি আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। কালকে তোমার বাবাকে ফোন করে আসতে বলবো আমি। তারপর একটা ব্যাবস্থা করা হবে।’

তারিন কিছু বলল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। মিসেস রোকসানা এবং মিস্টার জয়নাল ঘর থেকে চলে গেলেন। বাড়ির অন্য সদস্যরা ও চলে গেল ঘর থেকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারিন ফোন হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে এলো। এদিক সেদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলো একবার। তারপর একজনের নম্বরে ফোন দিলো।

ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘হ্যাঁ, জান বল।’

- অয়ন, মনে হয় আমরা এবার ধরা পড়ে যাবো।

বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠল অয়ন। তারপর বলল, ‘ধরা পড়ে যাবো মানে?’

তারিন অয়নকে সবটা খুলে বলল।

সব শুনে অয়ন বলল, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা সবাই জানি রিফাত মারা গেছে। আর রিফাতের জানাযা নামাজ ও পড়েছি আমি।’

- আমি কিছু বুঝতে পারছি না অয়ন। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি মিথ্যে কথা বলছি না। সত্যিই রিফাত বেঁচে আছে, এবং আমাকে খুন করার জন্য এই বাড়িতে এসেছিল।

- আচ্ছা তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি দেখছি কী করা যায়।

- ঠিক আছে এখন রাখছি আমি।

- আচ্ছা

তারিন ফোন কেটে দিয়ে ঘরে এলো। বিছানায় বসে চোখ দিয়ে পুরো ঘরটা একবার দেখে নিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। রাতটা এভাবেই কেটে গেল তারিনের। চোখ বন্ধ করে রাখলেও শান্তি মতো ঘুমাতে পারেনি।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড