মুনতাসির বিল্লাহ
সাতাইশ রমজান। ঈদের জাঁকজমকপূর্ণ কেনাকাটা শেষের পথে। সবাই ঈদের আমোদ-ফুর্তির জন্য সময় কাটাতে শহর ছেড়ে ছুটছে নাড়িরটানে মায়ের কোলে। শহর এখন শান্ত শিথিল। রিকশার শহর, জ্যাম নগরী এখন দেখলে মনে হয় জনশূন্য। মরিয়া হয়ে আছে হাজারো কোলাহলপূর্ণ মানুষের বেদনায়। ইট-পাথরের এই শহর জানে কতো হাজারো মানুষের দুঃখ জমে আছে এ শহরের সাইনবোর্ডে।
রহিমা বানু। এই শহরের একজন ভাড়াটিয়া। তবে স্থায়ী বাসিন্দা বললেও ভুল হবে না। বেশ বড় সংসার। মেয়ের পরিবার, দুই ছেলের পরিবার সবমিলিয়ে গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারের মত। গ্রামে তার স্বজন বলতে এক ভাই তার পরিবার ছাড়া কেউ নেই। আর শশুরবাড়িতে পড়ে আছে রিক্তশূন্য ভিটেমাটি। ঈদে আর বাড়ি ফেরা হয় না রহিমা বানুর। এখানেই কাটিয়ে দেয় প্রতিটা ঈদ।
আফিয়া রহিমা বানুর বড় ছেলের বউ। পরিবারের সবার মতো বাড়ি ফেরার তাগিদ তারও নেই। কেনাকাটা এখনো চলছে। আজ এটা লাগবে তো কাল ওটা, এভাবেই চলছে দিনকাল । রোজা রেখে সংসার সামলিয়ে তার দৈনিক পাঁচবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে বেশ ভালোই লাগে। এই যেন নুন নেই, নুন আনতে গেলো। এই যেন তেল নেই, তেল আনতে গেলো। এ ব্যাপারটা তার বরাবরই ভালোলাগার।আশেপাশের সবার কাছে খ্যাতি হয়ে গেছে, এমনকি এই বাড়ির কাজের লোকগুলোর কাছেও। রহিমা বানু শীতল রক্তের মানুষ। কখনো গলা উঁচুতে কথা বলবে তা হয়ে উঠে না।ছেলে বউের আচরণ তাঁকে মাথাচাড়া দেয় তবুও বলার ক্ষমতা রাখে না।
আফিয়া দু’ছেলে নিয়ে নিচে নামছে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই গেটের দরজায় দেখা খোকনের সাথে। মানুষের গুণের মধ্যে ভালো একটা গুন হলো মানুষের মনকে উপলব্ধি করতে পারা। আফিয়ার এই গুণটা প্রতিনিয়তই প্রশংসনীয়। খোকনের মনটা কেমন যেন মনমরা লাগছে, আজ আফিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝতে পারছে। বলেও দিলো, মনে হয় মানুষটাকে ছুটি দেয়নি। আর কবেই বা ছুটি দিবে? আর তো বাকি দু’দিন। রাত পোহালেই ঈদ। - খোকন, বাড়ি যাবি না ? কথাটা বলতেই দেখে খোকনের চোখ ছলছল করে উঠলো। নিচে তাকিয়েই উত্তর দেয়, না। মনে হয় চোখের পানি লুকানোর জন্য মাথা নিচে করে। - কেনো, ছুটি দেয়নি ম্যানেজার?
ছেলেটি নিশ্চুপ। ফের আনমনা হয়ে তাকিয়ে। কোনো উত্তর নেই। তার দীর্ঘশ্বাস, নিশ্চুপ থাকা নৈশব্দের বাণী শুনিয়ে যায়, না। অফিয়া বাসায় উঠে শশুড়িকে বলে, মা, খোকনের মনটা কেমন মনমরা। মনমরা লাগছে। ছেলেটা কতো উচ্ছ্বাস নিয়ে ছিলো ছুটি পেলে বাড়ি যাবে। এখন মনে হয় ম্যানেজার ছুটি দেয়নি। সেদিন জিগ্যেস করলাম বাড়ি যাবি না? বললো, ছুটি পেলে যাবো। আজ কেমন মনমরা হয়ে আছে।
খোকন। সময় নষ্ট করে যে গল্পটা শুনবেন সেটা খোকনের। এই বাড়িতেই কাজ করে। বয়সের হিসেব করতে গেলে মনে হয় বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়ে সবেমাত্র যৌবন ছুঁই ছুঁই। মুখে দু'চারটে দাড়ি উঁকি দিচ্ছে। দেখলেই মনে হয় সবে মাত্র যৌবনে পদার্পণ।লম্বা ছিপছিপে গড়নের। চিকন হওয়ার দরুন মনে হয় শরীরের মাঝ বরাবর ভেঙ্গে যাচ্ছে।চেহারায় সব সময়ই দুঃখের ছাপ।ঠিক কবে তার এই নিষ্পাপ চেহারাটায় শেষ হাসির রেখা ফুটেছিলো ছেলেটির হয়তো নিজেরও অজানা। এই বাড়িতে কাজ করে কয়েকবছর ধরে।ধরা যায় তার কৈশোরের স্মৃতিটা কেলবি ইট-পাথরের দেয়াল ঘেঁষে ছ্যাতছেতে দালান-কোঠার বন্দিদশা জীবন। কেবলি ক্লেশের ছাপ। সিঁড়ি ঝাড়ু দেয়া, মুছা এগুলো তার দৈনন্দিন কাজের রুটিনে। সবসময়ই বিনম্রচিত্তে কাজ করে যায়।ভদ্রতাও মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়, তার প্রমাণ খোকন নিজেই ।খোকনকে একে একে বাড়ির ভাড়াটিয়া গুলো খুবই আদর করতে শুরু করেছে । কেউ দেখা হলেই ডাক দেয়, কিরে খোকন কেমন আছিস? খোকন বরাবরই চুপচাপ।উত্তরে বলে, ভালো আছি।ফের পাল্টা জবাবে যে বলতে হয় আপনি কেমন আছেন। এই কথাটাও যেন খোকনের নিরর্থক মনে হয়।
বাড়ির নিচতলাতে গ্যারেজ। গ্যারেজের পাশে ছোট্ট একটা রুম। সেখানেই রাত কাটায়। ছিঁড়া তোশক আর বালিশে রক্তের দাগ।দেখলেই মনে হয় কতশত ছারপোকা আর মশা এখানে ভিড় জমায়। পাশের দেয়ালে ঝুলছে কিছু কাপড়চোপড়, এগুলো খোকনের। তবে অগোছালো। আর রুম বলতে ওরকম রুম ধরা যায় না।থাকার জন্য ছোট্ট একটা বিছানা। যেখানে মশার আনাগোনা, ছারপোকা, ধুলোবালি, সবমিলিয়ে বেশ জরাজীর্ণ বললে চলে। ঈদের আর দুদিন বাকি।বাড়ির কাজের লোক এখন খোকন ছাড়া কেউ নেই। দারোয়ান ছুটিতে গেছে।ম্যানেজার সপরিবারে এখানেই থাকে। তার পরিবার বলতে শুধু বউ। ছেলে-মেয়ে নেই। হওয়ার আশাও নেই। বয়স পঞ্চাশের গণ্ডি ছড়িয়ে। স্বামী-স্ত্রী দু'জনেরই উসকোখুসকো মেজাজ। যেন বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে দারোয়ান চলে যাওয়ার পর খোকনের ঝাড় দেয়া, মুছা, গ্যারেজ সংরক্ষণ, দারোয়ানের অনুপস্থিতিতে সবকাজ একারই সামলে নিতে হচ্ছে। খোকন প্রতিবাদ করতে অক্ষম। তার মন নিশ্চয়ই বলে বেড়ায়, দারোয়ান ছুটিতে গেছে আমাকে দিলে কী হতো। আমি দুর্বলচিত্ত বলে আমাকে দেওয়া হচ্ছে না ? কিন্তু খোকন তা পারেনি। হয় চাকরী যাবে, নয়তো বেতন আটকাবে।আর খোকনের চাকরী চলে যাওয়া মানে তার পরিবার অনাহারে থাকা। গেটের দরজার কাছে প্রতিনিয়ত এখন খোকনের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।খোকন দাঁড়িয়ে থাকে কাকতাড়ুয়া সাদৃশ্য। সবাই উৎফুল্ল আর আমোদ নিয়ে একে একে তাদের পরিজনের কাছে যায়।খোকন অসহায়ের মত তাকিয়ে দেখে।বুকের মাঝে কেমন যেন ছলাৎ করে ওঠে। মনে মনে বলে উঠে,মা নিশ্চয়ই আমার জন্য পথেপানে তাকিয়ে আছে।ভাবতেই খোকনের চোখ ছলছল করে ঝাপসা হয়ে ওঠে নোনাজলে। ইদানীং খোকনের মনটা ভালো যাচ্ছে না। কাজ সেরে খোকন সিঁড়িতে নয়তো ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে। আকাশের বিশালতা দেখে আর চারপাশের ইট-পাথরে ঘেরা সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা রঙ-বেরঙের দালান দেখে। আর ভাবে এই শহর কতশতো জানা-অজানা দুঃখ বয়ে বেড়ায়। কেউ কারোর দুঃখ দেখার সময় হয় না।পৃথিবী এতো নিষ্ঠুর কেন ? খোকনকে ভাবায়, প্রতিনিয়ত ভাবায়।
আবার বলে, ছুটি পেলে ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে বেতনের টাকা দিয়ে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনতাম। ছোট্ট বোনটার জন্য একটা লাল রংয়ের জামা।এটা বোনের আবদার।বাড়ি থেকে আসার পথে বলে দিয়েছিলো, দাদা! ও দাদা! বাড়ি এলে আমার জন্য একটা লাল রংয়ের জামা আনবি।আর লাল লাল চুড়ি। খোকন ভাবে কতশত বাহানাই না করে বোনটা।
এখন নিশ্চয়ই আমার নেয়া জামার জন্য বসে আছে। আর মা। মা'র তো অপেক্ষা করছে ছন্নছাড়া ছেলেটির জন্য, তার সময়ই ফুরয় না যেন।
খোকনের গ্রামে মা আর বোন ছাড়া কেউ নেই। বাবা মারা গেছে অসুখে পড়ে।সেই থেকে তাদের সংসারের হাল ধরতে হলো খোকনের। তারপর খোকনের পড়াশোনা আর হলো না। সব কিছুর ইতি টেনে কাজে লেগে যায়। কিছুদিন পর এক শহুরে কাকার সাথে চলে আসে ঢাকা। সেই থেকেই ঢাকা থাকে। ছুটি পেলে বাড়ি যায়, মাইনে যা পায় সবটাই মাকে দিয়ে দেয়।এটা দিয়েই মা টেনেটুনে দিন চালায়। খোকন ভাবে বোন তো জামার জন্য বসে থাকবে।কতোই না কষ্ট পাবে জামা না পেলে। কিন্তু বেতন তো এখনো দেয়নি। চাকুরীটা ছেড়ে দিলে মা বোন এদের কী হবে। এসব ভেবে খুব রাগ হয় খোকনের। বড্ড রাগ।বেতনের টাকাটাও আটকে রাখলো ম্যানেজার।টাকা পেলে বোনের জামা নিয়ে বাড়ি গেলে বোন খুশি হতো। মা আমাকে কাছে পেয়ে স্বস্তি পেতো। এতোটুকু খোকন বুঝে, সবসময়ই মায়ের মুখে হাসির রেখা ফুটাতে চায়।বোনের আবদার পূরণ করতে চায়। রাত পোহালেই ঈদ।বিকাল থেকে আজ খোকন পুরোটা সময় ধরে ছাদে কাটিয়েছে। এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে ড্যাব ড্যাব করে আকাশ দেখছে। মায়ের সাথে কথা হলো আজ। মাকে বলে দিলো, ঈদের ছুটি পাইনি। আসতে পারবো না। মা তো কেঁদে কেঁদে সারা। তুই আসবি না খোকন?
খোকন বলে, বেতন দেয়নি মা ।বেতন পেলে আসবো। চাকরী গেলে যাক। মা ফের বলে, তোর বোন লাল জামার জন্য অস্থির হয়ে গেছে, আমি কোথা থেকে দিবো জামা।
আমি আনবো মা! তুমি চিন্তা করো না। খোকন ছটফটিয়ে ওঠে। ভাবে, ছোট্ট বোনটার সাথে যারা থাকে তারা নিশ্চয়ই ঈদের নতুন জামা বোনটাকে দেখাচ্ছে।বোনটা হয়তো খুব কষ্ট পাচ্ছে।দেয়াল ঘেঁষে বুকফাটা এক চিৎকার বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খোকন? খোকন কান্না করতে পারে না। চাপাকান্নারা বুকের মাঝে এসে জমে। খোকন নিস্তব্ধ হয়ে সুদূর আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।কারণ খোকন জানে, তাদের মত খোকনদের কাঁদতে হয় না। সবার মুখে হাসি ফোঁটাতে হয়।
সন্ধ্যা নেমে এলো। এখনো খোকন ছাদে।আকাশে বাঁকা একটা চাঁদ উঁকি দিলো। মনে হলো প্রথমেই পৃথিবীর বুকে চাঁদটা খোকনকে সম্ভাষণ করলো। খোকনের মনে পড়ে সেই ছোট্ট বেলাকার কথা, বাবার হাত ধরে ঈদে নামাজ পড়তে যাওয়া, এসে মায়ের সাথে বসে সবাই মিলে খাওয়া, বিকেলে বাবার কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। কতোই না ভালো ছিলো সেই সময়টা। আর এখন ঈদ মানে মায়ের কষ্ট বোনের কান্না। তারপর দীর্ঘ একটা দীর্ঘশ্বাস। খোকন ভাবে চাকরী যায় যাক ম্যানেজার বেতনটা দিলে বোনকে খুশি করতে পারবো, সবাই মিলে ঈদ করতে পারবো, বাড়ি চলে গেলে মায়ের হাতের ডাল-ভাত খাবো আর রোজগারে লেগে যাবো। এই নিষ্ঠুর শহর ছেড়ে আমি চলে যাবো। খুব দূরে। আজ ঈদের রাত।ম্যানেজারকে বললে বেতনটা পেতেও পারি।সেদিন তো বললো ঈদের দিন দিবে।আজ না হয় বলে দেখি। খোকন দৃঢ়চিত্তে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।যে কেউ দেখলে ভেবে নিবে সে সিড়ি গুনছে। আবার বলছে, ম্যানেজার দিবে তো? খোকন ম্যানেজারের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে। দরজায় কড়া নাড়তে যেয়েও হাতটা নামিয়ে নিলো।দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্বাসের শব্দটা ভারী হতে হতে দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসছে। হাত দিতেই দরজা খোলার আওয়াজের সাথে রুক্ষ একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।
এটা ম্যানেজারের বউ।যে কেউ দরজার সামনে কী দূরে থাকলেও প্রতিনিয়ত এভাবে কথা বলে। দরকারী কাজে বের হচ্ছে তা দেখেই বুঝা গেলো। ও খোকন। কি কাজে আসলি ? ম্যানেজারের কাছে। কথাটা শেষ করতেই এগিয়ে আসলো ম্যানেজার। খোকন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।মনে হয় যেন আসামীর সালিশ হচ্ছে। নিচু মুখে বলে, আমার বেতনটা দিতে পারবেন? ম্যানেজারের রুক্ষ উত্তর, তোরে না বললাম কাল দিবো।কাল সকালে নিস। ম্যানেজারের বউ বলে উঠে, ছেলে মানুষ ঈদে বাড়ি যাবে না বেতনটা চাচ্ছে তা এখন দিয়ে দিলে হয়? দিয়ে দাও। ফের খোকনের দিকে তাকিয়ে বলে, কিরে খোকন টাকা দিয়ে বুঝি মায়ের জন্য কেনাকাটা করবি? খোকন মাথা নাড়লো। বউয়ের কথায় ম্যানেজার নিশ্চুপ। তারপর বলে, তুই নিচে যা আমি নিয়ে আসতেছি। খোকন নিচে নামতেই ম্যানেজার বেতনটা হাতে দিলো। রুক্ষ আচারন, এই ধর টাকা। কী করবি কর। খোকন আস্তে আস্তে বলে, বোনের জামা কিনমু আর মায়ের লাগি একটা শাড়ি। ম্যানেজার বলে, ছুটি কিন্তু পাঁচদিন পরে, বুঝলি ? খোকন নিশ্চুপ।চুপ থাকাটাই তার শোভা।
আজ ঈদের দিন।আফিয়া তার দুই ছেলে আর রান্না নিয়ে ব্যস্ত। বাবার সাথে ছেলেকে ঈদের নামাজে পাঠাবে তাদের পাঞ্জাবী পড়াতে ব্যস্ত। সকালে তৈরি করলো কয়েকপ্রকার খাবার।সবাই হাসিমাখা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে। ছেলেদেরকে সালামি দিচ্ছে, পাশের বাসার ভাবীর ছোট্ট দুটি মেয়ে, তাদের দিচ্ছে। এগুলো নিয়ে বেশ হাসিখুশি কাটছে সময়। ছেলেদুটো বাবার সাথে পাঠিয়ে আফিয়া একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারলো। ভারী দুুষ্ট ছেলে দুটি, এই যেন মাথায় চেপে বসে। আফিয়ার আবদারের সুর, মা! আজকে খোকনকে দাওয়াত করি ? সবাই তো চায় ঈদের দিনটা ভালো কাটাতে। শ্বাশড়ী দীর্ঘশ্বাস টেনে বলে,চাইলেই কী আর সবাই পারে? তুমি খোকনকে এখন খাবার পাঠিয়ে দাও। আর বলে এসো দুপুরে আর রাতে খাওয়ার জন্য। ঘরে আপাতত বউ-শাশুড়ি। যেতে হলে আফিয়াকেই যেতে হবে।অবশ্য আফিয়ার স্বামীর এসবে কোনো খেয়াল নেই বললে চলে।এইদিকটা বউ দখল করে নিয়ে আছে। সিঁড়ি ভেংগে নিচে নেমেই ডাক দিলো, খোকন! ও খোকন! কোনো সাড়া নেই। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আফিয়া নিঃশব্দ সামনে এগোলো। এক পা দু’পা করে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে। তাকিয়ে দেখে জরাজীর্ণ রুমটা ফাঁকা।একদমই ফাঁকা। এলোমেলো কাপড় আর টুকিটাকি জিনিসপত্র গুলোও নেই। সব শেষে আফিয়া চলে আসার সময় ময়লাক্ত বিছানার উপর চোখ পড়লো। দেখে একটা মোড়ানো কাগজ। ইতস্তভাবে হাতে নিলো। মেলে দেখে সাদা স্বচ্ছ একটা কাগজে গুটি গুটি অক্ষরে কাচা হাতের এলোপাতাড়ি ভাবে কয়েক লাইন লেখা। একটা চিঠি। ছোট্ট চিঠি।
ম্যানোজার সাব, আমি আর চাকরী করুম না। এই নিষ্ঠুর শহরে আমি আর থাকুম না। না বলে চলে যাওয়ার কারনে মাফ চাইছি। আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি। ~খোকন
চিরকুটটা পড়া শেষ। এখনো হাতে ধরে রাখা। আফিয়া তবুও ডাক দেয়। খোকন! ও খোকন! খোকন নেই বলে কোনো সাড়া শব্দ নেই। তারপর নিঃশব্দে কাগজটা রেখে দিয়ে আফিয়া ফিরে আসে।
একটা দীর্ঘশ্বাস বয়ে যায় আফিয়ার মাঝে। মনে মনে বলে,এই শহরে কতো হাজারো মানুশের বোবাকান্না চাপা পড়ে থাকে, শুধু এই শহরই জানে। আফিয়ার ঘরের জানালা দিয়ে ফিঁকে হওয়া আলোর রেখা ফুঁটে উঠে। আফিয়া জানলার গ্রিল ধরে দূরের আকাশ দেখে। আকাশে পাখিরা ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হয় তাদেরও আজ ঈদ। আফিয়া দেখছে আর ভাবছে, এরা তো মুক্ত। তবে আমরা কেউ কারোর কাছে মুক্ত না, আবার সবাই সবার থেকে মুক্ত। তারপর নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে, আচ্ছা আমি কি মুক্ত ?
নাতো, মুক্ত না। আবার মুক্ত। দূর বহুদূর আমার বিস্তার শেকড় গাঁড়া। তবুও মনে চায়। ছিড়ে ফেলি বেড়িবাঁধ। পেতে চাই মন মুক্তির স্বাদ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড