সাহিত্য ডেস্ক
বেশ অনেকদিন ধরে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে অরিত্র। একটা সুন্দর সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে একটা মেঠো পথ। অরিত্র সেই পথ ধরে দৌড়াচ্ছে। পায়ে কোনো জুতো নেই। হাতে একটা লাঠি। লাঠি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে একটা বাইসাইকেলের চাকাকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাথে করে৷ অরিত্র দৌড়ায়, চাকা ঘুরতে থাকে। সে দৌড়াতে থাকে, চাকা ঘুরতে থাকে৷ পথটা শেষ হচ্ছে না। সে দৌড়াচ্ছে, প্রানপনে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু সামনে আগাচ্ছে না। ছবিটা পাল্টাচ্ছে না কোনোমতেই। একই দৃশ্য তার আশেপাশে। একই মাঠ, একই পথ, পথের সামনে ওওওই যে বাঁকটা, সেই বাঁকটাও নিজ জায়গাতেই আটকে আছে।
কী তাজ্জব ব্যাপার! অরিত্র যেই গতিতে আগাচ্ছে, সেই গতিতেতো সামনের বাঁকটা আধ মিনিটেই ক্রস করে ফেলার কথা। ও......ওওই যে সামনের কাকতাড়ুয়াটা, সেটাই বা জায়গায় নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
অরিত্র এবার চাকাটা ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কি ভয়ংকর ব্যাপার! চাকাটা পড়ছে না! ঘুরছেতো ঘুরছেই। অরিত্র ভয় পেয়ে যায়। ঘামতে থাকে চাকাটার দিকে তাকিয়ে। দৌড় কিন্তু থামছে না। সে দৌড়াতে থাকে, ঘামতে থাকে, চাকাটাও ঘুরতে থাকে!
ভয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় অরিত্রর! বিছানায় বসে বড় বড় করে শ্বাস ফেলতে থাকে। রুমে আলো জ্বলছে। আশেপাশে কেউ নেই। পানির গ্লাসটা জায়গামতোই আছে। গ্লাসের উপর থেকে পিরিচটা সরিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা গিলে নেয় অরিত্র।
এমনিতে জ্বীন-ভূতে ভয় নেই তার। রাত তিনটা বাজেই প্রতিদিন তার ঘুম ভাঙ্গে। অনেক আর্টিকেল পড়ে আর ইংরেজি হরর মুভি দেখে বলে সে জানে এই সময়ের দুঃস্বপ্নগুলো খারাপ হয়। সময়টা খুবই খারাপ। সব জেনেও সে বারান্দায় চলে যায়। রিভলবিং চেয়ারটায় শরীর এলিয়ে দিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। সিগারেটের ধোঁয়া পেয়ে একটু শান্ত হয় সে। আবারও রাগে মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে হয় তার। প্রতিদিনই শোয়ার আগে চিন্তা করে এই স্বপ্নটা দেখলে সে লাথি দিয়ে চাকাটা ফেলে দিবে৷ কিন্তু স্বপ্নে তার এটা মনে থাকে না।
বাকি রাতটা আর ঘুম হবে না অরিত্রর। সিগারেটটা নিভিয়ে রুমে এসে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলো। ল্যাপটপের ডালাটা উল্টাতে গিয়েও আবার বন্ধ করে দিলো সে। ইদানিং এইসব ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলোকেই যত জ্বীন-ভূতের আস্তানা মনে হয় অরিত্রর! পৃথিবীর যত খারাপ দিক আছে তার সবই সম্ভবত দেখা হয়ে গেছে মুঠোফোন আর ল্যাপটপের মাধ্যমে।
জন স্টেনলেকের একটা বই খুঁজে বের করলো তাক থেকে। "দ্যা পার্ল" বইটার নাম। আগেও পড়েছে অরিত্র। কিন্তু বইটা হাতে নিয়ে কোনোভাবেই বইয়ের কাহিনী মনে করতে পারছে না৷ ইদানিং এই জিনিসটা খুব বেশি হচ্ছে অরিত্রর৷ ভুলে যাওয়া রোগ। আগে কত শত বই পড়তো সে! তার রুমের ইয়া বড় তাকটা জুড়ে কম করেও শ দুয়েক বই আছে। তার ৮০ ভাগই অরিত্রর পড়া। কিন্তু এখন যেই বইটাই হাতে নেয়, কোনোটার কাহিনীই তার মনে পড়ে না খুব একটা!
কি ভয়ংকর বিষয়!
-----------------
পরের দিন।
আবারও ঠিক রাত তিনটায় ঘুমটা ভাঙ্গলো অরিত্রর। আজকে ভয়টা বেশিই পেয়েছে সে৷ স্বপ্নটা হুবুহু একই। কিন্তু একটু পার্থক্য আছে। অরিত্র প্রানপনে দৌড়াচ্ছে সেই আগের মতো করেই। কিন্তু হঠাৎ সে খেয়াল করলো তার ডান পা আগালে বাম হাত আগায়, কিন্তু বাম পা আগালে ডান হাতটা আগাচ্ছে না৷ দৌড়াতে দৌড়াতেই খেয়াল করলো অরিত্রর ডান হাতটা কনুই থেকে কাটা!
এ কী! কাকতাড়ুয়াটাও কেমন যেন খিলখিল করে হাসছে বলে মনে হচ্ছে!
কঠিন ভয় পেয়ে ঘুম ভাঙ্গলো আজকে। লাইট জ্বালিয়ে টেবিল থেকে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক ঢকঢক করে পানি খেয়েও শান্তি হচ্ছে না। বারবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করছে সে। হাত তো জায়গামতোই আছে, কিন্তু হঠাৎ মনে হলো কনুইয়ের কাছটাতে কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে। আয়নার কাছে গিয়ে হাতটা ঘুরিয়ে দেখলো কনুইয়ের কাছে ব্লেডের আঁচড়ের মতো চিকন একটা দাগ। রক্তও বের হয়েছিল কিন্তু এখন জমাট বেঁধে আছে!
শিরদাঁড়া বেয়ে একটা চোরা ভয়ের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। ভয়ের তীব্রতাটা কিভাবে কমাবে বুঝতে পারছে না অরিত্র। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়াল লিস্টটা বারবার ব্রাউজ করা শুরু করলো সে। কাকে ফোন দিবে বুঝে উঠতে পারছে না।
আজ হুট করেই মিমকে খুব মিস করছে অরিত্র৷ মিমের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে বছরখানেক আগে। ব্রেকআপ না হলে হয়তো এখন মিমের সাথে শেয়ার করা যেতো বিষয়টা।
যাকগে, এখন এসব ভেবে কাজ নাই। রাতটাতো পার করতে হবে। এমনিতে ভূতে বিশ্বাস নাই তার, কিন্তু আজ মনের ভেতর কেমন যেন খচখচ করছে। ঘুরেফিরে আজও বুক শেলফের দিকে গেলো রাত পার করতে৷ হাতে তুলে নিলো জন স্টেনলেকের ''দ্যা পার্ল"!
চলবে...
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড