• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বই আলোচনা

পিতলের প্রজাপতি ও অন্যান্য

  প্রদীপ কর

২২ মে ২০১৯, ১৪:১১
ছবি
ছবি : গ্রল্পগ্রন্থ প্রচ্ছদ (পিতলের প্রজাপতি) 

‘রবীন্দ্রনাথ, তার বজরায় করে গ্রামের পর গ্রাম পার হয়ে যেতে যেতে নৌকোর জানালা দিয়ে তীরবর্তী জীবনধারা দেখেছেন। এই জানালা যেমন কাঠামো হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি কাজ করেছে ছাঁকনি হিসেবেও। জানালার ভিতর দিয়ে যতটুকু দেখা যায়, কেবল ততটুকুই তাঁর দৃষ্টি কেড়েছে, আর তার রূপরেখা নির্ধারিত করে দিয়েছে ঐ জানালার সীমানা।’

রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক হুমায়ুন কবির উপর্যুক্ত কথাগুলি বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের দেখা এবং ছোটগল্প রচনায় কবির অন্তর্দৃষ্টির প্রকাশ ছোটোগল্পগুলিকে চিরন্তন সাহিত্যে উত্তীর্ণ করেছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বদলেছে। বদলেছে সামাজিক বোধ, নীতি নৈতিকতাও। একই সঙ্গে বদলেছে সাহিত্যের ভাষা বিষয় আঙ্গিকও।

কবি মাহী ফ্লোরা-র ছোটগল্পের বই ‘পিতলের প্রজাপতি’ পড়তে গিয়ে এসব কথা মনে এলো। কবির গদ্য পড়তে গিয়ে একধরণের কাব্যিক আচ্ছন্নতা তৈরি হয়, এ বই অবশ্য সেরকম নয়। পনেরটি গল্পের এই সংকলনে আপাত কবিকৃতি নেই, তবে প্রচ্ছন্নে কবির দর্শন প্রবাহিত। একেবারে হৃদয়সংবেদী পাঠকের মর্মমূলে টান দেয়।

বইটির নামকরণ বেশ আশ্চর্যের, ‘পিতলের প্রজাপতি’। প্রজাপতি বলতেই মনের ভেতর যে রঙিন ওড়াউড়ি শুরু হয়, তা ক্ষণেকেই স্তব্ধ হয়ে যাবে, যদি, ‘প্রজাপতি’ শব্দটির আগে ‘পিতলের’ মতো একটি ধাতব শব্দ সংযুক্ত হয়। নামকরণেই বইটির চরিত্র কিছুটা প্রকাশিত। মুগ্ধতাবোধের সঙ্গে কাঠিন্যের ঠোকাঠুকি… কঠোর কোমলের সংঘর্ষ!

প্রচ্ছদ নামাঙ্কিত গল্পটিতে এক আশ্চর্য মায়ার খেলা সৃজিত। এক অভিমানী সংবেদনশীল নিঃসঙ্গ নারীর আখ্যান। কেন্দ্রীয় চরিত্র জয়ী নাম্নী এক শিল্পীর অভিমান রাগ ভালোবাসা সঙ্গহীনতা তার অতীত বর্তমানের ক্যানভাসে চিত্রিত। অতৃপ্তির ভাঙাচোরা এক জীবন। সে নিজেই সঠিক জানেনা সে আসলে কী চায়! এই-ই বোধয় সমসময়ের যুগযন্ত্রণা। তার বর্তমান স্বামী যতবার যত্ন œ নিয়ে উচ্চারণ করে “জয়ী তুমি ভালো আছো তো?” ততবারই আমরা নিশ্চিত হই সে আসলে ভালো নেই। সে পরাজিত তার আকাঙ্খার কাছেই। গল্পটি নির্মাণে যথেষ্ট মুন্সীয়ানার পরিচয় পাই। এত সংকেতবাহী চিত্ররূপময় বিন্যাস গল্পটিকে পরিণত করে তোলে।

গল্পটিতে ঘুরে ফিরে জয়ীর যে অসুখের কথা বলা হয়েছে, চিকিৎসাশাস্ত্রে তার কোনো নির্দিষ্ট নাম থাকলেও পাঠকের মনে হবে তার অতৃপ্ত মনের অবশিষ্ট কোনো বাসনা এগল্পে মিলে মিশে আছে।

পরের গল্প ‘ভাঙা পেন্সিল’, প্রাথমিকভাবে, গল্পের বিষয়ের সঙ্গে এই নামকরণ প্রক্ষিপ্ত মনে হলেও একেবারে গল্পের শেষে পাই, ‘এখন পেন্সিলের ভাঙা অংশটা দিয়ে কেউ ইতিহাস হয়, কেউ খেলনা। মৃত্যু তো ভাঙা পেন্সিল।’ একজন মৃত ব্যক্তিকে ঘিরে তার এবং তার পরিবারের মরণোত্তর দৃশ্যের কোলাজ। সাতটি পর্বে বিন্যস্ত অংশগুলিকে সপ্তম আশ্চর্যের মতোই লাগে। তবু তা মৃতের চারিপাশে। এভাবেই মৃত ব্যক্তির পরিবার শোক কাটিয়ে উৎসবের দিকে জীবন বইয়ে দেয়। বিষয়কে বিন্যস্ত করার, মৃত্যুকে ঘিরে জীবনের ঘটনাগুলিকে সাজানোর ক্ষেত্রে গল্পকার বেশ সুকৌশলী। শুধু “সময় নিজের মতো করে বর্তমান রচনা করে”ধরণের গত শতকীয় বাক্যরচনা মাঝে মাঝে বিসদৃশ লাগে।

গ্রাম শহরের মধ্যবর্তী এক পরিবারের গল্প ‘এক ঝলক আলো’। বাংলাসাহিত্যে এই বিষয় এবং জীবন বহু ব্যবহৃত। আলাদা করে আলোর বিকিরণ কিছু পেলাম না, যা, এই বদলে যাওয়া সময়ের দলিল হতে পারতো।

সালাউদ্দীন সাহেব তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সকল সময় তার মৃত দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভুলতে পারছেন না। ছোটো বেলায় বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী সংসার শুরুর আগেই হুট করে মারা গেছেন; তাকে ভুলতে পেরেছেন। কিন্তু এই দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভুলতে ‘‘ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেবার বয়সে’ তিনি তৃতীয় বিয়ে করলেন- এই হচ্ছে ‘এজীবন ফড়িংয়ের’ বিষয়। বিষয় তেমন অভিনব নয়। ‘পিতলের প্রজাপতি’ গল্পে গল্পকার যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, এই গল্পে যথেষ্ঠ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তার সঠিক প্রয়োগ করতে পারেননি। একটি দীর্ঘশ্বাস এই গল্পের বিষয়। তাকে নির্মাণে বিনির্মাণে আরও আধুনিক করে তোলার ক্ষমতা গল্পকারের আছে বলেই এই সাধারণ সৃষ্টিকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। এই গন্থের অন্যতম একটি ভালো গল্প ‘শরতের একদিন’। সাধারণ খেটে খাওয়া এক মানুষের সর্বস্ব হরণ করে এক পুঁজিপতির উত্থান। জীবন ধারণের নিমিত্ত সেই নিষ্ঠুর পুঁজিপতির দ্বারস্থ হওয়া-বহু বহু ব্যবহৃত এই বিষয়কেই গল্পকার উপস্থাপন করেছেন সুন্দরভাবে। শারোদৎসবের আবহে রচিত গল্পটি তথাকথিত দুই শ্রেণির দ্বন্দ্বকেই খুব নির্মোহ দৃষ্টিতে নির্মাণ করেছেন।

‘একটা চওড়া মেঘালো রাস্তাকে প্রায় ভাবতে পারে সে। চারদিক ছায়া ছায়া! আর বড় বড় বাড়ি দালান। ঠিক স্বপ্নের মতো একটা মায়াময় ঝকঝকে শহর। পোড়ামাটির দালানে অসংখ্য জানালা। বালুর ঘাটের মতো পাশ দিয়ে দীর্ঘ রাস্তা। আর রাস্তার শেষে শহুরে নদী। তখন নদীটা ছিল এক ভরা যৌবনের ডাক পাওয়া দুরন্ত কিশোরী…’

মাঝে মাঝে এরকম সুন্দর দৃশ্যকাব্য নিয়ে রচিত ‘হাঁটতে হাঁটতে একটা নুড়ি’ গল্পটি। বটেশ্বর ওরফে বটু পাগলার গল্প। বটু পাগলার ভাবনা, আর সেই ভাবনায় এসে পড়ে তার অতীত। বাংলা সাহিত্যের অধিকাংশ পাগলই বেশ বড় বড় দার্শনিকের ভূমিকায় অভিনয় করে। এগল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়। ‘শালার জীবনটাই একটা কনপিটিশন’ এই দার্শনিকের মূল দর্শন।

‘সূর্য প্রতিমা’ গল্পটি ইলা মিত্রকে দেখার গল্প, একই সঙ্গে ৭০ বছর বয়সে ইলা মিত্র-র নাচোল গ্রামটি পুনর্বার দেখার গল্প। তেভাগা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি আসছেন। নাচোলের অগনিত মানুষ তার অপেক্ষায়। তিনিও সুদীর্ঘ সময় পর নাচোলের মাটিতে পা রাখবেন।

বিষয়টি খুবই মনোগ্রাহী। স্মৃতিভারাতুর সত্তরোর্ধ এক নারী এবং আটবছর বয়সী রুবার রানীমা’কে দেখার যৌগিক প্রক্রিয়ায় গল্প এগিয়েছে। গোল গোল গল্প বলার সাধারণ প্রক্রিয়া থেকে গল্পকার বেরিয়ে এসেছেন ঠিকই, তবে প্রবন্ধের ভাষায় কোথাও কোথাও এ গল্পের সজীবতাকে নষ্ট করেছে।

মা ছেলের সম্পর্কের চিরায়ত টানাপোড়েন নিয়ে ‘রঙ্গ’ গল্পটি। বিবাহোত্তর জীবনে মাতা পুত্রের দ্বন্দ্ব ঝগড়া থেকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবার প্রয়াস। শেষাবধি মায়ের জীবন ত্যাগের মধ্য দিয়ে পুত্রকে যেতে না দেওয়া –চিরন্তন এই ঘটনাপ্রবাহকে গল্পকার একেঁছেন সরসভঙ্গিমায়।

স্ত্রী মালাকে উদভ্রান্ত পাগলের মতো আদর করতে গিয়ে প্রথম রাতে ‘দেনমোহর মাফ’ চাওয়ার কথা মনে ছিল না জহির আলীর। পরবর্তীতে সম্পর্ক অন্যদিকে বাঁক নিলে জহিরের আঘাতে মৃত্যু হয় অন্তঃসত্ত্বা মালার। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ‘জহিরের মনে খচ খচ করে একটি কথা। মাফ চাওয়া হয়নি। রাতে শূন্য বিছানায় শুনে ভাবে ‘আহ্ কী একটা ভুল হইয়া গেল, মাফটা চাওয়া হইল না।

গ্রামের মুরুব্বিরা ছেলেটার রান্না খাওয়ার কষ্ট দেখে মেয়ে দেখতে থাকে নতুন করে। মনে মনে জহির ভাবে, ‘নাহ, এই ভুল আর করা যাইব না, এইবার প্রথম রাতেই মাফ চাইতে হইবে...’ অসম্ভব সুন্দর নির্মাণ এই ‘দেনমোহর’ গল্পটি। মানবিকতার গাফলতিকে বিদ্রপ করে স্যাটায়ার ধর্মী গল্পটি সমাজের কানুনকে আঙুল উঁড়িয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চায়!

‘ফুল চকমকি মেঘের আরেক নাম’, ‘তুমি কোন গগনের তারা’, ‘আর মেঘেরা চুপ করে পালালো’ তিনটি ভিন্নমাত্রার প্রেমের গল্প।

প্রথম গল্পে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দুই ছাত্রছাত্রীর ভালোবাসা এবং প্রকাশ্যে সলজ্জ দ্বিধা, দ্বিতীয়টিতে পারিবারিক কারণে ভালোবাসা থাকলেও তা বিয়ে অবধি না পৌঁছনো এবং তৃতীয়টিতে স্পর্ধা সহকারে পরিবারের পছন্দ করা পাত্রকে অবহেলা করে নিজের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে। এই তিনটি গল্প আসলে আলাদা হলেও কাহিনি বিন্যাসে কি কোনো ক্রম রক্ষা করা হয়েছে?

যদিও জীবনের এই অধ্যায়গুলি পেরিয়ে আসা মানুষের স্মৃতি উসকে দিতে গল্প তিনটি সহায়ক হবে, তবুও বলি, সার্থক প্রেমের গল্প লেখা বোধ হয় পৃথিবীর কঠিনতম কাজ। যে গল্পের কাহিনির সঙ্গে পাঠকের জীবন হয়তো মিলবে না, তবু, ভালোবাসার উপলব্ধি, প্রেমের অনুভূতি কিংবা সম্পর্কের গভীর বিশ্বাস অবিশ্বাসে পাঠক একাত্ম হতে পারবেন। হ্যাঁ শতবর্ষ পরেও। এই তিনটি গল্পে যদিও সেই গভীরতার ছাপ পাওয়া যায়নি তবুও স্মৃতিকে সামান্য সময়ের জন্য একটু জিরোতে দিতে পারে।

‘খেলাঘর’ গল্পে এক আকস্মিকের খেলা? নাকি মনোবৈকল্য? প্রৌঢ় এক বাড়ি মালিকের সঙ্গে ভাড়াটে পরিবারের এগারো বছর বয়সের মেয়ের শরীরি খেলা। নেহাৎই খেলাচ্ছলে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলিতে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন প্রৌঢ়। মেয়েটি গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে ভাড়াটেদের তাড়িয়ে দেন। কিন্তু প্রতি সন্ধ্যায় মেয়েটির অন্বেষণে নিজেকেই শেষ করার খেলায় মাতে। ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিজেকে শেষ করার খেলা! অদ্ভুত এক মনোবিশ্লেষণ এই গল্পে উঠে এসেছে।

‘শাখানদী’ গল্পটিতেও অতি সাধারণ এক দম্পতির জীবন দু’টি মৃত্যুর স্পর্শ লেগে কীভাবে ক্রমশ বদলে যেতে থাকে তারই আখ্যান।

গ্রন্থটির শেষ গল্প ‘যাত্রার রাজা’ বেশ মনোগ্রাহী। মঞ্চে আলোর সামনে ঝলমলে পোশাকে কদম আলী চওড়া কাঁধ মেরুদন্ড সোজা করে রাজা। আবার মেকাপ খুলে সাধারণ জীবনে যখন মালিক বেতন দেয় না, সে মায়ের ওষুধ কিনতে পারে না, বাড়ি ফেলার বাসভাড়া দিতে পারে না- মেরুদন্ড ন্যাতনেত করে।

আমাদেরও তো মাঝে মাঝে এরকম হয়। কোথাও বুক চিতিয়ে বাঁচি কোথাও আবার লেজ নেড়ে-এই তো জীবন। গল্পকারের দেখার চোখ স্বচ্ছ। তার প্রথম বইয়ে সমাজের নানা স্তরের নানান ঘটনায় ভঙ্গিতে তিনি তার দর্শনকেই এঁকেছেন। আধুনিক পৃথিবীর অভিশাপ নিঃসঙ্গতা যেমন তার বিশদ বিষয়, তেমনই সহজ মানুষের নিষ্ঠুরতা তাকে ভাবায়, তিনি আঙুল তুলেছেন সমাজ কাঠামোর দিকেও। অনুভূতি কখনো ঋজুভঙ্গিতে কখনো চাবুকের মতো সপাং সপাং।

শুধু সবিনয়ে একটি কথা বলতে চাই, প্রথম বই বলেই হয়তো, গল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরো একটু সংযমী আরো একটু নিষ্ঠুর হবার দরকার ছিল। সারা পৃথিবীতে এই সময় যে সফল ছোটোগল্পগুলি লেখা হচ্ছে, তাদের পাশে আপনার কোন গল্পটিকে নির্বাচন করবেন?

গল্পগ্রন্থ : পিতলের প্রজাপতি লেখক : মাহী ফ্লোরা । প্রকাশ : একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ প্রকাশন : দেশ পাবলিকেশন্স

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড