• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘চলো এক পা বাড়াই’ গল্পে শেষ পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : চলো এক পা বাড়াই

  অদ্বিতীয়া রায়হান

২১ মে ২০১৯, ১০:২৫
গল্প
ছবি : প্রতীকী

আজ সুলতানা মেয়ের জন্য পছন্দের আইসক্রিম কিনে এনেছেন। তন্বী মন খারাপ করে ঘরে ফিরেছিলো কিন্তু আইসক্রিম পেয়ে তার মন ভালো হয়ে গেল। আজকাল তন্বী খেয়াল করেছে তার মা তাকে বেশি সময় দেয় আগের চেয়ে, পছন্দের জিনিস কিনে আনে না বলতেই। তন্বীর ভালো লাগে মাঝে মাঝে নিজের পছন্দের জিনিস পেতে। একদিন সুলতানা তন্বীকে বুটিকে নিয়ে গেলেন। তন্বী খুব একটা মায়ের বুটিকে আসে না কিন্তু আজ কি মনে করে যেন এসেছে মায়ের সাথে। বুটিকে সবার ব্যস্ততা দেখে তন্বী বেশ বুঝতে পারছে সবাই কত কষ্ট করে এখানে। রাতে তন্বীকে সুবাহ আর সামিউল নিতে এসেছিল।ওরা চায় তন্বী আজ ওদের সাথে থাকুক। তন্বীকে সামিউল প্রথমেই জিজ্ঞেস করল- -কিরে আজ বাইরে খাবি তন্বী? - কেন মামা? বাইরে খেলে তো অনেকগুলো টাকা লাগবে।তারচেয়ে চলো বাসায়ই যাই - একদিন না হয় একটু টাকা খরচ হলো তাতে কি? চল আজকে আমরা বাইরে খেতে যাব

তন্বীকে সুলতানা বাইরে খেতে নিয়ে যেতে পারেন না তাই কেউ তন্বীকে নিজে যেচে বাইরে নিয়ে গেলে সে খুব খুশি হয়।

রাতে তন্বীর সাথে সুবাহ ঘুমাতে এল। কিন্তু তন্বীর এত তাড়াতাড়ি ঘুম আসে না। পড়াশুনায় সে ভালো তাই রাত জেগে পড়ে কিন্তু মাস ছয়েক আগে নবীনকে ভালোলাগার পর মাঝে মাঝে কথা হয় তাদের রাত জেগে।সুবাহ ঘুমানোর আগে তন্বীকে বলেছিলো যদি ঘুম না আসে তবে ঘরের বুকশেলফে রাখা বই পড়তে।অনেক বই আছে তাতে।

বুক শেলফের তাক থেকে নীলচে মলাটের একটা বই টেনে বের করল তন্বী।বইয়ের উপরে কোনো নাম নেই। কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টানোর পর চমৎকার হাতের লেখায় চোখ আটকে গেল যেন।প্রথম থেকে লেখাটা পড়ার জন্য কেমন যেন টান অনুভব করল সে। পাতার ভাঁজে কিছু লেখা, মনেহয় গল্প।

গল্পের আগাগোড়া পড়ে তন্বী থম মেরে বসে রইল কিছুক্ষণ।তার বাবা আর মার কাহিনী। তাদের বিচ্ছেদের কাহিনী। প্রতারণার কাহিনী। তন্বী জানতো তার বাবা মারা গেছে। কিন্তু আজ সে জানতে পারলো তার মা কতটা কষ্ট করছে তার জন্য। তার কত আশা তন্বীকে ঘিরে। আরো কিছু লেখা পাবার আশায় তন্বী বাকি পাতাগুলো দেখতে লাগলো। হুট করে একটা হলুদ খাম খুঁজে পেল তন্বী। খামে ঝকঝকে হাতে কিছু কথা লেখা।আশ্চর্য মা তাকে চিঠি লিখেছে! কিন্তু কেন?

চিঠি-

তন্বী, তুই হয়তো অবাক হচ্ছিস আমি চিঠি লিখেছি তোকে এজন্য। একটা গল্প শুনবি তন্বী? একবার একটা ছেলে আর মেয়ে দুজন দুজনের প্রেমে পড়ল। বাসা থেকে কেউ মেনে নীল না। তো দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নীল পালিয়ে যাবে। দূরে কোথাও চলে যাবে যেখানে কেউ তাদের আলাদা করতে পারবে না। তো মেয়েটা তার মায়ের কিছু গহনা আর টাকা চুরি করল। ছেলেটাও বাবার কিছু টাকা চুরি করে দুজনে দূরে পালিয়ে গেল। হাতে থাকা টাকা দিয়ে ওরা নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াল। সবশেষে এক পাহাড়ি এলাকায় এসে থাকার জায়গা খুঁজতে শুরু করলো। তখন বর্ষাকাল। পাহাড়ি ধ্বসের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে কিছু স্কুল বন্ধ রাখা হলো। তো স্কুল বন্ধের সুযোগে ছেলেটা আর মেয়েটা সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নীল। এদিকে ওদের হাতে থাকা টাকা পয়সা শেষ হয়ে আসছে প্রায়। একদিন রাতে খুব বৃষ্টি হলো। স্কুল ঘরে পানি উঠতে শুরু করলো। একসময় এত পানি হু হু করে বাড়তেই থাকলো। ছেলেটা আর মেয়েটা দিশেহারা হয়ে পড়ল।এখন কি করবে তারা? পানিতে ডুবে মরে যাবে? মেয়েটা ভয়ে যখন অস্থির তখন আচমকা ছেলেটা নিজের হাত দিয়ে মেয়েটার গলা শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলো। মেয়েটার নিঃশ্বাস ক্রমে বন্ধ হয়ে আসতে থাকলো। একসময় মেয়েটার মৃত দেহ পানিতে ভেসে উঠলো।

সেই ভেসে ওঠা লাশকে আঁকড়ে ধরে স্কুল ঘরের পানির স্রোত থেকে ভেসে বেরিয়ে এল ছেলেটা। সকালের আলো ছড়িয়ে পড়তে পড়তে ছেলেটা দেখল সামনে একটা উঁচু মতন জায়গা। সে জায়গায় উঠে ছেলেটা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যে মেয়েটা তাকে বিশ্বাস করে তার হাত ধরেছিল সে মেয়ের লাশকে অবলম্বন করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে ছেলেটার কিন্তু কষ্ট হয়নি। এর পরে ছেলেটা নিজের বাড়িতে ফিরে এল। অল্প বয়সে আবেগে ছেলে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল আবার ফিরেও এসেছে এতেই বাবা মা খুশি। কিন্তু কাকে বিসর্জন দিয়ে তাদের ছেলে বাড়ি ফিরেছে এটা অজানাই থেকে গেল।

আমাদের জীবনেও ভালোলাগা খুব স্নিগ্ধ একটা অনুভূতি কিন্তু এর একটা মাত্রা আছে, আছে বয়স, আছে উপযুক্ত সময়।অতিরিক্ত আবেগ যেন নিজের স্বপ্নগুলোকে, নিজের ইচ্ছেগুলোকে অঙ্কুরেই নষ্ট না করে দেয় সেটার খেয়াল রাখাও আমাদেরই দায়িত্ব।

চিঠি শেষ করে তন্বী অনেক কিছু বুঝতে পারলো। নবীনের প্রতি ভালোলাগা একসময় হয়তো থাকবে না। সময়ের সাথে সাথে নবীন বদলে যাবে, সে নিজে বদলাবে, পরিস্থিতি বদলে যাবে কিন্তু নিজের করা ভুলগুলোর জন্য তন্বীকে মাশুল গুনতে হবে।

তন্বী পরেরদিন মায়ের কাছে সব কথা খুলে বলল। - আসি খুশি হয়েছি তুই আমাকে সব কথা খুলে বলেছিস - তুমি সব জানতে মা? - হুম - তোমার রাগ হয়নি? মারতে ইচ্ছে হয়নি আমাকে? - আমি যদি মা হয়ে তোকে ঠিকভাবে না বুঝাই, তোকে বাস্তবতা,স্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য না ধরে দিই,শুধু মারধোর,রাগারাগি,কটু কথা তে তো তুই তুই তোর ভুল বুঝতে পারবি না। - মা? - বল - তুমি কি আমার বন্ধু হবে? - আমি এক পা বাড়িয়েছি সে কবেই,তুই কি আরেক পা না এগিয়ে থাকতে পারবি? - তাহলে ফ্রেন্ডন্স? - পাক্কা

এক মোহময় ঝংকার তুলে দুজন মানুষের হাসির আওয়াজ একটা অন্যটার সাথে মিশে যেতে থাকল। আর এর সাক্ষী হয়ে রইল বয়ে চলা সময়।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড