অদ্বিতীয়া রায়হান
সুলতানা কলেজ জীবনে খুব জনপ্রিয় ছিল। দারুণ লেখালেখির হাত ছিল।স্কুল ম্যাগাজিন,কলেজ ম্যাগাজিনে কত লেখা দিয়েছে সে। বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় সুলতানা ছিলো আলোচিত নাম। সুলতানার স্বপ্ন ছিল সাহিত্যে পড়াশুনা করার। কিন্তু কি থেকে কি যে হয়ে গেল সে নিজেও সে হিসেব মেলাতে পারেনি আজ এত বছরেও।কালবৈশাখী ঝড় যেমন টিনের চালা, বসতবাড়ির ক্ষতি করে তেমনি করে হুট করে সুলতানার জীবনে ঢুকে সব ওলটপালট করে দিল মাহাদী। অল্প বয়সের প্রেমের আবেগে ভেসে গিয়ে নিজের স্বপ্ন, নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলতে বসলো সুলতানা। তার ফল হাতেনাতে পেল সে। কোনো পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেলনা সে।বাসা থেকে নানান চাপ আসতে থাকলো। বন্ধুবাবান্ধব সবাই তার কথা ভুলে গেল।ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেল তার সব অবলম্বন। কোনো কিছু যখন সে বুঝে উঠতে পারছিল না এমন সময় মাহাদীর সাথে সম্পর্কের কথা বাসায় জানাজানি হলো। বিয়ে মাহাদী তাকে করেছে ঠিকই কিন্তু কোথায় যেন সুতো ছিঁড়ে গেছে। মাহাদীর সাথে বিয়ের পর আবার পড়াশুনা করতে চেয়েছিলো সুলতানা কিন্তু সেসময় মাহাদীর বেতন খুব কম। কষ্ট করে সংসার চালায় তার স্বামী আর সে স্বামীর টাকা এভাবে খরচ করতে পারে না। দুবছর পর তন্বী তাদের জীবনে এলো। মাহাদীর একটা ব্যাংকে জব হলো। সংসারে স্বচ্ছলতা নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। কিন্তু ওই যে সুতো কোথায় যেন কেটে গিয়েছিলো অনেক আগেই সেই কেটে যাওয়া সুতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো সুলতানা আর তার সংসারকে।
বিয়ের সাত বছরের মাথায় একদিন মাহাদী হুট করে আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে এল। সেদিনের ঘটনা সুলতানা কোনো দিনও ভুলবেনা। কথায় আছে ‘যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর’ সুলতানারও এমনটাই মনে হে লাগলো। যার আবেগে ডুবে গিয়ে সে তার পড়াশুনা, স্বপ্ন, বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে এলো সেই মানুষটি খুব যত্নে তাকে দূরে ছুঁড়ে ফেললো।ভাগ্যিস তার পাঁচ বছরের মেয়ে তন্বী সেদিন মামা সামিউলের সাথে বাইরে গিয়েছিল।এমন কষ্টের সাক্ষী সুলতানা তার মেয়েকে করতে চায়নি। মাহাদীর কাছ থেকে সুলতানা সেদিনই চলে আসে। তারপর থেকে তন্বীকে ঘিরেই তার জীবন। একটা বুটিক চালায় সুলতানা যা থেকে নিজের আর মেয়ের ভরণপোষণ করার ব্যবস্থা করে। কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যৎ, তার পড়াশুনার খরচ এসবের জন্য বাড়তি কাজ করতে গিয়ে সুলতানা অসুস্থ হয়ে পড়ছিলো। তখন সামিউল তাকে নিজের অফিসে পত্রিকায় টুকটাক লেখালেখির কথা বলে সুলতানাকে। এ থেকে বাড়তি কিছু টাকা আসে তার। এটাকা সে শুধু তন্বীর জন্য জমায়।কিন্তু তন্বীর জীবনেও নিজের ঘটনার আশঙ্কা দেখছেন তিনি।তার সদ্য দশম শ্রেণীতে ওঠা মেয়েকে এসব থেকে দূরে রাখতে হবে।তাকে হেরে গেলে চলবে না।
সামিউল বোনকে কি বলবে তা বুঝতে পারছে না। সুলতানা নীরবতা ভেঙ্গে কথা শুরু করলেন, ‘দেখ ভাই, তুই তন্বীকে এসব বিষয়ে কিছু বলবি না। ওকে কিছু বুঝতেও দিবি না যে আমি বা তুই ওর ব্যাপারে জানি। আমি নিজে যা করার করবো। তন্বীর ব্যাপারে জানার পর আমি আগের সব কথা ভেবে একটু অস্থির হয়ে পড়েছিলাম তাই।’
যাই হোক শোন, আমি কিছুদিন লেখালেখি বন্ধ রাখছি। তন্বীকে কিছুদিন সময়য় দিবো নিজের মতো করে। তুই অফিসের ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করিস একটু কেমন?
সামিউল মাথা নাড়লো। - আপা, কোনো হেল্প লাগলে বল - আমি জানাবো তোকে কখনো কিছু হেল্প লাগলে। এখন বাসায় চল
তন্বী কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বাজারের ব্যাগের দিকে তাকালো। করলা, পেঁপে, লাউ, আলু, কচুর লতি, কালোজিরা, কাপড় কাচার সাবান, ভিম বার, টুথপেস্টে এসব রয়েছে ব্যাগে। কাঁচা সবজি যা যা কেনা হয়েছে সবগুলো তার অপছন্দের। এসব পুরো এক সপ্তাহ খেতে হবে তাকে। উফফ, এত প্যারা কেন লাইফে। বিরক্তিভরা মুখ নিয়ে সে বায়োলজি বই খুলে বসলো।
- ব্লাড ক্লটিং টাইম? - তিন-চার মিনিট - কমন হার্ট প্রবলেম? - এনজাইনা পেক্টোরিস,মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন - মিনিং অব লাইফবয়? - জীবনতরী - ফুল ফর্ম অব এ.আই? - আর্টিফিশিয়াল ইনসেমিনেশন - টাইপ অব সেল ডিভিশন? - মাইটোসিস,মিয়োসিস - শীটের গুলো তো পারিসই তন্বী,বই পড় এখন - মামী, এক্সট্রা বই কই পাবো? আমাদের বইপড়ে ফেলেছি। - আচ্ছা, তাহলে তোকে অন্য একটা বই জোগাড় করে দিব। তা কবে যেন তোর এই বায়োলজি কুইজ? - দু’সপ্তাহ পর মামী।
সুবাহ, তন্বীর খোলাচুলে আঙুল চালাতে চালাতে বলে, ‘তোর চুলগুলো কি সিল্কি রে তন্বী! ইশশ আমার চুল যদি এমন হতো?’ - কি যে বলনা মামী, তোমার চুলও সুন্দর। আর তোমার তো। কথার মাঝে কলিংবেল বেজে ওঠে। মামীর সাথে গল্প করার ইচ্ছে বাদ দিয়ে তন্বীকে মায়ের সাথে বাসায় যেতে হয়।
বায়োলজি কুইজে তন্বীরা রানার্স আপ হয়েছে। এ নিয়ে তাকে ভীষণ খেপাচ্ছিলো সবাই। সেই সাথে যোগ দিয়েছিলো নবীন। এজন্যই আরো বেশি মেজাজ খারাপ হয়েছে তন্বীর। নবীন কেন খেপাবে তাকে? ওর তো তন্বীকে ভালোলাগে তবে কেন এমন করবে সে?
(চলবে...)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড